[প্রথমপাতা]

 

 

 

ধারাবাহিক প্রেমের গল্প

শ্যাওলা-কাঁটা-বেড়া

  

 

- শাশ্বত স্বপন -

 

 

পর্বঃ১

‘চল পালিয়ে যাই’--চোখে মুখে ভয়, লজ্জা, আবেগ আর অদম্য সাহস নিয়ে এ কথাটি বলার সাথে সাথে ছেলেটি বাম হাত দিয়ে মেয়েটির কাঁশফুলের মত ধবধবে ফর্সা ডান হাত শক্ত করে ধরল। মেয়েটির সারা দেহে বেতার তরঙ্গের মত একটা স্পন্দন বয়ে গেল। ভয় আর লজ্জায় চোখ তার ঝিমিয়ে আসছে। ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাসে তার বাড়ন্ত বুকের ঢেউ ক্রমোত্তর বেড়ে চলেছে। বুকের অগোছালো ওড়না মাটিতে খসে পড়ছে। কি করবে সে? ছেলেটির সাথে পালিয়ে যাবে, নাকি বাড়ি ফিরে যাবে? কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সে ছেলেটির দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অন্ধ ভালোবাসা, অদম্য সাহস আর ছেলেটিকে আপন করে পাবার পরম ইচ্ছা তার অন্তরে। ‘চল পালিয়ে যাই--দ্বিতীয়বার এ কথাটি বলার সাথে সাথে ছেলেটি ওকে নিয়ে ছুটে চলল মেঠোপথ ধরে। মেয়েটির যেটুকু জড়তা ছিল--তা এতক্ষনে কেটে গেছে। সরিষার মাঠ পেরিয়ে তারা গাঁয়ের দক্ষিণ দিক দিয়ে কয়েকটি যুক্ত সরুপথে এসে থামল। ভেবে নিল কোন সরুপথে যাবে?

বসন্তকাল। কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে বসন্তের আগুণ জ্বলছে। সেই আগুণের তাপে যেন ছেলেটি আর মেয়েটি দাউ দাউ করে জ্বলছে। তারা ছুটছে কোন জলাশয়ের খুঁজে, ডোবা নয়, পুকুর নয়, নদী নয়, ছুটছে সমুদ্রে; সীমাহীন সমুদ্রে কেউ তাদেরকে খুঁজে পাবে না। অবারিত মাঠ, চারদিকে নানা রকম শস্যের সমাহার। এটা কি মাস? ছেলেটির কিবা মেয়েটির এই মুহূর্তে কারো কিছু মনে পড়ছে না। কোথায় গেলে নিরাপত্তা স্থায়ী হবে; ভবিষ্যতে তারা একত্রে ঘর-সংসার করতে পারবে তো? মেয়েটির অভিভাবকরা ছেলেটির কাছ থেকে মেয়েটিকে কেড়ে নিয়ে যাবে না তো? কি হবে ভবিষ্যতে?

তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন ভাবছে না; অতীতের পূত-পবিত্র ভালোবাসা সাঁকো পেড়িয়ে সন্মূখের বর্তমানকে টেনে নিয়ে চলছে তারা ভবিষ্য়েতের দিকে। বারবার পেছন ফিরে তাকাচ্ছে ; দেখছে, শত শত কিবা হাজার বছরের পুরানা, ধ্রুব মসজিদ আর ধ্রুব মন্দির তাদের পিছু নিয়েছে কিনা; দেখছে, সমাজের যুক্তিহীন কঠোর নিয়মের বৃত্তাকার শিকলগুলি হাত-পা বাঁধার জন্য ছুটে আসছে কিনা। দুক্ দুক্ করে দুই হৃদয় কাঁপছে। ছেলেটি যত দ্রুত দৌড়াচ্ছে মেয়েটি তত দ্রুত পারছে না। তবুও প্রাণপণ ছুটছে আর ছুটছে। মেয়েটির মনে হচ্ছে, শত শিকল যেন, তার পা জড়িয়ে ধরছে--তাকে সামনে যেতে দিতে চায় না--তাকে ফিরিয়ে আনতে চায় বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের মন্দিরে। এ সমাজ, এ ঘটনা না জানার আগেই শত শিকল তাকে হিন্দুত্বের মন্দিরে ফিরিয়ে আনতে চায় নতুবা কোনদিন আর তার প্রবেশাধিকার থাকবে না। কারণ সনাতন হিন্দুত্বের বেড়াজাল বড় কঠোর। এখান থেকে (কষ্ট হলেও) বের হবার দরজা আছে। কিন্তু (শত কষ্ট করলেও) ঢুকার দরজা নেই। তাই আজ থেকে সে ত্যাজ্য কন্যা। কোনদিন তার মা-বাবা কন্যা হিসাবে তাকে গ্রহণ করবে না। মা-বাবা চাইলেও সামাজিক কারণে তাদেরকে বুকে পাষাণ বেঁধে থাকতে হবে। ভালোবাসা মেয়েটিকে ঘর ছাড়া করে দিল।

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