প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

 

পান্থ পৌর্বাপর্য (তৃতীয় পর্ব)

 

 

এ,কে,এম,নূরুন্নবী

 

আমরা চট্রগ্রাম স্টেশনে নেমে পড়লাম। বসে আছি প্লাট ফরমে। কতটা বেলা হলো বোঝার উপায় নেই। কারণ সূর্যের মোটেই দেখা নেই। যে দিকে তাকাই ধোঁয়াটে আবছা অন্ধকার। ইতিমধ্যেই মানুষজন স্টেশন ছাড়তে শুরু করেছেন। আমরাও উঠে দাঁড়ালাম । ঠিক আছে এখন বাহিরে যাওয়া যাবে। আমরা সোজা একটা হোটেলে গিয়ে উঠলাম। বেলা হলে সীতাকুণ্ডু রওনা করব। দু ঘন্টা পরে আমরা একটা বাসে রওনা দিয়ে সীতাকুণ্ডু বাজারে নেমে পড়লাম। হেঁটে হেঁটে সীতাকুণ্ডু কলেজ পার হয়ে সামনে তাকাতেই দেখি দুধারে ধর্মীয় গুরুদের স্মৃতি বিজড়িত নানা গাছ সৌধ, ঘর,স্বামী বিবেকানন্দ যে গাছটির নিচে বসে সভা করেছিলেন,সেই গাছটি অত্যন্ত যত্নের সাথে রক্ষিত। গাছের গোড়ায় খুব সুন্দর করে বেদি তৈরি করা হয়েছে। এখানে সকলকে বসতে বলে দোকান থেকে দৌড়ঝাপে নাস্তা এনে আমরা সেখানে বসে সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। এতে সকলের দৃষ্টি আমার প্রতি আকৃষ্ট হলো। শুধু তাই না আমাকে টিম লিডার করা হল। আমাকে দায়িত্ব দেয়া হল তাদের ছোট মেয়েটি দেখতে সুন্দর তাই বাহিরের লোকজনের হাত থেকে সামলে রাখতে হবে। মনে মনে ভাবলাম ওর কারণেরই তো আমি আপনাদের সাথে সন্বুদ্ধ হয়েছি। তাকে ঘিরেই আমার যাত্রা আপনাদের সাথে। তা না হলে আমার কী দায় ঠেকেছে আপনাদের পিছু পিছু চলা। স্থিরচিত্তে বললাম ঠিক আছে চিন্তা করবেন না। আমি বিষয়টি দেখব।
নাস্তার পর আমাদের যাত্রা শুরু হলো। হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের গোড়ায় এসে পৌঁছে গেলাম। সিঁড়ির ডান পাশে ছোট একটি ঘর। লিখা আছে সীতার বিশ্রামাগার। পাশে একটি ঝরনা ও একটি কূপ। কূপের গায়ে লেখা সীতার স্নানের কুণ্ড। জনশ্রুতি আছে এ থেকে স্থানটির নাম সীতাকুণ্ড হয়েছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে একটি বাড়ি। সেখানে লোক আছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম এটা ছিল উপাসনালয়। সিঁড়ি গুলি ভয়াতুর। সিঁড়ির উপর থেকে নিচে তাকালে মাথা চক্কর দেয়। আরো উপরে উঠে একটি স্বচ্ছ ঝরনা পেলাম। স্বচ্ছ পানিতে হাত মুখ ধুয়ে পানি পান করলাম। পাহাড়ের চুড়ায় চন্দ্রনাথ মন্দির। হিন্দুদের তীর্থ স্থান। পাহাড়টি এতটাই উঁচু যে ঐ পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে তাকালে সে পাহাড় গুলিকে ছোট ছোট টিলার মত দেখা যায়। পাহাড় থেকে সমুদ্রের দূরত্ব বারো কিলোমিটার। সব মিলিয়ে অপার্থিব এক সৌন্দর্যে নির্বাক বিস্ময় অভিভূত হলাম।
চন্দ্রনাথ মন্দিরে সবাই তো প্রার্থনায় মশগুল হলেন, আমি ভাবলাম ওখানে গেলে বিপদে পড়ব। কারণ হিন্দু ধর্মীয় রীতিনীতি আমার কিছুই জানা নেই। বা কী ভাবে প্রার্থনা করতে হয় তাও জানা নেই। তাই মাধবীর সাথে মনোমুগ্ধকর কিছু গল্প শুরু করলাম। সে তো আমার গল্প ভীষণ পছন্দ করলো। একটি শেষ করলে আর একটি বলেন দাদা । ভাল লাগছে আপনার গল্প গুলো।
বললাম হিটলারের কথা। প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ঘটনা। ফ্রান্সের রাজ পরিবারকে উচ্ছেদের ঘটনা ও রাজা রাণীকে ফাঁসিদিবার কারণ। এভাবে প্রায় কিছু দূরেই দাড়িয়ে প্রায় আমাদের সময় কাটে ঘন্টা তিনেকের মত। এর মধ্যেই বৃদ্ধদের মন্দিরের আচার অনুষ্ঠান শেষ হলে ধীরে ধীরে আমরাও তাদের দিকে অগ্রসর হতে থাকি। বৃদ্ধ বললেন কই তোমরা তো পূজা আর্চনা কিছুই করলে না। ।
