প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

 

পান্থ পৌর্বাপর্য (সপ্তদশ পর্ব)

এ,কে,এম,নূরুন্নবী

 

 

ফেরার পথে রাতের খাবার খেয়ে আমরা হোটেলে ফিরলাম। আমরা নিয়মিত বৈঠকে বসলাম। বড় দাদা বললেন,এখানে যতটুকু দেখেছি তাতে নেহাত কম নয়। কি বলো তোমরা। এখন আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কি করবো আমরা। সবাই বললেন দাদা এখন আমরা না হয় সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে চলে যাই। এটাই সিদ্ধান্ত হলো। কেবল সকালের অপেক্ষায়।এবার আমরা রওনা করলাম বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গপসাগরের উত্তর পূর্বাংশে সেন্ট মার্টিনস দ্বীপ।কক্সবাজার থেকে আমরা টেকনাফ চলে গেলাম। সেখান থেকে আমরা বোটে করে সেন্টমার্টিন রওনা করলাম। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে নয় কিলোমিটার দূরে। বেলা চারটায় পৌঁছলাম। সেন্টমার্টিন দ্বীপে নেমে বেলা ভূমির দিকে চেয়ে দেখলাম। ভয়ে গা শিহরিত হলো। কারণ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড হতে গভীর সমুদ্রের এক দ্বীপের মধ্যে পৌঁছেছি। আমাদের চতুর দিকে শুধু পানি আর পানি। দ্বীপে পৌঁছেই বুঝতে পারলাম এখানকার মানুষ নির্মম দরিদ্র। জীবন জীবিকার পথ মাছ ধরা। প্রতিটা ঘরে প্রায় গড়ে উঠেছে হোটেল। প্রত্যেক বাড়িতেই টুরিস্টদেরকে খাবার ও থাকার জন্য দীর্ণজীর্ণ ঘরগুলোকে মোটামুটি ভাবে মেরামত করে আবাসিকের ব্যবস্থা করেছে স্থানীয় লোকজন। এর ফলে দারিদ্রতাও তাদের কিছুটা কমেছে। আমরা স্থানীয় একজন প্রভাবশালী ইউনুছ আলীর বাড়ি ছয়শত টাকা দিয়ে ভাড়া করলাম। দুপুরের খাবারও তাদের বাড়িতে পেলাম। বালু মাটির উপর টিন ঘরের দোকান ও রেস্তোরা। আমরা স্থানীয় লোকদের মুখে জানতে পারলাম জিনজিরা,দক্ষিণপাড়া ,গলাচিরা,ছেরাদিয়া এই চারটি এলাকা নিয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ গঠিত। বড় দাদা বললেন শ্যমল এখানে প্রচুর ডাব পাওয়া যায়। তুমি আগে ডাব খাবার ব্যবস্থা কর। বাড়ি আলা বললেন আপনারা ডাব খেতে চান,ঠিক আছে বসুন আমি এনে দিচ্ছি। বড় দাদা উনার হাতে একশত টাকা দিলেন। ভদ্র লোক দশটি ডাব কিনে নিয়ে এলেন মাত্র কুড়ি টাকা দিয়ে। আমরা ডাব খেলাম। মানুষ কবে এই দ্বীপটি শনাক্ত করে তার ইতিহাস জানা যায় না। আমরা পাঁচটার দিকে ঘুরতে বের হলাম। এখানে না এলে বুঝা যাবে না যে আমাদের মাতৃভূমি কতটা স্বর্গাদপী গরিয়সী। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারায় পুষ্ট ও অনুপ্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে মৃন্ময়ী দেশ হয়ে উঠেছে সৌসাদৃশ্য। দ্বীপটিতে অসংখ্য নারিকেল গাছে ভরপুর। সৌন্দর্য, জ্ঞান, প্রেরণা, অভিজ্ঞতা এবং বৈচিত্র্যের আস্বাদন দিয়ে মানুষের জীবনকে কানায় কানায় ভরে দেয়। এই দ্বীপে আমাদের প্রথম আসা।এমন একটি দ্বীপে যদি আমাদের আসা না হতো তা হলে সমস্ত জীবনটাই ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যেত।এখানে প্রবেশ করে আমি নিজেকে জ্ঞানসাগরে হারিয়ে ফেলেছিলাম। জ্ঞানপিপাষু মনীষীরা নীরব ভাষায় হাজারো কথা বলে। আমি যেন কান পেতে হৃদয় দিয়ে সে কথা গুলো শুনছিলাম।