[প্রথমপাতা]
|
দূর্গা পূজার ইতিহাস
শাশ্বত স্বপন
দূর্গা পূজা কবে, কখন,
কোথায় প্রথম শুরু
হয়েছিলÑতা জানা যায় না।
ভারতের দ্রাবিড় সভ্যতায়
মাতৃতান্ত্রিক দ্রাবিড়
জাতির মধ্যে মাতৃদেবীর
পূজার প্রচলন ছিল।
সিন্ধু সভ্যতায় ( হরপ্পা
ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা)
দেবীমাতা, ত্রিমস্তক
দেবতা, পশুপতি শিবের
পূজার প্রচলন ছিল।
দূর্গা শিবের
অর্ধাঙ্গিনী সে হিসাবে
অথবা দেবী মাতা হিসাবে
পূজা হতে পারে। তবে
কৃত্তিবাসের রামায়নে আছে,
শ্রী রাম চন্দ্র কালিদহ
সাগর (বগুড়ার?)থেকে ১০১
টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে
সাগর কূলে বসে বসন্তকালে
সীতা উদ্ধারের জন্য
সর্বপ্রথম শক্তি তথা
দুর্গোৎসবের (বাসন্তি
পূজা বা অকাল বোধন)
আয়োজন করেছিলেন।
মারকেন্দীয়া পুরান (Markandeya
Purana)
মতে, চেদী রাজবংশের রাজা
সুরাথা(Suratha)
খ্রীষ্ঠের জন্মের ৩০০
বছর আগে কলিঙ্গে (বর্তমানে
ওড়িষ্যা)
Duseehera
নামে দূর্গা পুজা
প্রচলন করেছিল। নেপালে
আজও
Duseehera
বা
Dashain
নামেই পুজা হয়। যদিও
প্রাচীন ওরিষ্যার সাথে
নেপালের পূজার কোন
যোগসূত্র আছে কিনা জানা
নাই।
মধ্য যুগে বাংলা
সাহিত্যে দূর্গা পূজার
অন্তিত্ব পাওয়া যায়।
১১শ শতকে অভিনির্ণয়-এ,
মৈথিলী কবি বিদ্যাপতির
দূর্গাভক্তিতরঙ্গিনীতে
দূর্গা বন্দনা পাওয়া
যায়। বঙ্গে ১৪শ শতকে
দুর্গা পূজার প্রচলন
ছিল কিনা ভালভাবে জানা
যায় না। ১৫১০ সালে কুচ
বংশের রাজা বিশ্ব সিংহ
কুচবিহারে দূর্গা পূজার
আয়োজন করেছিলেন। ১৬১০
সালে কলকাতার বারিশার
রায় চৌধুরী পরিবার
প্রথম দূর্গা পূজার
আয়োজন করেছিল বলে ধারণা
করা হয়। আধুনিক দূর্গা
পূজার প্রাথমিক ধাপ ১৮ম
শতকে নানা বাদ্য যন্ত্র
প্রয়োগে ব্যক্তিগত,
বিশেষ করে জমিদার, বড়
ব্যবসাযী, রাজদরবারের
রাজ কর্মচারী পর্যায়ে
প্রচলন ছিল। পাটনাতে
১৮০৯ সালের দূর্গা
পূজার ওয়াটার কালার
ছবির ডকুমেন্ট পাওয়া
গেছে। ওরিষ্যার
রামেশ্বরপুরে একই স্থানে
৪০০ শত বছর ধরে সম্রাট
আকবরের আমল থেকে দূর্গা
পূজা হয়ে আসছে। বার
ইয়ার বা বারোয়ারী পূজা
প্রথম হুগলীর
গুপ্তিপাড়ার ১২ জন বন্ধু
মিলে ১৭৬১ সালে আয়োজন
করেছিল। সম্ভবত সেই থেকে
বারোয়ারী পূজা শুরু।
১৯১০ সালে সনাতন
ধর্মউৎসাহিনী সভা
ভবানীপুরে বলরাম বসু
ঘাট লেনে এবং একই জেলায়
অন্যান্যরা রামধন মিত্র
লেন, সিকদার বাগানে একই
বছরে ঘটা করে প্রথম
বারোয়ারী পুজার আয়োজন
করে।
Durga Puja, 1809
watercolour painting
in Patna style
১৭১১ সালে অহম রাজ্যের
রাজধানী রংপুরে শারদীয়
পূজার নিমন্ত্রণ
পেয়েছিলেন ত্রিপুরা
রাজ্যের দূত রামেশ্বর
নয়ালঙ্কার। নবাব
সিরাজ-উদ-দ্দৌল্লার
আক্রমনে কলকাতার
একমাত্র চার্চ ধ্বংশ
হবার পর সেখানে কোন
উৎসব করা অবস্থা ছিল
না। পলাশীর যুদ্ধে বিজয়
লাভের জন্য ১৭৫৭ সালে
কলকাতার শোভা বাজার
রাজবাড়িতে রাজা নব
কৃঞ্চদেব লর্ড ক্লাইভের
সন্মানে দূর্গা পূজার
মাধ্যমে বিজয় উৎসবের
আযোজন করেছিলেন।
Public announcement by
Shobhabazar Rajbari on
the origins of Durga
Puja
Old painting of Durga
Puja in Kolkata at
Shobhabazar Rajbari.
