[প্রথমপাতা]

 

 

 

ধারাবাহিক প্রেমের গল্প

শ্যাওলা-কাঁটা-বেড়া

  

 

- শাশ্বত স্বপন -

 

 

২য় পর্ব

ছাপ্পানো হাজার বর্গমাইলে এ রকম ঘটনা ঘটেছে কিনা মেয়েটির জানা নেই। পৃথিবী সম্পর্কে তার জ্ঞান কম। আপন গণ্ডির মধ্যেই তার বিশ্ব-বসবাস। জন্মের পর থেকে সে চিনে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, শ্রীনগর তার গ্রাম; গ্রামটির পুরোপুরি চেনা হয়নি; স্কুল, মন্দির, পুকুর ঘাট, সন্মূখের বিস্তীর্ণ মাঠ; প্রাচীন বটগাছ--যেখানে সে ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা করেছিল এবং সবচেয়ে আপন মানুষ--শুভ আর তার বন্ধু-বান্ধবকে। এ পৃথিবীতে কোথায় কি হয় বা হচ্ছে, গ্রামেই বা কি হচ্ছে, সে খবরও সে রাখত না। শুধু শুভ, প্রেম, বন্ধু আর স্বপ্ন--এই ছিল তার সারাদিনের বিষয়। ইন্দ্রানী আর শুভর মাঝে কথাবার্তা হত খুব কম। চিঠি আর চোখাচোখিই ছিল প্রেমের সেতু। যখন তারা কথা বলত--সময় আর মানুষকে তোয়াক্কা করত না। কথা বলার সুযোগ সুজন, আরমার, বাচ্চুই করে দিত। তবে সবচেয়ে বেশি কাজ করত সুজন। গ্রামের মানুষ প্রায়ই তাদের প্রেমের কর্মকাণ্ড দেখে ফেলত।

ইন্দ্রানীর দেহ ছিল হালকা-পাতলা। উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট দু’এক ইঞ্চি হবে। দূর থেকে এক দৃষ্টিতে তাকালে দেবীর মত মনে হয়, যেন সরস্বতী। অবশ্য বিদ্যার জোর একেবারে ছিল না। দু’এক বিষয়ে ফেল করা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। খুব কাছে আসলে মনে হবে, স্লীম ফিগারের বোম্বের কোন আকর্ষণীয় নায়িকা। হালকা-পাতলা দেহের পেশীগুলি খরগোশের মত তুলতুলে। আর দেহের ত্বক ফর্সা; ইচ্ছা হয় একটু ছুঁয়ে দেখি। খুব একটা হাসি-খুশী সে নয়। তবে তার হাসি প্রায় নিঃশব্দে, গালে টোল পড়ে। দেখতে ভারী সুন্দর লাগে। বুকের ভিতর সর্বদা একটা ভয় কাজ করে। শুভকে না পাওয়ার ভয়। অনেকেই তাকে চিঠি দেয়, ভালোবাসতে চায়। কিন্তু এক শুভ ছাড়া আর কারো কপালে ইন্দ্রানীর ভালোবাসার ফোঁটা পড়েনি। সে খেলাধূলা কখনো করে না। তবে খেলাধূলা দেখে। তার দেহের লোমগুলি স্পষ্ট। সাধারণত মেয়েদের লোমগুলি যা হয়, তার চেয়ে ইন্দ্রানীর লোমগুলি একটু বড়, তবে হলুদাভ। ইটের নিচে অনেক দিন ঘাস চাপা পড়ে থাকলে, যেমন দেখা যায়, তার লোমগুলি অনেকটা সে রকম। কাঁচা হলুদের মত মুখমণ্ডল। একবার দেখলে চোখ ফিরানো দায়। হাতের তালুতে তিন-চারটি রেখা সুস্পষ্ট; আর কোন রেখা নেই বললেই চলে। তুলতুলে হাত, ধরে হাঁটতে ইচ্ছে হয়।

চোখ দু’টি যেন কোন শিল্পীর তুলিতে আঁকা। চোখের মণির রং কালো। তবে পুরোপুরি কালো নয়, ধূসর কালো। মণির চারপাশে সাদা অংশে লালচে দু’একটা বিন্দু দেখা যায়। সে বাড়িতে বসে বা জানালার পাশে বসে যে কোন ছেলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। অনেকে মনে করে, তাকে পছন্দ করেছে, আসলে ভুল। সে শুধু দেখে, কিছু বলে না। কেউ ইংগিত করলেও সে সাড়া দেয় না। রংধনুর মত বাঁকা অথবা উপবৃত্তাকার তার কালচে ভ্রু“ জোড়া। মানুষের মুখের সৌন্দর্যের প্রধানতম অংশ নাক। ইন্দ্রানীর নাক সরু এবং কিছুটা সম্মুখে বর্ধিত। গ্রামের মহিলারা বলে তীরের মত চোঁখা নাক। তার রাগ বলতে গেলে নাই। সারা মুখে সামান্য একটা দাগ নেই। গলায় দু’একটা তিলক আছে। ঠোঁট দু’টি কমলার কোষের মত গোলাপী। তবে হঠাৎ করে দেখলে ঠোঁট দু’টি লালই মনে হয়। খুব মোটাও নয়--খুব পাতলাও নয়। মাঝারী প্রশস্ত ঠোঁট। সর্বদাই স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। ছোট ছোট মুক্তাদানার মত চিকচিকে দাঁত। হাসলে সুনিপুণ দাঁতগুলি যেন, বের হয়ে আসতে চায়।

মাথার কালো চুল, খুব একটা লম্বা নয়। পিঠের মাঝামাঝির চেয়ে নিচে, নাভির সমান বলা যায়। বুকের স্তন্যের আকার খুব একটা বড় নয়। বাড়ন্ত বুক। সেই তুলনায় ঠিক মানান সই চমৎকার ঢেউ। ওড়না খুব একটা পড়ে না। পড়লে গলায় পেঁচিয়ে রাখে। এই বয়সে স্কার্ট পড়লে ইন্দ্রানীকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাগে। পথে এমন কোন লোক নেই যে, ওর দিকে না তাকায়। অনেকে কথাও বলতে চায়। কিন্তু সুযোগ হয় না বা প্রত্যুত্তর হয় না বলে অপমানিত হতে হয়।

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