প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

(মতামত সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব)

 

 

রাহমান মনি                                          

 

 

জাপানে সবচেয়ে বড় মসজিদ “বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স” বাস্তবায়নে প্রয়োজন সবার সহৃদয় সহযোগিতা

 

 

 

জাপানে এ যাবত কালের সবচেয়ে বড় মসজিদ “বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স” গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রয়োজন সবার সহৃদয় সহযোগিতা। সকলের আন্তরিক সহযোগিতাই পারে এমন একটি মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়নে লক্ষ্যমাত্রায় পৌছতে । মূল প্রকল্পটি’র বিস্তারিত জানার আগে জেনে নেয়া যাক প্রকল্প সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারনা দেয়া প্রয়োজন। টোকিও স্কাইট্রি থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার উত্তরে এবং রাজধানী টোকিও সীমানা থেকে মাত্র ১০ মিনিটের গাড়ি চালনার পথ সাইতামা প্রিফেকচার-এর কোশিগায়া সিটির গামো এলাকায় “বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স” প্রকল্প। ‘টোকিও স্কাইট্রি লাইন’ এর ‘গামো’স্টেশন থেকে পায়ে হাটার পথ এবং প্রসিদ্ধ ৪ নং রোড-এর বাইপাস সড়কের মাত্র এক মিনিটের গাড়ি চালনার দূরত্বে প্রকল্পের অবস্থান।

 

জাপানী হিসেবে ৪৫৩ সুবো বা ১,৫০০ বর্গ মিটার এর আয়তন বিশিষ্ট ভূখণ্ডটি ছিল মুলত একটি ক্যাসিনো বা ‘জাপানী পাচিনকো’যা বর্তমানে আর ব্যবহার হচ্ছে না। ১৯৯৬ সালে ৭০ বছর মেয়াদি প্রতিষ্ঠা পাওয়া ইমারতখানাটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অত্যন্ত খোলামেলা পরিবেশে প্রতিষ্ঠিত। যার তিন পাশেই রয়েছে গাড়ি চলাচলের পথ। বর্তমানে একসাথে ৩০টি মোটরযান এবং ৫০টি বাইসাইকেল ( ৫০টি মোটরযান এবং শতাধিক বাইসাইকেল রাখার মতো নবায়ন যোগ্য ) রাখার সুবিধা রয়েছে নির্বাচিত স্থানটিতে। রয়েছে রসদঘর, অফিস রুম, বৈঠকখানা, শিশুদের প্লে – গ্রাউন্ড এবং অন্যান্য সুবিধা সমূহ।

 

প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮,০০,০০,০০০ ইয়েন বা ১.৭ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার বা জাপানী ভাষায় ১৮ হাজার মান ইয়েন। যার মধ্যে মূল গাড়ি পার্কিং এবং শতাধিক ভুমি বাবদ ১৫.৫ হাজার মান এবং রেজিস্ট্রি ও পুনর্গঠন বাবদ ১,৫০০ মান ইয়েন। তবে , একসাথে সব পরিশোধ না করে কয়েক কিস্তিতে পরিশোধ যোগ্য।

 

ইতোমধ্যে ৭ হাজার মান ইয়েন পরিশোধ করা হয়েছে । যার সর্বশেষ কিস্তি হিসেবে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯ দুই হাজার মান ইয়েন পরিশোধ করা হয়।

 

জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশ সহ অন্যান্য দেশীয় মুসলিম ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিনা সুদে এবং সহজ শর্তে পরিশোধযোগ্য ৫.৫ হাজার মান ইয়েন এবং ৩ হাজার মান ইয়েন প্রাপ্তির মৌখিক প্রতিশ্রুতি ( কেবলি আশ্বাস , নিশ্চিত নয় ) পাওয়া গেছে ।

 

৩০ অক্টোবর ২০১৯ কিস্তি বাবদ আরো ২ হাজার মান ইয়েন এবং ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ অর্থ পরিশোধ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নতুবা সুযোগটি হাত ছাড়া হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

এমতাবস্তায় ব্যবস্থাপনাকারীদের পক্ষ থেকে প্রবাসে সচেতন মুসলিম সমাজের সহৃদয় ব্যক্তিবর্গের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করা হয়েছে এবং জরুরী ভিত্তিতে। সকলের আন্তরিক এবং আর্থিক সহযোগিতায় ই কেবল পারে এমন একটি মহতী উদ্যোগকে সাফল্যের মুখ দেখাতে।

 

এখন দেখা যাক “বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স” বাস্তবায়িত হলে কি কি সুবিধা প্রবাসীরা ভোগ করতে পারবেন । বহুমুখী সুবিধা সমৃদ্ধ বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স প্রকল্পে সুবিধা সমূহ একটু আলোকপাত করা যেতে পারে।

 

১, সালাত আদায় – প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে আদায় করা যাবে এবং একসাথে ১,০০০ জন মুসল্লী নামাজ পড়ার সুবিধা থাকবে যা জাপানে এযাবত কালের সর্ব বৃহৎ । সংস্কারের পর মহিলাদের জন্য আলাদা নামাযের জন্য স্থান করা হবে যেখানে ৫০০ জন এক সাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন। অর্থাৎ মোট ১,৫০০ মুসল্লী একই সাথে নামাজ পড়ার সুযোগ পাবেন।

 

২, দোয়া ও ইসলামিক সংস্কৃতি বিকাশ – থাকবে ইসলামিক সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। জাপানী সহ অন্যান্য ভিজিটররা ইসলামী ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সম্পর্কে সম্যক জ্ঞ্যান অর্জন করতে পারবেন।

 

