প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

 

পান্থ পৌর্বাপর্য (পঞ্চদশ পর্ব)

 

 

এ,কে,এম,নূরুন্নবী

 

অবশেষে রাত আটটার দিকে আমরা ফিরলাম। ফেরার পথে কক্সবাজার শহরের মন্দিরটির দুর্লভ বৌদ্ধ মূর্তিগুলো দেখলাম।যা পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করে। কক্সবাজারের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো স্বাস্থ্যকর স্থান হিসেবে এর খ্যাতি বিদ্যমান। খাওয়া দাওয়া শেষ করে বড় দাদা বলেন শ্যামল ভ্রমণ গাইডটি নিয়ে এসো। আমি সুবোধ বালকের মতো গাইডটি বড় দাদাকে দিলাম। আগামীকাল তাহলে আমাদের হিমছড়ি যাবার প্রোগ্রাম হলো। দীর্ঘক্ষণ আলাপের পর আমরা সবাই শুয়ে পড়লাম। ভোরে উঠে নাস্তা করে আমরা আঠারো কিঃমিঃ দূরে হিমছড়ি রওনা করলাম। ভঙ্গুর পাহাড় আর ঝর্ণা হিমছড়ির আকর্ষণ। হিমছড়ি যাবারকালে সবুজঘেরা পাহাড় আর সমুদ্রের নীল জলরাশি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকন করলাম। বৈচিত্র্যময় এসব দৃশ্য দেখে মানুষ স্রষ্টা ও সৃষ্টির বিচার করতে পারা যায়।বিশাল বিশ্বের ব্যাপক কর্মকান্ডের সঙ্গে কতটুকুই বা আমরা পরিচিত। প্রত্যক্ষ জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য যেতে হবে ভ্রমণে। অজানাকে জানার জন্য ঘুরতে হবে,তবেই মানুষ হয়ে উঠবে সমৃদ্ধ। মানুষের জীবন বিরাট এক শিক্ষাঙ্গন। যুগ যুগ ধরে মানুষ এই বিশ্বের মহাপাঠশালা থেকে অর্জন করেছে অন্বেষা ও অভিজ্ঞতাতলব্ধ মহাজ্ঞান। এর উপর ভিত্তি করে বিকশিত হচ্ছে আজ মানব সভ্যতা সংস্কৃতি।আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা যে শিক্ষা লাভ করে,তা প্রধানত পুঁথিগত ও সংকীর্ণ। বাস্তবের সঙ্গে অর্জিত এ শিক্ষা জ্ঞানের কোন প্রত্যক্ষ সুযোগ নেই। এ ধরনের শিক্ষা অপূর্ণতার আড়ালেই থেকে যায়। পাশ্চাত্য দেশের ছাত্র ছাত্রীদেরকে শিক্ষার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক ভাবে দেশ ভ্রমণ করানো হয়ে থাকে। কষ্টি পাথর যেমন স্বর্ণকে খাঁটি স্বর্ণে পরিণত করে তেমনি তারা বিশ্বাস করে যে,দেশভ্রমণ না করলে শিক্ষার সত্যতাকে কষ্টি পাথরে যাচাই করা যায় না এবং শিক্ষা অসমাপ্ত থেকে যায়। ভ্রমণকাহিনী মানুষকে গৃহকোন থেকে বাহিরের বিশাল জগতের সান্নিধ্যে নিয়ে যায়। মানুষের হৃদয়কে বিশ্ব মানুষের হৃদয়ের কাছাকাছি করে। তাই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন: " থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে

দেখব এবার জগ‌ৎটাকে

কেমন করে ঘুরছে মানুষ

যুগান্তরের ঘুর্ণিপাকে।''