এখানে আসলে বুঝা যায় আমাদের দেশটা কত সুন্দর। এখানে আছে সুখ-দৃ:খ,প্রেম-ভালবাসা,আছে ইতিহাস, দর্শন, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও ধর্মের কথা। আছে সৃষ্টির কথা,আছে ধ্বংশের কথা। সৃষ্টি কর্তা মনের মতো করে চোখ ঝলসানো তার সমুদ্র সৈকতকে সাজিয়েছেন আলোকউজ্জল করে। এই অপূর্ব দৃশ্য দেখলে মন আনন্দে ভরে উঠে। সৈকতের পাড়ে যেতেই দেখলাম শতশত তরুণ পর্যটক সৈকতে নেমে আনন্দে সাঁতার কেটে বেড়াচ্ছে। সর্বত্রই বিস্ময় ছড়িয়ে ছিটে আছে। রাত নয়টার দিকে আমরা সৈকতের পাড় থেকে ভাড়া বাসায় ফিরলাম। আসার সময় মনে হলো আমরা যেন স্বর্গ ছেড়ে অসুন্দর এক পৃথিবীতে ফিরে যাচ্ছি। আমরা দেখলাম সন্ধ্যার সূর্য্যাস্ত। যা দেখে মনের পরশে লাগে হৃদয় ছোঁয়া আনন্দের অসাধারল মুগ্ধকর পশরা। একদিকে সূর্য অস্ত যায় অন্যদিকে সমগ্র পৃথিবী রূপালী আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে ঝলমলিয়ে জেগে ওঠে চাঁদ। তবে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উইকিপিডিয়া পড়ে যা জানা যায়, তার বেশ কিছু গুরুত্ব পূর্ণ অংশ হুবহু সংযোজন করলাম। প্রথমে কিছু আরব বণিক এই দ্বীপটির নামকরণ করেছিল জিঞ্জিরা। উল্লেখ্য এরা চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যাতায়াতের সময় এই দ্বীপটিতে বিশ্রামের জন্য ব্যবহার করতো। কালক্রমে চট্টগ্রাম এবং তৎসংলগ্ন মানুষ এই দ্বীপটিকে জিঞ্জিরা নামেই চিনতো।১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপের বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবি। যতটুকু জানা যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবার। এরা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ। কালক্রমে এই দ্বীপটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়। আগে থেকেই এই দ্বীপে কেয়া এবং ঝাউগাছ ছিল। সম্ভবত বাঙালি জেলেরা জলকষ্ঠ এবং ক্লান্তি দূরীকরণের অবলম্বন হিসাবে প্রচুর পরিমাণ নারকেল গাছ এই দ্বীপে রোপণ করেছিল। কালক্রমে পুরো দ্বীপটি একসময় 'নারকেল গাছ প্রধান' দ্বীপে পরিণত হয়। এই সূত্রে স্থানীয় অধিবাসীরা এই দ্বীপের উত্তরাংশকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামে অভিহিত করা শুরু করে। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ব্রিটিশ ভূ-জরীপ দল এই দ্বীপকে ব্রিটিশ-ভারতের অংশ হিসাবে গ্রহণ করে। জরীপে এরা স্থানীয় নামের পরিবর্তে খ্রিষ্টান সাধু মার্টিনের নামানুসারে সেন্ট মার্টিন নাম প্রদান করে। এরপর ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের বাইরের মানুষের কাছে, দ্বীপটি সেন্ট মার্টিন নামেই পরিচিত লাভ করে। সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার ও উত্তর-দক্ষিণে লম্বা।এ দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণে প্রায় ৫.৬৩ কিলোমিটার লম্বা। দ্বীপের প্রস্থ কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। দ্বীপটির পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে সাগরের অনেক দূর পর্যন্ত অগণিত শিলাস্তূপ আছে।সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপের গড় উচ্চতা ৩.৬ মিটার। সেন্ট মার্টিন্সের পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিক জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর।সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১শ ৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১শ ৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১শ ৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ,২শ ৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১শ ২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়।এছাড়াও রয়েছে ১৯ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। অমেরুদন্ডী প্রাণীদের মধ্যে রয়েছে স্পঞ্জ, শিল কাঁকড়া, সন্যাসী শিল কাঁকড়া,লবস্টার ইত্যাদি। মাছের মধ্যে রয়েছে পরী মাছ, প্রজাপতি মাছ, বোল করাল,রাঙ্গা কই, সুঁই মাছ, লাল মাছ,উড়ুক্কু মাছ ইত্যাদি। সামুদ্রিক কচ্ছপ সবুজ সাগর কাছিম এবং জলপাইরঙা সাগর কাছিম প্রজাতির ডিম পাড়ার স্থান হিসেবে জায়গাটি খ্যাত।দ্বীপে কেওড়া বন ছাড়া প্রাকৃতিক বন বলতে যা বোঝায় তা নেই। তবে দ্বীপের দক্ষিণ দিকে প্রচুর পরিমাণে কেওড়ার ঝোপ-ঝাড় আছে। দক্ষিণ দিকে কিছু ম্যানগ্রোভ গাছ আছে। অন্যান্য উদ্ভিদের মধ্যে রয়েছে কেয়া, শ্যাওড়া, সাগরলতা, বাইন গাছ ইত্যাদি। দ্বীপের লোকসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আমরা রাতের আলোচনায় অবশেষে ঠিক করলাম আগামী কাল সকালের কিছু সময় অপেক্ষা করে সব কিছুই ভাল করে দেখে যাওয়া উচি‌ৎ। ভ্রমণ গাইড দেখে সব কিছু ঠিক করে নিলাম। রাতের খাবার ওই বাসাতেই খেয়ে আমরা যার যার মতো শুয়ে পড়লাম। সমুদ্রের হাওয়ায় রাতের ঘুমটা চম‌ৎকার হলো। সকালে টাটকা মাছের ভাজি দিয়ে খিচুরি খেয়ে আমরা সকাল সকাল রওনা করলাম সৈকতের পাড়ে। সেখানে এক অদ্ভূত ঘটনা ঘটে গেল। আমি মাধবী ও শিলা আপু আগে আগে যাচ্ছি। এর মধ্যেই দেখতে পেলাম আমার ক্লাসের একজন ঘনিষ্ট বন্ধু সোহরাব ও মিলি জেসমিন হেঁটে হেঁটে সামনের দিক থেকে আমাদের দিকে আসছে। আমিতো তাকে দেখতে পেয়ে হতাশ হলাম। কারণ আজ হয়তো আমার সব কিছুই ফাঁস হয়ে যাবে। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম আমি তাকে চিনি না এমন অভিনয় করবো। এমন সময় আমি ভয়ে কেমন যেন কাতর্য হয়ে গেলাম। তাছাড়া ভাবলাম তার স্ত্রীও তো আমাকে চেনে। সোহরাবের সাথে যখন মিলি জেসমিনের প্রেম চলে সে সময় সোহরাব তার প্রেমিকার ডিপার্টমেন্ট দর্শন বিভাগে আমাকে নিয়ে তার সাথে পরিচয় করে দেয়। তাকে বলে সে আমার অন্তরঙ্গ বন্ধু। এর পর থেকেই যখনই মিলি জেসমিনের সাথে ক্যাম্পাসে আমার দেখা হতো তখনই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দু এক মিনিট কথা না বলে সে যেত না। স্নাতকোত্তর ফাইনাল পরীক্ষার আগে সোহরাব তার প্রেমিকাকে বিয়ে করে। সে সুবাদে তার সাথেও আমার ভাল পরিচয়। এখন আমি কী করি। যদি সে আমার নাম বলে তাহলে তো ধরা খেয়ে যাব। আমি কেমন যেন গঙ্গারাম হয়ে পড়লাম, সিদ্ধান্তই নিতে পারছিলাম না। সোহরাবের বিয়ের সময় আমি একমাত্র বন্ধু হিসেবে পাশে ছিলাম। আমি একটু দাঁড়াতেই মাধবী ও শিলা আপুও দাঁড়িয়ে যায়। আমি বললাম তোমরা একটু সামনের দিকে অগ্রসর হও,আমি আসছি। না তারা মোটেই আমাকে ছেড়ে সামনে যাবে না। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম।আমি এখন কী করি।তিন হাত দূরেই মাধবী ও শিলা আপু দাঁড়িয়ে আছেন, এর মধ্যেই সোহরাব তার স্ত্রীকে নিয়ে আমার সম্মুখে পৌঁছে গেল। সোহরাব বললো দোস্ত কেমন আছো। আমি মনে মনে আল্লাহকে শুকরিয়া জানালাম। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন। আমিও বললাম দোস্ত তোমরা কেমন আছো ওরা বললো হাঁ আমরা ভাল আছি। তবে আজই আমরা চলে যাচ্ছি। দু দিন আগে এসেছিলাম। যেতাম না তুমি হয়তো জান গতকাল আমাদের মাস্টার্স পরীক্ষার রেজাল হয়েছে। আমি বললাম না তো আমি কিছুই জানি না। সোহরাব বললো তুমি আমাদের মধ্যে সবার চেয়ে ভাল রেজাল্ট করেছো। তুমি স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম স্থান লাভ করেছো। কেউ প্রথম শ্রেণি পায়নি। আমার রেজাল্ট ষষ্ঠ। মিলি দর্শন বিভাগে দ্বিতীয় স্থান পেয়েছে। গতপরশু আমরা যখন চট্রগ্রাম ছিলাম তখন রাতে টেলিফোনে বিরেন স্যারের সাথে আমার আলাপ হলে তিনি বিস্তারিত জানালেন। যেহেতু তিনি আমাদেরকে বেশি ভাল বাসেন। তিনি বললেন তোমাকেও বিষয়টি জানিয়ে দিতে। আজ আমরা চলে যাচ্ছি। ঢাকা ফিরলে পরে আলাপ হবে। এখন আসি দোস্ত। ঠিক আছে। এ কথা বলে তারা চলে গেল। আমি যেন হাফ ছেড়ে বেঁচে গেলাম। এতক্ষণে আমি আমার নিস্প্রাণ দেহ ফিরে পেলাম। শিলা আপু বললেন,শ্যামল তোমার মিষ্টি কোথায়? মাধবী বললো আপু যাবার সময় মিষ্টি নিয়ে যাব। বাবা,বড়দা, শ্যামলের রেজাল্ট শুনলে খুশি হবেন। আপাতত শিলা আপু তাদেরকে বলো না। আনন্দটা কম হবে। শিলা আপু বললেন ঠিক আছে আমি চেপে গেলাম। কিন্তু পরেরটা কী হবে। মাধবী বললো পরেরটা পরে হবে। আমি যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সেটাই হবে। আমি চুপ করে তাদের কথা গুলো শুনছিলাম। ঢাকা ফেরার তাগিদ যেন মন থেকে বেড়েগেল।ইতিমধ্যেই দেশী ও বিদেশী শত শত পর্যটক ট্রলারে আসছে। পর্যটকের সংখ্যা দেখে বুঝতে পারলাম সাধারণভাবে আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে প্রবাল দ্বীপটি বেশি প্রিয়। এখানকার বাসিন্দারা বেশ রক্ষণশীল বলেই মনে হলো। খুন,রাহাজানি,চুরি ছিনতাই মুক্ত এলাকা বলে পর্যটকগণ মনে করেন। আমরা ছেরাদিয়া দ্বীপের কাছাকাছি যাবার চেষ্টা করলাম। জোয়ারের সময় দ্বীপটি ডুবে যায় আবার ভাটার সময় জেগে উঠে। আমরা দূর থেকে সেটা দেখলাম। এখানকার পানি খুবই স্বচ্ছ। প্রচুর প্রবাল পাথর এখানে পাওয়া যায়।ঝিনুক ও প্রবাল পাথর সংগ্রহরে এখানে অনেকেই অবস্থার পরিবর্তন করেছে। ওখান থেকে আমরা ভাড়া বাসায় ফিরলাম। আমরা কাপড়চুপর গুছিয়ে নিয়ে বোট ধরার জন্য ঘাটে এলাম। বাড়ির মালিক তিনিও আমাদের সাথে এলেন। আমাদেরকে বোটে উঠিয়ে দিলেন। বড় দাদা তাকে মিষ্টি খাবার জন্য হাতে পাঁচ শত টাকা দিলেন। উনি খুব খুশি হলেন। বললেন,আবার যদি কখনও আসেন তা হলে আমাকে সংবাদ দিবেন আমি ঘাট থেকে আপনাদেরকে নিয়ে যাব। আপনাদেরকে আমাদের খুব ভাল লেগেছে। বোট ছেড়ে দিল আমরা তখন আধা কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছি, বড় দাদা আমাদেরকে বাইনোকুলার দিয়ে দেখালেন, ভাড়া বাসার মালিক আমাদের বোটের দিকে তাকিয়ে বেচারা দাঁড়িয়েই আছেন।বড় দাদা বললেন ভদ্র লোক খুব ভাল মানুষ।