|
|||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
|
(মতামত সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব)
রাহমান মনি
প্রসঙ্গ বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি , টোকিও কত দূর?
১৯৭০ দশকের কথা, আমজাদ হোসেন রচিত, নির্দেশিত এবং অভিনীত একটি নাটকের সংলাপ ছিল "দুবাই যামু টাকা দেন, টাকা দেন দুবাই যামু"। অর্থাৎ তখন টাকা হলেই দুবাই মানে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকরা যেতে পারতেন বা জনশক্তি রপ্তানি হতো। পূর্ব অভিজ্ঞতা বা শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সে দেশীয় ভাষা জানাটা পূর্বশর্ত হিসেবে কাজ করত না। ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশে আরেকটি জোয়ার উঠে জাপান আসার। ক্রমাগত জনসংখ্যা হ্রাস এবং বয়োবৃদ্ধদের ভারে নুহ্যমান জাপান শ্রমিক সংকটের মুখে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর জাপানের পার্লামেন্টে জনশক্তি নিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিল পাশ হয়। জাপানে জনশক্তি রপ্তানীর সেই দিক গুলো নিয়ে আজকের লেখা।
জাপানে কাজের ভিসার বর্তমান অবস্থা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যঃ ২০১৮-২০১৯ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে 'জাপানে বিদেশি বিশেষ দক্ষ কর্মী নিয়োগ' ছিল বিশেষভাবে আলোচিত এবং তা বর্তমানেও বলবৎ রয়েছে। পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল , সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য মাধ্যমে এমনভাবে তথ্য এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যে এর ফলে মূল বিষয়গুলো বুঝা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিডিয়াসহ সকলের কাছে অনুরোধ করছি এবিষয়ে কোন খবর বা প্রচারণা করতে চাইলে জাপান বিচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য যাচাই করে নিবেন দয়া করে। ২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে ২ ক্যাটাগরিতে ১৪ খাতে ৭৩ ধরণের পেশায় জাপানে বিদেশি বিশেষ দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য ২০১৮/১২/১৮ তারিখ পর্যন্ত ভিয়েতনাম, চীন, ফিলিপিন, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মায়ানমার, মঙ্গোলিয়া, নেপাল সহ ৮টি দেশের সাথে চুক্তি করে জাপান সরকার। এক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে বিবেচনা করা হয়েছে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় জাপানের আসা কোন দেশের কর্মীর সংখ্যার উপর। দেরিতে হলেও ২০১৯/০৮/২৭ তারিখে বাংলাদেশের সাথে জাপানে বিশেষ দক্ষ কর্মী নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তিপত্রটি জাপান বিচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। ( http://www.moj.go.jp/content/001303695.pdf)। একই সাথে অন্যান্য দেশের সাথে জাপানের চুক্তিপত্র দেখতে নিন্মের লিংকটি দেওয়া গেল (http://www.moj.go.jp/nyuukokukanri/kouhou/nyuukokukanri05_00021.html)।
বাংলাদেশ এই চুক্তি থেকে কতটুকু সুবিধা নিতে পারবে তা নিয়ে বাংলাদেশি জনগণ এবং জাপানে প্রবাসি বাংলাদেশিদের মাঝে একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর যথেষ্ট কারণও রয়েছে। এই কারণগুলো বিশ্লেষণ করতে হলে প্রথমে দেখতে হবে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ কতটুকু সফল হতে পেরেছে।
নিচের পরিসংখ্যানটি দেখুনঃ (জাপান বিচার মন্ত্রণালয়ের ডাটাবেজ অনুসারে )।
(সূত্রঃ http://www.moj.go.jp/housei/toukei/toukei_ichiran_nyukan.html)
