প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কাক-জ্যোৎস্নায় কাক-ভোর (পর্ব-২২)

@

@

শাশ্বত স্বপন

@

@

বিকাল বেলা। আজ গরুকে ঘাস দেয়নি বলে কালীপদ কালীর গায়ে হাত তুলেছে। আসলে এটা মূল কারণ নয়। এতগুলি সম্ভন্ধ এল অথচ একটিতে তার বিয়ে ঠিক হল না। সে বকতে শুরু করল, কালো মেয়ে এত সম্ভন্ধ আসে, একটাও ঠিক হয় না। এক-দুই লক্ষ টাকা চায়, ১০/১২ ভরি স্বর্ণ চায়, হোন্ডা চায়, আবার কোন বরপক্ষ বলে ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে হবে। বলি, মরে যেতে পারিস না, তুই।

তুলসী এসে কালীপদকে বকতে শুরু বরল, ঐ তুই ওকে মারলি কেন? কালো বলিস ? বলি, ও তোর জন্যইতো কালো হয়েছে।

জন্ম, বিয়ে আরো কথা উঠবে ভেবে কালীপদ আর কোন কথা বলল না। সে কান্নার্ত চোখে বাজারে চলে গেল। সাইকেল চালানো, সাঁতার, ফ্রি কথা বলা ইতাদি নিয়ে কালী মা-বাবা, ঠাকুমার কাছে অনেক মার খেয়েছে। পাশার ভালোবাসা, এ সব দুখের উপর যেন শান্তির প্রলেপ মেখে দিয়েছে। সে পাশার কথা ভেবে সব দুঃখ ভূলে যায়।

সে জানে ইতি, ববি, সুমা, শারমিন--ওরা সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে এবং সুন্দরী বলেই ওদের মা-বাবা ওদের জন্য তেমন চিন্তা করে না। তাছাড়া টাকারও অভাব নেই। ওদের মা-বাবা এই বয়সে নিশ্চয় হাত তুলে না, অথচ তার বাবা আজ হাত তুলেছে। কালীপদের মনেও অনেক দুঃখ। মেয়ে বড় হয়েছে অথচ বিয়ে দিতে পারছে না। শেষ সম্ভন্ধের বরপক্ষ, এক লক্ষ টাকা, রঙ্গিন টিভি, আর সাত ভরি সোনা যৌতুক হিসাবে দাবী করেছে, ছেলে চাকুরীজীবী। ভাল পাশ করা ছেলে, ভাল বেতন পায়, উপরিও আছে। তারা এ কথাও বলেছে যে মেয়ে সুন্দরী হলে অথবা ফেসকাটিং ভাল হলে তারা এত দাবী করত না। যে ঘরে ছেলে সংখ্যা বেশী অথবা ছেলেই আছে মেয়ে নাই, সে ঘরের পিতা-মাতারা না জানি কত খুশী। কারণ এখানে যৌতুক আসবে, যাবে না। তবে এ খুশী দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তের মধ্যে। কিন্তু উচ্চ মধ্যবিত্ত অথবা ধনীর ঘরে মেয়ে না থাকলে সংসার অপূর্ণ থেকে যায়। হোক না কালো মেয়ে, মেয়ে হলেই হল। টাকা খরচ করার বড় মাধ্যম হল মেয়ে।


একদিন কালী একটা কালো কবুতরী আর সাদা কবুতরের মিলন দৃশ্য দেখেছিল। তখন সে মনে মনে স্রষ্ঠাকে বলেছিল হায়রে স্রষ্ঠা তুমি যদি আমাকে কালো পাখি অথবা কালো যে কোন প্রাণি বানাতে তবে কোন অসুবিধা ছিল না। কালো নিয়ে মনুষত্বের মাঝে যে ঘৃণা, লাঞ্ছনা, অবহেলা সে প্রতিনিয়ত পাচ্ছে তা পেত না। জীবজন্তু, পশুপাখিতে কালো-সাদা ভেদাভেদ নাই। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান-মুসলমান-ইহুদী ইত্যাদি নাই। কারণ ইহাদের মাঝে রাম, বুদ্ধ, যীশু, হযরত মুহম্মদ (সঃ) জন্মগ্রহণ করে নাই। এখানে নেই দুর্নীতি, কুসংস্কার কিংবা যৌতুক। হ্যাঁ, মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। মানুষ এ জন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ যে তারা বিবেক বুদ্ধি দিয়ে সাড়া বিশ্বকে জয় করেছে, সৃষ্টি করেছে অবিস্মরনীয় Computer, Disantia, mvö_ m„wó nöqöQ Blood Cancer, Brain Cancer, AIDS BZNvw` । সৃষ্টি করেছে মানুষে মানুষে হাজার হাজার বৈষম্য। সৃষ্টি করেছে বোমা। বৈষম্যে- বৈষম্যে যুদ্ধ হলে যার ভূমিকা অপরিহার্য। সময়ের প্রেক্ষিতে মানুষ সৃষ্টি করেছে সংস্কৃতিগত, ধর্মগত, বর্ণগত, সম্পদগত ইত্যাদির কালো দেয়াল। এই সব না হলে কি মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ হত ? ডায়নোসরের পূর্বে থেকে আজ পর্যন্ত তেলাপোকার রাজত্ব চলছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা ৩য় বিশ্বযুদ্ধের পরও ওরা বেঁচে থাকবে। নিশ্চয়ই ওদের ওরা সর্বশ্রেষ্ঠ ভাবে । ওদের ভাষা তো আমরা বুঝি না। ক্ষুদ্র বলে খবরও রাখি না।

মাঝে মাঝে কালী ভাবে,সে যদি নিগ্রোদের দেশে যেতে পারত। তারা তো কালীর চেয়েও আরো বেশী কালো। সেখানে সে নিজেকে সুন্দরী দাবী করতে পারত। কিন্তু নিগ্রোরাতো তার ভাষা বুঝবেনা,সেও তাদের ভাষা বুঝবে না। হায়রে ভাষা ! ভাষার মধ্যেও বৈষম্য ? পাশাকে কালী একদিন বলেছিল,

'আচ্ছা উল্কা আমাদের দেশের পিপঁড়া আর অন্য দেশের পিঁপড়ার ভাষা কি ভিন্ন? ওদের মধ্যে কি হিন্দু-মুসলমান আছে ? সাদা কালো বৈষম্য আছে ?' 'তুমি কি পাগল হয়েছে !'

