প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

 

পান্থ পৌর্বাপর্য (সপ্তম পর্ব)

 

 

এ,কে,এম,নূরুন্নবী

 

সবার মন প্রাঞ্জল,কোন বিরক্তির চিহ্ন নেই। এ দিকে সময় কাটছে না, কখন সকাল হবে এর অপেক্ষায়। রাতে দীর্ঘক্ষণ আলাপ হলো। কে কী ভাবে স্নান করবে ইত্যাদি। তা নিয়ে বেশ জলপনা কল্পনা চললো। কাকা বাবু মনে মনে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করলেন। আবশেষে বলেই ফেললেন আমিও তোমাদের সাথে আগামীকাল যাব । বড় দাদা তো রেগে টং হয়ে গেলেন। বললেন তোমার শরীর খারাপ কী করে তুমি এ শরীর নিয়ে আমাদের সাথে যেতে চাও। কাকা বাবু ক্ষুব্ধ হলেন। কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকেন। আমি বললাম কাকা বাবু কোন চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে নিয়ে যাবার চেষ্টা করবো। রাতে দেখুন জ্বর কিছুটা কমে কি না। জ্বর থাকলে আমার মনে হয় যাওয়া ঠিক হবে না। বড় দাদা আমাকে বললেন শ্যামল রাখতো উনার কথা। আগে শরীর তার পর ভ্রমণযাত্রা। এবার কাকা বাবু ক্ষিপ্ত হলেন,বললেন আমার শরীর কেমন তা কী আমি জানিনা। ভাল আছে বলেই তো যেতে চাইছি। খারাপ থাকলে তো আর যেতাম না। জীবনে আনেক ভ্রমণ করেছি। বড় দাদা বললেন শ্যামল ঠিক আছে উনারে নিয়ে চলো। যদি ওখানে গিয়ে উনার শরীর খারাপ হয় তা হলে আর উনাকে নিয়ে আসা হবে না। উনাকে ছেড়েই চলে আসবো। তুমি উনারে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা কর। তার মন দেখে বুঝলাম এবার তিনি ভাল মতন ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কোন কথা না বলে তিনি আমাদের কাছ থেকে উঠে চলে গেলেন। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলেন। আবার দেখি কিছু পরে উনি উঠে এসে আমার কাছে বসে আছেন, সাবাই তো উনাকে দেখে মিটিমিটি হাসা শুরু করে দিলেন। একজন আর এক জনের দিকে চেয়ে মিটিমিটি হাসে। কাকা বাবু সবার মুখের দিকে তাকিয়ে রাগ করে উঠে গেলেন। তিনি যখন উঠে গেলেন তখন কেউ আর হাসি থামাতে পারলেন না। সবাই জোড়ে হেসে ফেললেন। কাকা বাবু রেগে বললেন তোরা কী আমাকে ঘুমাতে দিবি না। না সারারাত বসে বসে দরবার করবি। বড় দাদা বললেন শ্যামল উনারে বলো আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আগামীকাল আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে। এ কখা শুনে উনি থামলেন। যথারীতি আমি গিয়ে বললাম কাকা বাবু যে যাই বলুক না কেন আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আপনাকে কাল অবশ্যই অবশ্যই নিয়ে যাব। কাকা বাবু বললেন শ্যামল তোমার কথা ঠিক থাকবে তো। আমি বললাম কী বলেন কাকা বাবু আমি কী আপনার সাথে ফাজলামী করতে পারি। হাঁ ঠিক বলেছো। আমি তোমাকে বিশ্বাস করি। ঠিক আছে তোমরা আলাপ কর। আমার প্রয়োজন হলে আমাকে ডাক দিও। ঠিক আছে কাকা। যদিও বা সবাই শুয়ে পড়লেন,তবুও কেন যেন পিটপিট করে কথা শুনা যাচ্ছে। বৌদি আর মাধবী বলাবলি করছে দু তিনটা কাপড় বেশি নিতে হবে। বলা যায় না, আর তো আসা হবে না । তাই একবার না,প্রয়োজন হলে ঝরনায় দু তিনবার স্নান করবো। ভোর হলো সবার আগে কাকা বাবু উঠে বসে আছেন। সবাই তো নতুন করে উনাকে দেখে হাসি শুরু করলেন। মাধবী বললো বাবা তুমি কী মনে কর আমরা তোমাকে ছেড়ে যাব। না রে তেমন ভাবোদ্দীপন হয়নি। কেন যেন ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। তা ছাড়া তোদের কথা বলার ভাব যা বিশ্রী তাতে তোরা তাও করতে পারিস। কাকা বাবুর কথা শুনে আবার সবার হাসি শুরু হলো। আমি একটু ঘুমের ভান করে শুয়ে রইলাম। দেখি কে কি করে। সবাই কাপড় পড়ে রেডি। কেবল আমি ও বড় দাদা বাদে। এর মধ্যেই মাধবী এসে আমাকে ডাকা ডাকি শুরু করে দিল।আমি চুপ করে শুনছি। মাঝে মাঝে না শুনার ভান করছি। কিছুক্ষণ ডাকার পর এবার ধাক্কা ধাক্কি শুরু করে দিল। আমি আর বেশিক্ষণ চুপকরে থাকতে পাড়লাম না। শেষে হেসে ফেললাম। বললাম মাধবী আজ তো আর কোন কবিতা শুনালে না। শুনাব পরে,তবে তোমারে আগে শায়েস্তা করে নেই তারপর। এতক্ষণ ধরে ডাকা ডাকি করছি আর তুমি কিনা শুনেও না শুনার ভান করে চুপ করে আছো। এর শোধ তুলবো আগে তার পর। ভুল হয়ে গেছে আমি মাফ চাইছি মাধবী। মাফ সে তো পরে হবে। আগে জাত মতো শায়েস্তা করবো তার পর। আর ভুল হবে না,এবারের মতো মাফ করে দাও। সত্যি বলছি। আর ভুল হবে না।

