প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

 

 

রাহমান মনি                                          

 

 

টোকিও বৈশাখী মেলায় অপ্রীতিকর ঘটনায় সব পক্ষের পরাজয় ঘটেছে

 

 

ঝামেলা ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন সম্পন্ন হয় না বলে বাংলাদেশীয় সংস্কৃতিতে একটি গ্রাম্য প্রবাদ চালু রয়েছে।

“টোকিও বৈশাখী মেলা” হিসেবে খ্যাত জাপান প্রবাসীদের সর্ববৃহৎ আয়োজনটিতেও ঝামেলা যেনো পিছু ছাড়ছে না । কোন না কোন ঝামেলা হবেই হবে। এযাবৎ কালের রেকর্ড তাই-ই বলে। হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছুই না । হাজার হাজার লোক সমাগম যেখানে সেখানে ঝামেলা একটু হতেই পারে । তবে, সেই ঝামেলা যদি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় তা কাম্য হ’তে পারে না।

৩০ এপ্রিল ছিল ২২তম টোকিও বৈশাখী মেলা ও কারি ফেস্টিভ্যাল ২০২৩। প্রতিকুল আবহাওয়া , চলমান গোল্ডেন উইক এবং বাংলা নববর্ষের নিদিষ্ট দিনের দুই সপ্তাহ পরে আয়োজনটি হলেও প্রবাসীদের অংশগ্রহণ এবং উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না ।

অনুষ্ঠান মালার সময়সুচীতে যৎসামান্য পরিবর্তন ছাড়া ছন্দময় এগিয়ে যাচ্ছিল ।

অপরাহ্ণ ৪টার পর অনুষ্ঠানমালার শেষ পর্বে বহুল পরিচিত , শ্রোতাপ্রিয় উত্তরণ কালচারাল গ্রুপ এর পরিবেশনার পূর্ব মুহূর্তে মেলা প্রাঙ্গণে পদধূলি পড়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কুমিল্লা-৬ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার-এর । সেই সময় তিনি জাপান সফর করছিলেন ।

একজন সংসদ সদস্য হিসেবে মেলা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে ‘অতিথি সম্বর্ধনা’ পর্বে মঞ্চে সন্মান জানানোয় ৩য় ব্যক্তি ( বিশেষ অতিথি ) হিসেবে তাকে সন্মান জানানোর কথা তাঁকে অবহিত করা হয় । যার সময় নির্ধারিত ছিল বেলা ১টা ৫৫ মিনিটে । মোট ৬ জন অতিথির মধ্যে ২ জন বাংলাদেশী ( প্রধান অতিথি রাষ্ট্রদূত সাহাবুদ্দিন আহামেদ এবং বিশেষ অতিথি সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ) এবং ৪ জন জাপানী ( বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইউয়ামা, তোশিমা সিটি সংস্কৃতি ও বাণিজ্য বিভাগীয় প্রধান শোইচি কোইকে, জাপান-বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট মাসাতো ওয়াতানাবে এবং আয়োজক সংগঠন জেবিএস চেয়ারম্যান ওসামু ওৎসুবো )।

যথা সময়ে জাপানী অতিথিদের সবাই উপস্থিত থাকলেও আমাদের মাননীয়দের মধ্যে রাষ্ট্রদূত ৫ মিনিট দেরী হওয়ার কথা বললেও ১৫ মিনিট দেরী করে আসেন । আর মাননীয় (!) সংসদ সদস্য আসেন ২ ঘণ্টারও বেশী দেরী করে ।

আর ঝামেলা বাঁধে তখনি । একেই তো দেরী , তার উপর এসেই অনুষ্ঠান চলাকালীন মঞ্চে উঠে তাকে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সরাসরি মঞ্চে উঠার চেষ্টা করালে বাঁধ সাধে বিএনপি সমর্থিত কিছু কর্মী । ব্যস , তাতেই শুরু হয়ে যায় হট্টগোল । এক পর্যায়ে ----- । আর তাতে মেলা প্রাঙ্গণে জাপান পুলিশের ।

ঘটনার সুত্রপাত হয় সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার অসময়ে বিধি বহির্ভূত অনৈতিকভাবে মঞ্চে উঠানোকে নিয়ে। একটি রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বাঁধার মুখে পরেন সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ।

এই ঘটনার দায় ৩টি ভাগে ভাগ করা যায় এবং পরাজয়ের দায় সব পক্ষের উপরই পড়ে ।



প্রথম দায় বৈশাখী মেলা আয়োজক কমিটি’র ।

দীর্ঘ ২২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন আয়োজক কমিটি অপরিপক্ক এটা বিশ্বাস করার কোন কারন নেই । ২২তম মেলার আয়োজনের প্রাক্কালে একজন লেখক এবং পাবলিশার্স জাপানে বহুল পরিচিত মুখ স্টল বরাদ্ধ নিয়ে কথা বললে নিয়ম বহির্ভূত হওয়ায় তাকে স্টল বরাদ্ধ দেয়া হয়নি। আরেক জন তার বইয়ের পরিচিতি করানোর জন্য একটি স্টলে দাঁড়ানোর অনুমতি চাইলে প্রধান সমন্বয়কারী এবং স্টল সমন্বয়কারীর কথোপকথনে নিয়ম বহির্ভূত হওয়ায় অনুমতি মিলে না। ঘটনা ২টি উল্লেখ করার উদ্দেশ্যে হ’লো , মেলা কমিটি সব কিছু একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছে জেনে নিয়ম মানা এই আমি খুব গর্ববোধ করেছিলাম এই ভেবে যে, এতদিনে একটা নিয়মের মধ্যে আনা গেল তাহলে !

