|
পান্থ পৌর্বাপর্য (অষ্টম পর্ব)
এ,কে,এম,নূরুন্নবী
আমি নিজেকেই তো তোমাকে সোপরদ্দ করেছি,আর
কি বা আমার হাতে রেখেছি বলো।মন্দিরে পৌঁছে মাধবী বললো, মন্দিরের পিছে
চলো। তোমার সাথে কথা আছে। মাধবী তার কোমর থেকে সিঁদুরের কৌটা বের করে
আমার হাতে দিয়ে বললো তুমি স্রষ্টার নাম নিয়ে আমার মাথায় সিঁদুরটি পড়ে
দাও। আমি আর নিজেকে সমাচ্ছন্ন রাখতে পারছি না। আমি মুগ্ধ হয়ে শুধু তার
মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। বললাম মাধবী আমার মনে হচ্ছে তোমার ভুল হয়ে
যাচ্ছে। আবেগের বসবর্তী হয়ে সব কিছু তাড়িঘড়ি করা যায় না। এতে সমস্ত
জীবন কষ্ট পেতে হয়। তাছাড়া তোমার মাথায় যখন তোমার স্বজনেরা সিঁদুর দেখবে
তখন আমাকে কী ভাববে তারা বলো। সবার কাছে আমি ছোট হয়ে যাব। আমি তোমাকে
ভালবাসি । আমার ভালবাসার মধ্যে কোন খাদ নেই। হৃদয়ের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে
আমি তোমাকে ভালবাসি। পৃথিবীর মানুষের কোন শক্তি নেই আমাদের ভালবাসার
মধ্যে চিড় ধরাতে পারে। স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে দৃঢ় মনোবল নিয়ে
সমস্ত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করার মানসিক দৃঢ়তা ও আত্মশক্তি আমার মধ্যে
জাগ্রত শুধু তোমাকে পাবার জন্য। তোমার আমার সাফল্যের গৌরবের জয়মাল্য
আমাদের ভাগ্যে আসবে। আমি আমার নিজের ক্ষমতা ও প্রতিভার যথাযথ বিকাশ
ঘটিয়ে তোমার গলায় জয়মাল্য তুলে দিব। যেন রাখ কোন অবস্থাতেই তুমি ভেঙ্গে
পড়বে না। জীবন পথে দুঃখ দ্বৈধ আসতে পারে,বজ্রপাতের ন্যায় জীবনে আকস্মিক
মহাসংকট আসতে পারে ধৈর্যহারা হলে চলবে না। বরং সাহসে বুক বেঁধে সকল
প্রতিকূলতাকে প্রতিরোধ করে জীবন সংগ্রামে অগ্রসর হতে হবে। সামাজিক সকল
বন্ধন অগ্রাহ্য করে দুর্বার পথিকের মত জীবন বাজি রেখে আমরা এগিয়ে যাব।
জরাজীর্ণ লাঞ্ছিত জীবনের পরিবর্তে সুন্দর সম্ভাবনাময় নতুন জীবন আমরা
রচনা করব ।আমি হয়তো তোমাকে ঐশ্বর্যময় সম্মান বহুল সংসার দিতে পারব না।
তবে মহত কপটহীন উদার হৃদয়ের প্রীতির ডোরে আবদ্ধ রেখে শ্রেষ্ঠ উপাদান
দিয়ে তোমাকে আমার হৃদয়ের আসনে বসায়ে রাখতে পারব। তবে তুমি যখন মাথায়
সিঁদুর দিতেই বললে তখন তোমাকে অমর্যদা করব না। তোমার মাথায় সিঁদুর না
দিয়ে তোমার কপালে যে টিপ আছে তাতে আমার শরীরের এক ফোঁটা রক্ত দিয়ে
তোমাকে স্বীকৃতি দিতে চাই। বলো এতে তোমার সম্মতি আছে কী না। এতে লোক
লজ্জার হাত থেকে তুমি ও আমি দুজনেই রক্ষা পাব। হাঁ ঠিক আছে তবে রক্ত
দিয়ে নয় আমার কপালের টিপে সিঁদুর পড়িয়ে আমাকে স্বীকৃতি দাও। এতে আমি
খুশি থাকবো। আমি জানবো তুমি আমাকে স্বীকৃতি দিয়েছো। আমি আকাশ বাতাস কে
স্বাক্ষী রেখে তোমাকে স্বীকৃতি স্বরুপ তোমার কপালে সিঁদুরের আলপণা এঁকে
দিলাম।
এখন খুশিতো।
হাঁ খুশি।
