|
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।}
রাহমান মনি
দেশী স্টাইলে
প্রবাসের রাজনীতি, সংশোধন হওয়া জরুরি
নিয়ম না মানার জন্য যদি আন্তর্জাতিক কোন
প্রতিযোগিতা থেকে থাকতো তাহলে, নিঃসন্দেহে জাতি হিসেবে বাঙ্গালি এবং দেশ
হিসেবে বাংলাদেশের নামটি যে শীর্ষে থাকতো, এ ব্যাপারে কারোর সন্দেহের কোন
অবকাশ যে নেই এই কথাটি নির্দ্বিধায় বলা যায়।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের প্রবাসী শাখাগুলো মূলত বিভিন্ন দিবসে সবচেয়ে বেশি
তৎপর থাকে ৷ তারা বিজয়দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারিসহ জাতীয়
দিবসের কর্মসূচি পালন করে বেশ বড় করে ৷ আর দলীয় নেতাদের নিয়েও নানা দিনের
কর্মসূচি পালন করে৷ তাদের মূল টার্গেট থাকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দৃষ্টি
আকর্ষণ করা ৷
নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটা একটা ভালো দিক । বিশেষ করে
বাংলাদেশের সরকার বিরোধী দলগুলোর জন্য সরকার বিরোধী প্রচারণা , বাক
স্বাধীনতা হরন সহ বিভিন্ন নিপীড়ন নির্যাতন-এর কথা তুলে ধরে আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে কাজ করে থাকে।
আমি যেহেতু কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য না তাই, ব্যক্তিগত ভাবে এসব কাজের পক্ষে
বা বিপক্ষে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই ।
কিন্তু , একজন ক্ষুদ্র সংবাদকর্মী , একজন সচেতন প্রবাসী বাংলাদেশী হিসেবে
জাপান সহ প্রবাসে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষা সহ তা উজ্জ্বলে কর্তৃপক্ষের
দৃষ্টি আকর্ষণ করে সচেনতা করার অধিকার নিশ্চয় আমার আছে ।
তাই , জাপানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্ম পরিচালনার বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট নেতা
কর্মীদের দৃষ্টি করার জন্য আজকে আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ।
আশা করি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হবে ।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মুখের বুলি হচ্ছে-
‘নিজ থেকে দল বড় ,
দল থেকে দেশ’।
আর আমার অভিজ্ঞতা বলে –
‘তাহা কেবল মুখের কথা ,
মুখেই বলে শেষ’।
আরেকটি বুলি হচ্ছে
‘আমি পদ চাই না ,
পদের জন্য রাজনীতি করিনা
’বা ‘নাম চাই না ,
নামের জন্য রাজনীতি করিনা’।
আর আমার অভিজ্ঞতা বলে -
বলার জন্যই বলি কেবল
নামটা আমার দরকার নাই,
নাম তালিকায় সবার আগে
নিজের নামটা খুঁজে বেড়াই।
রাজনৈতিক ময়দানে অনেক কিছুই বলা যায় , কিন্তু বাস্তবে কি তা পালন করা বা
মেনে চলা সম্ভব ? বা , তারা মেনে চলেন কি ? বিশেষ করে রাজনৈতিক ময়দানে
উচ্চারিত নেতাদের মুখের বুলি !
দেশ ছেড়ে ৩৫ বছর আগেই প্রবাস জীবন কে বেছে নিয়েছি। মনে একটা চাপা কষ্ট
থাকলেও মেনে নিয়েছি। কারণ রুটি রুজির জন্য নিজ থেকেই দেশ ছাড়া ।
৩৫ বছর আগে দেশ ছেড়েছি তার অর্থ এই নয় যে, দেশীয় সংস্কৃতির রাজনীতি থেকে
দূরে থেকেছি বা রেখেছি। দেশের জন্য সব সময় মন কাঁদে ।
বাঙ্গালীরা যে যেখানেই থাকুক না কেনো বাংলাদেশীয় রাজনীতিকে সাথে করেই নিয়ে
নিয়েছেন। তাই তো প্রবাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল গুলা দেশের আদলে বহুধা
বিভক্ত। এমন কি অংগ প্রত্যঙ্গ সংগঠন সমূহ গুলো ও বহুদা গ্রুপে বিভক্ত । অথচ
তারা যেসব দেশে বসবাস করেন তাদের বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক দলগুলোর
মধ্যে দলাদলি কম। এমন কি অংগ সংগঠনের অস্তিত্বও নেই। আর প্রত্যঙ্গ সংগঠনের
তো প্রশ্নই উঠেনা ।
যা বলছিলাম , রাজনীতিবিদরা নাকি নামের জন্য দল করে না। অথচ দলের পক্ষ থেকে
যখন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় তখন প্রতিযোগিতা শুরু হয় ষ্টেজে আসন এবং
বক্তব্য রাখায় নাম লিখা নিয়ে। ষ্টেজে বসা এবং বক্তব্য রাখার তালিকায় নাম না
থাকলে নাকি তাদের মুল্যায়ন করা হয় না। আর ষ্টেজে গিয়ে বক্তব্যে তাদের
