|
অন্ধকার হতে আলোয় আসা
আবদুল মান্নান
জিন্নাহ-নেহেরুর ভারত
ভাগের অনেক অভিশাপের অন্যতম অভিশাপ ছিল ছিটমহলজনিত সমস্যা। এক দেশের ভিতর
অন্য দেশের এক খ- জমি, যার কোন কোনটার আয়তন একটি বড় উঠান সমপরিমাণ হতে পারে
। এই ছিটমহলের মালিক যে দেশে তাদের নাগরিকত্বও ওই দেশের। সে হিসেবে
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কোন ভারতীয় ছিটমহলে আসতে হলে একজনকে বাংলাদেশের ভূখ-ের
উপর দিয়ে আসতে হতো যা মোটেও সহজ ছিল না । ভারতীয় ভূখ-ের ভিতরে বাংলাদেশের
বাসিন্দাদেরও সেই একই পরিস্থিতি । ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল
(মোট জমির পরিমাণ ৭,১১০ একর) ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ১১১টি (মোট
জমির পরিমাণ ১৭,১৯৮ একর) ছিটমহলের বাসিন্দাদের ছিল না কোন স্বাধীন দেশের
নাগরিক সুযোগ সুবিধা গ্রহণের কোন সুযোগ। চিকিৎসা, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, শিক্ষা,
যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভোটাধিকার, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা সব কিছু
হতেই তারা সেই ১৯৪৭ সাল হতেই বঞ্চিত ছিল। এমন একটা পরিস্থিতির স্বীকার
বিশ্বের অন্য কোন দেশের নাগরিকরা হয়েছেন বলে জানা নেই। এই সব ছিটমহল ও তার
হতভাগ্য অধিবাসীদের নিয়ে দেশ ভাগের পর হতেই উভয় দেশেই রাজনীতি হয়েছে অনেক
কিন্তু সমস্যার সমাধান করতে এগিয়ে আসেনি কোন সরকার। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু ও
তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে একটা চুক্তি হয়েছিল এই
সব ছিটমহল বিনিময়ের। যেহেতু এটি একটি দেশের নিজস্ব ভূমি অন্য দেশের কাছে
হস্তান্তর বিষয়ক ছিল সেহেতু এই চুক্তিটি নিজ নিজ দেশের সংসদের অনুসমর্থন
প্রয়োজন ছিল। এই কাজটি বঙ্গবন্ধু সরকার কোন সময় ক্ষেপণ না করে সংসদের
মাধ্যমে অনুসমর্থন করেই শুধু ক্ষান্ত হন নি ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের
ছিটমহল বেরুবাড়ি ভারতকে দ্রুত হস্তান্তর করে। দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই বিষয়ে
ভারতের কোন অগ্রগতি হয় নি যার অর্থ হচ্ছে ভারত বাংলাদেশের একটি ছিটমহল পেল
বটে কিন্তু তার বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রাপ্য শূন্যই থেকে যায়। পঁচাত্তরে
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই বিষয়ে আর কোন অগ্রগতি হয় নি। অন্যদিকে মুজিব
ইন্দিরা চুক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে ভারতের আদালতে একাধিক মামলাও হয়। সব কিছু
মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল আকার ধারণ করে এবং উভয় দেশের সরকার কোন
বাস্তবমুখী উদ্যোগ না নেওয়ার ফলে সমস্যাটি থেকেই যায় এবং এই সব ছিটমহলের
অধিবাসীদের আর্থ-সামাজিক সার্বিক অবস্থা প্রতিনিয়ত খারাপ হতে থাকে। উভয়
দেশের ছিটমহলের বাসিন্দারা এই পরিস্থিতি হতে উত্তরণের জন্য দীর্ঘদিন চেষ্টা
করেছে কিন্তু তেমন একটা সফল হতে পারে নি কারণ উভয় দেশের সরকারের এই বিষয়ে
নির্লিপ্ততা।
