প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

রাহমান মনি                                          

একটি কবরস্থান প্রতিষ্ঠায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগ

 

 

ষজাপান প্রবাসীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতে অনেক অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে। তার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে জাপান প্রবাসীদের মধ্যে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বিরাজমান।
দেশের স্বার্থে এখানে সবাই যার যার রাজনৈতিক অবস্থান ভুলে গিয়ে এক টেবিলে বসেন সকলে। এখানে আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা অন্য রাজনৈতিক সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে। এখানে প্রত্যেকেই যার যার অবস্থান থেকে দলীয় কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে স্থানীয় জাপানি আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। তারপরও তারা দেশের প্রয়োজনে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে।
যার ফলশ্রুতিতে দেশের বাহিরে জাপানে সরকারি অর্থায়নে প্রথম স্থায়ী (টোকিও) শহীদ মিনার নির্মাণ, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বৈশাখী মেলা উদযাপন, ধর্ম-বর্ণ-দল-মত নির্বিশেষে সকলের সহযোগিতায় মহান শহীদ দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, দ্বিতীয় প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের নিয়ে প্রতি বছর অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হচ্ছে।
সম্প্রতি জাপান প্রবাসীদের উদ্যোগে জাপানে বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মিত হয়েছে। আরও কিছু নির্মাণের পথে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা উদ্যোগ নিয়েছে জাপানে একটি স্থায়ী মন্দির নির্মাণের। কাজও অনেকটা এগিয়েছে।
টোকিওতে শহীদ মিনারটি নির্মাণের প্রস্তাবটি এসেছিল প্রবাসীদের একটি আড্ডা থেকে। প্রস্তাবটি করেছিলেন স্থপতি মাসুম ইকবাল। আর সম্ভব হয়েছিল প্রবাসীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে।
এবার জাপানে কবরস্থান নির্মাণের প্রস্তাবটি করেছেন মোল্লা আলমগীর হোসেন নামে মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর থেকে আগত দীর্ঘদিন জাপান প্রবাসী এক যুবক। ১৪ অক্টোবর ২০১৮ টোকিওর অদূরে সাইতামা প্রদেশে মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটি জাপান’র বার্ষিক সাধারণ সভায় তিনি এ প্রস্তাবটি করেন। সভায় মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটি জাপান’র সভাপতি বাদল চাকলাদার এবং সাধারণ সম্পাদক এমডি এস. ইসলাম নান্নুসহ বিপুলসংখ্যক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন।
এখানে বলে রাখা ভালো, বাদল চাকলাদার এবং এমডি এস. ইসলাম নান্নু মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটি জাপান’র যথাক্রমে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হলেও জাপান প্রবাসী কমিউনিটিতে ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবও রয়েছে। বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে তাদের অবদান অপরিসীম।
জাপানে যে মুসলিম কবরস্থান নেই তা কিন্তু নয়। জাপান প্রবাসী ইন্দোনেশিয়ানদের উদ্যোগে ইবারাকি প্রদেশে একটি কবরস্থান প্রতিষ্ঠা পায়। সেখানে বেশ কয়েকজন মৃতের (বাংলাদেশি) কবর দেয়া সম্ভব হয়েছে।
মুসলিম, ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের মাটিতে কবর দেয়ার ধর্মীয় বিধান রয়েছে। জাপানে মৃতদের সাধারণত বৈদ্যুতিক চুল্লিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়। আর মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার মধ্যে একমাত্র ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের ঘোর নিষেষাজ্ঞা রয়েছে।
জাপানে মুসলিম কমিউনিটির সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের সংখ্যা।
ধর্মের বিধিবিধান প্রবাসে অনেকে মেনে না চললেও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় আশা থাকে মৃত্যুর পর এক মুঠো মাটি। অর্থাৎ কবর। বিশেষ করে দেশে অবস্থান করা পরিবার পরিজনরা চায় মৃত স্বজনদের শবদেহটি যেন স্বদেশে পাঠানো হয় অন্তত মাটি দেয়ার জন্য।
কিন্তু, প্রবাস থেকে একটি শবদেহ স্বদেশে পাঠানো ব্যয়সাপেক্ষ। মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী হলেও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকেন না কেউ। প্রবাসে মৃত্যু কাম্য না হলেও মৃত্যু হয়। কারণ, মৃত্যু তো আর স্থান, কাল, পাত্র ভেদ বুঝে না। তাই প্রবাসেও মৃত্যু হয়ে থাকে।
জাপান থেকে একটি শবদেহ বাংলাদেশে পাঠাতে সব মিলিয়ে প্রায় দশ লাখ ইয়েন এর মতো খরচ হয়ে থাকে। মৃত্যুর পর এই পরিমাণ অর্থ অনেকের নিকটই থাকে না। আর বাংলাদেশ থেকেও সমপরিমাণ অর্থ আনানো সম্ভব নয়। তাই, সকলের সহযোগিতায় শবদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়।
কিন্তু শবদেহটি যদি জাপানে দাফন করা যায় তাতে ব্যয় এক চতুর্থাংশে নেমে আসে। এতে, একদিকে অর্থ খরচ যেমন কমে আসে তেমনি মৃতদেহেরও দ্রুত দাফনকার্য সম্পন্ন হয়। আর ইসলাম ধর্মে মৃতদেহ দ্রুত দাফন করার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
এছাড়া সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশিদের অনেকেই জাপানিজ পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশি পাসপোর্ট ত্যাগ করে। আর জাপানিজ নাগরিকদের দ্বৈত নাগরিকত্বের সুযোগ নেই। তাই জাপানি পাসপোর্ট গ্রহণকারী কোনো বাংলাদেশির মৃত্যু ঘটলে তার শবদেহ বাংলাদেশে পাঠানোর কোনো সুযোগ না থাকায় জাপানেই তার দাফন/সৎকার করতে হয়। অতিসম্প্রতি একজন বাংলাদেশি যিনি জাপানি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছিলেন, তার মৃত্যু হলে বাংলাদেশে মৃতদেহ পাঠানো সম্ভব না হলে জাপানেই তাকে দাফন করতে হয়। জাপানি নিয়মে মৃতদেহ পোড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হলে জাপানে বসবাসরত মুসলিম কমিউনিটির ঘোর আপত্তি এবং স্বজনদের আবেদনে জাপানেই তাকে দাফন করা হয়।
তাই, সার্বিক বিবেচনায় মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সোসাইটির পক্ষ থেকে জাপান প্রবাসীদের সঙ্গে নিয়ে টোকিওর আশপাশে জমি পাওয়া সাপেক্ষে একটি মুসলিম কবরস্থান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দেন সভাপতি বাদল চাকলাদার তার সমাপনী বক্তব্যে।


rahmanmoni@kym.biglobe.ne.jp 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]