|
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
রাহমান মনি
ভাই সম্বোধনে দোষের
কিছুই নেই, এবং তিন নাম্বার
একটু বেশীই কৌতূহলী ছিলাম বিধায় ছোট বেলা
থেকেই একটি প্রশ্ন সব সময় মাথার ভিতর ঘুরপাক খেতো । জানার খুব ইচ্ছে হ’তো ।
প্রশ্নটি হলো, যাদেরকে সব সময় চাচা , মামা , খালু , ফুফা , আংকেল সম্বোধন
করে এসেছি , ভোটের সময় এলেই এবং তাঁদের কেহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে ( সে সময়ে
আমাদের ভাষায় নির্বাচনে খাড়ালে ) হটাত করে তাঁরা ভাই হয়ে যান কিভাবে ?
ইচ্ছা থাকলে কি হবে , বড়দের কাছে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেয়ার সাহস কোনদিনই হ’ত
না । আর একেবারে ছেলে বেলায় যদিওবা জানার চেষ্টা করতাম , বড় হ’লেই জানতে
পারবে বলে সবাই থামিয়ে দিতেন । আবার কেহবা ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা
করতেন ।
আর যারা একটু সহানুভূতি ছিলেন তারা ছেলে ভুলানোর মতো করে বলতেন অসুবিধা নেই।
এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই ভাই । তা না হয় মানলাম , তাই বলে কি নিজের
জন্মদাতা বাপকেও ? তাও কি সম্ভব ! তখন বুঝিনি এইটা কথার কথা ।
না হয় ধরে নিলাম , এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই ভাই । কিন্তু নির্বাচনে
তো অনেক ভিন্ন ধর্মের লোকও তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন এবং তাদের
নির্বাচনী মিছিলেও তো দিব্যি বিভিন্ন ধর্মের লোকজন যোগ দিয়ে থাকে । অমুক
ভাই , তমুক ভাই বলে তারাও তো গগনবিদারী স্লোগান দেয় ।
তৎকালীন ‘যাযাদি’ “ভোট” নিয়ে একটি বের করেছিল ২০০১ সালে । সেই সময়ের ভোট
দেয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেকেই লিখেছিলেন । তখন অবশ্য যার যার ভোট সে নিজেই
দিতে পারতো । তাই , ‘আমার ভোট আমি দিব , যাকে খুশী তাকে দিব’বলে নির্বাচন
কমিশন কর্তৃক প্রচারাভিযান চালানো হ’ত । বর্তমানে অবশ্য ‘তোমার ভোট আমি নিবো
, যাকে খুশী দিয়ে দিবো’ প্রযোজ্য । জানিনা এখন অভিজ্ঞতা নিয়ে কেহ লিখতে
পারবেন কিনা ! কারনটা সবারই জানা ।
মুন্সিগঞ্জ শহরের কে,কে, গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউশনে পড়াশুনা এবং শহরের
প্রাণকেন্দ্র মাঠপাড়া নামক গ্রামে বসবাস ছিল । মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে
মাঠপাড়া থেকে কারোর প্রতিনিধিত্ব থাকবে না সে সময় তা ভাবাও যেতো না ।
শিশুকাল থেকেই শুনে আসছি আনু মোল্লা মেম্বার ( শ্রদ্ধেয় আনোয়ার হোসেন মোল্লা
) এর নাম । তাঁকে দেখলেই কেমন যেনো একটা শ্রদ্ধা/ভক্তি এসে যেত । প্রথমত উনি
বয়োজ্যেষ্ঠ ছিলেন , দ্বিতীয়ত তার ছোট ছেলে ছিল আমার সহপাঠী । সর্বোপরি
মেম্বার শব্দটি আমাদের কাছে অনেক সন্মানের এবং শ্রদ্ধার ।
যাই হউক , আমার সহপাঠী জাকির হোসেন মিল্টন এর বাবা শ্রদ্ধেয় আনু মোল্লা
মেম্বার যথারীতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন । তার নির্বাচনী প্রতীক
হচ্ছে ‘চেয়ার’ । মিল্টন আমাকে অনুরোধ করলো সন্ধ্যার পর যেন তার বাসার সামনে