আর কয়টা দিন ধৈর্য ধর সামনে আমার বিসিএস পরীক্ষা হয়ে গেলে আমি হয়তো
একটা ভাল চাকুরী পেয়ে যাব এ বিশ্বাস আমার নিজের প্রতি আছে। স্রষ্টা
ভাগ্যে যা রেখেছেন তাই হবে। ধৈর্যচ্যুত হবে না।আমি সুদ ঘুষকে সারা জীবন
ঘৃণা করে এসেছি,তাই শিক্ষকতাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। স্রষ্টা একটা
উপযোজন করে দিবেন।এ বিশ্বাস তুমি রাখ। তবে চলো ঠাকুর বাবার সাথে দেখা
করি। উনাকে তোমার আমার সম্পর্কের কথাটা বলে একটু আলাপ করে নেই। চলো
উনার কাছে উনি কী বলেন উনার কাছে জেনে নেই।। উনি বৃদ্ধ মানুষ আমাদের কে
একটা উপদেশ ও দিতে পারেন। চলো। দুজনেই উনার কাছে গিয়ে বললাম ঠাকুর বাবা
আমরা দুজনে দুজনকে ভালবাসি। উনি আমাদের ভালবাসার কথা শুনে বললেন, খুব
ভাল কথা তবে তোমরা এক কাজ কর ওই যে বাড়িটা দেখতে পাচ্ছো ওই বাড়িতে একজন
ভাল জ্যোতিষী থাকেন। তার নাম বিমল বোস। খুব ভাল মানুষ। চট্রগ্রাম ছাড়াও
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকেরা আসেন। সবাই তো উনাকে ভাল বলেন। সকলেই
তার কাছ থেকে উপকার পেয়ে থাকেন। ওখানে গিয়ে আমার কথা বলো। ঠাকুর বাবা
আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। তাহলে উনি ভাল করে তোমাদের হাত দুটি দেখে দিবেন।
তারপর তোমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হবে। অবশ্যই ভাল একটা ফল
পাবে। ঠিক আছে বাবা আমরা এখনি যাচ্ছি। আমরা তখনই চলে গেলাম। উনাকে
পেলাম। বললাম ঠাকুর বাবা আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। উনি বললেন ঠিক আছে আপনারা
বসুন। আমি এখনি আসছি বলে উনি বাড়ির ভেতরে গেলেন। দুই মিনিট পর দুটি
মিষ্টি থালায় করে নিয়ে ফিরে এলেন। দয়া করে খেয়ে নিন। আমরা বললাম আমরা
দুজনে হাত দেখাতে চাই। ঠিক আছে খেয়ে নিন, তারপর হাত দেখছি। আমাদের
মিষ্টি খাওয়া হলে তিনি বললেন,এখন হাতটি এগিয়ে দিন।আমি মাধবীকে বললাম
তোমারটা আগে দেখাও সে বললো না তোমারটা আগে দেখাও। আমি যথারীতি আমার
হাতটি সম্মুখে এগিয়ে দিলাম। উনি বললেন, এজাতের পুরুষেরা স্নেহ, প্রীতি
প্রেম ভালবাসার ব্যাপারে গভীর হৃদয়ের দৃঢ়তা নির্দেশ করে। এরা সরল মনের
অধিকারী হয়। এরা কাউকে ভালবাসলে তাকেই জীবন সঙ্গি করে নেয়। এজাতের
পুরুষের নিজের মনকে সংযত করার ক্ষমতা, কর্মে সফলতা বুদ্ধির তীক্ষ্নতা
নির্দেশ করে। ঔজ্জ্বল্য, নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা যশ খ্যাতি
নির্দেশ করে। ফলে জীবনে এরা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। সরকারি প্রথম শ্রেণির
চাকুরী পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়। সলোমন বন্ধনী রেখাটি তর্জনীর গোড়াকে
বেষ্টন করে আছে বলে এরা বুদ্ধিমান, বিচারশীল এবং সহজেই নানা বিচার
জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এদের বিচক্ষনতা দেখে যে কোন মানুষ বিস্মিত হয়।