উপরের পরিসংখ্যানটা সেই চিন্তার মূল কারণ। উপরের পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় বাংলাদেশ শোচনীয়ভাবেই ব্যর্থ। টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসার বিষয়বস্তু কি খুবই জটিল ছিল ? নাকি বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিদের ভুল পলিসি? না অন্য কোন কিছু? টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসার জন্য জাপানের সাথে বাংলাদেশের যে চুক্তিটি হয়েছে তার লিংক দেওয়া হল (জাপান বিচার মন্ত্রণালয়ঃ http://www.moj.go.jp/content/001246744.pdf) এবং টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় জাপান আসার পদ্ধিত নিচের লিংকে পাওয়া যেতে পারে। (জাপান বিচার মন্ত্রণালয়ঃ http://www.moj.go.jp/content/001223972.pdf )
টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসার জন্য জাপানে সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠান আছে ২০৫৭ টি। তার বিপরীতে বাংলাদেশ সরকার প্রেরক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাত্র ২ টি সরকারি এবং ২০১৯ সালে আরও ১১টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়। বর্তমানে জাপানের ২টি সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র বাংলাদেশের ২টি প্রেরক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করছে। জাপানের সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি কোন প্রেরক প্রতিষ্ঠানের সাথে কাজ করতে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না। কারণ , বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠান কোন কোম্পানি থেকে ডিমান্ড নোট পাওয়ার পরে সেটি বাংলাদেশ দূতাবাস জাপান থেকে অনুমোদন নিতে হয় এবং এইজন্য সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে ইন্টারভিউ ফেইস করতে হয়। যেটি অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে প্রায় নাই বলা যায়। ফলে জাপানের সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠান এবং কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে তেমন আগ্রহ দেখান না। যেহেতু জাপানের ভিসা প্রসেসিং মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর , সৌদি আরব বা অন্যান্য দেশের মতো নয় এবং জাপানে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় আসতে হলে প্রথমে সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের এলিজাবিলিটি(যোগ্যতা)'র জন্য জাপান ইমিগ্রেশনে আবেদন করতে হয়, জাপান ইমিগ্রেশন কর্মক্ষেত্র/কোম্পানির সমস্ত কিছু যাচাই-বাচাই করার পরেই কেবল এলিজাবিলিটি (যোগ্যতা) ইস্যু করে থাকে, তারপর কর্মীদেরকে নিজ নিজ দেশে অবস্থিত জাপান দূতাবাস থেকে স্বশরীরে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রতারিত হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। তাই কোম্পানি থেকে পাওয়া ডিমান্ড নোট বাংলাদেশ দুতাবাস, জাপান থেকে অনুমোদন বা সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠানের ইন্টারভিউ নেওয়ার মত অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বাদ দেওয়া হলে বাংলাদেশের জন্য ভাল হবে বলেই জাপানে প্রবাসি বাংলাদেশীরা মনে করেন। ধরে নেয়া যাক, বাংলাদেশে যদি ১০০০ প্রেরক প্রতিষ্ঠান থাকতো এবং জাপানের ১০০০ সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠানের সাথে তারা কাজ করতে পারত তাহলে উপরে দেওয়া পরিসংখ্যান বাংলাদেশের জন্য ভিন্ন হতে পারতো নিঃসন্দেহে। টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসার জন্য জাপানের সাথে বাংলাদেশের চুক্তিপত্রে প্রেরক প্রতিষ্ঠানের জন্য যেহেতু কিছু গাইড লাইন দেওয়া ছিল সে অনুযায়ী বাংলাদেশ চাইলে প্রেরক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অনুমোদিত ১২২১টি রিক্রুটং এজেন্সি (কর্মসংস্থান শাখাসহ) জাপানিজ ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাপানের জন্য প্রেরক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তালিকাবদ্ধ করতে পারলে এক্ষেত্রে আরও সুবিধা আদায় করা যেত।