প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

উচ্চ শিক্ষায় সংকট নিয়ে সমস্যা আছে

 


প্রফেসর আবদুল মান্নান

 

বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্র সমূহ প্রায়শঃ সংবাদ শিরোনাম হয় সুযোগের অপ্রতুলতার কারণে নয়, গুনগত মান বজায় রাখতে না পারার কারণে । একাত্তরে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তখন এই দেশে চারটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় আর দুটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় ছিল । এই ছয়টিতে আনুমানিক ৩০ হতে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করতো । এর সাথে ছিল শ’তিনেক কলেজ যাতে ৪০ হাজারের মতো উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা করার সুযোগ মিলতো । গত ৪০ বছরে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ বেড়েছে । দেশে এই মুহূর্তে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ১২০টি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে যেখানে মোট এগার লক্ষের মতো ছাত্র ছাত্রী পড়া লেখা করার সুযোগ পায় । জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত প্রায় ২২শত কলেজে পড়ে ১৯ লক্ষ শিক্ষার্থী । মোট ত্রিশ লক্ষ শিক্ষার্থী এখন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়া লেখা করে । এই বৃদ্ধিটা অনেকাংশে জ্যামিতিক হারে হয়েছে । বলা যেতে পারে উচ্চ শিক্ষার চাহিদা বাংলাদেশে অনেক দিন ধরে বাড়তে থাকবে বলে । সম্প্রতি বৃটেনের বিখ্যাত সাপ্তাহিকী ইকোনমিস্ট পত্রিকার গবেষণা ইউনিট ‘ইকোনমিক ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইউ) দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বৃটিশ কাউন্সিলের জন্য শিক্ষার চাহিদার উপর এক জরিপ পরিচালনা করে । ইআইউ তাদের প্রতিবেদনে বলে এই অঞ্চলে যে হারে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার চাহিদা বাড়বে সেই চাহিদা ক্যাম্পাস ভিত্তিক সনাতনী বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে তা পূরণ করা সম্ভব হবে না । তাদের মতে এর বিকল্প হতে পারে অন-লাইনে ডিগ্রি প্রদান । এই ব্যবস্থা বাংলাদেশেও হতে পারে । তারা আরো বলেছে বাংলাদেশে যেহেতু ভূমির পরিমাণ কম সেহেতু এখানে ভবন নির্মাণ করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষাদান কঠিন হবে । তবে ইআইউ’র এই সুপারিশ নিকট ভবিষ্যতে আমাদের দেশে বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা আর অভিজ্ঞতার অভাবের । তদুপরি এই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে । কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের করাচিতে এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে সরকার বন্ধ করে দিয়েছে কারণ এটি মূলত অর্থের বিনিময়ে নানা ধরণের ভূয়া বিদেশী অন-লাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট বিক্রি করতো । বাংলাদেশেও ডিগ্রি বিক্রি করার এমন প্রতিষ্ঠান আছে এবং তা অনেকের কাছে বিশেষ করে এক শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে বেশ সমাদৃত । এই সব ভূয়া ডিগ্রি দিয়ে তারা সরকার হতে নানা ধরণের অবৈধ সুযোগ সুবিধা ভোগ করে । এই সমস্যা শুধু বাংলাদেশ বা পাকিস্তানেই আছে তা নয় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেই আছে । ডিগ্রী যত ওজনদার তার মূল্য তথ বেশী ।
আওয়ামী লীগ সরকারকে সব সময় শিক্ষা বান্ধব সরকার হিসেবে দেখা হয় । শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার বছরের প্রথম দিনে ৩০ কোটি বই স্কুল পর্যায়ের ছাত্র ছাত্রীদের হাতে তুলে দিয়ে বিশ্বে এক নজিরবিহীন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে । তাঁর সরকারের আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে কয়েক গুণ । বঙ্গবন্ধু সরকারই প্রাইমারি শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে । বর্তমানে দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ১০০ ভাগ বেতন সরকারি কোষাগার হতে আসে । অন্যান্য সুযোগ সুবিধাতো আছেই । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ছিল শতকরা ২৫ ভাগের মতো যা বর্তমানে ৭০ ভাগে উন্নিত হয়েছে । শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার সুযোগের সম্প্রসারণ ইত্যাদি সাফল্য এই অঞ্চলের অনেক দেশের জন্যই ঈর্ষার কারণ হতে পারে ।
