প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কাক-জ্যোৎস্নায় কাক-ভোর (পর্ব-১২)
 

 

শাশ্বত স্বপন

 

 

কালী কাঁদছে। আর কোনদিন কল্যাণকে, জেঠীমাকে দেখতে পাবে না । সবচেয়ে বড় কথা, সে কল্যাণকে চিরতরে হারাচ্ছে। তার অব্যক্ত কথা সে আজও ওকে বলতে পারেনি। কালী ভালোবাসা আর স্মৃতির কাছে যুক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সে কাঁদছে।

আশ্বিন মাস, নদীর তীরে কাঁশবন। নদীর পাড় ঘেষে ধঞ্চে গাছগুলি প্রবাহমান বাতাসে হেলছে, দুলছে। নদীর পাড়ে এসে কল্যাণ ও সবিতা ট্রলারে উঠলো। ট্রলারের কাছে এসে শিখা, নাসরিন, দীপা, রিপন, সুমন, আরো অনেক খেলার সাথীরা কাঁদছে। সবিতাও কাঁদছে, গ্রামের মহিলারও কাঁদছে। কল্যাণ কাঁদছে না। সে তার খেলার সাথীদের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে আছে। গ্রামের দেশান্তরিত হিন্দুরা সবাই রাতের বেলা দেশ ত্যাগ করলেও কল্যাণরা দিনের বেলা দেশ ত্যাগ করছে। হিন্দুদের কেউ কেউ বলছে, ওদের আর কোন উপায় ছিল না। কল্যাণদের আত্নীয়-স্বজনরা সবাই কোলকাতা চলে গেছে। এখানে ওদের ঘর-বাড়ি-জায়গা-জমিন নেই, আয়-রোজগারের অবস্থাও ভাল না। তাছাড়া ব্রাহ্মনদের পূজার্চনা ছাড়া আর আর তেমন কাজ নেই। হিন্দুঘর ক্রমোত্তর কমে যাওয়ায় পূজা আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। দক্ষিনা আর আগের মতো পাওয়া যায় না। তাছাড়া ব্রাহ্মণের সংখ্যা এত কম যে ভবিষ্যতে ধর্ম রক্ষা, পূত্রবধূ এবং আয় উন্নতির কথা চিন্তা করে সবিতাকে কোলকাতা চলে যেতে হচ্ছে। কোলকাতা গেলে ওদের আত্নীয়দের সাহায্যে মা-ছেলে দু'জনেই কাজ করতে পারবে। এখানে মহিলাদের ঘরকুনো কাজ ছাড়া আর তো কিছু নাই, এতে বেশি পয়শা রোজগার হয় না। ধর্ম ত্যাগ করে তো এদেশে থাকা যায় না, মরলে নরক বাস হবে।

কালী কান্নার বেগ থামাতে পারছে না। সে আবেগ সামলাতে না পেরে ট্রলারে উঠে কল্যাণকে জড়িয়ে ধরলো। মহিলারা কাপড়ের আঁচলে ঘন ঘন চোখ মুছছে। ছোটরা অবাক হয়ে সকলের দিকে তাকাচ্ছে। মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। নদীর নীল পানির স্রোত পাড়ে এসে সকলের পা ধুয়ে দিচ্ছে। কালী কল্যাণের কানের কাছে কান্নার্ত স্বরে আস্তে আস্তে বলল, কল্যাণদা আমি তোকে ভালবাসি। আমি তো-কে ভা-ল-বা-সি। কল্যাণ শুধুই ফেল ফেল করে তাকিয়ে ছিল। কোন কথা বলেনি। নাসরিন, শিখা, দীপা, তুলসী কালীকে ট্রলার থেকে নামাল। কালী এবার চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। ট্রলার ছেড়ে দিল। ধীরে ধীরে ট্রলার চলে যাচ্ছে দূরে। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে সেদিকে। কালীর কান্না থেমে গেছে। সেও তাকিয়ে আছে যতদূর চোখ যায়। কালীর হৃদয় যেন বলে উঠল, আর কোনদিন, কোন যুগে, কোন কালে কল্যাণের সাথে তার দেখা হবে না।


 


 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