|
বিএনপি কী
অগস্ত্যযাত্রা শুরু করলো?
প্রফেসর আবদুল মান্নান
৯২ দিনের অগ্নিসন্ত্রাসের পর সরকার ও নির্বাচন কমিশন বিএনপিকে সুস্থধারার
রাজনীতিতে ফিরে আসার একটা পথ খুলে দিয়েছিল তিনটি সিটি কর্পোরেশন
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে । যে দলটি ৯২ দিন ধরে দেশে ফ্রি ষ্টাইলে মানুষ
হত্যা করলো, জনসম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করলো আর দেশে পেট্রোল বোমা
সংষ্কৃৃতির ভয়াবহতা আমদানি করলো তাদের জন্য এমন একটি নিরাপদ দ্বার খুলে দেয়া
শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব । প্রশ্ন উঠতে পারে হঠাৎ সরকার বা নির্বাচন কমিশন এই
সন্ত্রাস নির্ভর দলটির উপর এমন সদয়ও বা কেন হলো ? তার সম্ভাব্য কারণ হতে
পারে তারা মনে করেছে বিএনপি-জামায়াতের এই জীবন হরণকারি আর অর্থনীতি বিধ্বংসী
কর্মকান্ড চলতে থাকলে দেশ ও জনগণের যে ক্ষয়ক্ষতি হবে তা কাটিয়ে উঠা তাদের
পক্ষে কঠিন হয়ে পরবে আর বাংলাদেশের মানুষ যত না এই ধ্বংসযজ্ঞের জন্য বিরোধী
দলিয় তষ্করদের দায়ী করবে তার চেয়ে সরকারি দল তথা আওয়ামী লীগকে কম দায়ি করবে
না । এই ৯২ দিনে অনেক শিক্ষিত মানুষকে অবলীলাক্রমে বলতে শুনেছি শেখ হাসিনা
পদত্যাগ করে বিএনপি-জামায়াতের দাবি অনুযায়ি একটি মধ্যবর্তি নির্বাচন দিয়ে
বেগম জিয়াকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিলেইতো সব ল্যাটা চুকে যায় । আমার সেই পুরানো
মুরব্বির কথায় ফিরে যাই । বাংলাদেশের জনসংখ্যা কত? কেন, ষোল কোটি । ভুল ।
দশ কোটি । বাকি ছয় কোটি হচ্ছে বাংলাদেশে বসবাসরত পাকিস্তানি যাদের সংখ্যা
গত চল্লিশ বছরে ফুলে ফেঁপে ছয় কোটি হয়েছে । এদের কাছে বেগম জিয়াই
বাংলাদেশের জন্য সর্বোত্তম প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর জীবিত পুত্র, বর্তমানে
আইনের দৃষ্টিতে ফেরারি তারেক রহমান গর্দিনশিন যুবরাজ । দেশের প্রধানমন্ত্রী
বেগম জিয়ার মতো গ্ল্যামারাস হওয়া চাই । শেখ হাসিনার মতো একজন চিরায়ত বাঙালি
মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একেবারেই বেমানান ।
আমার কথার একেবারে অকাট্য প্রমাণ হচ্ছে সদ্য সমাপ্ত তিনটি সিটি কর্পোরেশন
নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যে কয়েক
লক্ষ ভোট পাওয়া । যারা তাদের ভোট দিয়েছে তারা সকলেই যে বিএনপি বা জামায়াতের
রাজনীতির সাথে জড়িত তা কিন্তু নয় । তারা বেগম জিয়াকে বেশ পছন্দ করেন। একজন
দুধে আলতা মেশানো রঙের মহিলার নির্দেশে যদি তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী পেট্রোল
বোমা মেরে কয়েক শত মানুষ হত্যা করে তাতে দোষের কিছুই নেই । আগামীতে বিএনপি
যদি ধানের শীষ মার্কা পরিত্যাগ করে পেট্রোল বোমা মার্কাও নেয় তাহলেও তাদের
সমর্থন কমবে না কারণ এরই মধ্যে বাংলাদেশে বসবাসরত পাকিস্তানির সংখ্যা আরো
কয়েক হাজারতো বাড়বে । অনেকেই বলবে এটি বিএনপি’র প্রতি আমার ব্যক্তিগত
আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ । তা কিন্তু নয় । আমার প্রজন্ম যারা দেশ স্বাধীন করার
জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল সেই একাত্তরে তাদেরতো বিএনপি’র নষ্ট
রাজনীতির প্রতি ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া থাকতেই পারে ।
নির্বাচনের দিন আমি আমার শহর চট্টগ্রামে ছিলাম । একদিনের জন্য গিয়েছিলাম
শ্রেফ ভোট দিতে । আমার ভোট কেন্দ্রটি আমার বাড়ির গেট লাগোয়া, একটি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ে। বেলা দশটায় গিয়ে দেখি সেই কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী
মনজুর আলমের কোন এজেন্ট বা কর্মী নেই । অন্য সকল প্রার্থীর আছে, এমন কী
বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলার প্রার্থীরও । জানতে চাইলে অন্য এজেন্টরা বলে
মনজুরের কোন এজেন্ট আসে নি । আমার ভোট দেয়ার পর প্রায় ডজন খানেক সেন্টার
ঘুরে দেখি একই চিত্র । আসলে মনজুকে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে ঠিক কিন্তু তাদের
সাংগঠনিক সমর্থন তার প্রতি কখনো ছিল না । অন্যদিকে ৯২ দিনের অগ্নি
সন্ত্রাসের অভিযোগ নিয়ে জামায়াত-বিএনপি’র অনেক নেতাই হয় পলাতক ছিল অথবা
হাজতবাস করছিল । ২০১০ সালের সিটি নির্বাচনের চিত্রটা ঠিক উল্টো ছিল । সেই
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঘরণার বলে পরিচিত মনজুকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে
বিএনপি আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে প্রার্থী মহিউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রায়
৯৫ হাজার ভোটে জয়ী করে এনেছিল । সেই নির্বাচনে একদিকে বিএনপি মনজুর পিছনে
তাদের সকল সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগ করেছিল আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগে ছিল চরম
বিভক্তি । এবার পরিস্থিতি ঠিক উল্টো । আওয়ামী লীগে বিভক্তিটা সম্পূর্ণ দূর
না হলেও পূর্বের যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল, আর ছাত্রলীগ, যুবলীগের অধিকাংশ
কর্মী আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ জ ম নাসিরের প্রতি তাদের সমর্থনই শুধু
দেয় নি তাকে বিজয়ী করতে সর্বাত্মক সহায়তা করেছে । এমন অবস্থা মনজুর বেলায়
কখনো ছিল না । তারপরও মনজুর বেগম জিয়ার নির্দেশে নির্বাচন হতে নিজেকে
প্রত্যাহার করার পূর্ব পর্যন্ত ৩ লক্ষ ৪ হাজার ৮ শত সাইত্রিশটা ভোট পেয়েছেন
(প্রদত্ত ভোটের ৩৯%)। এটি তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার ফসল । মনজুন পূর্বে ১৭
বছর কাউন্সিলার ও ৫ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন । বেশ সজ্জন এবং নিজেকে
দূর্নীতি মুক্ত রাখতে পেরেছেন । চট্টগ্রামের অনেক পরিচিত জনের কাছে খোঁজ
নিয়ে জেনেছি মনজুরকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বিএনপি’র অনেক নেতৃবৃন্দ
তার কাছ হতে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন । সেই কারণেই যখন মনজুরকে পাশে
বসিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরি মনজুরের
নির্বাচন হতে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন তখন মনজুর অনেকটা
বাকরুদ্ধ হয়ে বলে ফেলেন তিনি রাজনীতি হতেও অবসর নিচ্ছেন । বিএনপি’র রাজনীতি
তার দেখা হয়ে গেছে । তিনি হয়তো কিছুটা দেরীতে বুঝতে পেরেছেন তাকে টয়লেট
পেপার হিসেবে ব্যবহার করে এখন ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে । ঢাকার দুই সিটি
কর্পোরেশন নির্বাচনের বেলায়ও তাই । লিক হয়ে যাওয়া মওদুদ আর শিমুল
বিশ্বাসের, নজরুল ইসলাম খান আর জনৈক তৃণমূল কর্মীর কথপোকথনের টেপ এটিই
প্রমাণিত করে যে বিএনপি দিনের প্রথম অংশে যে নির্বাচন বর্জন করবে তা তারা
আগে হতেই ঠিক করে রেখেছিল । আর আগের দিনের তাবিথ আওয়াল আর নয়জন আইন শৃঙ্খলা
রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যের একজন প্রতিনিধির কথপোকথন শুনলে মনে হবে তাবিথ
আওয়াল নির্বাচন শেষ করার পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন । তাবিথ বেলা সাড়ে বারটা
পর্যন্ত ৩ লক্ষ ২৫ হাজার আশি ভোট পেয়েছিলেন (প্রদত্ত ভোটের ৪১%) । এই সময়ে
তার প্রাপ্ত ভোট ইঙ্গিত দেয় তিনি আনিসুল হকের সাথে তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা
তৈরী করতে পেরেছিলেন । তিনি ব্যারিস্টার মউদুদের সাংবাদিক সম্মেলনে আসতে