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সচিব কর্তৃক একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাতকারে বলা হ'লো সরকারি ভাবে ছাড়া টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় জাপান যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। আসলে তিনি জাপানের সাথে হওয়া টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসার চুক্তিপত্রটি এবং পদ্ধতিগত বিষয় গুলো বুঝতে পেরেছেন কিনা তা নিয়ে জাপান প্রবাসিদের মনে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার বক্তব্যটি নিচের লিংক থেকে পাওয়া যাবে । ( https://www.youtube.com/watch?v=WQDyy8uXb_s )
বাংলাদেশ সরকার প্রথমে শুধু সরকারি ২টি প্রতিষ্ঠানকে প্রেরক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার অন্য কারণটি অর্থনৈতিক ব্যাপার জড়িত থাকতে পারে। কারন, জাপানের শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতিজন টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় জাপান আসা কর্মীর সুপারভিশন খরচ বাবদ প্রতিমাসে প্রেরক প্রতিষ্ঠান ভাল অংকের অর্থ পেয়ে থাকে। এভাবে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় আসা কর্মী যতো বছর জাপান থাকবে ততো বছর-ই এই অর্থ প্রেরক প্রতিষ্ঠান পাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত অন্য এক সময় ইচ্ছা ব্যাক্ত করছি।
এবার জাপানে বাংলাদেশি স্টুডেন্ট ভিসার পরিসংখ্যানটা দেখা যাক। (জাপান বিচার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে)
পরিসংখ্যান থেকে দেখা যাচ্ছে যে, টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসার তুলনায় স্টুডেন্ট ভিসায় জাপান আসা বাংলাদেশিদের সংখ্যা মোটামুটি ভাল। বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানিজ ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং করে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে কতো গুলো জাপানিজ ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও মোটামুটি ৮০ টির মতো হতে পারে। এ সংখ্যা হয়তো আরো বাড়বে। যেহেতু এসব ক্ষেত্রে জাপান আসার জন্য জাপানিজ ভাষা জানা টা জরুরী, সেহেতু সরকারের উচিত হবে প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা জরিপ শেষে একটা নীতিমালা তৈরি করে তাদেরকে কাজে লাগানো। একই সাথে স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের বাধাগুলো দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার জাপান সরকারের সাথে ডিপ্লোম্যাটিক পর্যায়ে আলোচনা করা যেতে পারে। বিশেষ দক্ষ কর্মী ভিসার দিক গুলো দেখে নেয়া যাক । জাপানে বিশেষ দক্ষ কর্মীর ক্ষেত্রে ২ ক্যাটাগরির ভিসা ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ক্যাটাগরি- ১, এই ক্যাটাগরিতে পর পর ১ বছর, ৬ মাস এবং ৪ মাস অন্তর ভিসা রিনিউ করে ৫ বছর কাজ করার সুযোগ পাবে তবে তারা ফ্যামিলিসহ জাপানে বসবাসের সুযোগ পাবে না। কনস্ট্রাকশন , জাহাজ নির্মান এবং মেরিন ইন্ডাস্ট্রিজ ফিল্ডের ক্ষেত্রে একটু ব্যাতিক্রম। এই ফিল্ড-এ ক্যাটাগরি-১ থেকে ৫ বছর পরে ক্যাটাগরি-২ এর জন্য আবেদন করতে পারবে।
ক্যাটাগরি-২, যাদের স্বস্ব ক্ষেত্রে উচ্চতর ডিগ্রী থাকবে এবং জাপানিজ ভাষায় পারদর্শী হবে, তারা আজীবন জাপানে কাজ করার এবং পরিবারসহ বসবাসের অনুমতি পাবেন। ক্যাটাগ্রি-২ এর কার্যক্রম শুরু হবে ২০২১ সাল থেকে।
২০১৯ সালের এপ্রিল থেকে আগামী ৫ বছরে চুক্তি হওয়া দেশগুলো (আরও কয়েকটি দেশের সাথেও চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে) থেকে কোন ক্যাটাগরিতে কতজন বিশেষ দক্ষ শ্রমিক আনবে তার একটা তালিকা জাপান বিচার মন্ত্রণালয়ের ওয়েব সাইটে দেওয়া আছে।কোন দেশের জন্য আলাদাভাবে কোন কোটা থাকবেনা। তালিকা অনুসারেঃ