যদিও শিক্ষার প্রসার ব্যাপ্তি ও হার বেড়েছে বহুগুণ একটি জায়গায় গিয়ে এই সাফল্য হোঁচট খেয়েছে । সেটি সর্বক্ষেত্রে শিক্ষার মান বজায় রাখতে না পারার ব্যর্থতা । কলেজ বলি আর বিশ্ববিদ্যালয়, কোনটিই পূর্নাঙ্গ হতে পারে না যদি সেখানে শিক্ষার মান বজায় না থাকে । শিক্ষার মান বজায় রাখার প্রাথমিক দায়িত্ব শিক্ষা প্রশাসক আর শিক্ষকদের । শিক্ষা দান একটি কলা ও বিজ্ঞান । এটির দায়িত্বে থাকেন একজন শিক্ষক । ভাল শিক্ষক শিক্ষা ক্ষেত্রে না আসলে শিক্ষার মান বজায় রাখা কখনো সম্ভব নয় । বিশ্ববিদ্যালয় গুলি হওয়া উচিৎ জ্ঞান সৃষ্টির উর্বরক্ষেত্র । এই সৃষ্টির জন্য চাই ভাল গবেষক । দূর্ভাগ্য বশতঃ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এটি তেমন হচ্ছে না কারণ বর্তমানে মেধাবি ছাত্ররা শিক্ষকতায় আসার তেমন একটা প্রয়োজন মনে করছেন না কারণ এই পেশায় আসলে তাদের অন্যান্য পেশার চেয়ে সুযোগ সুবিধা অনেক কম বলে অনেকেরই ধারণা এবং তা উড়িয়ে দেয়া যাবে না । বাংলাদেশে একজন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকের বেতন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা আফ্রিকার অনেক দেশের তুলনায়ও অপ্রতুল । দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকরা পৃথক বেতন স্কেল দাবি করে আসছে । বেশ কটি সেক্টরে সেই ব্যবস্থা আছে । সম্প্রতি বেতন স্কেলের যে খসড়া প্রকাশিত হয়েছে তাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা চরম হতাশা ব্যক্ত করেছেন । সরকারের অনেক নীতি নির্ধারক পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ইতোপূর্বে ঘোষণা করেছিলেন শিক্ষকদের জন্য পৃথক বেতন স্কেল হবে । তা না হওয়াতে তারা হতাশ হয়েছেন । এই ব্যাপারে তারা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন । পৃথক বেতন স্কেল ছাড়াও আছে শ্রেণীকক্ষে পাঠ দানের মানের উন্নয়নের জন্য শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ আর গবেষণায় প্রনোদনা যা বর্তমানে মারাত্মকভাবে অপ্রতুল । অবস্য বর্তমান সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধির বেশ একটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে আছে যা ২০১৮ সালে শেষ হওয়ার কথা । সাফল্যের সাথে তা বাস্তবায়ন হলে তার সুফল পাওয়া যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে । এই প্রকল্পের অধীনে অনেক গুলি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার উন্নতি হয়েছে । শিক্ষায় অর্থ ব্যয় খরচ হিসেবে না দেখে তা মানব সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ হিসেবে দেখা উচিত । এই একটি কারণে ভারত, শ্রীলংকা, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর মানব সম্পদ উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অনেক উপরে অবস্থান করছে । বাংলাদেশ যদি ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নিত হতে চায় তা হলে মানব সম্পদ উন্নয়নে অর্থাৎ শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই । কৃষিতে সুষ্ঠু বিনিয়োগের কারণে আজ বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশে উন্নিত হয়েছে । দেশে তরুণ আর যুব বয়সের মানুষের সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে । এদের মানসম্মত মেধাবি মানবসম্পদে রূপান্তরিত করতে পারলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ রূখতে পারবে না । আর একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সঠিক ভাবে চলছে নিা তা দেখার দায়িত্ব ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কর্মকর্তার । হতে পারেন তিনি একজন হেডমাস্টার অথবা উপাচার্য । এই ক্ষেত্রে তা সব ক্ষেত্রে সঠিক ভাবে হচ্ছে না । বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষায় বর্তমানে তেমন একটা সংকট নেই তবে সমস্যা আছে তবে একটু চেষ্টা করলে তা নিরাময় যোগ্য ।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । ২৩ মে, ২০১৫

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]