বিদ্রোহী কবির কবিতা আবৃত করে আজ আমরা ঘুরছি ও দেখছি হিমছড়ির আকর্শন পিকনিক স্পট। ক্রিসমাস ট্রি ছাড়াও রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র ,আমরা বাঙ্গালীরা নিস্তরঙ্গ জীবন যাপনে অভ্যসস্ত। আমাদের জীবন আলস্যভরা গণ্ডিতে বাঁধা তাই আমরা ঘরকুনো জীবন যাপনে অভ্যস্ত।বাঙ্গালী উন্নতি চাইতে হলে ঘাত প্রতিঘাতের সাথে লড়াই করে কর্মচাঞ্চল্য বৃহত্তর জীবনের গড়তে হবে। তবেই আসবে জীবনের সাফল্য। সমুদ্রের কিনারায় গিয়ে আমরা ইতস্তত হয়ে পড়লাম। কিনার ঘেসে পড়ে আছে ব্লাক এন্ড হোয়াইট, হুসকী, ভোটকার বোতল ও বিয়ার হেনিক্যান ,বিয়ার টাইগার ও কেরুর টিনজাত ক্যান। লোকের কাছে জানতে পাড়লাম বিদেশীরা ভ্রমণে এসে সমুদ্রের পাড়ে এসব মদ জাত জিনিষ খেয়ে পানিতে ফেলে দেয়। সারাটা দিনই কেটে গেল। খুব আনন্দ করলাম। শত শত পরিবার এসেছেন ঘুরতে। সবাই বেশ মজা করছেন। মাধবী আমাকে বললো গত রাতে আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি। আমি বললাম বলতো দেখি কী স্বপ্ন দেখেছো। সে বললো আমরা সবাই ইকোপার্কের গহীন জঙ্গল দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি মা,বাবা,ভাই,বোন সবাই সঙ্গে আছেন কেবল তোমাকে দেখলাম না। আমরা যখন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে এ মাথা থেকে ওই মাথায় যাচ্ছি তখন একটা বড় গাছ থেকে কেমন যেন একটা শব্দ হলো। ওই সময় আমার শরীরে কেমন যেন গরম বাতাশ অনুভব করলাম। তখনই আমি অজ্ঞান হয়ে সেখানে পড়ে যাই। বাবা বড় দাদা আমাকে ধরে নিয়ে জঙ্গলের সম্মুখের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। অবশেষে জঙ্গলের শেষে একটি কুঁড়ে ঘর দেখতে পান এবং সবাই আমাকে সেই কুঁড়েঘরে তুললেন। বাড়ি থেকে একজন লোক বের হয়ে বাবাকে বললেন কী হয়েছে আপনাদের, বাবা বললেন আমরা জঙ্গল পাড় হয়ে এপাড় আসছিলাম এমন সময় আমার মেয়েটি অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। বৃদ্ধ বললেন আপনারা কী ওই শিমুল গাছের নিচ দিয়ে এসেছিলেন। বড় দাদা বললেন হাঁ আমরা ওই শিমুল গাছের নিচ দিয়ে এসেছি। বৃদ্ধ বললেন দেখুন আমরা তো কয়েক যুগ ধরে এখানে বসবাস করছি। আমরা সাধারণত ওই শিমুল গাছের নিচে যাবার প্রয়োজন মনে করি না। আমাদের পূর্ব পুরুষদের মুখে শুনেছি ওই শিমুল গাছে একটা জ্বীন বাস করে। সে মানুষকে আছর করে। এটা ঠিক হয়ে যাবে, তবে জঙ্গলের ওই পাড়ে একটা মন্দির আছে ওই মন্দিরে একজন সাধু থাকেন ওনার কাছে যেতে হবে। বাবা বললেন ভাই দয়া করে আমাদের সাথে একটু যাবেন। উনি বললেন হাঁ অবশ্যই যাব। আপনি বিদেশি মানুষ আমাদের এখানে এসে বিপদে পড়েছেন কেন যাবনা। অবশ্যই যাব। এই কথা বলে উনি আমাদের সাথে রওনা করলেন। বড় দাদা বাবা ও বড়দি আমাকে পান্জা করে ধরে নিয়ে গেলেন। আমরা মন্দিরে পৌঁছলাম। সাধু বাবা বড় দাদার মুখ থেকে সব কিছু শুনে বললেন ঠিক আছে এখনি ঠিক হয়ে যাবে। সাধু আবাব মন্ত্র পাঠ করতেই আমি নাকি চিত্কার করে বলছিলাম, হাঁ যেতে পারি তবে একটা শর্ত আছে,সাধু বাবা বললেন বল তোর শর্ত কী। জ্বীন বললো এ মেয়েকে আমি ভালবাসি। এর বিয়ে আমার ইচ্ছায় হবে। বাবা বললেন, ঠিক আছে তোমার ইচ্ছায় তার বিয়ে হবে তবে মানুষ জাতির মধ্যে উচ্চ বংশ ছাড়া আমরা বিয়ে দিব না। জ্বীন বললো ঠিক আছে তাই হবে। শর্ত যেন মনে থাকে তা না হলে ওকে আমি পাগল করে দুনিয়াতে রেখে দিব। বাবা বললেন ঠিক আছে বাবা যদি উচ্চ বংশের শিক্ষিত ছেলে পেলে তোমার কথায় আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিব। এ সময় আমার শরীর কেন যেন হালকা হয়ে গেল। আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। তার পর থেকে আর ঘুমাতে পারি নেই। এর পর থেকে আমার কেন যেন ভয় লাগছে । নানা এ ব্যপার গুলো নিয়ে কোন চিন্তা করবে না। স্বপ্ন সব সময় স্বপ্ন হয়। এর কোন যুক্তি নেই। তবে হা সুফি সাধকদের কিছু স্বপ্ন আছে যে গুলোর অর্থ আছে যা হুব হু ঠিক হয়। আমরা সন্ধ্যার দিকে সমুদ্রের পাড় থেকে রওনা করে কক্সবাজার নেমে পড়লাম। রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে চলে এলাম। (অসমাপ্ত)

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

লেখকের আগের লেখাঃ