বিশেষ দক্ষ কর্মী প্রেরণ এবং গ্রহণ পদ্ধতি বাংলাদেশের সাথে জাপানের চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশের যে সমস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকার কর্তৃক অনুমোদন প্রাপ্ত, জাপানে কর্মী প্রেরনের জন্য তারাই হবে প্রেরক প্রতিষ্ঠান (Sending Organization, জাপানিজ ভাষায় অকুরিদাশি খিকান ) । আর জাপান সরকারের অনুমোদিত যে সমস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জাপানে যাওয়ার পরে বিশেষ দক্ষ কর্মীদের সকল প্রকার দিকনির্দেশনা এবং সহযোগিতা করবে-তারাই হবে জাপানে সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠান (Specific Skills support Organization, জাপানিজ ভাষায় তোকুতেই গিনো শিএন খিকান) । একজন কর্মী দক্ষতার পরীক্ষায় পাস হওয়ার পরে দুই দেশের দুই প্রেরক প্রতিষ্ঠান এবং সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে জাপানে যাওয়ার পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে এবং দুই দেশের সরকার এই প্রক্রিয়াটি মনিটরিং করবে। দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী সরকারিভাবে বিশেষ দক্ষ কর্মী প্রেরণ বা গ্রহনের কোন সুযোগ নাই। (সূত্র http://www.moj.go.jp/content/001303695.pdf ) বাংলাদেশ সরকার চাইলে বাংলাদেশের প্রেরক প্রতিষ্ঠানগুলো জাপানের সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠানের সাথে কিভাবে লিংক আপ হবে বা কাজ করবে সেক্ষেত্রে জাপানের বসবাসকারি দক্ষ বাংলাদেশিদেরকে কাজে লাগাতে পারে এবং বাংলাদেশে যেসমস্ত জাপানিজ ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরকেও প্রেরক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজে লাগাতে পারে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশে যদি দক্ষতার পরীক্ষায় পাস করা হাজার হাজার দক্ষ কর্মী থেকেও থাকে- এতে কোনই লাভ হবে না যদি কর্ম ক্ষেত্র/কোম্পানি পাওয়া না যায় এবং জাপান সরকার বা সরকারি কোন সংস্থা কর্মক্ষেত্র/কোম্পানী খোঁজে দিবেনা।
বিশেষ দক্ষ কর্মী প্রেরণ এবং গ্রহণ পদ্ধতিটি সহজ ভাবে বুঝার জন্য নিচের প্রবাহ চিত্রটি ভালভাবে দেখুন।
বিশেষ দক্ষ কর্মী জাপানের জন্য বিশেষ দক্ষ কর্মী হতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোন বাধ্যবাধকতা নাই। তবে বয়সের ক্ষেত্রে অবশ্যই ১৮ বছরের উপরে হতে হবে। ১৮ বছর থেকে কতো বছর পর্যন্ত বয়স হতে হবে সেটা কর্ম ক্ষেত্রের কোম্পানির উপর নির্ভর করবে। সূত্রঃ Japan Ministry of Justice -এর লিংক এর ৩ নং পাতায় দেওয়া আছে। (http://www.moj.go.jp/content/001290040.pdf)
বিশেষ দক্ষ কর্মী হতে হলে দুটি পরীক্ষায় অবশ্যই পাস করতে হবে। জাপানিজ ভাষার দক্ষতা এবং নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের কম্পিউটার বেস স্কিল(CBT) টেস্ট /পেপার টেস্ট। তবে যারা আগে জাপান থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং শেষে স্ব স্ব দেশে ফিরে গেছেন, তাদেরকে বিনা পরীক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
জাপানিজ ভাষার দক্ষতাঃ বিশেষ দক্ষ কর্মীর ক্ষেত্রে জাপান আসার পরে কর্মক্ষেত্রে এবং সাধারণ জীবনযাপনের যোগ্য প্রয়োজনীয় জাপানিজ ভাষা শিক্ষার উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং এ যোগ্যতা নির্ধারিত হবে জাপানিজ ভাষার পরীক্ষার মাধ্যমে। জাপান ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত Japanese Language Proficiency Test (JLPT Level-N4) অথবা Japan Foundation Test for Basic Japanese (JFT-Basic) পাস করতে হবে, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে (ভিসা ক্যাটাগরি-২) JLPT-N3 ও চাইতে পারে। নার্সিং কেয়ারের জন্য আরও একটি জাপানিজ ভাষা পরীক্ষায় পাস করতে হবে; সেটি হল Japanese for Nursing care। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ বার Japanese Language Proficiency Test অনুষ্ঠিত হয় জুলাই মাসের প্রথম রবিবার এবং ডিসেম্বার মাসের প্রথম রবিবার। Japan Foundation Test for Basic Japanese (JFT-Basic) এখনও বাংলাদেশে চালু হয়নি। এবছর বা আগামী বছরের মধ্যে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জানা মতে, যে কেউ প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে পড়ালেখা করলে ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে জাপানিজ ভাষার এই লেভেল পাস করা সম্ভব।