গড়িমসি করছিলেন । মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস তার স্বামীর
অনুপস্থিতিতে ক্লান্তিহীন ভাবে তার পক্ষে প্রচারণা চালিয়েছিলেন । হয়তো বুঝতে
পারেন নি পর্দার অন্তরালে অন্য ষড়যন্ত্র আর নাটক চলছে । মির্জা আব্বাসও ২
লক্ষ ৯৪ হাজার ২ শত ৯১টি ভোট পেয়েছিলেন (প্রদত্ত ভোটের ৩৫%) । মির্জা সাহেব
যেহেতু বিএনপি’র রাজনীতির সাথে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলেন বলে হয়তো তিনি বিএনপি’র
ষড়যন্ত্র নির্ভর রাজনীতির সাথে পরিচিত যে কারণে তিনি আদালতে জামিনের জন্য
একাধিক বার আবেদন করেও আবার শুনানির দিন সময় প্রার্থনা করেছেন ।
আসল কথা হচ্ছে বিএনপি সৎ উদ্দেশ্যে এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি ।
উদ্দেশ্য যদি সৎ থাকতো তাহলে তারা ঢাকা উত্তরে একজন অচেনা তাবিথ আওয়াল আর
দক্ষিণে ফেরারি মির্জা আব্বাসকে অথবা চট্টগ্রামে অর্ধেক আওয়ামী লীগার আর
অর্ধেক বিএনপি’র মতাদর্শে দীক্ষিত মনজুর আলমকে মনোনয়ন না দিয়ে বিজয়ী হওয়ার
জন্য আরো উপযুক্ত প্রার্থী দিত । ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আওয়াল মিন্টু আওয়ামী
লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগই দিয়েছিলেন ঢাকার মেয়র হওয়ার জন্য । তার মনোনয়ন পত্র
বাতিল হলো কিনা সামান্য ভুলের জন্য যা সকলে মনে করেন ছিল তার ইচ্ছাকৃত ।
সকলে আবদুল আওয়াল মিন্টুকে একজন সতর্ক এবং হুঁসিয়ার মানুষ হিসেবে চেনেন ।
তার এ’ধরনের ভুল হবে তা কেউ বিশ্বাস করে নি । তিনি আবার নিজের পুত্র তাবিথ
আওয়ালকে দিয়েও মনোনয়ন পত্র দাখিল করিয়েছেন অথচ মনোনয়ন পত্র দাখিল করার
পূর্বে তাকে তেমন কেউ চিনতোই না । এতে বুঝাই যায় আবদুল আওয়াল মিন্টুর মতলব
ভাল ছিল না । এটি এক বাক্যে সকলে স্বীকার করবেন বিএনপি বর্জনের ঘোষণা না
দেয়া পর্যন্ত দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তিন সিটি কর্পোরেশনেই একটি
আনন্দঘন পরিবেশে ভোট গ্রহণ চলছিল । ঢাকা দক্ষিণের কয়েকটি কেন্দ্রে কিছু
সহিংসতা হয়েছে এবং তা ছিল কাউন্সিলারদের সমর্থকদের মধ্যে । এই নির্বাচনের
একটি বৈশিষ্ট্য ছিল প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একাধিক
প্রার্থীর প্রতিদ্বন্ধিতা করা । এই ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সমর্থনকারী
প্রার্থীরা কয়েক ধাপ এগিয়ে । চট্টগ্রামে একটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের নয়জন
প্রার্থী ছিল । নির্বাচনের সময় এবং তার পরে এই রকম প্রার্থীদের সমর্থকদের
মধ্যে সংঘাত অনেকটা অনিবার্য ছিল । চট্টগ্রামের বায়জিদ বোস্তামি এলাকায়
নির্বাচনের পরের দু’দিনও দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলেছে ।
যতক্ষণ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেনি ততক্ষণ পর্যন্ত মেয়র
প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে তেমন বড় ধরণের কোন গোলযোগের খবর পাওয়া যায় নি
। তারা নির্বাচন বর্জনের পর কাউন্সিলার প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে
সংঘাতের মাত্রা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পায় । কোন কোন এলাকায় ফ্রী ফর অল অবস্থা
। দৈনিক ইত্তেফাকের খবর অনুযায়ী তিন সিটি কর্পোরেশনে মোট কেন্দ্র ছিল ২৭০০
টি যার মধ্যে ৫৫টিতে গোলযোগ ও অনিয়ম হয়েছে । এমন গোলযোগের কারণে ঢাকায় এক
লাখের মতো এবং চট্টগ্রামে ১০ হতে ১২ হাজার ভোটার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে (দৈনিক
ইত্তেফাক, এপ্রিল ২৯) । অথচ দেশের বেশ কিছু গণমাধ্যম নির্বাচনের পরের দিন
এই বলে সংবাদ শিরোনাম করেছে যে এই নির্বাচনের ফলে দেশ হতে গণতন্ত্র চিরতরে
নির্বাসিত হলো । এদের কেউই একবারও উল্লেখ করলো না বিএনপি’র নির্বাচন
