প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ কাক-জ্যোৎস্নায় কাক-ভোর (পর্ব-১৩)
 

 

শাশ্বত স্বপন

 

 

কালীদের বাড়িতে একটা গরু, গরুটি গাভী। সে গাভীটার নাম দিয়েছে স্বপ্না। স্বপ্নাকে সে খুবই ভালবাসে। যেদিন কালীর এক বছরের বোন স্বপ্না মারা যায় সেদিনই গাভীটার জন্ম হয়েছিল। এই কারণে সে মৃত বোনের নামানুসারে গাভীটার নাম রেখেছে। পাশের গ্রামের এক পরিচিত বন্ধুর কাছ থেকে খুব ছোট থাকা অবস্থায় কালীপদ স্বপ্নার মাকে বর্গা এনেছিল। স্বপ্না স্বাবলম্বী হলে কালীপদ বর্গা আনা গাভীটা ফেরত দিয়ে আসে। স্বপ্না তার মাকে দেখতে না পেরে কয়েকদিন হাম্বা, হাম্বা করেছে, কেদেঁছে। কালী সারাক্ষণ তাকে সঙ্গ দিয়েছে। ফলে স্বপ্না তার মাকে ভুলে গেছে এবং সেই থেকে স্বপ্না কালীকেই সবচেয়ে বেশী ভালবাসে, কালী দিনে দুই-তিন বার করে ঘাস দেয়। মাঝে মাঝে মাঠে নিয়ে যায়।

দুই বছর পর স্বপ্না গর্ভবতী হয়। স্বপ্নার গর্ভ থেকে বকনা গরু জন্ম হওয়ায় কালী খুশী হলেও কালীপদ, তুলসী, শেফালী কেউ খুশী হয়নি। গৃহকর্তা-কর্ত্রীরা চায় গাভীর বাচ্চা গাভী হোক কিন্তু এরাই আবার নারীর ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম চায়। কালী স্বপ্নার সাথে নানান কথা বলে। হাসে, ঠাট্রা করে। স্বপ্নার সাথে আলোচনা করে সে বাছুরের নাম রেখেছে গোবর্ধন। এখন কালী গোয়াল ঘরের পাশে অনিতার সাথে পাঁচ গুটি খেলছে আর গুনগুন করে গান গাইছে। গোবর্ধন হাম্বা হাম্বা রবে চিৎকার করছে। ঠাকুরমা কালীকে ডাকছে।

-- ওরে কালী, গরু দুইটারে ঘাস দে--

-- দিচ্ছি ঠাকুমা । ঐ গোবর্ধন হাম্বা হাম্বা কর কেন? দেখনা ঘাস দিচ্ছি।

তুলসী তুলসীতলা কাদা দিয়ে লেপছে। জয় তুলসীর সাথে কথা বলে গোয়াল ঘরে আসল। দেখে কালী ঘাস দিচ্ছে।

-- দিদি, কাউস আর হাংরি। গিভ গ্রাস কাউ।

-- ওরে বাবা, চেউয়া বাইললা, তুই ইংলিস বলিস। ইংরেজী পড়া না পেরে গতকাল জয়নাল স্যারের বেতের ঘা খেয়েছিস না? আমি সব শুনছি--

--ঐ বুটকি, কালী প্রতিমা, তুই কি পড়া পারিস নাকি? দুই বিষয়ে ফেল করে পাশ করেছ। গতকাল সেলিম ভাইয়ের হুন্ডায় চড়েছ। মহিলারা তোকে খোদাই ষাড় বলেছে। বাবার কাছে আমি বলব।

একসাথে এতোগুলি অপমান সইতে না পেরে কালী জয়ের গায়ে চড় বসিয়ে দিল। জয়ও মারতে গেল। কিন্তু কালির সাথে কুলিয়ে উঠতে না পেরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে চলে গেল। দূরে গিয়ে বলতে লাগলো, কালী, বুটকি, পেত্নী; দেখিস কোন বেটাই তোকে বিয়ে করবে না। যেই বেটা বিয়া করবো, সেই বেটা তোর হাতের মার খেয়ে ঘর থেকে পালাবে। খোদাই ষাড়...