অনেকেই যে কি বলেন তা রীতিমতো গবেষণার বিষয় বস্তু হতে পারে।
প্রথমেই আসি বক্তব্য প্রসংগ নিয়ে -
জাপানের হলগুলোতে আয়োজিত রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা সভা সাধারনত দুই থেকে তিন
ঘণ্টার জন্য করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে অর্ধেকটা সময় চলে যায় শুরু হতে। এর
অন্যতম কারন সময় মতো না আসা এবং স্টেজ এ আসন এবং বক্তা তালিকা তৈরি করা নিয়ে
মতবিরোধ নিরসন ।
বাকী যে সময়টা পাওয়া যায় তাতে বক্তব্য তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ থেকে
দীর্ঘতর হ’তে থাকে। তাই , প্রথমেই বলে দেওয়া হয় সময় কম তাই বক্তব্য
সংক্ষিপ্ত করতে হবে।
পরিচালক বা উপস্থাপক যা-ই বলেন না কেনো বাঙ্গালী মাইক একবার হাতে পাইলে সহজে
কি আর ছাড়তে চায় ? কিন্তু তাদের অনেকেরই বক্তব্যে মূল প্রতিপাদ্য খুঁজে
পাওয়া যায়না। তবে বক্তব্যে যাই ই বলুক না কেন বক্তব্য শেষে দলের নেতা
বন্দনার কমতি হয় না। আর তার এই নেতা বন্দনায় বক্তার দুই তৃতীয়াংশ সময় চলে
যায় ।
আর উপস্থাপকই বা কম কিসে ? প্রতিটা বক্তব্য শেষে উপস্থাপকের সম্পূরক
বক্তব্য থাকতে হবে কেন ? অথচ তিনি নিজেই সময় স্বল্পতার জন্য বক্তব্য
সংক্ষিপ্ত বারবার তাগাদা দিয়ে থাকেন। একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপক যতো কম কথা
বলবে অনুষ্ঠানের মান এবং সৌন্দর্য ততোই বৃদ্ধি পাবে এটাই প্রতিষ্ঠিত সত্য ।
এরপর নেতা তোষামোদ করা প্রসঙ্গ -
নেতাদের পদবীর ভারে ভারাক্রান্ত থাকে সভা স্থল। এরপরও বক্তাদের বারবার তা
পুনঃউল্লেখ করে সম্বোধন করা সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয় । সংক্ষিপ্ত
বক্তব্যের মধ্যে সিংহভাগই চলে যায় মঞ্চে উপবিষ্টদের পদবী সহ পরিচয়
পুনঃউল্লেখ করায়। কথা হচ্ছে , মঞ্চে যারা উপবিষ্ট হন প্রথমেই তো তাদের পদবী
উল্লেখ করে মঞ্চে উপবিষ্ট করানো হয়ে থাকে। প্রত্যেক বক্তাকেই কেন মঞ্চে
উপবিষ্টদের পদবী সহ অভিবাদন জানাতে হবে ?
আর মঞ্চে যারা উপবিষ্ট হন , নিঃসন্দেহে তারা বিশিষ্ট , সন্মানিত
ব্যক্তিবর্গদের মধ্যে সেরা। নতুবা তারা সেখানে আসন পাবেন কেন ?
বিশিষ্টজনদের বিশিষ্টতা প্রসঙ্গে -
কিন্তু এইসব বিশিষ্টজনদের ক’জনা তাদের বিশিষ্টতা বজায় রাখতে পারেন ?
বলা হয় জাপান’র ম্যানার বিশ্ব সেরা । বিশিষ্টজনরাও তা ভালো করেই জানেন।
সবক্ষেত্রেই ম্যানার মানাটা জাপানের বৈশিষ্ট । কিন্তু জানা সত্বেও মঞ্চে
উপবিষ্টদের ক’জনা তা মানেন ?
মঞ্চে আসন নিয়ে , মোবাইল ব্যবহার করা , বারবার উঠে যাওয়া , কানাঘুষা করা ,
ঝিমুনি দেয়া কিংবা পা নাড়াচাড়া করা করা নিশ্চয় শোভনীয় নয় ! এখন বিশিষ্টজনরা
যদি এই অশোভনীয় কাজগুলি জনসম্মুখে করে তখনি প্রশ্ন উঠে ওইসব বিশিষ্টজনরা
আসলেই কি আসনের উপযুক্ত ? এটা কি জাপানীজ ম্যানার এর প্রতি সন্মান জানানো ?
হলের নিয়ম না মানা
জাপানের হল গুলিতে যে কোন আয়োজনে একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করা থাকে। ওই
সময়ের মধ্যেই সব কিছু শেষ করে হল বুঝিয়ে দেয়ার নিয়ম। কিন্তু প্রবাসীদের
আয়োজনে সে নিয়ম মানা হচ্ছে কি ?
দেখা যায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হল বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আয়োজকদের কেহ কেহ হল
গুছানোয় পরিশ্রম করে যাচ্ছেন । আবার কেহবা আড্ডায় মেতে কিংবা ছবি তোলায় পোজ
দিতে ব্যস্ত থাকেন ।
নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে হল বুঝিয়ে দেয়া যাচ্ছে খুব কম ক্ষেত্রেই।
মোদ্দা কথা হচ্ছে আমরা সব ক্ষেত্রে নিয়ম জেনেও তা মানছি না।
প্রবাসেও বাংলাদেশীরা দেশী স্টাইলে রাজনীতি কার্যক্রম পরিচালনা করছেন যা
মোটেও কাম্য নয় । এতে করে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
সংশোধিত হওয়াটা জরুরী।
সাপ্তাহিক জাপান প্রতিনিধি ।।
rahmanmoni@gmail.com
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|