থাকি , নির্বাচনী প্রচারের মিছিল হবে ।
কিন্তু আমার শ্রদ্ধেয় পিতা কোন মিছিল মিটিং এ যোগ দেই তা একেবারে পছন্দ
করতেন না এবং কড়া বিধি নিষেধ ছিল যেখানেই থাকিনা কেনো এবং যতোই ব্যস্ততাই
থাকুক না কেনো মাগরিব নামাজের আজানের আগেই স্বশরীরে বাড়ীতে উপস্থিত থাক্তেই
হবে । এর কোন বর্তায় ঘটানো যাবে না । আব্বার কথার নড়চড় করার সাহস আমাদের
কারোরই ছিল না ।
আমার শ্রদ্ধেয় পিতা যে সন্ধ্যার পর বের হতে দিবেন না এই ব্যাপারে শতভাগ
নিশ্চিত থাকায় মায়ের কাছে আবদার ছাড়া আর যে কিছুই করার নেই এই ভেবে মায়ের
কিছু অতিরিক্ত কাজে মনোযোগী হই অনুমতি পাওয়ার আশায় । কিন্তু বন্ধুর বাবা বলে
কথা তাই, তাই মায়ের অনুমতি পেতে তেমন বাগ পেতে হয় না । শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি
মিলে যায় ।
কিন্তু নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে দেখি সবাই আনু ভাই , আনু ভাই বলে শ্লোগান
দিচ্ছে ।
যাকে নাকি ছোট বেলা থেকে কাকা কাকা বলে ডেকে এসেছি , সেই তাঁকে কিনা আজ নাম
ধরে এবং ভাই বলে বলতে হবে ! না ,কিছুতেই অতোবড় বেয়াদবী করা যাবে না । তাই
নিচু গলায় আনু কাকা আনু কাকা বলে যাচ্ছি ।
মিল্টন তো আনু কাকা শুনে মহাক্ষেপা । ওর কথা হলো সবাই যা বলে তুইও তাই-ই
বলবি । সে নিজেও আনু ভাই আনু ভাই বলে গলা ফাটিয়ে ফেলছে ।
আলাপচারিতায় মিল্টনকে জিজ্ঞাসা করলাম , কিরে বেটা তোর না বাপ ! তাহলে এতো
আনু ভাই আনু ভাই বলছিস কেন ? ওর উত্তর শুনে তো আমার মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার
দশা । নির্বাচনের মিছিলে নাকি বাপকেও ভাই বলা যায় এবং এতে নাকি দোষের কিছুই
নেই ।
কিন্তু ওইটুকু বয়সে সত্য মিথ্যা যাচাই করতে না পারায় মনে হয়েছে ভোট আসলে
বোধ হয় সম্পর্কও বদল হয়ে যায় , ভোট শেষ হলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায় ।
তাই , আমিও আমার ভাই তোমার ভাই , আনু ভাই আনু ভাই বলে চেয়ার মার্কার জন্য
গগনবিদারী আওয়াজ তোলে শ্লোগান দিতে থাকলাম ।
এখন মনে হচ্ছে আসলে আমি ছিলাম ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো । অর্থাৎ
ছাগলের তিনটি বাচ্চা থাকলে, দুইটিকে দুধ পান করতে দেখে তিন নাম্বারটি যেমন
লাফাতে থাকে । তেমনি অন্যান্য লোকদের এবং মিল্টনকে ভাই বলতে দেখে আমিও আনু
ভাই বলা শুরু করেছিলাম । অর্থাৎ --- তিন নাম্বার ।
দেশ থেকে এর হয়েছি তাও তিন যুগ । জানিনা আগের মতো মার্কা নিয়ে সন্ধ্যার পর
মিছিল করা হয় কিনা । যুগের সাথে অবস্থারও পরিবর্তন হয়ে । এর উপর আবার
সম্প্রতি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত কিংবা আগের দিন ভোট নিয়ে নেয়ার
সংস্কৃতি চালু হয়েছে ।
সব কিছুতেই আমরা নিজেদের মডেল দাবী করতেই পারি !!
rahmanmoni@gmail.com
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
আরও দেখুন.....
.
আরও দেখুন.....
-
করোনায় জাপান - নাইট ক্লাব বন্ধ, স্কুল
কলেজ সব খোলা, করোনায় বাংলাদেশ- নাইট ক্লাব খোলা আর স্কুল কলেজ সব!!