জ্যোতিষী দাদা আমি জানতে চাই, আমি যে মেয়েটিকে ভালবাসি তাকে পাব কি না
। হাঁ আপনি অভিষ্ট লক্ষ্যে অবশ্যই পৌঁছবেন। তবে পারিবারিক কিছু ঝামেলায়
জোড়ে যেতে পারেন। ধিরে ধিরে তা ঠিক হয়ে যাবে । আপনার জয় হবে। পারিবারিক
ঝামেলা কেমন। স্বগোত্রীয় মেয়ের সাথে বিবাহ দেখা যায় না। এ কারণে
সামান্য কিছু ঝামেলা হতে পারে। উচ্চ শিক্ষিত লোকদের সাথে আপনার চলাফেরা
হবে। এরা খুব ছিমছাম ও মার্জিত হয়। তারা যুক্তিবাদী, বাস্তব জ্ঞান
সম্পন্ন হয়ে থাকে। এরা খুব ন্বাধীন চেতা ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হয়।
জীবনের প্রতিটিক্ষণ হাসি, তামাসা ও তাড়াহুড়োর মাঝ দিয়ে কাটাতে চায় তারা।
এরা সত্যবাদী ও ধর্ম চর্চা করে। এরা আরাম পছন্দ করে। এদের মেজাজ প্রায়শঃ
শান্ত হয়ে থাকে। প্রবঞ্চনাকে এরা ঘৃণা করে। সততাও সরলতা এদের ধর্ম। যাকে
ভাল বাসে বা শ্রদ্ধা করে তা প্রাণ দিয়ে করে। এদের মতামত দৃঢ় এবং সহজে
তা পাল্টানো যায় না। আমি মাধবীকে তার হাতটা দেখাতে বললাম।মাধবী তার
হাতটি এগিয়ে দেয়।
জ্যোতিষী বললেন তোমার নাম কি?
বললো মাধাবী।
তোমার হাতের মণিবদ্ধ সমতল, সুদৃশ্য কোন নারীর করতল ও হাত যদি একই সমতলে
হয়,সেই নারী প্রচুর ঐশ্বর্যশালিনী এবং সৌভাগ্যবতী হয়। কন্যারাশির
নারীগণ অপরূপ রূপসী হয়ে থাকে। তাদের কণ্ঠস্বর অত্যন্ত মধুর। এদের থাকে
ঘনকালো লম্বা চুল টানাটানা হরিণ কালো চোখ। স্বচ্ছ ললাট তার রূপসুষমাকে
আরো অতুলনীয় করে তোলে। অতিথি সেবায় তারা খুব আগ্রহশীল। তারা গুরু জনকে
ভক্তি শ্রদ্ধা করে। জ্বিনপরীর দৃষ্টিতে পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। সর্বদা
এরা স্বামীর সেবা যত্নে নিয়োজিত থাকে। এরা পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ও পাক
পবিত্রতার দিকে তাদের খুব লক্ষ্য। স্বামীর সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণ
উত্সর্গ করে দিতে কুণ্ঠিত থাকে। তারা সকল সময় নিজ গৃহকে সুসজ্জিত করে
রাখতে ভালবাসে। সপ্তাহের সোমবার ও বৃহস্পতি বার তাদের জন্য শুভ। তারা
স্বামীর অত্যন্ত প্রিয় পাত্রী হয়ে থাকে। আত্মীয় স্বজন এবং পাড়া
প্রতিবেশীগণও তাকে খুব ভালবাসে। জ্যোতিষী দাদার কাছ থেকে এসব কথা শুনার
পর আমরা বললাম আমাদের কয়েক জন আত্মিয় স্বজন আছেন তাদেরকে আজ কিম্বা
আগামীকাল নিয়ে আসবো। জ্যোতিষী দাদা বললেন ঠিক আছে। আমরা জ্যোতিষী দাদাকে
বললাম দাদা কত দিব।উনি বললেন না কিছুই দিতে হবে না। আমরা বললাম কেন? উনি
বললেন, যিনি আপনাদেরকে পাঠিয়েছেন উনি আমার ধর্মগুরু, আধ্যাত্মিক বাবা।
আমি ছিলাম একজন বেকার লোক। আমাদের সংসারে ভীষণ অভাব অনটন।একদিন খেতে
পেলে দুদিন অনাহারে থাকি। এভাবে কাটে বেশ কিছু দিন। অসয্য জ্বালা
