|
||||||||||||||||||
|
পান্থ পৌর্বাপর্য (সপ্তদশ পর্ব) এ,কে,এম,নূরুন্নবী
ফেরার পথে রাতের খাবার খেয়ে আমরা হোটেলে ফিরলাম। আমরা নিয়মিত বৈঠকে
বসলাম। বড় দাদা বললেন,এখানে যতটুকু দেখেছি তাতে নেহাত কম নয়। কি বলো
তোমরা। এখন আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কি করবো আমরা। সবাই বললেন
দাদা এখন আমরা না হয় সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে চলে যাই। এটাই সিদ্ধান্ত হলো।
কেবল সকালের অপেক্ষায়।এবার আমরা রওনা করলাম বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে
বঙ্গপসাগরের উত্তর পূর্বাংশে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ।কক্সবাজার থেকে আমরা
টেকনাফ চলে গেলাম। সেখান থেকে আমরা বোটে করে সেন্টমার্টিন রওনা করলাম।
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে নয় কিলোমিটার দূরে। বেলা চারটায় পৌঁছলাম।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে নেমে বেলা ভূমির দিকে চেয়ে দেখলাম। ভয়ে গা শিহরিত
হলো। কারণ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড হতে গভীর সমুদ্রের এক দ্বীপের মধ্যে
পৌঁছেছি। আমাদের চতুর দিকে শুধু পানি আর পানি। দ্বীপে পৌঁছেই বুঝতে
পারলাম এখানকার মানুষ নির্মম দরিদ্র। জীবন জীবিকার পথ মাছ ধরা। প্রতিটা
ঘরে প্রায় গড়ে উঠেছে হোটেল। প্রত্যেক বাড়িতেই টুরিস্টদেরকে খাবার ও
থাকার জন্য দীর্ণজীর্ণ ঘরগুলোকে মোটামুটি ভাবে মেরামত করে আবাসিকের
ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় লোকজন। এর ফলে দারিদ্রতাও তাদের কিছুটা কমেছে।
আমরা স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ইউনুছ আলীর বাড়ি ছয়শত টাকা দিয়ে ভাড়া
করলাম। দুপুরের খাবারও তাদের বাড়িতে পেলাম। বালু মাটির উপর টিন ঘরের
দোকান ও রেস্তোরা। আমরা স্থানীয় লোকদের মুখে জানতে পারলাম
জিনজিরা,দক্ষিণপাড়া ,গলাচিরা,ছেরাদিয়া এই চারটি এলাকা নিয়ে সেন্ট
মার্টিন দ্বীপ গঠিত। বড় দাদা বললেন শ্যমল এখানে প্রচুর ডাব পাওয়া যায়।
তুমি আগে ডাব খাবার ব্যবস্থা কর। বাড়ি আলা বললেন আপনারা ডাব খেতে
চান,ঠিক আছে বসুন আমি এনে দিচ্ছি। বড় দাদা উনার হাতে একশত টাকা দিলেন।
ভদ্র লোক দশটি ডাব কিনে নিয়ে এলেন মাত্র কুড়ি টাকা দিয়ে। আমরা ডাব
খেলাম। মানুষ কবে এই দ্বীপটি শনাক্ত করে তার ইতিহাস জানা যায় না। আমরা
পাঁচটার দিকে ঘুরতে বের হলাম। এখানে না এলে বুঝা যাবে না যে আমাদের
মাতৃভূমি কতটা স্বর্গাদপী গরিয়সী। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারায় পুষ্ট ও
অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে মৃন্ময়ী দেশ হয়ে উঠেছে সৌসাদৃশ্য। দ্বীপটিতে
অসংখ্য নারিকেল গাছে ভরপুর। সৌন্দর্য, জ্ঞান, প্রেরণা, অভিজ্ঞতা এবং
বৈচিত্র্যের আস্বাদন দিয়ে মানুষের জীবনকে কানায় কানায় ভরে দেয়। এই
দ্বীপে আমাদের প্রথম আসা।এমন একটি দ্বীপে যদি আমাদের আসা না হতো তা হলে
সমস্ত জীবনটাই ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যেত।এখানে প্রবেশ করে আমি নিজেকে
জ্ঞানসাগরে হারিয়ে ফেলেছিলাম। জ্ঞানপিপাষু মনীষীরা নীরব ভাষায় হাজারো
কথা বলে। আমি যেন কান পেতে হৃদয় দিয়ে সে কথা গুলো শুনছিলাম।এখানে আসলে
বুঝা যায় আমাদের দেশটা কত সুন্দর। এখানে আছে সুখ-দৃ:খ,প্রেম-ভালবাসা,আছে
ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও ধর্মের কথা। আছে সৃষ্টির কথা,আছে
ধ্বংশের কথা। সৃষ্টি কর্তা মনের মতো করে চোখ ঝলসানো তার সমুদ্র
সৈকতকে সাজিয়েছেন আলোকউজ্জল করে। এই অপূর্ব দৃশ্য দেখলে মন আনন্দে ভরে
উঠে। সৈকতের পাড়ে যেতেই দেখলাম শতশত তরুণ পর্যটক সৈকতে নেমে আনন্দে
সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। সর্বত্রই বিস্ময় ছড়িয়ে ছিটে আছে। রাত নয়টার দিকে
আমরা সৈকতের পাড় থেকে ভাড়া বাসায় ফিরলাম। আসার সময় মনে হলো আমরা যেন
স্বর্গ ছেড়ে অসুন্দর এক পৃথিবীতে ফিরে যাচ্ছি। আমরা দেখলাম সন্ধ্যার
সূর্য্যাস্ত। যা দেখে মনের পরশে লাগে হৃদয় ছোঁয়া আনন্দের অসাধারল
