প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

 

 

রাহমান মনি                                          

 

 

প্রবাসে নেতা বনে যাওয়ার রাজনীতি

 

 

 

 

রাজনীতি একটি বহুমুখী শব্দ। রাজনীতি শব্দটি বহু ও বিভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অর্থাৎ রাজনীতির অর্থ সম্পর্কে ব্যাপক মতানৈক্য বর্তমান। রাজনীতির ধারণা এবং আলোচনাক্ষেত্র সম্পর্কে লেখালেখিরও অন্ত নেই।

রাজনীতি বা রাষ্ট্রনীতি বা রাজগতি বা রাজবুদ্ধি হলো দলীয় বা নির্দিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ক্ষমতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণ বিষয়ক কর্মকাণ্ডের সমষ্টি, উদাহরণস্বরুপ সম্পদের বণ্টন হল এমন একটি কর্মকাণ্ড। রাজনীতি এ্যাকাডেমিক অধ্যয়নকে রাজনীতিবিজ্ঞান বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে।

রাজনীতি কি?

সাধারণ অর্থে রাজনীতি বলতে ক্ষমতার লড়াইকে বুঝায়। রাজনীতির মূলে আছে ক্ষমতা। রাজনীতিই নির্ধারণ করে কিভাবে ক্ষমতা অর্জন করা যায়, ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় এবং ক্ষমতা ব্যবহার করা যায়। প্রাচীন গ্রিক থেকে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক সমাজে রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ করা যায়। গ্রিক দার্শনিকদের থেকে জানা যায়, রাজনীতি হলো একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরি করার প্রক্রিয়া। সাধারণ ভাষায় রাষ্ট্রপরিচালনার নিয়ম-রীতিপদ্ধতিকে রাজনীতি বলা হয়ে থাকে। অন্যকথায় রাজনীতি হলো ক্ষমতার পর্যালোচনা। যে যতোটা ক্ষমতাধর রাজনীতিতে তার অবস্থানও ততটা জোরালো। রাজনীতি হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মধ্য দিয়ে মানুষ তার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসারে নিজের সমাজকে বিন্যস্ত করে। শাসন ও শাসিতের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় রাজনীতির মাধ্যমেই।

এরিস্টটলের মতে, ‘রাজনীতি হলো জনসেবা’ তিনি আরো বলেন, “জনজীবনের বিষয়বস্তু ও গতিপথ সংক্রান্ত যৌথ সিদ্ধান্ত গ্রহণে সর্বসাধারণের অংশগ্রহণই রাজনীতির সারবস্তু।

ক্ষমতা তিনপ্রকারের। অর্থনৈতিক ক্ষমতা, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং পেশী শক্তি। আর এই তিন ধরনের ক্ষমতার সমন্বিত বহি:প্রকাশই হলো রাজনীতি।

একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা ও সম্পদগুলো একটি জাতির মধ্যে সুষম বন্টন করার কৌশল হলো রাজনীতি।

এইতো গেল বিশিষ্ট জনদের মত।

ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, বিপক্ষ দলের অসংগতি গুলো তুলে ধরে এর বিপক্ষে যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা এবং জনগনের কল্যাণে নিজেদের পরিকল্পনা বা কর্মসূচী তুলে ধরার নামই হচ্ছে রাজনীতি।

কিন্তু , আমরা কি দেখছি !

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি, রাজনৈতিক নেতা কর্মীরা এখন যতোটা না বিপক্ষ দলের অসংগতি তুলে ধরছেন , তারচেয়েও ঢেড় বেশী ব্যস্ত থাকছেন নিজ দলে মতের বিরুদ্ধ লোকের চরিত্র হননে।

এর অন্যতম কারন বা সুবিধা হ’ল বিরুধী দলের অসংগতি তুলে ধরতে হলে, সেই অসংগতি সম্পর্কে জানতে হয়, পড়াশুনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু, নিজদলে মত বিরুধীদের একচোট নিতে পড়াশুনা বা মেধা বিকাশের প্রয়োজন হয়না। একসাথের কৃতকর্মের অভিজ্ঞতা থেকেই অনর্গল বলে দেয়া যায়।

বিশেষ করে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক পড়াশুনা , প্রজ্ঞা , পরমত সহিষ্ণুতা নেই বললেই চলে।