বর্জনের আসল উদ্দেশ্য । বিএনপি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে
সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছে আর ২৮ এপ্রিল তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে
অংশগ্রহণ করে একই কাজ করতে চেষ্টা করেছে । বিএনপি এটি কখনো বুঝতে চায়নি সব
সময় দেশের সকল মানুষকে বোকা বানানো সম্ভব নয় । আর বাংলাদেশে ছয় কোটি
পাকিস্তানির বাইরে এখনো দশ কোটি বাঙালি আছেন যারা বাংলাদেশের উপর আস্থা
রাখেন এবং বাংলাদেশের আদর্শকে বুকে ধারণ করেন । অন্যদিকে ইলেকশান ওয়ার্কিং
গ্রুপ নামের নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের একটি মোর্চার মতে এই নির্বাচনটি
গ্রহণযোগ্য হয় নি নানা অনিয়মের কারণে । তারা সকলে মিলে ঢাকার ১৯১ টি
কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ পর্যবেক্ষণ করেছে । পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ছিল ৬০০ জনের
মতো । চট্টগ্রামে তাদের কোন কর্মকান্ড ছিল না । কারা এই পর্যবেক্ষক, তাদের
রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড কী, দিনের কোন সময় এই পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে অথবা
কেন্দ্র বাছাইয়ে কী পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে তা কিন্তু তারা বলেন না ।
বলেন অভিযোগ আছে বিএনপি’র এজেন্টদের কেন্দ্র হতে বের করে দেয়া হয়েছে । তারা
কারা আর কোথা হতে বের করে দেয়া হয়েছে তাও কিন্তু অজানা । এই মোর্চার কর্তা
ব্যক্তিরা আবার জিয়ার ‘হাঁ’ ‘না’ ভোট, মাগুরা অথবা ঢাকা-১০ উপনির্বাচন কিংবা
২০০২ সালের তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যাতে আওয়ামী লীগ অংশ গ্রহণ করেনি
তা নিয়ে কথা বলতে চান না । বলেন আমরা অতীতমুখী হতে চাই না । বলতে বাকি
রেখেছেন এই সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন অবাধ হয়েছে তা প্রমাণ করতে হলে আওয়ামী
লীগকে সব কটি সিটিতে পরাজয় বরণের নাটক করতে হবে ।
অনেকের প্রশ্ন এই তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমেই কী বিএনপি
নামক দলটির অবস্থা বাংলাদেশের বাম পন্থি দলগুলির মতো হয়ে গেল । তেমনটি হওয়া
মোটেও বাঞ্চনীয় নয় কারণ দেশে গণমূখি রাজনীতির জন্য একাধিক সুস্থধারার
রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন আছে। এই শূন্যতা পূরণ করতে পারতো বাম ধারার রাজনৈতিক
দলগুলি । তা এখন আর সম্ভব নয় । বিএনপি এই শূন্যস্থানটি পূরণ করতে পারে তবে
তাদের রাজনীতির খোল নলচে পাল্টাতে হবে । মতাদর্শে পরিবর্তন আনতে হবে।
জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে । তারা যদি মনে করে বেগম জিয়া আর
তাঁর গুণধর পুত্র তারেক রহমান আর কিছু সামরিক বেসামরিক অথর্ব আর অদূরদর্শী
আমলা দিয়ে অনেক দূর যেতে পারবেন তা হলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন । এই
সব দিয়ে বড়জোর তারা পেট্রোল বোমা নির্ভর রাজনীতিতে ফিরে যেতে পারবেন । এর
ফলে তাদের আরো কিছু নেতা কর্মী ফেরার হতে পাওে, দল কর্মী শূণ্য হতে পারে ।
বিএনপি কী করবে তা তাদেরকেই ঠিক করতে হবে । তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে
করেন একটি শুদ্ধ বিএনপি দেশের রাজনীতিকে ইতিবাচক অনেক কিছুই দিতে পারে । আর
আওয়ামী লীগও আত্মসন্তুষ্টিতে ভুগলে হবে না । তাদের ভিতরেও অনেক পঁচা আপেল
আছে । সেই সব আপেলকে সময় থাকতেই বেছে ফেলে দিতে হবে । কোন ব্যক্তিই দেশ ও
দলের স্বার্থে অপরিহার্য নয় ।
লেখক: সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় । মে ২, ২০১৫
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
[......লেখক আর্কাইভ]
|