[প্রথমপাতা] |
মঈনুল ইসলাম মিল্টনের
কবিতা
-কাঁদো বাংলাদেশ
কাঁদো-
এ লাশ আমার ভাইয়ের
এ লাশ আমারি বোনের
আজ তাঁদের মুখ বড্ড বেশি
অপরিচিত
আগুনে ঝলসানো দেহ, আজ
তাঁরা কংকাল, আজ তাঁরা
কয়লায় পরিনত।
একদিন যারা আমাদের দেহ
সুসজ্জিত করার জন্যে
সেলাই মেশিনের কলে
রেখেছিলো হাত, আজ সে
হাত নিথর, নিশ্চল
বোবা কান্নায় বুক ফেটে
যায়, হে প্রভূ আমিও
মৃত্যু চাই, আমিও মৃত্যু
চাই,
আমি চাইনা দেখতে, আমার
স্বজনের খর্ব দেহ,
বিকৃত মুখ।
নিশ্চিন্তপুর আজ
লাশপুরী
নিশ্চিন্তপুরের বাতাসে
আজ পোড়া লাশের গন্ধ
কাঁদো বাংলাদেশ কাঁদো,
চিৎকার করে কাঁদো।
আগুনের, লেলিহান শিখা,
পাল্টে দিয়েছে, আমার
বোনের হাতের
লাল মেহেদীর রং
সর্বনাশা আগুন নিলো কেড়ে
বোনের মাথার সিঁদুর
হাতের শাখা
অগ্নিচিতায় জীবন্ত দগ্ধ
আমারই আপন ভাই,
আজ আমার কলিজা জ্বলে
হয়েছে ছাই
অন্তরের আগুন বল কি করে
নেভাই?
এই তো আমার প্রেয়সীর
মুখ, একদিন যা ছিলো
পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায়
ঝলমলে আলো, অগ্নি সাপের
দংশনে তা আজ হয়েছে
আঁধার কালো।
ওরা খাদ্য জোগাড় করতে
গিয়ে, নিজেরাই রাক্ষুসে
আগুনের খাদ্যে পরিনত হলো
ওরা কি কেবলই শ্রমিক?
দরিদ্রতার নিষ্ঠুর
কষাঘাত থেকে মুক্তির
জন্যে একদিন ওরাও যুদ্ধে
ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো
তাই ওরা সকলেই
মুক্তিযোদ্ধা
আমার স্নেহের বোন ময়না,
আজ আর সে কোন কথাই কয়না
আমার মায়ের বিলাপে আজ
ভারী হয়ে উঠেছে
নিশ্চিন্তপুরের জমিন
আসমান
আকাশে
বসে কাঁদে দেখ ঐ
সয়ং আল্লাহ্, ইশ্বর,
ভগবান।
বাংলাদেশ আজীবন করবে
তোমাদের সম্মান
ভুলবনা কখনো বন্ধু,
তোমাদের বলিদান।
মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে
মা'র কাছে পলাশের
শেষ আকুতি
"কোমরে বাঁধা শার্ট দেখে
লাশ চিনে নিয়ো।"
কোমরে বাঁধা শার্ট দেখে
পলাশের মা চিনতে পারবে
কি পলাশ কে?
আট বছরের রিক্তা বানু
সব হারিয়ে আজ রিক্ত,
নিঃস্ব অশ্রু শিক্ত
কে মোছাবে তার চোখের জল?
আজীবন রিক্তা বানুর বুক
ভার হয়ে থাকবে,
সান্তনাহীন, নিরাময়হীন
অনন্ত বেদনা, হাহাকার ও
যন্ত্রনায়।
দু'টি অবুঝ শিশু, জয়ামনি
ও আকাশের চারটি চোখ
চেয়ে থাকে অপেক্ষায়,
অপলক প্রহর গুনে
প্রতিক্ষায়
না ফেরার দেশ থেকে মা
রোকসানা বেগম, কোনদিন
কি আর আসবে ফিরে
ছাই ভস্মের মাঝে খোঁজে
ফেরে মানুষ, প্রিয়জনদের
ফেলে যাওয়া কোন শেষ
স্মৃতি চিহ্ন
প্রিয় বান্ধবী ঝর্নার
ওড়নাটি হাতে নিতেই
আফরোজার দু'চোখ আজ
অশ্রুর ঝর্নায় বিগলিত।
বহদ্দার হাটে -কংক্রিটের
গার্ডারের নীচে প্রাণ
দিলো
নিঃষ্পাপ নির্দোষ অসহায় আমার চৌদ্দটি ভাই
আমি মানুষের বিবেকের
কাছে প্রশ্ন রেখে যাই
আমার হারানো ভাইদের আমি
কি মূল্যে ফিরে পাই??
মুনাফা লোভীদের হাতে
বন্দি আজ আমার স্বদেশ
আমি সভ্য সমাজের কাছে এ
সকল গনহত্যার বিচার চাই
এ-সকল হত্যাকান্ডের
বিচার চাই
যদি সত্যিই বিচার না
পাই, তাহলে ভাববো
যে ভাবে আমাদের ভাই
বোনদের তালাবদ্ধ করে
রাখা হয়েছিলো
মানবতাও আজ সে রকম
সুকঠিন তালায় বদ্ধ।
সন্তানহারা বাংলা মায়ের
বুক আজ খাঁ খাঁ
কারবালার ময়দান
কখনো আমরা ভুলবনা
বন্ধু তোমাদের
আত্মদান-তোমাদের এই
অবদান।
-জন্ম মানে-
জন্ম মানে,
মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গনের
অপেক্ষা
জন্ম মানে, অনন্তকাল
ভালোবাসার প্রতীক্ষা
জন্ম মানে,
আনন্দ
উচ্চাস, কল্লোলিত কলতান
জন্ম মানে, পিপাসিত
জীবন পথ চলা সাবধান।
জন্ম মানে, মায়ার বাঁধনে
অনাবিল বন্ধন
জন্ম মানে, চারদিকে
বেষ্টিত, পাড়া প্রতিবেশি,
আত্মীয় স্বজন।
জন্ম মানে, আজন্ম না
পাওয়ার হাহাকার
জন্মের প্রশ্ন হলো, এ
পৃথিবীতে আমি কার? কে
আমার?
জন্ম মানে, অচেনা, অজানা
কারো জন্যে চির অপেক্ষা
জন্ম মানে, স্বপ্নে ভরা
রঙিন দিনের প্রতীক্ষা
জন্ম মানে, ঋনে ঘেরা
জীবনের বসবাস
জন্ম মানে, সংসারেতে
অভাব, অনটন, নিত্য
হাহুতাস
জন্ম মানে, পিতার উষ্ণ
ভালোবাসা, মায়ের
বাধভাঙ্গা
স্নেহের আধার
জন্ম মানে, স্বপ্ন দেখা
সুখী একটি জীবন বাধার
জন্ম মানে, পরাধীনতার
শৃঙ্খল, জন্ম মানে,
আজন্ম ঋন শোধের দায়িত্ব
জন্ম মানে, মুক্তির
আশায় জেগে থাকা, নিশি
দিন বিনীদ্র।
"জন্ম মানে, মৃত্যুর
মাঝে বিলীন।"
"জন্ম মানে, কুঁড়ি থেকে
ফোঁটা, তাজা একটি ফুল
জন্মের পরে দীর্ঘ সময়
বেঁচে থাকাটাই
সবচাইতে বড় ভূল।"
___________________________
[মঈনুল ইসলাম মিল্টন,
জন্ম -৩ ডিসেম্বর,
কারপাশা, লৌহজং,
বিক্রমপুর]
ARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|