|
||||||||||||||||||
|
কিসের ঐক্য কার সাথে হবে?
WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
|
লেখকের আগের লেখাঃ |
গত ১ জুলাই গুলশানের হোলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলার প্রেক্ষাপটে বিএনপি পুনরায় জাতীয় ঐক্য জাতীয় ঐক্য জপ করতে করতে মাঠে নেমেছে । সাথে আছে পুরানো কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ । তবে এবার মনে হয় সংখ্যায় কম । আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলের একাধিক নেতা বলেছেন যারা যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে রাজনীতি করেন, যারা তাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, যারা ক’দিন আগে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছেন তাদের নিয়ে আর যাই হোক কোন বিষয়ে জাতীয় ঐক্য হতে পারে না । অনেকে মনে করিয়ে দিয়েছেন যারা ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পর দক্ষিণ বঙ্গের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্বিচারে সহিংসতা চালিয়ে কয়েক হাজারকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে তাদের সাথে কিসের জাতীয় ঐক্য ? অনেকে বলেছেন বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য করতে হলে তাদের জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। বিএনপি’র একাধিক নীতিনির্ধারক ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগ আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দিলেই বিএনপি জামায়াত ত্যাগ করবে । এটি অনেকটা পাশের প্রতিবেশী বললে বৌ তালাক দেওয়ার মতো । এর অর্থ হচ্ছে দেশে যাই হোক না কেন বিএনপি জামায়াতের সাথে নাড়ির বন্ধন ছিন্ন করতে রাজি নয় । বিএনপি ঘরাণার বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন পর্যন্ত পরামর্শ দিলেন বিএনপি’র উচিৎ হবে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা । কিন্তু কে শোনে কার কথা । অধ্যাপক এমাজউদ্দিনদের মতো বিজ্ঞজনেরা পর্যন্ত বুঝেন না বিএনপি তাঁদের কী ভাবে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে । একই ঘরাণার আর এক সুশীল ডাঃ জাফরুল্লাহ । একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নন্দিত ছিলেন । গণ স্বাস্থ্যের মতো ভাল প্রতিষ্ঠান গড়েছেন । বিএনপি’র খপ্পরে পরে নষ্ট হয়েছেন । গুলশান হত্যাকান্ডের দিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জঙ্গিদের হামলায় নিহত হলেন পুলিশ অফিসার সালাহউদ্দিন । ডাঃ জাফরুল্লাহ মন্তব্য করেন প্রয়াত সালাউদ্দিনের মরনোত্তর বিচার হওয়া উচিৎ । তিনি নাকি অনেক মানুষকে ক্রস ফায়ারে দিয়েছেন । দায়িত্ব পালন কালে একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যুর পর এমন নির্দয় মন্তব্য ডাঃ জাফরুল্লাহর কাছে আশা করা যায় না । একদিন পরে মন্তব্য করেন জঙ্গিবাদও এক ধরণের প্রতিবাদ । তার মতে যেই সব ছেলে তাদের সামনে তাদের বাবা পুলিশের হাতে নিগৃহীত হতে দেখেছেন তারাতো জঙ্গি হবেই । তাই বলে কী একদল নিরীহ বিদেশীকে হত্যা করতে হবে ? বন্ধু ডঃ মুনতাসির মামুন প্রায় বলেন কোন ভদ্রলোক বিএনপির রাজনীতিতে বিশ্বাস করতে পারেন তা বিশ্বাস করা যায় না ।
মঙ্গোলিয়া হতে ফিরে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করে বললেন জাতীয় ঐক্য হয়ে গেছে । দেশের মানুষ গুলশান আর ঈদের দিন শোলাকিয়ার ঘটনার পর এখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ । বিভিন্ন জায়গায় সর্বস্তরের মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদ বিরোধী কমিটি করেছে । দেশের বিভিন্ন আলেম ওলামারা নিয়মিত গণমাধ্যমে এই বিষয়ে বক্তব্য রাখছেন । এর চাইতে আর বড় ঐক্য হতে পারে না । ১৮ তারিখ এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান এক সর্বনাশা মন্তব্য করেছেন । তিনি বলেছেন বেগম জিয়ার জঙ্গিবিরোধী ঐক্যের ডাকে সাড়া না দিলে আওয়ামী লীগ বিপদ ডেকে আনবে । তার অর্থ কী এইসব জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড আসলে সরকারকে বিপদে ফেলা এবং অবৈধ উপায়ে ক্ষমতা দখল করার পরিকল্পনার অংশ আর এই সব কর্মকান্ড সম্পর্কে বিএনপি সম্পূর্ণ ওয়াকেবহাল ? এই মন্তব্যের অর্থ কী এই, বিএনপি-জামায়াতকে সাথে নিয়ে জঙ্গি বিরোধী ঐক্য করলে তারা জঙ্গিবাদ বন্ধ করে দেবেন ? নজরুল ইসলাম খানের একটি উজ্জ্বল রাজনৈতিক অতীত আছে । তার কাছ হতে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্যতো আশা করা যায় না । এমন কথা বাবু গয়েশ্বর অথবা রিজভি আহমদ বললে অসুবিধা ছিল না । বিএনপি কথায় কথায় জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের ব্যর্থতার কথা বলেন । কিন্তু তারা ভুলে যান যে এই জঙ্গিবাদের উত্থান বেগম জিয়ার শাসনামলে বাংলা ভাই শায়েখ আবদুর রহমান, হিযবুত তাহরির আর জেএমবি’র উত্থানের মধ্য দিয়ে । তারা এত সহজে কী ভাবে ভুলে যান ২০০৪ সালে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলার কথা? তারো আগে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানইতো যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতকে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং একাত্তরের ঘাতক গোলাম আযমকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশ আসার সুযোগ কওে দিয়েছিলেন । বেগম জিয়ার শাসনামলেই গোলাম আযম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়েছিল ।
দেশের যে কোন সংকট মোবাবেলায় জাতীয় ঐক্য অবশ্যই প্রয়োজন তবে সেটি হতে হবে প্রধানতঃ দেশের জনগণের ঐক্য, শুধু কোন রাজনৈতিক দল, ব্যাক্তি ও গোষ্টির নয় । তেমন একটি ঐক্য সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন বলেই বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করতে পেরেছিলেন । তাঁর কন্যা বর্তমান সময়ের জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করার জন্য সেই রকম একটি জাতীয় ঐক্যের কথা বলেছেন । এমন ঐক্য দেশের জনগণ প্রত্যাশা করে । সেই জনগণের রাজনৈতিক পরিচয়ের চাইতে দেশপ্রেমটাই বড় হওয়া উচিৎ । যারা দেশের মানুষ পুড়িয়ে মারে, যারা দেশের জন্মের বিরোধিতা করেছিল তাদের সাথে নিয়ে জাতীয় ঐক্যের কথা বলা স্বপ্ন বিলাস ছাড়া আর কিছু নয় । আর মনে রাখতে হবে ত্রিশ লক্ষ শহীদেও রক্তের বিনিময় যে দেশ স্বাধীন হয় সেই দেশে জঙ্গিকাদেও উত্থান সহজ নয় ।
লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । জুলাই ১৯, ২০১৬