১৯৯১ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে দু’দেশের
সরকারের উদ্যোগে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের অন্যতম বড় ছিটমহল
আঙ্গোরপোতা ও দহগ্রামের সাথে বাংলাদেশের মূল ভূখ-ের সাথে ভারতের ভিতর দিয়ে
যাতায়াতের জন্য তিন বিঘা করিডোর ব্যবহার করার জন্য দুদেশের মধ্যে একটি
অস্থায়ী চুক্তি হয়। এই করিডোরের দৈর্ঘ্য তিনশত গজের মতো হবে। প্রথমে
সিদ্ধান্ত হয় এটি প্রতি ঘণ্টা অন্তর খোলা বন্ধ হবে। কাজটি করবে ভারতীয়
সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তবে সে সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহনী প্রায় সময় নিয়ম
মাফিক করিডোরের ভিতর দিয়ে যাতায়াতের সুবিধার্থে গেইট খুলতে ব্যর্থ হতো।
১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর চুক্তিটি পরিবর্তন করে বলা হয় সকাল
ছয়টা হতে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এই করিডোর খোলা থাকবে। এই কাজে ভারতের
তৎকালীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার শেখ হাসিনার সরকারকে যথেষ্ট সহায়তা করে।
তারপরও সমস্যা থেকেই যায়। রাতের বেলায় কোন ছিটমহলবাসীর চিকিৎসার মতো কোন
জরুরি সেবার প্রয়োজন হলে তা পাওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। এর ফলে অনেক
রোগী ও সন্তানসম্ভবা মহিলার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুও হয়। ২০০৯ সালে নির্বাচনে
বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনার অন্যতম অগ্রাধিকার এজেন্ডা ছিল
দীর্ঘদিনের এই সমস্যার সমাধান করে ছিটমহলের বাসিন্দাদের তাদের বন্দী জীবন
হতে মুক্ত করা। এই সমস্যা সমাধানে সহায়তা পাওয়া যায় ভারতের নরেন্দ্র মোদির
সরকারের। তবে বাধ সাধে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তিনি
গোঁ ধরে বসেন কোন অবস্থাতেই তিনি এই ছিটমহল বিনিময় হতে দেবেন না। ভারতের
ফেডারেল ব্যবস্থায় কোন রাজ্যের সমর্থন ছাড়া আন্তঃদেশীয় কোন চুক্তি
বাস্তবায়ন সম্ভব নয় যে কারণে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি এখনো সম্ভব হয়
নি। বিশাল তিস্তা নদী বর্তমানে সম্পূর্ণ মৃত একজন মমতা হীন মমতা ব্যানর্জির
কারণে। ছিটমহল বিনিময় চুক্তির কোন অগ্রগতি না হওয়ার ফলে দু’দেশের ছিটমহল
বাসিন্দারা বেশ হতাশ হয়। মোদি মমতাকে আশ্বস্ত করেন ছিটমহল বিনিময়ের কারণে
যদি কোন মানুষ তার ভিটে মাটি হতে উচ্ছেদ হয়ে বাংলাদেশ হতে ভারতে আসে তাহলে
তাকে পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র সরকার তিন হাজার নয়শ কোটি রুপি রাজ্য সরকারকে
দেবে। শেষমেষ বহুপ্রতীক্ষিত সেই ইন্দিরা মুজিব চুক্তি ভারতের লোক সভায় ২০১৫
সালের ৭ মে অনুসমর্থনের জন্য উত্থাপিত হয় এবং তা কোন বিরোধিতা ছাড়াই পাশ হয়।
রাজ্যসভায়ও একই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকে। সিদ্ধান্ত হয় চুক্তিটি বাস্তবায়ন হবে
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই-এর মধ্যরাতে। সেই অনুযায়ী ওই তারিখে সব ছিটমহলের