অপ্রিয় হলেও সত্যি , ইসলামী ছাত্র শিবির এবং বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এর কর্মীদের রাজনৈতিক পড়াশুনা করতে হয় , সংগঠন থেকে করানো হয়। অনেকটা পড়াশুনা করা শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যাচাই বাছাই করেই কর্মীর মর্যাদা দেয়া হয় ।

আর , ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা সংগঠন দু’টির কর্মীদের কর্মী মর্যাদা পেতে কোন ধরনের মেধার প্রয়োজন হয় না। “অমুক নেতার তমুক দেশ, নিজ নেতা এনে দিয়েছে বাংলাদেশ” বলতে পারলেই হয় ।

নিজ বাবা-মার কথা তারা যতোটা স্মরণ করে তারচেয়ে বেশী স্মরণ করে দলের প্রয়াত নেতাদের। ঘরে ঘরে শোভা পায় তাদের ছবি । শুধুই কি নেতা বন্দনা ? না , শুধুতাই নয় নেতাদের স্ত্রী পুত্র , কন্যা নাতি নাতনী এমন কি তাদের সন্মানের আসনে আসীন করে বন্দনা করেন।

পেশী শক্তি , সান্নিকের জোর এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার যোগ্যতা থাকলেই হ’ল । সম্প্রতি আবার আরেক যোগ্যতা যোগ হয়েছে । তা হ’ল জাতীয় নেতাদের ছবি কোন রকম স্থান দিয়ে স্থানীয় নেতাদের পর নিজ ছবি দিয়ে বিভিন্ন দিবসে শুভেচ্ছার বাণী সম্বলিত পোস্টার প্রচার। আর , ফেসবুক তো এসব প্রচারের তীর্থ স্থান। তাদের শুভেচ্ছা কি আমাদের শুভেচ্ছান্নিত করছে নাকি ক্রোধান্বিত করছে তা নিয়ে ভাববার ফুরসৎ নেই ।

ফেসবুকে এসব প্রচার করতে কোন রকম মেধা কিংবা অর্থের প্রয়োজন হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ডাইস ঠিক করা থাকে। নিজের ছবিটা কেবল সেট করে দিতে হয়।

আর প্রবাসে এসব রাজনীতি করতে কোন অসুবিধা নেই । সংগে দু’চার জন ফেউ থাকলেই হ’ল। নেতা বনে যেতে বাধা নেই। বিভিন্ন আয়োজনে গিয়ে ‘আমার কিছু লোক’ বলে বিনা খরচে আপ্যায়ন করানো যায় ।

কিন্তু রাজনীতি কি তাই ? নেতার হওয়ার যোগ্যতা কি তাই-ই ?

একসময় রাজনীতি করতে এসে অনেকেই প্রায় দেউলিয়া হয়েছেন। আর এখন সরকারী দলের গ্রাম পর্যায়ের একজন নেতাও হাজার কোটি টাকার বনে যাওয়ার খবর পত্রিকার পাতায় প্রায়শই দেখা যায় ।

একটা সময় জনগন নেতা তৈরি ছিল আদর্শ ও ত্যাগী নেতাকে জনগন চাঁদা সংগ্রহ করে নির্বাচনে দাঁড় করাতো এবং জয়ী করাতো । আর এখন, নিজেকে নিজে নেতা ঘোষণা দিয়ে যে কোন উপায়ে জয়ী হলেই হয় ।

কিন্তু বাস্তবতা হ’ল রাজনৈতিক নেতা হতে গেলে ধার (নেতৃত্ব দেয়ার গুনাবলী ) এবং ভার ( আর্থিক সঙ্গতি ) দুইটাই থাকা চাই । দল চালাতে দুইটারই প্রয়োজন রয়েছে ।

পৃথিবীতে যত রকমের কঠিন কাজ আছে সেগুলোর মধ্যে নেতৃত্ব দেওয়াকে একটি গণ্য করা হয়। একজন নেতা তখনই সফল হিসেবে বিবেচিত হন যখন তিনি তাঁর অধীনস্থ লোকদের ওপর ইতিবাচক ও প্রত্যাশিত উপায়ে প্রভাব বিস্তার করে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হন।

নেতৃত্ব হলো ব্যক্তির সেই সক্ষমতা যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করার জন্য দল, গোষ্ঠী বা সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের অনুপ্রেরণা ও দিক নির্দেশনা দিয়ে প্রভাবিত করা ও পরিচালিত করা সম্ভব হয়

