|
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
রাহমান মনি
প্রবাসে করোনা হলে
জানান দিন , লুকোবার কিছুই নাই, আপনার করণীয়টা পালন করুন
করোনা ( কোভিড ১৯ বা স্ট্রেইন ) বর্তমান
বিশ্বে সবচেয়ে আতংকিত, আলোচিত, একটি ভাইরাস এর নাম। যা বিশ্বব্যাপী দাপিয়ে
বেড়াচ্ছে। এলাকা বিশেষ, ছোট বড়, ধনী গরীব, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে যে কোন
পরিবেশে যে কারোর-ই হতে পারে। কারন, এটা একটা মহামারী। বৈশ্বিক মহামারি।
করোনা একটি মহামারী। আর মহামারী কোন ব্যাক্তির একক দোষের কারনে আসেনি। এইডস
বা এই জাতীয় যে সমস্ত রোগ অনেকটাই ব্যক্তির নিজ কারনে হলেও করোনা কিন্তু তা
নয়।
ইতিহাসে মহামারী সাধারনত এলাকা বিশেষ এমন একটি রোগ যা হ'ল অস্থায়ীভাবে
উচ্চ প্রসার এবং এটি একটি অঞ্চল বা বিশ্বের একাংশ যেমন একটি একক দেশে
সীমাবদ্ধ থাকে।
মহামারীটি সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যা
একটি বিস্তৃত ভৌগলিক অঞ্চলে ঘটে এবং এটি প্রচুর পরিমাণে ছড়িয়ে পড়ে,
সাধারণত বিশ্বের বেশিরভাগ মাসের ব্যবধানে বিশ্বের জনসংখ্যার একটি
উল্লেখযোগ্য অনুপাতকে প্রভাবিত করে।
কিন্তু করোনা সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে
বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
ডব্লিউএইচও-এর প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস ১৪ এপ্রিল ২০২০
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ভাইরাসটি বিশ্বের সব
মহাদেশেই ছড়িয়েছে। সেই সময় পর্যন্ত ১১৪টি দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী
শনাক্ত করা হয়েছিল। আর বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ ১৮ হাজারের মতো
মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২২ লাখ ৭৫ হাজার জনের মৃত্যু
হয়েছে করোনাভাইরাসের কারণে।
কিন্তু যে ভাইরাসটি বিশ্ব মহামারির জন্য দায়ী, সেটি হয়তো আমাদের সঙ্গে
ছিল আরও আগে থেকে। নতুন এক গবেষণায় সেরকম ইঙ্গিতই পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশে যেমন চায়ের দোকানগুলোতে দিনের কাজ শেষে সকলে মিলিত হন, তেমনি,
প্রবাসে বিশেষ করে জাপানে হালাল ফুড শপ গুলোতে প্রবাসীদের আড্ডা সবচেয়ে বেশী।
বন্ধের দিনগুলোতে বিশেষ করে হালাল ফুড শপগুলোতে প্রবাসীদের আনাগোনাটা একটু
বেশীই হয়ে থাকে। তা বিভিন্ন কারনেই হয়।
হালাল ফুড শপ গুলোতে গেলে সব ধরনের আলাপ আলোচনা ই হয়ে থাকে।
অতি সম্প্রতি হিগাশিজুজোতে বাঙালীদের পরিচালনায় বেশ কিছু হালালফুড শপ গড়ে
উঠে। তার অন্যতম কারন হলো টোকিওর কিতা সিটি হিগাশিজুজোতে তুলনামুলকভাবে
সবচেয়ে বেশী সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীদের বসবাস।
জাপানে করোনার প্রথম ঢেউ প্রবাসী বাংলাদেশী আক্রান্তের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় হিগাশিজুজোতে কয়েকজন প্রবাসী করোনায় আক্রান্তের খবর
চাউর হলে আমাদেরই কয়েকজন প্রবাসী ডাক্তার (জাপান বাংলাদেশ ইমারজেন্সি
ভলান্টিয়ার সার্ভিস , JBEVS ) ভাইদের পরামর্শে হাসপাতালে চিকিৎসা সহ হোম