-
আমাদের
ছেলেবেলা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম?
-
শিক্ষার্থী
ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
-
বাসায়
গৃহকর্মীর প্রতি মানবিক হওয়াটা জরুরী
-
বাংলাদেশীদের
জন্য মহিয়সী এক জাপানি মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং আমার অযোগ্যত
-
দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী জাপানী এক বস-এর গল্প
-
জগতখ্যাত
জাপানী সততা
-
জাপানে
সাকুরা উৎসব, করোনায় ভাটা
-
জাপানে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন মিডিয়ার ভূমিক
-
সাংবাদিকতায়
নিরপেক্ষতা বলতে স্থায়ী কিছু নেই
-
সব
ঘটনা-ই ‘নিউজ’ হওয়া উচিত নয়
-
প্রবাসে
করোনা হলে জানান দিন, লুকোবার কিছুই নাই, আপনার করণীয়টা পালন করুন
-
জাপানের
ওকিনাওয়ার মাটিতে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা মুন্সিগঞ্জ এর জাকির খান
-
জাপানে
অব্যাহত জন্মহ্রাসের ভয়াবহ চিত্র
-
দৈনন্দিন
কর্ম কান্ডে একজন জাপানী মা
-
দেশী
স্টাইলে প্রবাসের রাজনীতি, সংশোধন হওয়া জরুরি
-
বাংলাদেশে
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে ড. তপন পালের প্রক্ষেপণ সঠিক হতে যাচ্ছে
-
রেকর্ড
গড়ে ইতিহাসে স্থান নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে
শিনযো
-
শ্রদ্ধাঞ্জলি– স্মৃতির মনি কোঠায়
মুন্সিগঞ্জ এর ধোপা স্যার
-
জাপান
প্রবাস জীবনে আমার কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হ’বার
গল
-
প্রবাসীদের
জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিবন্ধন জরুরি কেন
-
প্রসংগ
- হলুদ সাংবাদিকতা, দুর্মুখদের শেষ অস্ত্র
-
জাপানকে জানার জ্ঞানকোষ হতে পারে ডঃ আশির আহমেদ এর ‘জাপান কাহিনি’
-
প্রসঙ্গ
জাপানে লকডাউন, বাস্তবতা
-
স্মৃতির
মণিকোঠায় সাংবাদিক সফিউদ্দিন আহমেদ ভাই
-
একজন
প্রবাসী মায়ের সফলতার গল্প
-
জাপান
প্রবাসী বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন সমূহের প্রতি বিশেষ অনুরোধ
-
টোকিও
শহীদ মিনার পুনঃস্থাপন, সাংবাদিক হিসেবে আমার কৈফিয়ত
-
জাপানে
সবচেয়ে বড় মসজিদ “বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স” বাস্তবায়নে প্রয়োজন সবার
সহৃদয় সহযোগিতা
-
প্রসঙ্গ
বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি , টোকিও কত দূর?
-
জাপানে
বাংলাদেশী দক্ষ জনশক্তি রপ্তানীর দ্বার উন্মচিত
-
গণপিটুনি
অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত
-
জাপান
কাহিনী এবং একজন ডঃ আশির আহমেদ
-
জাপান
বিএনপি'র প্রতিবাদ প্রতিহতের অপচেষ্টা
-
নিয়ম
জেনেও না মানার প্রবনতা বন্ধ হওয়াটা জরুরী
-
জাপানে
বৈশাখী মেলা, আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
-
উৎসব
মুখর পরিবেশে জাপানে শিক্ষা জীবন শুরু হয়
-
কোরিয়া
স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে "ওয়ান কোরিয়া" শ্লোগানে গ্লোবাল পিস কনভেনশন
২০১৯ অনুষ্ঠিত
-
জাপানে
আমার সেকাল – একাল
-
একজন
প্রবাসীর সুখ দুঃখ
-
বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে ফুকুশিমা'তে বসতে যাচ্ছে টোকিও
অলিম্পিক – প্যারা অলিম্পিক ২০২০ এর আসর
-
একটি
কবরস্থান প্রতিষ্ঠায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগ
|