বললাম আমার এগুলি ভাল লাগে না।
এতো বৃদ্ধদের কাজ।
বয়স বাড়লে তখন কোন আশ্রমেই আশ্রয় নিয়ে নিব। আমৃত্যু পর্যন্ত ধর্মীয় কাজে জীবনটাকে শেষ করে দিব। বৃদ্ধ আমার কথায় খুশি হলেন । বললেন খুব ভাল চিন্তা। আসলে তোমার যা বয়স তাতে এখন থেকে ধর্মকর্ম করলে পরে সব কিছু ঠিক রাখা যায় না। যতক্ষণ কাছে ছিলাম মাধবীকে সুন্দর সুন্দর গল্প উপহার দেয়া ছিল আমার কাজ। উদ্দেশ্য ছিল তার মনকে আমার প্রতি আকৃষ্ট করা। হলোও তাই। সে তো আর আমার পিছু ছাড়ে না। আমাকে এক মূহূর্তের জন্যেও ছাড়তে চাইছে না।সূর্যাস্তের ক্ষণে মায়বী সন্ধ্যা ধীর পায়ে নেমে আসে পৃথিবীর বুকে। চার পাশের রং পাল্টে যায়।সারাদিন কেটে যায় কর্মমুখরতায়।প্রকৃতিতে, শুরু হয় আলোছায়ার এক অপূর্ব খেলা। পাহাড়ের চুড়ায় বিদায়ী সূর্যের রক্তিম আভা। এ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে আমরা ধীরে ধীরে পাহাড় থেকে নেমে এলাম নিচে।পথে পথে জ্বলে উঠে সড়কবাতি। দোকানপাট ঝলমল করে উজ্জ্বল আলোয়। আকাশে মিটিমিটি করে জ্বলে সন্ধ্যা তারা।মনে হয় সন্ধ্যা তারা বিদায় জানাতে আসে মায়াবী সন্ধ্যাকে।আমরা ধীরে ধীরে চলে আসি বাস ষ্ট্যান্ডে। বাসে উঠে পড়ি। ফেরার পথে খুব একটা হৈচৈ হলো না। কিছুটা শান্তি কিছুটা আনন্দঘন পরিবেশ ফেলে আসার কষ্টে সবাই একটু চুপচাপ। অল্প সময়ের মধ্যেই পথ টুকু ফুরিয়ে গেল। বাস ষ্ট্যান্ডে নেমে রাতের খাবারটা সেরে আমরা যে হোটেলটির হল রুম ভাড়া করে ছিলাম সেখানে সবাই উঠে পড়লাম। এটি বড় হল রুম হওয়ায় মেয়েদের জন্য ব্যবস্থা করলাম অন্য পাশে,আর পুরুষদের থাকার ব্যবস্থা করা হলো আর একপাশে। খরচের দিক দিয়ে অনেক কম খরচ হলো।
এতে বৃদ্ধ আমার উপর বেশ খুশি হলেন। ঘুমাতে দেরি হতো আমাদের অনেক রাত পর্যন্ত পর্যটনের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হত। আগামী কাল কোথায় যাব ইত্যাদি। মাধবী আমার কাছে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে্ মাঝে মাঝে সে উঠে এসে আমার বিছানায় এসে বসে পড়ে। বলে দাদা রাখতো এখন ঐসব কথা আগামী কালকের সিদ্ধান্তটা আগামী কালকেই হবে।রাতে সবাই নিশ্চিন্তে নিদ্রায় গেলাম। পরের দিন যথাযথ ভাবে সবাই ঘুম থেকে উঠে পড়লো। বৌদি বললেন আজ দেরি হয়ে গেল চলো বাস ধরে আমরা চলে যাই ওখানে গিয়ে নাস্তা করা যাবে। আমরা সেখানে গিয়ে নাস্তার ব্যবস্থা করলাম। বড় বাজার পূজা মন্ডবে গিয়ে সবাই প্রার্থনায় রত হলেন। আমিও মাধবী দূরে দাঁড়িয়ে আলাপ করছিলাম। সে আমার কথা গুলো বিস্মিত হয়ে শুনছিল। পরে সে আমাকে বললো অনেক দিন থেকেই আমি একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই না দাদা।
বল তোমার প্রশ্নটা কী?
সে বলল,
রবি ঠাকুরের প্রেমকাব্য পড়ে আত্মহারা হয়ে আরও পড়তে ইচ্ছা জাগে।
আসলে কী কবিরা প্রেমিক হয়ে থাকেন।
না না তা হবে কেন?
তারা স্পর্শ কাতর জিনিস গুলিকে নিজের মত করে লিখেন।
তাদের প্রেমিকা থাকতে পারে, তবে সেটাতো একজন। কুড়িটা কবিতা লিখলে তো আর কুড়িটা প্রেমিকা থাকে না। ও বুঝেছি। দাদা আপনি কী কবিতা পড়েন। বললাম হাঁ পড়ি। শুধু পড়ি না নিজেও কবিতা লিখি। ও তাই? খুব ভাল তো। আপনার লিখা একটা কবিতা শুনান না দাদা। বললাম,

