প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ
কাক-জ্যোৎস্নায় কাক-ভোর(পর্ব-৪)

 

 

শাশ্বত স্বপন

 

আজ শুক্রবার। বিকাল বেলা, কালীদের পাড়ার ছেলে মেয়েরা দক্ষিণের ফসল শূন্য মাঠে কানামাছি, বৌচি, দাঁড়িয়াবান্দা খেলছে। বড় ছেলেরা খেলার মাঠেই ফুটবল খেলতে চলে যায়। কালী ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের নিয়ে ফুটবল খেলছে। মাঝে মাঝে ফুটবল খেলতে তার খুব ভাল লাগে। সে খেলাধূলায় সব সময়ই ভাল। হাইজ্যাম্প, লংজ্যাম্প, সাঁতার, দৌঁড় ইত্যাদিতে সে বেশ দক্ষ। তবে এ পাড়ার অনেকেই তাকে ‌‌‌মদ্দনী বলে। কেউ অগোচরে খোদাই ষাড়ও বলে। সবাই খেলায় ব্যস্ত। কালী খুব ভাল সর্ট মারতে পারে। কখনো দেখা যায় খেলার সাথীদের নিয়ে হুড়মুড় করে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। মাথায় বল হেট দিচ্ছে। দূর থেকে মহিলারা ছিঃ ছিঃ করছে। কেউ কেউ কালীকে ধমক দিচ্ছে। সে তবুও শুনে না অথবা না শুনার ভান করে থাকে।

প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। কিছু কিছু অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের ডাকছে। ঠিক এমনি মুহুর্তে কালীদের বাড়ীতে চিৎকার শুনা গেল। সবাই ছুটে গেল ওদের বাড়ীতে। ঘটনা ছিল এরকম--গোখরা সাপ কালীদের দুধেল গাইটার দুধ খাচ্ছিল। গরুর দুই পা পেঁচিয়ে বিস্ময়কর ভংগীতে সাপটি দুধের বাট মুখে পুড়ে আছে। গরু পা নাড়াতে পারছে না। হাম্বা হাম্বা করে ডাকছে। তুলসী কি মনে করে গরুটাকে ঘাস দিতে এসে দেখে এ অবস্থা। তুলসী রাস্তায় দাঁড়ানো প্রতিবেশী সিরাজকে ডাক দিয়ে দেখাল। বাড়ীর সবাই ভয়ে আর বিস্ময়ে সাপের দিকে তাকিয়ে আছে। সাপ বুঝতে পেরে যেই যেতে শুরু করেছে তখনি সিরাজ মোটা লাঠি নিয়ে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে কয়েকবার আঘাত করল, সাপটি মারা গেল। আরেকটি সাপ সবে মাত্র ঝোপ থেকে আসছিল। অবস্থা দেখে পালিয়ে গেল। কালী এসে শুধু মৃত সাপটা দেখল আর ঘটনা শুনল। অনেক বড় সাপ! সাড়ে পাঁচ হাত হবে।