আবার যদি কখনও আসি তবে তার বাড়িতেই উঠবো। আমরা দু ঘন্টায় টেকনাফ পৌঁছে গেলাম। ওখান থেকে বেলা একটার বাস ধরে কক্সবাজার হয়ে চট্রগ্রামে রাত দশটায় পোঁছলাম। উঠলাম আমাদের পুরাতন হোটেলে। ম্যানেজারকে যাবার সময় বলা ছিল বলে তিনি আমাদের রুমটা সংরক্ষণ করে ছিলেন। বড় দা বললেন শ্যামল আমাদের জার্নিটা বেশি হয়ে গেছে,তাই ভাবছি আগামীকাল চট্রগ্রামে অবস্থান করে শহরের কিছু কিছু এলাকা ঘুরে আমরা ঢাকা ফিরে যাব। শ্যামল এখন দেখার মত কয়েকটি ঐতিহাসিক জায়গার নাম বলো যে গুলো ঘুরে দেখা যাবে। আমি বললাম বড় দাদা এখান কার ঐতিহাসিক জায়গা হচ্ছে হযরত বায়েজীদ বোস্তামী (রা:) এর মাজার। বড় দাদা বললেন ঠিক আছে আগামীকাল তাহলে আমরা ওখানেই প্রথমে যাব। শরীর ক্লান্ত থাকায় সবাই শুয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা নাস্তা করে নিলাম। এর পর আমরা রিক্সায় করে রওনা করলাম হযরত বায়েজীদ বোস্তমীর মাজারের দিকে। নেমে পড়লাম রিক্সা থকে। দেখলাম প্রচুর লোকজন এসেছেন। সব ধর্মের লোকই যার যার মত করে প্রার্থনা করছে। কিছু কিছু লোকের কথাবার্তা শুনে আমাদের কাছে ভন্ড বলে মনে হলো। সেখান থেকে আমরা দূরে গেলাম। অন্য জায়গায় গিয়ে দেখতে পেলাম কেউ কেউ বায়েজিদ বোস্তামির স্মৃতিচারণ করছে। সেখানে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে তা আমরা শুনছিলাম। ভাল লাগছিল কথাগুলো শুনতে। তাই তাদের পাশে বসে পড়লাম।তিনি বললেন বায়েজীদ বোস্তামী মাতৃ গর্ভে থাকা অবস্থায় তিনি আল্লাহর ওলি ছিলেন।কারণ তাঁর মা যখন কোন সন্দেহ জনক খাবার খেতেন তখনই তার বমি হয়ে যেত।অল্প বয়সে তিনি পিতৃহীন হন। তা‍র মাতা তাকে ছোট কালেই মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিলেন।বায়েজীদ বোস্তামী সূরা লুকমানের চৌদ্দ নম্বর আয়াত পড়তে গিয়ে দেখতে পান আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। এই আয়াত পড়ার পর তিনি তার শিক্ষকের কাছে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন। তার মা তাকে দেখে উ‌ৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন বাবা তুমি এত তাড়াতাড়ি চলে এলে কেন। তিনি বললেন মা আমি কোরআনে দেখলাম আল্লাহ ও তোমার পিতা মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। মা গো আমি তো এক সঙ্গে দুটি দায়িত্ব পালন করতে পারব না। তাই আমি আপনার কাছে ছুটে এলাম। আপনি আল্লাহর কাছ থেকে আমার দাবি ছাড়িয়ে নিন আর তা না হলে আমার ব্যাপার আপনার অধিকার আল্লাহর হাতে সোপর্দ করুণ। মা ছেলের কথা শুনে আনন্দিত হয়ে নিজের অধিকার মহান আল্লাহ পাকের হাতে ছেড়ে দিলেন। এক দিন রাতে তার মার শরীর অসুস্থ হলে তিনি শুয়ে পড়লেন। কিছু পরে তার মা বায়েজীদকে ডেকে পানি খেতে চাইলেন। তিনি পানি আনতে গিয়ে দেখেন বাড়ির কলসে কোন পানি নাই। তাই তিনি কলস নিয়ে নদীতে পানি আনতে গেলেন । সেখান থেকে ফিরে এসে দেখেন মা ঘুমিয়ে গেছেন, তাই তিনি তার মার ঘুম ভাঙ্গাতে চাইলেন না। তিনি সারা রাত পানির গ্লাস নিয়ে মার শিয়রে দাঁড়িয়ে রইলেন। ভোর হলে তার মায়ের ঘুম ভাঙ্গে। তিনি দেখলেন বায়েজীদ গ্লাস হাতে নিয়ে মায়ের শিয়রে দাঁড়িয়ে আছেন। মা বলরেন বাবা তুমি কষ্ট করে কেন সারা রাত দাঁড়িয়ে আছো। গ্লাসটা মাথার কাছে রেখে দিলেই তো পারতে। সারা রাত ঠাণ্ডায় দাঁড়িয়ে আছো।বায়েজিদের মাতৃ ভক্তি দেখে মায়ের কমল প্রাণে পরশ জাগে। ভোরে মা নামাজে দাঁড়িয়ে দোয়া করলেন প্রভু গো আমার ছেলেকে আপনার বন্ধুদের অন্তর্ভুক্ত করুণ। (অসমাপ্ত)

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

লেখকের আগের লেখাঃ