একজন নেতা তাঁর দল, সংগঠন, গোষ্ঠী বা প্রতিষ্ঠানের অপরাপর সদস্যগণের পথপ্রদর্শকরূপে চিহ্নিত। একজন আদর্শ নেতা হতে হলে , সাহসীকতা, মোহনীয় ব্যক্তিত্ব, সুদূরপ্রসারী কল্পনাশক্তি, সিদ্ধান্ত গ্রহণের সক্ষমতা, সার্বিক দায়-দায়িত্ব গ্রহণের মানসিকতা, শারীরিক সুস্থ্যতা, পরিবেশ ও সংগঠন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা, মানবচরিত্র অনুধাবনের ক্ষমতা, সাংগঠনিক জ্ঞান, যোগাযোগের দক্ষতা, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযমশীলতা, ন্যায়পরায়ণতা, সহযোগিতামূলক মননশীলতা, বশীভুতকরন ক্ষমতা, বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা, বন্ধুপ্রতিমতা, বিশ্লেষণমূলক ক্ষমতা, বন্ধুপ্রতিমতা, বিশ্লেষণমূলক ক্ষমতা, সাহস ও উদ্যম, সময় সচেতনতা, সংশ্লিষ্ট কার্যবিষয় জ্ঞান, ভারসাম্য রক্ষার ক্ষমতা, নমনীয় মনোভাব, অনুসন্ধিৎসু, সৃজনী প্রতিভা, আন্তরিকতা, পরমতের ওপর শ্রদ্ধাশীলতা, সাধারণ জ্ঞান, অধ্যবসায়, আত্মসমালোচনা, সার্বিক ধারণা এবং কৌঁসুলি হ’বার মতো বিচিত্রগুণের অধিকারী হতে হয় ।

কিন্তু এখন আমরা কি দেখছি ? বর্তমান সময়ে নেতা বনে যাওয়াদের মধ্যে উপরোল্লিখিত গুনাবলীর কতো পারসেন্ট বিদ্যমান? বিশেষ করে জাপান প্রবাসী তথাকথিত নেতাদের মধ্যে ?

যেহেতু পুরো বিশ্ব সম্পর্কে আমার কোনোরূপ ধারনা নেই, জাপানে থাকি তাই জাপান সম্পর্কেই বলতে চাই। জাপানে দলগুলির রাজনৈতিক চর্চা আমার চোখের সামনেই শুরু হয়েছে । তাই, সম্যক ধারনা থেকেই বলছি, এখানে দলের জন্য নিবেদিত সৎ ও একনিষ্ঠ নেতা কর্মী যেমন রয়েছে তেমনি চটুল, সুবিধাবাদী এবং লিয়াজো করে চলা নেতাকর্মীর সংখ্যাটাও নেহায়েত কম নয়।

সভা সেমিনারে বিরুধী দলের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা হলেও সন্ধ্যার পর একসাথের গ্লাসফ্রেন্ড । আনিকি আনিকি বলে কাম্পাই করা নেতার সংখ্যা এই জাপানে নেহায়েতই কম নয় । তথ্য প্রমান নিজের হাতে তোলা স্থির এবং চলমান চিত্র যথেষ্ট নয় কি ! পক্ষের যুক্তি হিসেবে সামাজিকতার কথা বলা হয়ে থাকে। বিনয়ের সাথে তাদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে , যখন একে অপরের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করা তখন এই সামাজিকতা কোথায় থাকে ?

পরিশেষে বলতে চাই, একজন নেতা একটি বৃহৎ সাফল্য ধাপে ধাপে অর্জিত বিভিন্ন সাফল্যের সমন্বিত রূপ। সফল নেতৃত্বের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ এবং লক্ষ্য অর্জনের ধারাবাহিকতা ও সমন্বয় অত্যন্ত জরুরি। শুধু তাই নয়,একজন প্রকৃত নেতা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে প্রতিযোগিতার বদলে সহযোগিতার সৃষ্টি করে। ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যের মধ্যে সমন্বয়সাধনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে প্রকৃত নেতৃত্ব। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৌশল এবং ব্যক্তির লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও কৌশলের যোগসূত্রই একজন নেতাকে সফল করে তোলে।

তাই , নেতা বনে না গিয়ে যোগ্যতায় এবং নেতৃত্বে নেতা হলে সে নেতা কর্মীদের হৃদয়ে স্থান করে নেন। নতুবা দল বহুদা ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় । যার নজির এই জাপানেই আমরা দেখতে পাচ্ছি।

টোকিও


rahmanmoni@gmail.com

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আরও দেখুন.....

.

আরও দেখুন.....