অলি গলি আশ্রম মঠ খুঁজেছি অগণন কুঞ্জবন
সর্বত্র তন্নতন্ন করে খুঁজে পেলাম না দরশন।
কতদিন একত্রে কাটিয়েছি অভয় আলাপে
মনের মাঝে দপ দপ করে ধ্বনি চন্দ্রাভাপে।
যতই ভাবি দেখিতে পাই সামনে অন্ধকার
হৃদয়ে দোলা দেয় আচ্ছন্ন যত সব সংহার।
কোথায় গেল আজ আমার প্রাণের আকর্ষণ
যাকে পাবার জন্যে জীবনে করেছি সুখান্বেষণ ।
ও দাদা দারুণ লিখেছেন। খুব ভাল লাগল। এমন আকুতির কবিতা প্রাণে পরশ লাগে মনে দোলা দেয়। আমি হলে তো তারে জড়িয়ে নিতাম জীবনে। খুব ভাল লাগল আপনার কবিতা। দাদা বলেন না কাকে নিয়ে লিখেছেন এ কবিতাটি। নিশ্চয়ই কাউকে না কাউকে নিয়ে লিখেছেন। বলেন না দাদা। আপনার সে পছন্দের মেয়েটি কে?। বলব না কেন অবশ্যই বলব। না এখনি বলতে হবে। নাছোড় হয়ে ধরে ছিল । বলতেই হবে তাকে। অবশেষে বললাম যদি বলি তোমাকে নিয়ে লিখা আমার এ কবিতা। তাহলে কী বিশ্বাস করবে। হা করবো না কেন? হতেই পারে। মাধবী নিশ্চুপ হয়ে গেল। মাধবী কেন যেন নিশ্চুপ উদাসিনী হয়ে কী যেন ভাবতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরে সে নিশ্চচুপে মন্দিরের দিকে এক পা দু পা করে চলে গেল। সকলেই মন্দির হতে বেড় হলেন। আমিও ঐ দিকেই চলে গেলাম। আমার কাছে মনে হচ্ছিল মাধবী যেন আমার উপরে রুষ্ট হয়ে আমার কথার ক্লেশ সহ্য করছিল ঘৃণাগ্রে। মনে মনে ভাবলাম, বলে কী ভুল করলাম? সমস্ত
দিনটাই দুশ্চিন্তায় কেটে যায়।এর পর আমরা দুপুরে হালকা নাস্তা করে বিরুপাক্ষ মন্দির, অন্নপূর্ণা মন্দির ঘুরে বাস ষ্ট্যান্ডে চলে এলাম। সেখান থেকে সোজা চট্রগ্রাম। রাতে আলাপ হচ্ছিল কোথায় আগামীকাল যাবার জন্য আমাদের প্রোগ্রাম হবে। বৌদি মাধবীকে ডাকলেন,তার শরীর খারাপ বলে জানায় তাই আলোচনায় উপস্থিত থাকতে পারবে না। সবাই সবার মত করে কথা বললেন। অবশেষে ভ্রমণ গাইড দেখে না দেখা জায়গাগুলি দেখার সিদ্ধান্ত হলো।
মাধবী যে আমার উপরে অভিমান করেছে সে কথাটি বুঝতে আমার আর বাকি রইল না। নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল। বার বার মনে পড়ছে এটা আমি কী করলাম। রাত কেটে গেল ঘুম হলো না। বারবার মনে পড়ে । আবার বুঝি ভুল করলাম । আগামীকাল মাধবী আমার সাথে হয়তো কথাই বলবে না। কাক ডাকা ভোর হলে একে একে সবাই উঠে পড়লেন। আমি অধির চিন্তায় ভাবছি । কি ভাবে মাধবীর রাগ ভাঙ্গানো যায়। ইতিমধ্যে মাধবী আমাকে ডাক দিয়েছে। কবি দাদা উঠবে না। তোমার যে কবিতা লেখার সময় এটাই। লিখবে না । কাক ডাকা ভোরে স্নিগ্ধ বায়ু বয়,সে সময় আমার প্রাণ প্রিয়া মাধবী ঘুম ভাঙ্গানোর ডাক দেয়। আমি হেসে বললাম মাধবী সত্যি কী সকাল হয়েছে। জী কবি দাদা। উঠে পড়।মাধবীর মুখ থেকে এমন কথাগুলো শুনতে পেয়ে বুঝতে আমার আর কিছুই বাকি রইল না। হৃদয় ছোঁয়া,মর্মস্পর্শী, যেমন ছিল, তেমনি আবেগঘন আনন্দময়তার রেশটাও কম ছিল না। তাড়াতাড়ি উঠে পড়লাম। (অসমাপ্ত)

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

লেখকের আগের লেখাঃ