৩, কোরআন এর আলোকে আলোচনা - ছুটির দিনগুলিতে কোরআন ও সুন্নাহ’র আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। থাকবে প্রশ্নোত্তর পর্ব।

 

৪, ঈদ/ধর্মীয় উৎসব পালন – বিভিন্ন দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠী কে নিয়ে ঈদ উৎসব সহ ইসলাম ধর্মীয় বিভিন্ন উৎসবের বিভিন্ন আয়োজন সহ পারিবারিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করার সুযোগ থাকবে বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স প্রকল্পে ।

 

৫, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিদ্যালয় – জাপানে বসবাসরত মুসলীম শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ‘হিফজুল কোরআন মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করা হবে । যেখানে নারী ও পুরুষের জন্য স্ব স্ব লিঙ্গের শিক্ষকদের দ্বারা কোরানে হাফেজ তৈরিতে শিক্ষা দেয়া হবে।

 

৬, কমিউনিটি হল এবং কিচেন – প্রবাসীদের অনুষ্ঠান বিশেষ করে খাবার উপযোগী হল পাওয়াটা দীর্ঘ দিনের সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে মসজিদ কমপ্লেক্সে কিচেন সহ একটি হল রুম এর ব্যবস্থা রাখা হবে।

 

৭, নারীদের জন্য ভিন্ন প্রার্থনা রুম – ইসলামিক শরিয়ত মোতাবেক নারীরা যেনো পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন রুমে সালাত আদায় করার ব্যবস্থা করা হবে। যেখানে একসাথে ৫০০ মুসল্লী জামাতে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হবেন।

 

৮, জানাজা দেয়ার ব্যবস্থা – বর্তমানে মসজিদগুলোতে ওজু করার স্থানে মৃতের গোসল করানো হয়ে থাকে। এতে করে বেশ বেগ পেতে হয়। কিন্তু বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্সে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃতের গোসল দেয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান , মৃতের জন্য দাফনের যাবতীয় সরঞ্জাম পাওয়া যাবে এবং মৃতের নামাজে জানাজার ব্যবস্থা থাকবে।

 

৯, গাড়ি পার্কিং সুবিধা – ৩০টি মোটরকার এবং ৫০টি বাইসাইকেল পার্কিং সুবিধা রয়েছে বর্তমান অবকাঠামোতে । রি-ফর্ম করার পর এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা যাবে।

 

১০, ইসলামিক রিচার্স সেন্টার – প্রকল্পে ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার থাকবে। যেখানে ইসলামকে নিয়ে গবেষণা করতে পারবেন দেশী বিদেশী গবেষকগণ। জাপানী শিক্ষার্থীরাও এ সুযোগ পাবেন। ধারনা নিতে পারবেন ইসলাম সম্পর্কে।

 

১১, খাবারের রেস্তোরাঁ – অনেক সময় মুসল্লীগন মসজিদ এর আশপাশে হালাল খাবারের সমস্যায় ভুগেন। বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্সে হালাল খাবারের রেস্তোরাঁ থাকবে। নন মুসলিমরা ইসলামিক খাদ্য সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারনা নিতে পারবেন।

 

১২, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে আশ্রয় কেন্দ্র – প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে জাপানের আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে অনেক সময় শরিয়ত বজায় রাখা সম্ভব হয় না। সেই সমস্যা অনেকটাই দূর হবে বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স আশ্রয় কেন্দ্রে। তবে , শুধু মুসলীমদের জন্যই নয়, আশ্রয় কেন্দ্র সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

 

13, সমৃদ্ধশালী গ্রন্থাগার – মুসলীম এবং নন মুসলীম সবার জন্য উপযোগী সমৃদ্ধশালী একটি গ্রন্থাগার থাকবে বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্সে। স্বাভাবিকভাবেই ইসলামিক বইয়ের প্রাধান্য থাকবে। এবং

 

১৪, আবাসন সুবিধা - জাপান সফররত ইসলামিক স্কলার/অতিথিদের জন্য খন্ডকালীন থাকার ব্যবস্থা থাকবে ।

 

এতদসব আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি মসজিদ কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা জাপান প্রবাসীদের জন্য নিশ্চয় গৌরবের এবং প্রশংসনীয় উদ্যোগ তা নিঃসন্দেহে বলা যায় । আর এই গৌরবময় অধ্যায়ের শরীক হওয়াটাও ভাগ্যের ব্যাপার। সবার ভাগ্যে তা জোটেনা । কিছু কিছু সৌভাগ্যবানদের ভাগ্যে জোটে । সেই সৌভাগ্যবানদের মধ্যে আপনার অংশ গ্রহন থাকবে না কেন ? সুযোগ যেহেতু হাতের মুঠোয় , তাই আসুন আমরা সবাই মিলে তা কাজে লাগিয়ে আমাদের ভবিতষৎ প্রজন্মের জন্য একটি ভালো কাজের অংশীদার হই।

 

এছাড়া আল- বুখারী এবং সহীহ মুসলিম হাদিস অনুযায়ী “যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র নৈকট্য লাভের জন্য মসজিদ নির্মাণ করলো , তার জন্য আল্লাহ্‌ তায়ালা জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন ।” এই হাদিস মোতাবেক সম্মিলিত উদ্যোগে মসজিদ নির্মাণেও সহযোগিতাকারী সকলেই সমান ছোয়াবের অধিকারী হবেন।

অনুদান পাঠানো এবং যোগাযোগের জন্য সংযোজন করা হলো -

স্বরজমিন প্রতিবেদন ।

তথ্য – হজরত মাওলানা সাবের হোসেন ।

সহযোগিতায় – সিরাজ হক

                                                                                            

rahmanmoni@kym.biglobe.ne.jp

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]