প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

পাপের ভারে সাকার পতন

 


আবদুল মান্নান

 

‘পাপ বাপকেও ছাড়েনা’ বাংলায় একটা প্রবাদ বাক্য আছে । দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গত বুধবার একাত্তরের ঘাতক, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য চট্টগ্রামের কুখ্যাত রাজাকার সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরি ওরফে সাকা চৌধুরির মৃত্যুদন্ড বহাল করলে প্রবাদ বাক্যটির যথার্থতা আবারো প্রমাণিত হলো । বলতে গেলে নিজের পাপের ভারেই সাকার পতন হলো । একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে ইতোমধ্যে দু’জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে আরো দু’জনের আইনী প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে । সাকার মতো তাদের বিরুদ্ধেও মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং তা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে প্রমাণিত । কিন্তু তারা সাকার মতো এমন বেয়াদব, বেত্তমিজ, দাম্ভিক, উদ্ধত আর অহংকারী ছিল না । সাকা যেমন ভাবে একজন ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধী ছিল ঠিক তেমন ভাবে এই সব বৈশিষ্ট্যের জন্য দেশব্যাপী তার কূখ্যাতি ছিল । যারা তার পরিবার সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন তারা সকলে স্বীকার করবেন এটি তাদের পরিবারের সকল সদস্যের কম বেশী একটি পরিচিত বৈশিষ্ট্য । তাদের রক্তেই আছে । যারা রাজনীতির সাথে জড়িত নয় তাদেরটা হয়তো তেমন একটা দেখা বা শোনা যায় না । সাকার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরি, ওরফে ফকা চৌধুরি ভারত বিভাগের পূর্ব হতেই কোলকাতায় মুসলীম লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন । পরবর্তিকালে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে তিনি একই ধারার রাজনীতির সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন । পূত্রের মতো তার কথাবার্তাও শালীনতা বর্জিততো ছিলই, প্রচ- হাম্বরা ভাবও ছিল । ১৯৭০ এর নির্বাচনে রাউজান গহিরা নির্বাচনী এলাকা হতে তিনি মুসলীম লীগের মনোনয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চট্টগ্রাম হতে প্রকাশিত দৈনিক আজাদীর সম্পাদক অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের সাথে প্রতিদ্বন্ধিতা করে প্রায় পঁচিশ হাজার ভোটে পরাজিত হন । অধ্যাপক খালেদ ছিলেন একজন আপাদমস্তক ভদ্রমানুষ । কোন জাতীয় নির্বাচনে এটি ছিল ফকার প্রথম পরাজয় । নির্বাচনের পূর্বে তার সাথে এলাকার কোন মানুষ দেখা করতে গেলে তার প্রথম প্রশ্ন ছিল ‘আমার বিরুদ্ধে কে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে?’ তিনি জেনে শুনেই এমন প্রশ্ন করতেন । প্রশ্নের উত্তরে জবাবদাতা বলতেন অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ । ফকা দাঁত মুখ খিঁছিয়ে বলতেন ‘ওর বুঝি রাওয়ালপিন্ডি যাওয়ার শখ হয়েছে? পকেটে দশটা টাকা রাখতে বলো কারণ পার্লামেন্ট ভবনে হারিয়ে গেলে আর্দালিকে দশটাকা দিলে পথ দেখিয়ে দিবে‘ । আর একজনকে হয়তো বলতেন খালেদের বাপ ভাল মানুষ ছিল । ‘করাচি গেলে আমার জন্য চিকন চাল নিয়ে যেত । ছেলে বাপের মতো হয়নি।’ বলা বাহুল্য এই সবই বেহুদা কথা এবং তা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় এমন ভাবে বলতেনযে তা কোন অবস্থাতেই শ্রুতি মধুর ছিল না । সাকার ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরি, ওরফে গিকা চৌধুরি । কিছু দিন বিএনপি’র আন্তর্জাতিক সম্পাদক ছিলেন । দলীয় কোন্দলের কারণে তাকে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দেয়া হয় । তার পিতা আর বড় ভাইয়ের চরিত্রের সাথে যথেষ্ট মিল আছে । ১৯৮২ সনের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের প্রথম অধিবেশনে আমি বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করি । জানা মতে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিধিবদ্ধ পর্ষদে বঙ্গবন্ধুর নামে শোকা প্রস্তাব উত্থাপনের ঘটনা এটাই প্রথম । তখন অলিখিত ভাবে বঙ্গবন্ধুর নাম নেয়াটাও দেশে অনেকটা নিষিদ্ধ ছিল । সকল সিনেট সদস্য আমার শোক প্রস্তাবকে সমর্থন জানালেন । গোল বাধলো যখন জাতীয় অধ্যাপক ও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাঃ নুরুল ইসলাম ফজলুর কাদেরের নামও শোক প্রস্তাবে অন্তর্ভূক্ত করতে চাইলেন । প্রগতিশীল সকল সিনেট সদস্য সেই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করলে এক অচল অবস্থার সৃষ্টি হয় । প্রায় দু’ঘন্টা ধরে নানা যুক্তিতর্ক চলতে থাকে । অবস্থা বেগতিক দেখে ডাঃ নুরুল ইসলাম তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন এবং বলেন তার মৃত্যুর পর যেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে কোন শোক প্রস্তাব নেয়া না হয় । এই ঘটনার ক’দিন পর চট্টগ্রামের নিউ মার্কেটে গিকা চৌধুরীর সাথে আমার সাক্ষাত হলে তার সঙ্গে থাকা একজন আমাকে চিনিয়ে দেয় । গিকা আমার কাছে এসে বলে তার সাথে আমার কথা আছে আমি যেন নীচে যাই । আমি তা করতে অস্বীকার করলে তার পিতার নামে বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে শোক প্রস্তাব নিতে বাধা দেয়ার জন্য আমাকে অত্যন্ত অশ্লীল ভাবে গালা গাল করে । আরো দূর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামাত-বিএনপি’র ছাত্র শিক্ষকরা একাধিকবার ফকা চৌধুরির নামে একটি ছাত্রাবাসের নাম করণের উদ্যোগ গ্রহণ করে । প্রগতিশীল শিক্ষক ও ছাত্রদের বাধার কারণে তা সফল হয় নি ।
একাত্তরে চট্টগ্রাম শহরে দু’টি টর্চার সেল ছিল । একটি ফকার গুডস হিলস্থ বাসভবনে যার দায়িত্বে ছিল সাকা আর গিকা । তাদের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিল হাটহাজারীর সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম আর খোকা । সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম বেগম জিয়ার ১৯৯১-৯৬ মেয়াদের সরকারের সময় সংসদে দলীয় হুইপ ছিন । একাত্তরে পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর আত্মসমর্পনের পর খোকা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয় । দ্বিতীয় টর্চার সেল স্থাপিত হয়েছিল নন্দনকাননের ফরেষ্ট হিলের নীচে ডালিম হোটেলে । এর দায়িত্বে ছিল ছাত্রসংঘ নেতা মীর কাসেম আলী আর আবদুল জাহের মোহাম্মদ আবু নাসের । । মীর কাসেম আলী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত । তিনি চূড়ান্ত রায়ের অপেক্ষায় আছেন । আবদুল জাহের নাম পরিবর্তন করে বর্তমানে একটি ইসলামি ব্যাংকের ডাইরেক্টর । পঁচাত্তরের পর জাহের সৌদী দূতাবাসে গ্রহন্থাগারিকের চাকরি করতো । চট্টগ্রাম শহর এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি নাগাদ পাকিস্তানি সেনা বাহিনী দখল করে নেয় । এর পর পরই মুসলিম লীগ, জামায়াত, নেজামে ইসলামী ও পিডিপি তাদের সঙ্গি হয় এবং তাদের সাথে মিলে পাহাড়তলির বিহারিদের নিয়ে বাঙালি নিধনের নতুন নক্সা নিয়ে মাঠে নামে । প্রথম শিকার আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তার পর ধর্মীয় সংখ্যা লঘুরা । গুডস হিল আর ডালিম হোটেল হয়ে উঠে ভয়াবহ নির্যাতন কেন্দ্র । সেখানে একবার গেলে জীবিত ফিরে আসা ভাগ্যের ব্যাপার চট্টগ্রাম কলেজ আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বরিষ্ঠ অধ্যাপক অবনি মোহন দত্ত ছিলেন একজন অত্যন্ত স্বজ্জন ব্যক্তি । ফকার কন্যা তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়তো । অনেকে বলেন কারো সাথে তিনি উচ্চ স্বরে কথাও বলতেন না । সেই অবনি মোহন দত্তকে কলেজের ষ্টাফ কোয়ার্টার হতে একদিন সাকার লোকজন গুডস হিলে ধরে নিয়ে যায় । তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি এপ্রিল মাসে আওয়ামী লীগ আর ছাত্র লীগের নেতা কর্মীদের তাঁর বাসায় আশ্রয় দিয়েছিলেন । এরপর আর অধ্যাপক দত্তের খোঁজ পাওয়া যায় নি । পি সি বর্মন বাবু একজন অবসর প্রাপ্ত ব্যাংকার ছিলেন। দেখতে একজন ঋষি তুল্য মানুষ। নন্দন কাননে এলাকায় থাকতেন । ফকার সাথেও ভাল সম্পর্ক ছিল । বাঁচতে পারেন নি । তাঁর এবং তাঁর পূত্র আমার বন্ধু রতন বমর্ণের মৃত দেহ নিজ বাড়ীতে দীর্ঘ দিন পরে থেকে পঁচে গন্ধ ছড়িয়েছে । সাকার লোকজন তাদের হত্যা করেছিল । রাউজানের কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের স্বত্তাধিকারি নতুন চন্দ্র সিংকে পাকিস্তান সেনা বাহিনী না মেরে চলে গিয়েছিল । সাকা এসে নিজ হাতে গুলি করে তাঁকে প্রার্থনারত অবস্থায় মন্দিরের সামনে হত্যা করে । রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারিতে সাকার গণহত্যা ট্রাইবুনালে প্রমাণিত । আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে যে সকল অভিযোগের দায়ে সাকা অভিযুক্ত হয়ে দোষী প্রমাণিত হয়েছে তার অপরাধ তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশী । ট্রাইবুনালে একজন সাক্ষী বলেছেন সাকার অত্যাচারে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়া এতই ক্ষুব্দ হয়েছিলেন যে তিনি তাকে হত্যা করার জন্য একটি মুক্তিযোদ্ধা টিম পাঠিয়েছিলেন । তবে সেই টিম তাদের মিশনে সফল হতে পারে নি ।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পতন অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠলে একাত্তরের সেপ্টেম্বর মাসে সাকা ব্যারিষ্টারি পড়ার নাম করে পাকিস্তান হয়ে লন্ডন চলে যায় । ১৬ই ডিসেম্বরের পর সাকার পিতা ফকা সপরিবারে প্রায় ষাট কেজি স্বর্ণ নিয়ে ট্রলার যোগে বার্মা পালনোর সময় চট্টগ্রামের আনোয়ারার উপকূলে ট্রলারের চালক ফকাকে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে তুলে দেন । সেখান হতে ফকা কারাগারে । ১৯৭৩ সনে ফকা কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন । ১৯৭৪ সনে সাকা দেশে ফিরে এসে প্রথমে কিছু ছোট খাট চোরাচালান সিন্ডিকেটের সাথে ব্যবসা শুরু করে । জিয়া ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলে সাকা আরো কয়েকজনের সাথে মুসলীম লীগকে পূনরুজ্জীবিত করে খোলা মেলা রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে । ১৯৭৯ সনে জিয়ার শাসনামলে সাকা রাউজান হতে মুসলীম লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয় । সাকার নির্বাচনি প্রচারণা ছিল তার পিতার কার্বন কপি । রাউজানে বেশীর ভাগ ভোটারই ধর্মীয় সংখ্যালঘু । নির্বাচনের পূর্বে ফকা তাদের সাথে সভা করে বলতেন তারা যদি নির্বাচনের দিন ভোট দিতে না যান তা হলেই তিনি ভোট পেয়ে গেছেন বলে মনে করবেন । বাকি মুসলমান ভোটারদের ফকা ভয় ভীতি দেখিয়ে তাকে ভোট দিতে বাধ্য করতেন । সাকাও একই কায়দায় স্বাধীন বাংলাদেশে রাউজান অথবা রাঙ্গুনিয়া হতে ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে । সাকার নিজের একটি সশস্ত্র বাহিনী ছিল যা সে প্রয়োজনে ব্যবহার করতো । যদি মনে করতো এলাকায় কেউ তার জন্য অসুবিধা সৃষ্টি করছে তা হলে তাকে প্রকাশ্যে হত্যা করতে তার কোন দ্বিধা ছিল না । আওয়ামী লীগের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে সাকা নিটল নামের একজন ছাত্রদল নেতাকে তার গুডস হিলস্থ বাসায় হত্যা করলে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে । নিটল বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান সমর্থক ছিল । আবদুল্লাহ আল নোমান যখন বেগম জিয়ার ক্যাবিনেটে মৎস ও পশু পালন মন্ত্রী সাকা তাতে ডাকতো পশু মন্ত্রী বলে । কিন্তু এক রহস্যজনক কারণে রাতে গ্রেফতার করে সাকাকে পরদিন সকালে পুলিশ ছেড়ে দেয় । ১৯৯৮ সালে সাকা তার দলের চেয়ারপারসন বেগম জিয়াকে কুকুরের সাথে তুলনা করলে তাকে দল হতে বহিষ্কার করা হয় । তবে তা ছিল ক্ষণস্থায়ী । ২০০১ সালের মে মাসেও সাকা একবার দল হতে বহিষ্কার হয়েছিল । কিন্তু সেই সাকাকে আবার দলে ফিরিয়ে নিয়ে সংসদ নির্বাচনে বেগম জিয়া মনোনয়ন দিয়ে তাকে সংসদে তার উপদেষ্টা নিয়োগ করেন । এর আগে ১৯৮৬ সনে সাকা জাতীয় পার্টি হতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এরশাদ সাকাকে মন্ত্রী সভায় অন্তর্ভূক্ত করেন । পরে এরশাদও তাকে দলবিরোধী কার্যকলাপের দায়ে দল হতে বহিষ্কার করেন ।
সাকার জীবনে একটি বড় ঘটনা ছিল বেগম জিয়া কর্তৃক তাকে ২০০৪ সালে ওআইসি’র মহাসচিব পদে মনোনয়ন দেয়া । তার প্রতিদ্বন্ধি ছিল তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার প্রার্থী । নির্বাচনের আগে ও পরে তার পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন জন সিনিয়র শিক্ষক ওআইসি দেশগুলিতে ব্যাপক সফর করেন । সেই নির্বাচনে তুরস্ক বিজয় লাভ করে এবং সাকার ভাগ্যে মাত্র সাত ভোট জোটে । দেশে ফিরে তিনি তার পরাজয়ের জন্য শেখ হাসিনাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন ।
সাকার ফাঁসির চূড়ান্ত রায় অপ্রত্যাশিত ছিল না । অপ্রত্যাশিত ছিল রায়ের পূর্বে সাকার পরিবারের সদস্যরা উচ্চ আদালতের কোন কোন বিচারকের সাথে দেখা করেছেন এমন গুজব প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো । দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সকল বিতর্কের উর্দ্ধে রাখা সকলের কর্তব্য । সাকার ফাঁসির চূড়ান্ত রায় ঘোষণার পর প্রথম দিন বিএনপি’র মূখপাত্র ডঃ আসাদুজ্জামান রিপনের দলের পক্ষে দেয়া বিবৃতি ছিল সব চেয়ে হতাশাব্যাঞ্জক । তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিং করে বলেন এই রায়ে তারা হতাশ বিস্মিতও বেদনাহত । কোন যুদ্ধাপরাধীর রায়ের বিরুদ্ধে এটাই ছিল বিএনপি’র আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া যদিও বিচার শুরুর আগে ও পরে বেগম জিয়া সকল মানবতাবিরোধী অপরাধীর মুক্তি চেয়ে অনেক সভা সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন । রিপন বা দলের উপলব্দি করা উচিত সাকাকে যদি তারা যুদ্ধাপরাধী বা মানবতাবিরোধী অপরাধী নয় বলে মনে করে তা হলে হিটলারকে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার দেয়া উচিত । তবে পরদিন দলের আর দু’জন দায়িত্বশীল কেন্দ্রীয় নেতা মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন ও ব্রিগেডিয়ার (অব) হান্নন শাহ বলেন তারা কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নেবেন না । আর একাত্তর সালে বিএনপি’র জন্মই হয় নি । এটা অনেক যৌক্তিক, বাস্তবসম্মত ও গ্রহণযোগ্য বক্তব্য । সাকার মতো ব্যক্তিরা কোন দলের জন্য সম্পদ হতে পারে না । তারা সব সময় রাজনীতির জন্যই দায় । বিএনপি’র এখন সময় হয়েছে এই সব তষ্করদের সাথে সংশ্রব ত্যাগ করে দলকে একটি সত্যিকারের আদর্শ রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলা । গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় একাধিক আদর্শ রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন রয়েছে । সার্বিক কর্মকান্ড দেখে বিএনপি এ‘সব উপলব্দি করে বলে মনে হয় না ।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । অগাষ্ট ২, ২০১৫

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]