বিলুপ্তি ঘটে। উভয় দেশের ছিটমহল বাসীর জন্য এটা ছিল অনেকটা মধ্যরাতের
স্বাধীনতার মতো। কেউ বলেন আর একটি ১৪ আগস্ট।
কেমন আছেন বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর অধিবাসীরা তা জানার ইচ্ছা অনেক দিনের।
পেশাগত কাজে রংপুর গেলে সেই সুযোগ করে দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য ড. নুরুন্নবী। ঠিক করা হয় প্রথমে যাব রংপুর হতে আনুমানিক নব্বই
কিলোমিটার দূরে বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ায়। এখান হতেই শুরু হয়েছিল ছিটমহল
সমস্যা সমাধানের আন্দোলন। এলাকার মানুষ বলে এটি ছিটমহলের রাজধানী। পথে
আমাদের সাথী হন অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন। এক অদ্ভুত মানুষ। ছিটমহল
বিনিময় আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেক দিন ধরে। নিজের বাড়িকে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে
রূপান্তর করে ফেলেছেন। দেয়ালে টাঙ্গিয়ে রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর
অনেক দুর্লভ ছবি। বিএসএফ কর্তৃক ফেলানি হত্যা মামলায় ফেলানির পরিবারের পক্ষে
নিজের গাঁটের পয়সা খরচ করে মামলা লড়তে গিয়েছিলেন দিল্লি। আমার সহযাত্রী
সুভাষ সিংহ রায়ের মতো লিংকন একজন মৌলবাদী আওয়ামী লীগার। বন্ধুরা বলেন
লিংকনের অবস্থা হচ্ছে নাই কাজতো খই ভাজ-এর মতো অবস্থা। এই যুগে লিংকনের মতো
নিঃস্বার্থ মানবাধিকার বা রাজনৈতিককর্মী কম পাওয়া যায়।
কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বর-ফুলবাড়ি হয়ে দাসিয়ারছড়া যেতে আমাদের সময় লাগে পৌনে
দু’ঘণ্টা। এই অঞ্চলে হাইওয়েগুলির অবস্থা বেশ ভাল। এর কৃতিত্ব এরশাদকে দিতে
হয়। রংপুরে তার বাড়ি হওয়ার সুবাদে এলাকার সার্বিক উন্নয়ন চোখে পরার মতো।
দাসিয়ারছড়ার জনসংখ্যা দশ হাজারের মতো। এলাকায় ঢুকতেই চোখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার বিশাল বিশাল চোখ ধাঁধানো ব্যানার। এলাকার মানুষ মনে করে শেখ
হাসিনা প্রধানমন্ত্রী না হলে তারা আজ স্বাধীন দেশের প্রকৃত নাগরিক হতে পারতো
না। বলে তাঁর কাছে যেন বলি সামনের সংসদ নির্বাচনে তিনি যেন এই এলাকা হতে
প্রার্থী হন। ৩১ জুলাইয়ের পর এই ছিটমহল হতে ৮৫৪ জন ভারতে চলে গিয়েছে। সেখান
হতে আসেনি কেউ। যারা গিয়েছে তারা এখনো শরণার্থী শিবিরে। পরিবার পিছু মাসে
ত্রিশ কেজি চাল মিলে। দাসিয়ারছড়ায় এখন বিনামূল্যে বিদ্যুত সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে একটি। অচিরেই সরকারি
পর্যায়ে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়মিত আসা যাওয়া করেন। পুলিশের
উপস্থিতি আছে। কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হয়েছে। একটি ছোট ঘরে দুটি কম্পিউটার।
ইন্টারনেট সংযোগও আছে। যে কেউ ব্যবহার করতে পারেন। এখন মানুষ অনেক নিরাপদ
বোধ করেন। দেখা হয় দরিদ্র কৃষক হরি কৃষ্ণ মোহান্তের সাথে। তার পরিবারের সকলে
ওপারে চলে গেলেও মোহান্ত পরিবার নিয়ে দাসিয়ারছড়ায় থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত
নেন। তার এই সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে বলেন তার স্বর্গত মা বলেছিলেন
জন্মভূমি স্বর্গ তুল্য। মায়ের কথার বাইরে যেতে পারেন নি। মনে হলো হরি কৃষ্ণ
মোহান্তের মতো বড় দেশপ্রেমিক এই দেশে আর দুটো পাওয়া যাবে না। অনেকের দাবি
ইউনিয়নটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে করা হোক। তাদের বলি এটি সরকারের
সিদ্ধান্ত। এলাকার মানুষের চোখে মুখে সব সময় কেমন যেন আলোর ঝলকানি।
একদিন পর তিন বিঘা হয়ে আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম। পথে পড়লো মরা তিস্তার ডালিয়
পয়েন্ট ও নীলফামারি। তিন বিঘা করিডোরের দুই প্রান্তে বিজিবির চৌকি। তিন
বিঘার উভয় পাশে বিএসএফ। ২০১৫ সালের অক্টোবরে বিলুপ্ত ছিটমহলে এসেছিলেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এলাকার ওয়াসেক মোল্লা জানালেন সে দিন ছিল তাদের
জন্য ঈদের মতো। পিতা সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন। কন্যা বাস্তবে
সেই সমস্যার সমাধান করে ফেললেন। শেখ হাসিনা এলাকার মানুষের কাছে এক
প্রাতঃস্মরণীয় নাম। ছিটমহলে যাওয়ার পথে শেখ হাসিনা তিন বিঘা করিডোরে একটি
গাছ লাগিয়েছিলেন। এ ক’মাসে গাছটি বেশ বড় হয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের পর এখন
করিডোরের দরজা আর বন্ধ হয় না। এলাকায় রাস্তাঘাট পাকা হয়েছে। এই বিলুপ্ত
ছিটমহলের বাসিন্দা কুড়ি হাজার। এখানে এখন টিউবওয়েল বসেছে। তিনটি সরকারি
প্রাইমারি স্কুল হচ্ছে। এলাকার জমি উর্বর। সেচ ব্যবস্থা হলে ভাল ফসল হবে বলে
সকলে জানালেন। বর্তমানে তামাক, ভুট্টা, পান, সুপারির চাষ হয়। তামাক জমির
জন্য খুবই ক্ষতিকর। তারপরও এলাকার মানুষ করে কারণ এতে পানি কম লাগে। এই
অল্প কয়েক মাসে মানুষ যা পেয়েছে তাতে তারা বেশ খুশি। একটু ব্যাংকিং সেবার
ব্যবস্থা হলে তারা বেশ উপকৃত হবে বলে জানায়। স্থানীয় সরকারি চাকরিতে তাদের
একটা অগ্রাধিকার আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন শিক্ষা বঞ্চিত ছিল বলে সে সুবিধা তারা
বেশি নিতে পারে না। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঘোষণা করলেন
ছিটমহল বাসিন্দাদের সন্তানদের জন্য তিনি তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংরক্ষণের
ব্যবস্থা করবেন। ছিটমহলের শেষ প্রান্তে গিয়ে ওপাড়ে তাকিয়ে দেখি বিএসএফ চোখে
দূরবীন লাগিয়ে আমাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছে। আমাদের সাথে থাকা পুলিশ অফিসার
অভয় দিয়ে বলেন কোন ভয় নেই। সাথে পুলিশ থাকলে বিএসএফ নিশ্চিত হয় পরিস্থিতি
স্বাভাবিক আছে। ‘থানেওয়ালা সাথ হ্যায়তো সব ঠিক হ্যায়’। বিজিবি’র নড়াচড়া
দেখলে একটু নার্ভাস হয়। সকলের কাছ হতে বিদায় নেওয়ার সময় মনে হল
রাজনীতিবিদদের একটু সদিচ্ছা থাকলে কত সমস্যারই না সমাধান হতে পারে। তবে এক
শ্রেণির রাজনীতিবিদদের কাছে সমস্যা জিয়ে থাকলে তা হতে ফায়দা লোটা বেশ সহজ।
লেখক: বিশ্লষক ও গবেষক । এপ্রিল ৭, ২০১৬
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
[......লেখক আর্কাইভ]
|