কালীদের উত্তরের বনঝোপেই এই সাপেরা থাকে। ভারতবর্ষ বিভাগের আগে উত্তরের ঝোপটাতে ছিল কামার আর কুমারদের বাড়ী । এখানে ব্রাহ্মন পরিবারও ছিল অনেক। দেশ-বিভাগের পর অনেকেই ভারত চলে গেছে। বাকী যারা ছিল, মুক্তিযুদ্ধের সময় তারাও চলে গেছে। এখন এই বনঝোপের জায়গা ছিল গণিমুন্সীর। দেশ-বিভাগের পর এই বনঝোপ বাড়তে বাড়তে ঘন বনঝোপে পরিণত হয়েছে। ঝোপের ভিতরে পুরানা, ভগ্ন সমাধী মন্দির, ভগ্ন পূজার ঘর রয়েছে। ভাঙ্গা হাড়ি-পাতিল আর লোহার টুকরায় ভরা মাটির প্রথম স্তর। গণি মুন্সির বাড়ী ছিল বিস্তৃত ঝোপের উত্তরে। সামান্য একটু জায়গা ছিল। জমিদারের গোমস্তা ছিল বলে তাকে জমিদার বাড়ীর কাছাকাছি থাকতে হতো। জমিদার মারা যাবার পর তার পুত্র কন্যারা ভারতে চলে যায়। জমিদার ব্রাহ্মন পরিবার চলে যাবার পর গণিমুন্সি বাকী ব্রাহ্মনদের সু-কৌশলে তাড়িয়ে ঐ জায়গা পুরোটা দখল করে। এখন যেখানে কল্যাণরা থাকে, এটাই ছিল জমিদারের বাড়ী। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণি মুন্সীর পুত্র আযম মুন্সী পাকসেনাদের মোরগ-মুরগীর সাথে কিশোরী, যুবতী ও নতুন বউদের উপহার দিয়ে খুশী করত। সংখ্যালগু হিন্দুদের তাড়িয়ে জায়গা-জমিন, সোনাদানা কম দামে কিনে রাখত। হিন্দুদের মনে ভয় ঢুকিয়ে তার কাজ সে করত। আবার অনেক হিন্দুদের সে রক্ষাও করেছে। তাদের শাখা-সিদুঁর ফেলে দিয়ে কোরআন শরীফ দিয়ে বসিয়ে রেখেছে। সূরা, কালেমা শিখিয়েছে। সুযোগ বুঝে ভয়ের বীজ বুনে দিয়েছে। আজ সে আযম চৌধুরী। হজ্ব তিন বার পালন করেছেন। দান খয়রাত প্রচুর পরিমাণে করেন। একবার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করেছিলেন। পাশ করতে পারেননি।

আযম মুন্সী যুদ্ধের পর পরই ঢাকায় চলে যান এবং রাজনীতিবিদ এক মামার সাথে মিশে মিটিং-ফিটিং করে মুক্তিযোদ্ধা খাতায় নিজের নাম লিখিয়েছেন। গ্রামে তিনি কালে ভদ্রে আসেন। গ্রামে তার দুঃসম্পর্কের এক বোন আছে, গেলে সেখানেই উঠেন। তারপর তার স্মৃতি বিজরিত বনঝোপ ঘুরে ঘুরে দেখেন। গণি মুন্সীর কবরটা নিজ হাতে পরিষ্কার করেন। তারপর জিয়ারত করেন। কখনো কালীদের বাড়ি এসে জলপান করেন। খুব ভাল ব্যবহার করেন গ্রামবাসীদের সাথে। গ্রামের বয়োজেষ্ঠ্যরা তার কুর্কীতি আর সুকীর্তি সম্পর্কে সবই জানেন। কেউ মুখ ফোটে কিছু বলেন না। সে এখন বহু অর্থ সম্পদের মালিক। সাধারণ গ্রাম্যবাসীদের কাছে ধনীরা হল ন্যায়-অন্যায়ের উপরে।

কল্যাণরা আযম মুন্সীর দখলকৃত বাড়িতেই থাকে। সবাই চলে গেলেও আত্মীয়-স্বজনহীন কল্যাণের বাবা ননী গোপাল চ্যাটার্জী ভারতে যাননি। ফলে আযম মুন্সী বাস্তহারা হিসাবে থাকতে দিয়েছে। বিনা চিকিৎসায় ননী গোপাল মারা গেলে নিঃস্ব সবিতা পুত্রকে বহু কষ্টে লালন-পালন করছেন। ননী গোপাল মারা গেলে হিন্দু সমাজের অবস্থাপন্নরা সবিতাকে টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করত। আযম মুন্সীও তার বাড়ির সব ফল-ফলাদি কল্যাণদের ভোগ করার অধিকার দিয়েছেন। অনেক মুসলমান প্রোঢ়রা সবিতাকে বিয়ে করতে চেয়েছে। দৃঢ় মনোবল, ধর্মপ্রাণ বলে কেউ তার গায়ে একটা আঁচড়ও দিতে পারেনি। শেফালী, তুলসী, সবিতা--আরো অনেকে বাঁশ দিয়ে খুঁচি, ডোলা আর নাইলন সূতা দিয়ে মাছের জাল বোনায়। এগুলো মহেশ কাপালী কিনে নেয়, পরে চড়া দামে অন্য পাইকারদের কাছে বিক্রি করে। এসব ব্যাপারে কালীর বাবা সবাইকে সাধ্যমত সহায়তা করে।

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