কোয়ারেন্টাইন-এ থেকে সে যাত্রায় অন্যান্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ার আগেই সামাল
দেয়া সম্ভব হয়েছিল। সেটাই ছিল জাপান প্রবাসীদের প্রকাশিত প্রথম আক্রান্তের
সংবাদ।
এরপর ইবারাকি কেন-এ এক দম্পতি করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে হোম
কোয়ারেন্টিন এ থেকে উপসর্গ মুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সক্ষম হন।
এরপর চিবা কেন -এ ও প্রবাসীর করোনা পজিটিভ হলে চিকিৎসা শেষে সেরে উঠেন।
বছরের শুরুতে গুনমা কেন এর একটি হালাল ফুড এর একজন করোনায় আক্রান্ত হলে
বিষয়টি প্রকাশ না করে স্বাভাবিক কাজকর্ম করে যেতে থাকেন। এক সময় এক এক করে
সমস্ত কর্মচারীদের ছড়িয়ে পড়ে এবং জানাজানি হয়ে গেলে একপর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি
অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু তার মধ্যে যা হবার হয়ে যায়।
গুনমা কেন এর করোনায় আক্রান্তের খবর ফেসবুক এর মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেলে
গুনমা কেন -এ বসবাস করা প্রবাসীরা সচেতন হয়ে যায়। ইতোমধ্যে ১৭/১৮ জন করোনায়
আক্রান্ত হন। তবে , আশার কথা, আক্রান্তদের সকলেই হোম কোয়ারেন্টাইন-এ থেকেই
সুস্থ হয়ে যান।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর এবং শুকনো কাশি। এছাড়া থাকতে
পারে শরীরের পেশীতে ব্যথা, গলা ব্যথা, স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতি না থাকা,
শ্বাসকষ্ট, কখনো পেট খারাপ ও বমি বা বমি বমি ভাব। আবার উপসর্গ ছাড়াও করোনায়
আক্রান্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়।
চিকিৎসকেরা মনে করেন, কেউ যদি নিজের মধ্যে এ রকম একাধিক লক্ষণ দেখতে পান,
তাহলে শুরুতেই 'সেলফ-আইসোলেশনে' চলে যান, অর্থাৎ নিজেকে পরিবারের বাকি
সদস্যদের কাছ থেকে পুরোপুরি আলাদা করে ফেলুন।
তাই প্রবাসী ভাইদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আপনার বা আপনার আশে পাশে পরিচিত
কারোর করোনা হলে কাল বিলম্ব না করে জানান দিন। আপনার করোনা হলে অনেকেই দোয়া
করবেন। এর মধ্য থেকে অনেকের দোয়ার বরকতে আল্লাহ্ আপনাকে মাফ করলে করতেও
পারেন।
কিন্তু আপনি যদি তা গোপন করেন তাহলে অনেকেই তার অজান্তে আপনার সংস্পর্শে
আক্রান্ত হতে পারেন। তার জীবন বিপন্ন হতে পারে। এমন কি প্রাণহানিও ঘটতে পারে।
আর আপনার এই সামান্য অথচ অমার্জনীয় গোপনীয়তার কারনে যদি প্রবাসে কোন প্রাণ
ঝরে যায়, তাহলে দেশে থাকা তার পরিবারটির কথা সহজেই অনুমেয়।
তাই, করোনা হলে জানান দিন , লুকোবার কিছুই নাই, আপনার করণীয়টা পালন করুন।
আপনার এই করণীয়টা পালনে যদি আপনার পাশের একজন মানব সন্তানেরও জীবন রক্ষা হয়
, সুস্থতা বজায় থাকে তাহলে এর চেয়ে বড় তৃপ্তি আর কি ই বা হ’তে পারে ?
মনে রাখবেন , সুস্থতা আল্লাহ্র সবচেয়ে বড় নিয়ামত। আর আপনার একটু সতর্কতার
জন্য যদি একজনও সুস্থ থাকেন তার ছওয়াবের ভাগীদার আপনিও ।
rahmanmoni@gmail.com
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|