দক্ষতার কম্পিউটার বেস স্কিল (CBT) টেস্ট/ পেপার টেস্টঃ দক্ষতার পরীক্ষার ব্যাপারটি অনেকেই বুঝতে পারছেন বলে মনে হয় না। বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশ থেকে ৩ মাস বা ৬ মাস ট্রেনিং করে কি জাপানের জন্য দক্ষ কর্মী হওয়া সম্ভব? তাহলে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ কর্মী টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় জাপানে ট্রেনিং নিতে আসে কেন ? এটা সম্পুর্ণ ডিপেন্ড করবে কর্ম ক্ষেত্র/কোম্পানি বা কোম্পানির এ্যাসোসিয়েশনের উপর। যাই হোক, শর্তমতে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রের দক্ষতার পরীক্ষায় অবশ্যই পাস করতে হবে। পরীক্ষাগুলো স্বস্ব মাতৃভাষায় হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য বাংলা ভাষায় (কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইংরেজি এবং জাপানিজ ভাষায় ও হতে পারে)। ১৪ ফিল্ডের এ্যাসোসিয়েশনের নির্ধারিত কারিকুলামের বই পড়ে কম্পিউটার বেস স্কিল (CBT) টেস্ট/পেপার টেস্ট মাধ্যমে দক্ষতা যাচাই করা হবে। বর্তমানে চুক্তি হওয়া কয়েকটি দেশে এ পরীক্ষা চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দেশেও চালু করা হবে। জাপানে স্টুডেন্ট ভিসায় বসবাসকারী ছাত্ররাও এই পরীক্ষা দিয়ে বিশেষ দক্ষ কর্মী ভিসায় কাজ করার সুযোগ থাকবে।
জাপানে বিশেষ দক্ষ কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ কতটুকু সফল হতে পারবে? এই উত্তর পেতে হলে কয়েকটি বিষয় নিয়ে গভীর ভাবে ভাবতে হবেঃ ১। বাংলাদেশ কেন টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় ব্যর্থ হল ? ২। প্রেরক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন প্রথম দিকে শুধু সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হল? ৩। জাপানে ২০৫৭টি সাপোটিং প্রতিষ্ঠান থাকতে কেন মাত্র ২ টি সাপোর্টিং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে? ৪। জাপানের বিষয়গুলো বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সঠিকভাবে বুঝতে না পারলে, অন্য যে সকল দেশ টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং ভিসায় সফল তাদের পলিসি গুলো ফলো করছেনা কেন ? এই প্রশ্নগুলো জাপানে বসবাসকারি সকল প্রবাসি বাংলাদেশিদের মনে প্রতিনিয়ত পীড়া দিচ্ছে।
শুরুটা করেছিলাম ৭০দশকে টাকা হলেই দুবাই মানে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকরা যেতে পারতেন বা জনশক্তি রপ্তানী হ'তো । পূর্ব অভিজ্ঞতা বা শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সে দেশীয় ভাষা জানাটা পূর্ব শর্ত হিসেবে কাজ করতো না। আর দেশগুলো ছিল মধ্যপ্রাচ্য । আর বর্তমানে ২০১৯ সালের জাপান। শুধু টাকা হলেই জাপান আসা যাবে না। থাকতে হবে যোগ্যতা এবং প্রমান করতে হবে দক্ষতার । কম হলেও জাপানী ভাষার লেবেল N4 এর সনদ যোগ্যতার ভাণ্ডারে জমা থাকতে হবে । তার উপর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন ধাপ পেড়িয়ে তবেই জাপান আসা যাবে, নতুবা নয়। আমরা প্রবাসিরা চাই বাংলাদেশ সকল ক্ষেত্রে সফল হউক।
তথ্য-উপাত্ত সহযোগিতায়- ইয়াগুচি সুমন জসিম উদ্দিন
সাপ্তাহিক এ প্রকাশিত
rahmanmoni@kym.biglobe.ne.jp
ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. |
|