কালীকে আঘাত করা এটাই শ্রেষ্ঠ পন্থা। কালো, বিয়া, বর ইত্যাদি শব্দ মিলিয়ে বাক্য তৈরী করলে বাক্যের অর্থ দাঁড়ায়, কালো মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চায় না। আর যদি হয় দরিদ্র তবে হয় পাটক্ষতে ধষির্তা নয়তো পতিতা। আর এসব না হলেও থাকতে হয় বাকশক্তিহীন, পরাধীনতার শিকলে বন্ধি হয়ে, লাঞ্চিত হয়ে। যৌতুকের ঘানি টানতে হয় সারাজীবন। হ্যাঁ, যৌতুক প্রথা, ধর্মে না থাকলেও নারীকে ‘নারী’ করার যে মন্ত্র আছে তাকেই উল্টা-পালটা বিশ্লেষণ করে যৌতুকের নামে, উপহারের নামে তন্ত্র সৃস্টি হয়েছে। এ তন্ত্রের, এ নিয়মের ব্যতিক্রম হলে ফাতেমা, কমলা, নাছিমা, জহুরা অসংখ্য মেয়েদের মত জীবন্মৃত হয়ে থাকতে হয় এ সুন্দরী পৃথিবীতে।

হ্যাঁ, এদেরই এক বাস্তব উপমা কালী। মনুষ্য কালী রূপে জন্ম হলেও সে ছিল মানুষ থেকে পৃথক যেন, তৃতীয় কোন ধারার এক প্রাণী। কেউ তাকে বিয়ে করতে চায় না। কেউ তাকে ভালবেসে সত্যিকারের সুখের চিরস্থায়ী শান্ত নীড়ের কথা বলে না। তবে এলাকার ছেলেদের ভালোবাসা কালীর জন্য অফুরন্ত। কারণ কালী ভাল খেলোয়াড়। দৌঁড়, সাঁতার, অভিনয় ইত্যাদিতে সে ১ম, ২য় কিংবা ৩য় স্থান অধিকার করে অনেক প্রাইজ পেয়েছে। আর তাই এলাকার ছেলেদের অন্য রকম লোভ জাগে। যে লোভের শিকারে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী শেফালী আট-নয় জন দ্বারা ধর্ষিতা হয়; শান্তনা, কোহিনূর হয় অপহৃত। কালু মুন্সীর মেয়ে আম্বিয়াকে জোড় করে কেউ নেয়। এসব ঘটনা সকাল-দুপুর-বিকালের মত ধ্রুব. সূর্য পূর্বদিকে উঠার মত চির সত্য। সকালের পরে দুপুর, দুপুরের পরে বিকাল, তারপর সন্ধ্যা , অবশেষে রাত। এটাই শেষ নয়--আবার সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা-রাত-গভীর রাত। আবহমান কাল থেকে এ ধারা চলে আসছে। বেগম রোকেয়ারা এখন আর জন্ম নেয় না। রোকেয়ারা মনে হয়, ক্লান্ত হয়ে গেছে। থামবে না এ বিভৎস্য ধারা। তবে কি এভাবেই চলবে ? না, কিছুতেই চলতে দেওয়া যাবে না। সময় বদলে গেছে। এটা ধ্রুব নয়। এ সমাজ ব্যবস্থা এটাকে ধ্রুব করছে, করতে চাইছে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মের যুক্তি দিয়ে আন্দোলন স্তিমিত করছে। তবুও বোরখার আড়াল থেকে, সাদা কাপড়ে রং লাগিয়ে উঠেছিল, উঠছে, উঠবে, রোকেয়া-সুফিয়া-ইন্দিরা-হাসিনা- খালেদা-বেনজির-অংসান সুকী আরো অনেক...। আঁধারের গোহা থেকে সূর্যের তীব্র আলোকে জ্বলে উঠবে হাজার বছরের পাথর চাপা খাওয়া শাশ্বত সুন্দর সত্য কথাটি। নারী কি? পুরুষ কি? কেন এত সুন্দর পৃথিবী? কেন, কোথায়, কিভাবে, কখন, কোন সময়, কারা এসব বিধি নিষেধ সৃস্টি করেছে? এ রকম সব প্রশ্নের উত্তর কম্পিউটারের মত সত্য হয়ে একদিন অন্ধকার থেকে আলোর স্রোতে ভেসে আসবে।


 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