১৯২৬ সালে অতীন্দ্রনাথ
বোস জাতি,ৃ ধর্ম, বর্ণ
নির্বিশেষে সবাইকে পূজা
উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য
আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ভারতের
স্বাধীনতার সংগ্রামে দূর্গা পূজা
গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করেছিল (যেমন, কবি
নজরুলের আনন্দময়ীর আগমনে
কবিতা, বঙ্কিচন্দ্রের
বন্দে মা তরম
কবিতা,পরবর্তীতে ভারতের
জাতীয় সংগীত...)। বৃটিশ
বাংলায় এই পূজা ধীরে
ধীরে বৃদ্ধি পায়।
ভারতের স্বাধীনতা
আন্দোলনে দূর্গা স^াধীনতার
প্রতীক হিসাবে জাগ্রত
হয়। বিংশ শতাব্দির
প্রথমার্ধে এই পূজা
ঐতিহ্যবাহী বারোয়ারী বা
কমিউনিটি পূজা হিসাবে
জনপ্রিয়তা লাভ করে। আর
স্বাধীনতার পর এই পূজা
পৃথিবীর অন্যতম প্রধান
উৎসবের মর্যাদা পায়।
সরকারী বা জাতীয়ভাবে এই
উৎসবকে দূর্গা পূজা বা
দূর্গা উৎসব হিসাবে
অভিহিত করা হয়। দক্ষিণ
এশিয়ায় এটাকে শরৎ কালের
বার্ষিক মহা উৎসব হিসাবে
ধরা হয় বলে ইহাকে
শারদীয় উৎসবও বলা হয়।
কার্তিক মাসের ২য়দিন
থেকে ৭ম দিন পর্যন্ত এই
উৎসবকে মহালয়া, ষষ্ঠি,
মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী,
মহানবমী ও দশমী নামে
পালন করা হয়। অকালে বা
অসময়ে দেবীর আগমন বা
জাগরণ বলে বসন্তকালের
এই উৎসবকে বাসন্তি পূজা
বা অকালবোধনও বলা হয়।
দূর্গা পূজা ভারতে অসম,
বিহার, ঝাড়খন্ড,উড়িষ্যা
ও পশ্চিমবঙ্গে
ব্যাপকভাবে উৎযাপন করা
হয়। সেখানে ৫ দিনের ছুটি
ঘোষণা করা হয়। পশ্চিম
বঙ্গ ও ত্রিপুরায় (যেখানে
বাঙ্গালী হিন্দুরা
ব্যাপক সংখ্যায় বসবাস
করে) সবচেয়ে বড় সামাজিক,
সাংস্কৃতিক উৎসব হিসাবে
ইহা পালিত হয়। এ ছাড়াও
পূর্ব ভারতের বা বঙ্গেও
কলকাতা, হুগলী, শিলিগুড়ি,
কুচবিহার, লতাগুড়ি,
বাহারাপুর, জলপাইগুড়ি
এবং ভারতের অন্যান্য
অঞ্চল যেমন, আসাম,
বিহার, দিল্লী, উত্তর
প্রদেশ, মহারাষ্ট্র,
গোয়া, গুজরাট, পাঞ্জাব,
কাশ্মীর, অন্ধ্র প্রদেশ,
কর্ণাটক, তামিলনাড়–,
কেরালায় ঘটা কওে এই
উৎসব পালন করা হয়।
নেপালে ও ভুটানেও
স্থানীয় রীতি-নীতি
অনুসারে প্রধান উৎসব
হিসাবে পালন করা হয়।
বাংলাদেশের ঢাকা,
চট্রগ্রাম, খুলনা,
সিলেট, রাজশাহী, সিলেট,
