প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

হোমলেস

মঈনুল ইসলাম মিল্টন


অর্থাভাবে মন যখনই বিষন্ন হয় আমার
আমি ফিরে যাই হোমলেসদের আড্ডায়
যখন স্টেশনের কূলে মাথা রেখে
ঘুমিয়ে পড়ে রাতের ট্রেন
আমিও তখন ঠিক তেমনি করে
ফিরে যাই ওদের কাছে।
ওদের শুকনো মুখ কি অদ্ভুত বিবর্ণ,
চোখ কোটরে বন্দী।
চোয়ালে রুক্ষ দাঁড়ি-গোফের জঞ্জাল শিকড়।
ওরা মলিন চেহারায় উদাসীন,
চেয়ে থাকে অপলক মূর্তীমান।
ঠোঁটে চেপে ধরা সিগারেট, জ্বলতে থাকে অবলীলায়
এ ওষ্ঠ কখনো কি স্পর্শ করেছিলো নারী দেহ?
কৌটায় বন্দী শীতল বিয়ারে মাঝে মাঝে চুম্বনরত
এই হোমলেস নারী-পুরুষ গুলো হয়তো বা ভূলেই গেছে
চুম্বনের স্বাদ,
কিম্বা এ স্বাদ আস্বাদ হয়নি কখনো,
যখন পেট আর পিঠ মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়
তখন কামনার আগুন অন্তরে জ্বলে কিনা
আমার ঠিক জানা নেই।
হয়তো বা, কামনার আগুন নিভে গেছে ক্ষুধার অন্তরালে।
তলপেটের তলাটা চুলকে দেয় মাঝে মাঝে খস খসে শুকনো হাতে
ওরা নিরুত্তাপ আড্ডা ছড়ায়।
কখনো সখনো রাগে টেনে ধরে নিজের উঁকুন চুল।
চাওয়া পাওয়া হীন এ দেহ নিসার
জড় বস্তুতে রূপান্তরিত হয়ে গেছে নিজের অজান্তেই।
ছাতা পড়া নোংরা দেহ উৎকট গন্ধ ছড়ায়
কখনো কেউ ভালোবেসে হয়তো বা এ দেহে শিকড়ে দেয়নি জল
পারতো পক্ষে ও পথ মাড়ায় না পথচারী
নাক সিঁটকায় দুর্গন্ধের ঘৃণায়।
কখনো সখনো ওরা খিস্তি ছুঁড়ে দেয় একে অপরকে
আবার একে অপরে সমর্পিত হয় আবেগে, ভালোবাসায়।

হোমলেস ভিখেরী নয়
ওদের তেমন কোনো চাওয়া পাওয়া নেই,
নেই ভবিষ্যত চিন্তা, পেটের আগুন নেভানোর জন্যে
ওরা খুঁজে খুঁজে দেখে
ওদের হাত হাতড়ে বেড়ায় প্রতিটি পাবলিক টেলিফোন বক্স
দেখে ভুল করে কেউ ফেলে গেছে কিনা উচ্ছিষ্ট পয়সার কয়েন।
নিঃষ্পলক চোখ লেহন করে পর্ণোগ্রাফির কাগজ,
তাতে ওদের দীর্ঘ পুরুষাঙ্গ হয়তো বা উত্থিত হয় না কখনো
কামনার অগ্নি নির্লিপ্ত, ঘুমন্ত রয় অন্তরে
পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা
ওদের সমগোত্রীয়দের সকলেরই ভাষা এক
তাদের অন্তর্নিহিত দুর্বোধ্য ভাষা পড়তে
নিষ্ফল চেষ্টা করেছি বহুবার
কিন্তু অবশেষে বুঝতে পেরেছি ওদের ভাষা বুঝতে হলে,
হোমলেস এ রূপান্তরিত হতে হবে।
হিমাঙ্কের নীচে নামা শীতেও ওরা জড়সড় কাগজের বাক্স বন্দী।
যেন এই বসবাসেই সুখ অনন্ত, যেন ওরা আদিম গুহা মানব,
এক লুকায়িত অব্যক্ত বেদনার তীব্র অভিমানে
ওদের মুখ নিলাভ রঙ ধারণ করে,
এক নির্লিপ্ত সুপ্ত বাসনা, অনবরত গুমরে কাঁদে ওদের বুকের ভেতর।
গভীর রাতের শেষ ট্রেনের হুইসেল, মনে করিয়ে দেয় ফিরতে হবে
কাপুরুষের মত এ দেহ আমার মরা ফসিলকে কাঁধে তুলে পা বাড়ায় বাড়ির পথে।
সংসারে সকল মানুষই কমবেশী, এক প্রকার হোমলেস
"প্রকারান্তরে সমস্ত মানুষই হোমলেস এই ধরাধামে
সুবিশাল আকাশতলে, মিছেই মানুষ,
কংক্রিটের সামিয়ানা গড়ে"।
 


(কবিতাটি গৃহহীনদের সাথে কবির দীর্ঘসময় অতিবাহিত করার ফসল)

 

 

  

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