ঠিক আছে আজ ক্ষমা করে দিলাম।

দেখবে আর কোন দিন হবে না।

আমরা সকাল সকাল রওনা করলাম। নয়টার মধ্যে আমরা সেখানে পৌঁছে গেলাম। দেখলাম ডেকোরেটর আমাদের জন্য দুটি তাবু করেছে। আমরা সেখানে উঠে পড়লাম। তাদের আন্তরিকতা দেখে ভাল লাগলো। কারণ সতরন্জি বিছিয়ে দিয়েছে। সাত আটটা বালিশ এ দিয়েছে। কাকা বাবুকে বললাম আপনি আপাতত এখানে শুযে থাকেন। নাস্তা করে তার পর আমরা বের হবো। উনি তাই করলেন। আমিও বড় দাদা হোটেলে গেলাম। পাউয়ারুটি কেক কলা চা নিয়ে তাবুতে ফিরে এলাম। সবাই বসে নাস্তা করলাম। সূর্যের দেখা নেই। বেশ ঠান্ডা,তাই অপেক্ষা করলাম সূর্যের আলোর জন্য। বেলা এগারোটার দিকে কুয়াশা ছেড়ে গেল, রোদ উঠেছে। আমরা ধিরে ধিরে সামনের দিকে অগ্রসর হলাম। পৌঁছে গেলাম ঝরনার কাছে। বৌদি ও মাধবী গতকাল সন্ধ্যায় গোপনে বাজার থেকে রং কিনে এনেছে। আমরা রং কেনার কথা কিছুই জানতে পারিনি। প্রথমে বৌদি ও মাধবী রং মাখা মাখি শুরু করলো। আমাদেরকেও মাখিয়ে দিল। আমরা তো বুঝতেই পারিনি যে তাদের কাছে রং আছে। একে বারে কিংভূর্তিকি মার্কা চেহারা হয়ে গেল।বেশ আনন্দে অনেকটা সময় কেটে গেল। অনেক আনন্দ হলো। ঝরনার পানিতে রং মেখে স্নান করতে। সমস্যা হলো রং তুলবো কি করে। এমন সময় মাধবী বললো ওই ব্যাগটার মধ্যে সাবান আছে দাও তো। কে কার কথা শুনে। আমি তাড়াতাড়ি সাবান ঘুসে নিজের রংটা তুলে নিলাম। তার পর মাধবীকে সাবান দিলাম, ও বললো স্বার্থপর। মাধবী,বড় দিদি ও বৌদি ঝরনার নিচে বসে বসে সাবান ঘুসে দুজনে রং তোলার ব্যাবস্থা করছে। অপর দিকে কাকী মা একা একা রং মেখে ঝরনার নিচে চুপ করে বসে আছেন। আমরা তো লক্ষ্যই করতে পারিনি। মাধবী ও বৌদি তো এই কিংভূর্তিকি মূর্তি দেখে ভয়ে চিত্কার শুরু করে। আমরা চিত্কার শুনে দৌড়ে গিয়ে দেখি বৌদি ও মাধবী প্রাণ নিয়ে দৌড়ে আমাদের দিকে আসছে। বললাম কি হয়েছে ওরা বললো কি যেন এক অদ্ভূত জিনিষ দেখলাম। আমরাও তাদের কথা শুনে ওদিকে গেলাম। পরে দেখি এক কিংভূর্তিকি ভূত যেন ঝরনার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। গিয়ে দেখতে পেলাম কাকী মা বেশ মজা করে রং মেখে ঝরনার নিচে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমরা বললাম উনি তো কাকী মা। আমরা ডাকতেই কাকী মা বলে উঠলেন কী বাবা।