রংপুর, বগুরা এবং
অন্যান্য জেলায়ও ব্যাপক
আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই
উৎসব পালন করা হয় এবং
সরকারীভাবে এক দিনের এবং
হিন্দুদের জন্য তিন
দিনের ছুটি ঘোষনা করা
হয়। বিদেশে যেমন,
মার্কিন যুক্তরাষ্ট,
যুক্তরাজ্য, কানাডা,
অষ্ট্রেলিয়া, জামার্নী,
নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স,
সিঙ্গাপুর, মরিশাস, ফিজি,
টোবাকো, কুয়েত সহ
বিশ্বের বহু দেশে
অভিবাসী হিন্দুদের বা
বাঙালী হিন্দুদের নানা
সংগঠন এই উৎসব পালন করে
থাকে। ২০০৬ সালে, মহা
দূর্গা পূজা অনুষ্ঠান
ব্রিটিশ মিউজিয়ামের
গ্রেট কোর্টে অনুষ্টিত
হয়েছিল । বঙ্গে এই
পূজাকে শারদীয় পুজা,
শারদোৎসব, মহা পূজা,
মাযের পূজা, ভগবতী পূজা
এবং বসন্তকালে বাসন্তী
পুজা বা অকালবোধন হিসাবে
উৎযাপন করা হয়। বিহার,
আসাম, উড়িষ্যা, দিল্লী,
মধ্যপ্রদেশÑএ দূর্গা
পূজা, মহারাষ্ট,
গুজরাট,উত্তর প্রদেশ,
পাঞ্জাব, কেরালায় ,
হিমাচল প্রদেশ, মহীশুর,
তামিলনাড়–, অ›ন্ধ্র
প্রদেশে এ পূজাকে
নবরাত্রি পূজা বলা হয়।
বাংলাদেশের সাতক্ষীরার
কলারোয়ার ১৮ শতকের
মঠবাড়িয়ার নবরতœ মন্দিরে
(১৭৬৭) দূর্গা পূজা হত
বলে লোকমুখে শোনা যায়।
ঢাকেশ্বরী মন্দির চত্বরে
আছে দুই ধরনের
স্থাপত্যরীতি মন্দির।
প্রাচীনতমটি পঞ্চরতœ
দেবী দূর্গার যা
সংস্কারের ফলে মূল
চেহেরা হারিয়েছে।
মন্দিরের প্রাচীন
গঠনশৈলী বৌদ্ধ মন্দিরের
মত। ধারনা করা হয়, দশম
শতকে এখানে বেীদ্ধ
মন্দির ছিলÑযা পরে সেন
আমলে হিন্দু মন্দির
হয়েছিল এবং ১১শ বা ১২শ
শতক থেকে এখানে কালী
পূজার সাথে দূর্গা
পূজাও হত। ইতিহাসবিদ
দানীর মতে, প্রায় সাড়ে
পাঁচশো বছর আগে রমনায়
কালী মন্দির নির্মিত
হয়েছিল এবং এখানেও কালী
পূজার সাথে দূর্গা
পূজাও হত।
সূত্রঃ
১.দূর্গা পূজা,
উইকিপিডিয়া, ফ্রি
এনসাইক্লোপিডিয়া
২.বাংলাদেশ ও পাক
ভারতের ইতিহাস, জে.এম.
বেলাল হোসেন সরকার,
আনোয়ারুল হক মজুমদার,
আবদুল আউয়াল
৩. ঢাকা স্মৃতি
বিস্মৃতির নগরী,
মুনতাসীর মামুন
৪.দৈনিক পত্রদূত ,
সাতক্ষীরা
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
>>রোহিঙ্গা
সমস্যা এবং রামু
সহিংসতা..../কেন ঘটল
রামুর ঘটনা...?
|