[প্রথমপাতা]

 

 

 

ধারাবাহিক প্রেমের গল্প

শ্যাওলা-কাঁটা-বেড়া

  

 

- শাশ্বত স্বপন -

                                                       

 

পর্বঃ ৬

শুভ ও ইন্দ্রানী হাঁটছে আর হাঁটছে। গোধূলীর সূর্য রেখাগুলি লাল আভা ছড়িয়ে যাচ্ছে। নির্জন মাঠ । তারা হাঁটচ্ছে আর কথা বলছে। হৃদকম্পন সেকেন্ডের কাঁটার মত কেপেই চলছে। কিছুক্ষণ শুভ চুপ করে রইল।

--তারপর সুজন ভাইকে আর কি বললে?

--বললাম, নায়ক শাহরুখ, রামেন্দু মজুমদার, সুলতানা কামাল, দেবপ্রিয় ভট্রাচার্য, জুয়েল আইচ, কুমার বিশ্বজিৎ--এছাড়াও আরো কত উদাহরণ আছে। তারা কি সুখে-শান্তিতে সংসার করছে না? সুজন বলল,

--সে ভিন্ন পর্যায়ে, ঐ পর্যায়ে তুই থাকলে, কেউ কিছু মুখ ফুটে বলতেও পারত না। এখন যে তোরা সমাজে খুবই ছোট? সবাই তোদের ঘৃণা করবে, অপমান করবে। তোদেরকে এ সমাজের অভিভাবকেরা ধর্মপতিদের সাহায্য নিয়ে অত্যাচার করতে পারবে, বিচার বসাতে পারবে। কিন্তু শাহরুখ-গৌরী, রামেন্দু মজুমদার-ফৌরদৌসী মজুমদারÑএদেরকে বিচার, অত্যাচার করা এত সহজ নয়। তাদের ঘরে বাইরে গণতন্ত্র আর আধুনিকতা। কিন্তু আমাদের বাইরে গণতন্ত্র--ভিতরে ধর্মতন্ত্র। আর আধুনিকতা...?

--আমি কিছু বুঝতে চাই না, শুনতে চাই না। ইন্দ্রানীকে ছাড়া আমি বাঁচব না। সেটা তুই ভাল করেই জানিস। আমাকে জ্ঞান দিস না। আমি ইন্দ্রানী ছাড়া কিছু বুঝি না। আমি মরতে রাজী কিন্তু ওকে হারাতে রাজী না।

--শুভ, রাগ করিস না আমার উপর। নাস্তিক ভাবলেও হিন্দুত্ব যে আমার ভিতরে অটুট আছে--তা আজ, এখন বুঝলাম। জন্মসূত্রে, যে ধর্ম পেয়েছি সেটাকে ত্যাগ করতে চাইলেও, ঘৃনা করলেও--সবাই হিন্দুই বলবে। আজকাল বহু মানুষ (আমার মনে হয়, বেশীর ভাগ মানুষ) জন্মসূত্রে হিন্দু বা মুসলমান; প্রকৃত হিন্দু বা মুসলমান নয়; কারণ ধর্মের নূন্যতম নিয়মও তারা পালন করে না।

--আবার অনেকে আছে, সব ধর্মের নিয়মই মানে অর্থাৎ স্থান, কালের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য সব ধর্মের প্রতি সম্মান দেখায়, মেনেও চলে। আমি সেই অনেকের মধ্যে একজন। মা-বাবা করে আসছে বলে, তাদের খুশী করার জন্য, সম্মান দেখানোর জন্য, আমাদেরকেও তদ্রুপ কাজ করে যেতে হয়--নিয়ম কানুন মানতে হয়।

--সুজন, যে বিধি-নিষেধ আধুনিক আলোকময় বিশ্বে চলে না, টিকে থাকতে পারে না; সেই বিধি-নিষেধই টিকে থাকার জন্য হৈ চৈ শুরু করে। আর যে বিধি-নিষেধ সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে, টিকে থাকতে পারে--সেই বিধি নিষেধ টু শব্দটি পর্যন্ত করে না।

--শুভ, তোর ভিতরে যথেষ্ট যুক্তি জ্ঞান আছে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি, ভালোবাসা তোকে অন্ধ করে ফেলেছে। আগুন নিয়ে খেলার পরিনতি ছাই-ই হয়।

--হোক, আমি এখন প্রেমান্ধ। কেয়ামত হলেও ওকে আমি হারাতে চাই না।

শুভ ইন্দ্রানীকে নিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগল। পকেটে হাত দিয়ে দেখল টাকাগুলি ঠিকমত আছে কিনা। সমাসপুরের বাস স্টপটা দেখা যাচ্ছে। ইন্দ্রানী বলল,

-- তারপর বললে না, এরপর কি কথা হল?