কারও তো হাসি আর থামানো যায় না। কাকা বাবু বললেন বুড়িটার আবার ঢং দেখেছো। কাকা বাবুর কথা শুনে সবাই আবার হাসলেন। বললাম কাকা বাবু আপনি একটু ঝরনার নিচে যাবেন নাকি। উনি বললেন যেতে তো ইচ্ছা হয় আমার তো জ্বর। পানিতে তো আর নামা যাবে না। ভগবান সুস্থ করলে আগামী বার আবার আসবো। সকলেই মাথা মুছে ঝরনা থেকে উঠে এলেন। তাঁরা তিনজনে ছোট তাঁবুতে গিয়ে কাপড় বদল করে আমাদের তাঁবুতে চলে এলেন। আমি বললাম সবাই তো ক্লান্ত চা খেলে ভাল লাগবে। বড় দাদা বললেন আমার শরীরটা খারাপ,শ্যামল তুমি আর মাধবী গিয়ে চা নিয়ে এসো খেলে ভাল লাগবে। যেতে যেতে মাধবী বললো তোমার সাথে নিরীবিলী কথা আছে। চলো আমারা দুজনে না হয় ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দির থেকে ঘুরে আসি। আমি বললাম মাধবী এটা কেমন করে হয়। সবাইকে ছেড়ে আমরা দু জনে মন্দিরে যাব তারা কী ভাববে। এটা কী ভাল দেখায়। তুমি চিন্তা করো না আমি একটা ব্যাবস্থা করবো। দেখবে তারাই তোমাকে বলবে শ্যামল ওকে একটু ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দিরে নিয়ে যাও তো। ওর নাকি দরকার আছে। বললাম ঠিক আছে, তাঁরা যদি বলে আমার তো তেমন আপত্তি থাকার কথা না, তাই না। যে রিক্সা নিয়ে বাজারে গেলাম সে রিক্সা নিয়েই ফিরে এলাম। চা খাবার পর্ব শেষ হলো। এখন কোথায় যাব সিদ্ধান্ত চলছে। মাধবী বললো দাদা সামনে আমার এইচ এস সি পরীক্ষা গতকাল যখন আমরা ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দিরে গিয়েছিলাম তখন একটা মানত করে ছিলাম যাতে পরীক্ষা ভাল হয়। আমি ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দিরে মানতটা পূর্ণ করতে চাই। দাদা বললেন ঠিক আছে তুই না হয় শ্যামলকে নিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুরে আয়। আমরা একটু রেষ্ট নেই,

এর পর আমরা অন্য জায়গায় যাব। শ্যামল তুমি একটু মাধবীর সাথে ক্রমধেশ্বরী কালী মন্দিরে গিয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে এসো। তোমরা ফিরলে আমরা অন্য জায়গায় যাব। রিক্সায় গিয়ে মন্দিরের কাছে নেমে পড়লাম। দেখি একটা গাঁদা ফুলের গাছ। সুন্দর একটা ফুল ফুটে আছে। আমি ফুলটি ছিঁড়ে মাধবীর খোঁপায় গুঁজে দিলাম। মাধবী সোত্প্রাস হয়ে বললো আর কিছু দিবে না। (অসমাপ্ত)

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

লেখকের আগের লেখাঃ