মুগ্ধকর পশরা। একদিকে সূর্য অস্ত যায় অন্যদিকে সমগ্র পৃথিবী রূপালী
আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে ঝলমলিয়ে জেগে ওঠে চাঁদ। তবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের
উইকিপিডিয়া পড়ে যা জানা যায়, তার বেশ কিছু গুরুত্ব পূর্ণ অংশ হুবহু
সংযোজন করলাম। প্রথমে কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিল
জিঞ্জিরা। উল্লেখ্য এরা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার
যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো। কালক্রমে
চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতো।১৮৯০
খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই
দ্বীপের বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবি। যতটুকু জানা
যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবার। এরা বেছে
নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ। কালক্রমে এই দ্বীপটি বাঙালি অধ্যুষিত
এলাকায় পরিণত হয়। আগে থেকেই এই দ্বীপে কেয়া এবং ঝাউগাছ ছিল। সম্ভবত
বাঙালি জেলেরা জলকষ্ঠ এবং ক্লান্তি দূরীকরণের অবলম্বন হিসাবে প্রচুর
পরিমাণ নারকেল গাছ এই দ্বীপে রোপণ করেছিল। কালক্রমে পুরো দ্বীপটি একসময়
'নারকেল গাছ প্রধান' দ্বীপে পরিণত হয়। এই সূত্রে স্থানীয় অধিবাসীরা
এই দ্বীপের উত্তরাংশকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে অভিহিত করা শুরু করে।
১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ-জরীপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের
অংশ হিসাবে গ্রহণ করে। জরীপে এরা স্থানীয় নামের পরিবর্তে খ্রিষ্টান
সাধু মার্টিনের নামানুসারে সেন্ট মার্টিন নাম প্রদান করে। এরপর ধীরে
ধীরে এই অঞ্চলের বাইরের মানুষের কাছে, দ্বীপটি সেন্ট মার্টিন নামেই
পরিচিত লাভ করে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ
কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা।এ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায়
৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা। দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০
মিটার। দ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত
অগণিত শিলাস্তূপ আছে।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের গড়
উচ্চতা ৩.৬ মিটার। সেন্ট মার্টিন্সের পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে
রয়েছে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর।সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে
প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১শ ৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১শ ৫৩
প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১শ ৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ,২শ ৪০
প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১শ ২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া
যায়।এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। অমেরুদন্ডী
প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্যাসী শিল
কাঁকড়া,লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ,
বোল করাল,রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ,উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি।
সামুদ্রিক কচ্ছপ সবুজ সাগর কাছিম এবং জলপাইরঙা সাগর কাছিম প্রজাতির ডিম
পাড়ার স্থান হিসেবে জায়গাটি খ্যাত।দ্বীপে কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক
বন বলতে যা বোঝায় তা নেই। তবে দ্বীপের দক্ষিণ দিকে প্রচুর পরিমাণে
কেওড়ার ঝোপ-ঝাড় আছে। দক্ষিণ দিকে কিছু ম্যানগ্রোভ গাছ আছে। অন্যান্য
উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কেয়া, শ্যাওড়া, সাগরলতা, বাইন গাছ ইত্যাদি।
দ্বীপের লোকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
|
লেখকের আগের লেখাঃ |