-- তারপর আর কি, ও তোমাকে আনতে গেল। চোখে-মুখে ওর ভয়ের ছাপ দেখেছি।

ওরা দু’জনেই সমাসপুর বাস স্টপের কাছে এসে গেছে। আশেপাশে বাড়ীগুলি থেকে অনেকেই ওদের দিকে তাকাচ্ছে। শুভও আশে পাশে তাকাল। না, পরিচিত কেউ নেই। উৎসুক কয়েকটি মেয়ে মানুষ এখনো তাকিয়ে আছে এবং কি যেন বলাবলি করছে।

-- ইন্দ্রানী, চোখে-মুখে স্বাভাবিক হও। মনে কর, তুমি আমার বোন।

-- মনে মনে--

-- কি?

-- কিছু না।

--ঐ যে গাড়ি আসছে। তাড়াতাড়ি চল-

সমাসপুর বাস স্টপ থেকে তারা বাসে উঠল। যাত্রীরা হা করে তাকিয়ে রইল ইন্দ্রানী আর শুভর দিকে। বিশেষ করে ইন্দ্রানীকে পুরুষ যাত্রীরা যেন দিব্য ভারতী অথবা শ্রীদেবী ভাবতে শুরু করেছে। এমন সুন্দরী আর এত আকর্ষনীয় কিশোরী যেন তারা জীবনেও দেখেনি। এক মহিলা তো হুট করে বলেই ফেলল,

-- তোমরা যাবে কোথায়?

--মাওয়া

--কোন বাড়ি?

একটি যুবক জিজ্ঞাসা করল। শুভর মনে হল, যুবকটি বাড়ীর কথা জেনে এখনি ঘটক পাঠাবে। শুভ উত্তর দিল না। মহিলাটি আবার বলল।

--তোমার কি হয়?

কল্যাণী শুভর দিকে তাকাল। শুভও ইন্দ্রানীর দিকে তাকাল। শুভর ইচ্ছে করছে বলতে, বউ। কিন্তু পারল না।

-- বোন

--ঢাকা থাক?

--জ্বি

প্রশ্নের উত্তর না দেওয়াতে যুবকটি অপমান বোধ করছে। সে আড়চোখে ইন্দ্রানীকে দেখছে। মহিলাটির ছেলে নাকি? মহিলাটি আরো জানতে চাইছে। ব্যাপার কি? পুত্র নাকি ভাইয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে ? শুভ ভাবছে আর মনে মনে বলছে, কোন লাভ নাই। চোখ সামনে বাড়ান। আবার প্রশ্ন--

--মাওয়া কোন বাড়ি উঠবে?

বন্ধু ডালুর বাবার নাম শুভ জানে না। অতএব সে চুপ করে রইল। অবস্থা বেশি সুবিধা নয়। মাওয়া থামতেই দু’জনে নামল। রিক্সায় চড়ে মাওয়া বাজারে এল। স্টুডেন্ট লাইব্রেরী থেকে একটা কলম কিনে একশত টাকার নোটটা ভাংতি করল। গাড়ির সেই যুবক ছেলেটি ওদের পিছনে। ইন্দ্রানী শুভকে দেখাল।

-- যাও, ছেলেটাকে বল, আপনি কি পাত্রী খুঁজছেন?

--যা, চল--

হাঁটতে হাঁটতে ওরা বন্ধু ডালুর বাসায় এল। বাড়ির সবাই দু’জনকে হরিণ চোখা দৃষ্টিতে দেখছে। ডালু বাসায় নেই। ঢাকা চলে গেছে গতকাল। মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর ভবনে গেলে বন্ধু ডালু, হুমায়ুন কবীর, রবিন, ফিরোজ--ওদের সবাইকে পাওয়া যাবে। চিন্তা করতে করতে রিক্সায় চড়ে ওরা মাওয়া এল। মাওয়া থেকে ব্রাহ্মণগাঁ হাইস্কুলের প্রদীপের দোকানে নামল। প্রদীপ ওদের দু’জনে দেখে অবাক।

-- কি ব্যাপার শুভ?

--প্রদীপ দা, কাল কি ঢাকা যাবেন?

--হ্যা, মাল কিনতে যাব। কেন?

--রবিন, হুমায়ুন ওদের যাকে পান, বলবেন আমি কাল বিকালে ওদের ওখানে যাব।

-- তুমি এই রাতের বেলা কোথায় যাও?

-- রিনা আপার বাসায়

--মেয়েটা কে?

--বিয়াইন

--ও

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