যন্ত্রণায় একদিন ক্ষুধার যন্ত্রণা সয্য করতে না পেরে সাধু বাবার পায়ে
পড়ে কান্না কাটি করি। উনি বললেন কী হয়েছে উঠে বসো। আমাকে উনি টেনে
তুললেন, বললাম বাবা দুদিন থেকে অনাহারে কাটে। জল ছাড়া কিছুই জোটেনি।
সাধু বাবা বললেন যা মন্দিরের ভিতরে যা। উনার নির্দেশে আমি ভিতরে গিয়ে
বসে পড়লাম।উনি বললেন কিছু খাবার আছে খেয়েনে।আমি বললাম বাবা বাড়িতে মা
বাবা স্ত্রী পুত্র সবাই অনাহারে। ঠিক আছে বেঁধেনে। উনাদের জন্য নিয়ে
বাড়ি যা। উনি আমার গায়ে কয়েক বার মন্ত্র পাঠ করলেন। তারপর উনি বললেন,
আজ থেকে তোর কাছে আমি লোক পাঠাবো। তুই ওদের হাত দেখবি। আমি বললাম বাবা
আমি তো হাত দেখতে জানিনা। উনি বললেন তোকে দেখতে হবে না। যা দেখার সেই
দেখবে ।যা বলার সেই বলবে। তুই শুধু হাতটা টেনে সামনে নিবি। আর কিছুই
তোকে করতে হবে না। এরপর থেকে আজ পর্যন্ত বারো বছর কেটে যাচ্ছে আমি শুধু
তাই করি। হাজার হাজার লোক এ পর্যন্ত এখানে এসেছেন। যাকে যা বলা হয়েছে
প্রত্যেকে তার সুফল পেয়েছেন। কেউ কোন দিন কোন অভিযোগ করেন নি। এজন্য
বাবা কোন লোক পাঠালে আমি কোন ফি গ্রহণ করিনা ।এরপর থেকে আমার জীবনের
উন্নতি শুরু। এখন আমি অনেককেই টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করি। আমরা
জ্যোতিষীর সাথে কথা বলে আবার সাধু বাবার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি উনি
ধ্যানস্থ হয়ে বসে আছেন। আমরা তার পাশে গিয়ে চুপ করে বসে পড়লাম।
কিছুক্ষণ পরে উনার ধ্যান ভাঙ্গলে আমাদেরকে দেখে বললেন তোমরা এসেছো।
আমরা বললাম হাঁ বাবা আমরা এসেছি। কি বললেন উনি। ওনার কথা শুনে ভাল
লাগলো বাবা। আমরা দুজন দুজনকে ভালবাসি। ওকে না পেলে আমার জীবন বৃথা।
যদি তুমি সত্যি সত্যি তাকে ভালবেসে থাক তাহলে স্রষ্টা তোমাকে একটা পথ
করে দিবেন। তার উপর বিশ্বাস রাখ। তবে একটা কথা স্মরণ রাখতে হবে, তা
হলো চরিত্র সাধনার ধন। সাধনার দ্বারা তা অর্জন করতে হয়। লোভ লালসা
কুপ্রলোভন মানুষকে পাপের দিকে টানে। দৃঢ়চিত্তে পাপকে পরিহার করতে
হবে।পৃথিবীতে যারা মহামানব কীর্তিমান পুরুষ বলে প্রাত:স্মরণীয় আছেন
তারা সকলেই সচ্চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। কোন প্রলোভনই যেন তোমাদেরকে
ন্যায় ও সত্যের পথ থেকে বিচ্যুতি করতে না পারে। আমি বিশ্বাস করি তা হলে
তোমরা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলে আদর্শের লক্ষ্যস্থ্যলে পোঁছতে
পারবে। তোমরা যখন আমার এপর্যন্ত এসে পৌঁছে গেছো তখন তার ইশারা ছাড়া আসা
সম্ভব হয়নি। যাও বাড়ি ফিরে যাও। তিনিই দেখবেন।আমি তোমাদেরকে আশীর্বাদ
করি তোমাদে প্রীতি বন্ধন আরো দৃঢ় হয়ে হৃদয় হোক আরো প্রসারিত।
ক্ষুদ্রতা গ্লানি তুচ্ছতা দূর করে গড়ে উঠুক তোমাদের আত্মিক মিলন।
তিনিই তোমাদের সহায়ক। (আসমাপ্ত)।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|