কিন্তু মূল আয়োজনের দিন ১টা ৫৫ মিনিটের অতিথি ৪টা ১৫ তে অনুষ্ঠান চলাকালীন ষ্টেজে উঠিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদানের অনুমতি দেয়া হ’লো কোন নৈতিকতা থেকে ?

আর দিতেই যখন হবে তখন উত্তরন এর প্রোগ্রাম শেষে তাকে ষ্টেজ এ উঠিয়ে সুযোগ দিলে এমন কি অসুবিধা হ’তো ? তখন ঝামেলা অনেকটাই এড়ানো যেতো । কাজেই দায়টা তাদেরই , তারা দায় এড়াতে পারে না এবং প্রথম দায় তাদেরই । প্রথম প্ররাজয়টা ঘটেছে তাদেরই ।



সরকার এবং বাহাউদ্দিন বাহার এর সমর্থনকারীদের দায় ।

সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কে স্টেজে উঠায়ে বক্তব্য রাখানোর আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেছেন এবং হাততালি দিয়ে তার বহিঃপ্রকাশও করেছেন ।

কিন্তু ক্ষমতার জোর এবং আয়োজক কমিটির সমর্থন নিয়ে তারা অবৈধ যে কাজটি করেছেন তা কি বিধি বহিঃভুত হয়নি ? নৈতিকতা বিসর্জন হয়নি ?

সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ষ্টেজে উঠে রাজনৈতিক বক্তব্য দিলেন । কুমিল্লা নামে বিভাগ চাইলেন । কিন্তু তিনি যে দেরী করে আসলেন , অনুষ্ঠানের বিঘ্ন ঘটালেন এই জন্য কোন প্রকার দুঃখ প্রকাশ করলেন না , ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা ।

প্রশ্ন হ’লো সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার না হয় স্বভাব সুলভ ম্যানার এর ধার ধারেন না । কিন্তু তার পক্ষ হয়ে যারা বল প্রয়োগ করলেন , তারাও কি ম্যানার জানে না ? জাপানের মতো দেশে থেকেও এই ম্যানারটুকুও রপ্ত করতে পারেননি?

তিনি , কুমিল্লা নামে বিভাগ চাইলেন। মেলাতে কি শুধু কুমিল্লার লোকজনই ছিলেন ? কুমিল্লা নামে বিভাগ চেয়ে তিনি কি পক্ষান্তরে হাসিনার সিদ্ধান্তের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেননি ? আর এতে তাদের সমর্থনও ছিল বৈ কি !

দায় কি তারা এড়াতে পারেন ? জয়ের ঢেকুর তুললেও পরাজয় ঘটেছে তাদেরও ।



বিরোধিতাকারী বিরোধী দল-এর দায় সিংহ ভাগে বলা যেতে পারে ।

সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার এর ঘটনার সুত্রপাত যারা ঘটালেন তারা কি ভেবেছিলেন যে তাদের অসংগঠিত এই কেতো কুতোতে আওয়ামীলীগের মতো সু-সংগঠিত একটি দল ভড়কে যাবে ? লেজ ঘুটিয়ে পিছ পা হয়ে যাবে ?

আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখি , আপনারা কি জানেন যে , যাদের নেতা মেনে আপনারা দলীয় রাজনীতি করেন তথাকথিত সেই নেতারা যে , বড় ভাইদের ( তাদের ভাষায় আনিকি ) পরামর্শ অনুযায়ী দল পরিচালনা করে । দলীয় সভায় যে ভাষায় গরম বক্তব্য রাখেন , সন্ধ্যার পর আনিকিদের সান্নিধ্যে কাজ করেন তার সম্পূর্ণ উল্টোটা-ই ।

সেই সব নেতা (!) দের উপর নির্ভর করে সামান্য কোন দাবী আদায়-ই যেখানে সম্ভব নয় সেখানে প্রতিহত করা অলীক স্বপ্ন মাত্র ।

কাজেই , বাস্তবেই যেটা সম্ভব নয় সেটা নিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করে লোক হাসানোর প্রতিবাদ ছাড়া আর কিছুই নয় ।

মেলায় আগত শ্রোতা দর্শকরা যখন উত্তরণ এর গান শুনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষেয়মান, ঠিক তখনই এমন চুলকানি মার্কা বিরোধিতা করে অনুষ্ঠানে বিঘ্ন ঘটানোর দায়-এর সিংহভাগ তাদের উপরই পড়ে । এ দায় কিছুতেই তারা এড়াতে পারে না ।

পরাজয়ের উপর পরাজয় ঘটেছে তাদেরই ।

একটি গ্রাম্য প্রবাদ দিয়ে লিখাটি শুরু করেছিলাম। শেষ করার পূর্বে আরেকটি গ্রাম্য প্রবাদ এর কথা উল্লেখ করতে চাই , টোকাই দিয়ে জনসভা লোক সমাগম দেখানো যায় , পরিচালনা করানো যায় না । নেতা হতে গেলে যেমন ‘ধারও লাগে , তেমনি ভারও লাগে’।

এমন ন্যাক্কার জনক ঘটনা জাপানে প্রবাসীদের সাফল্যে তিলক হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে এবং এই কলঙ্কের তিলক – এর দায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষেরই পড়ে ।



টোকিও

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আরও দেখুন.....

.

আরও দেখুন.....