কালী আর কথা বলেনি। বাড়ীতে কেউ না থাকলে,সে মনের দুঃখে পাশার গলা ধরে কাঁদবে। না, পাশা অন্য পুরুষদের মত নয়। বুকের স্তন্য তার গায়ে চেপে রাখলেও সে নিজেকে সামলে রাখতে পারে। পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের জন্য বাঁচতে ইচ্ছে করে। মনে হয়,তাদের জন্য ৩য় বিশ্বযুদ্ধ আরো পিছিয়ে যাবে--পৃথিবীটা আরো কিছুদিন বাঁচবে।

গত মাসে শিখারা সপরিবারে কোলকাতা চলে গেছে। এখানে শিখাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না বলেই সবাই চিরতরে চলে গেল বাস্তভিটা বিক্রি করে। কালী শিখার বিদায়ের দিন গলা ধরে কেঁদেছিল। সারাদিন সে শিখার শোকে ভাত খায় নাই। শিখা যাবার সময় বলেছিল গিয়েই চিঠি পাঠাবে। অথচ একমাস হয়ে গেল শিখার হাতের লেখা কোন চিঠি কালীর হাতে এল না। কোলকাতা চলে গেলে কেউ চিঠি লেখে না। সবাই যেন সেখানে স্বর্গ পায়। তাই নরককে মনে রাখে না। হিন্দুত্বের স্থায়ী ঠিকানা, শিখার বিয়ে আর সাম্প্রদায়িক ভূতের কথা ভেবেই শিখারা কোলকাতা চলে গেল। কালীপদও যাবার কথা ভাবছে। তবে অন্য চিন্তা নয় ; মেয়েটির বিয়ের কথা ভেবে। এখানে থাকলে কবে বিয়ে হয়,কে জানে? বিয়ে ঠিক হলেও উড়ো চিঠি চলে যেতে পারে বরের বাড়ী। নাসরিনের বিয়ে হয়েছে আজ সতের দিন হল। বিয়ের সময় হোন্ডা দেবার কথা ছিল। সতের দিন পরও যখন নাসরিনের স্বামী হোন্ডার চাকা দেখল না, তখন সে নাসরিনকে চাপ দিতে লাগল।

এদিকে মোহন দীপাকে রাস্তাঘাটে বিরক্ত করছে। জোড় করে হাতে চিঠি ধরিয়ে দিচ্ছে। চিঠির উত্তর না পেতে পেতে সে ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। তাই সে সুলতানের কাছে কেঁদে-কেটে সব কিছু বলে। সুলতান দীপাকে উঠিয়ে নিয়ে যাবার ভয় দেখায়। মোহনকে ভালবাসতে বলে। এতে কোন কাজ হচ্ছে না দেখে দীপার প্রতি মোহন, সুলতান অসহ্য হয়ে উঠে। এসিড নিয়ে রাস্তায় দু'দিন দাঁড়িয়ে ছিল। ছুঁড়ে মারতে সুযোগ পায়নি। একদিন এসিডের ভয় দেখিয়ে মোহন দীপাকে জড়িয়ে ধরে। দীপা মিনতি করে বলে, মোহন ভাই, আপনি ভাল হয়ে যান। ওদের সাথে মিশবেন না। আবার লেখাপড়া করেন। নইলে কোন কাজে লেগে যান।

মোহন কানে কোন কথা তুলেনি। সেদিন দীপার সারা অঙ্গে ইচ্ছেমত চুমো দিয়েছিল। দীপা শুধু কাঁদছিল। সুলতান, আর তার দু'জন সঙ্গী দূর থেকে সিনেমা উপভোগ করছে। ঘটনা ধরা পড়ে কালীপদের কাছে। সে তখন বাজার থেকে আসছিল। দীপাকে সে রক্ষা করে । কিন্তু তার উপর ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ নেওয়া হবে এ রকম হুমকী দিয়ে যায় মোহন ও সুলতান। দীপা বাড়ীতে এসে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। সবাই অবাক হয়ে যার কালীপদ আর দীপাকে দেখে। কালীপদ সব ঘটনা খুলে বলে। দীপার বাবা অসহ্য হয়ে পাড়ার শ্রদ্ধেয় ও বয়োজৈষ্ঠ্য ব্যক্তি হোসেন বেপারীর কাছে নালিশ করল। হোসেন বেপারী নিতাই বিশ্বাসকে ইচ্ছেমত ধমকাল।

সুলতানের বড় ভাই অসহ্য হয়ে গেছে সুলতানের কার্যকলাপের কারণে। প্রতিদিন কেউ না কেউ তার বিরুদ্ধে নালিশ করবেই। তাই রাগের মাথায় সুলতানকে এমন মার মারল যে বাম হাত ভেঙ্গেই গেছে। সুলতানকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। নিতাই বিশ্বাস তার ছেলে মোহনকে সাতদিনের মধ্যেও কোথাও খুঁজে পেলেন না। (চলবে)

@


@

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

@

@

 

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

@

@