[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

 

 

'যে অভিমানে চলে গেলে তুমি'
 

 

মঈনুল ইসলাম মিল্টন

যে অভিমানে চলে গেলে তুমি বড় অসময়ে,
তার কি মূল্য দেবে এ সমাজ?
এখনো যে, সমাজের শিকড় কুঁড়ে খায় ঘুঁনে,
মিনার, আমি কুতুব মিনার দেখেছি, দেখা হয়নি তোমার সাথে
কিন্তু একই সূত্রে অন্তরে গেঁথে আছে, সমাজ পরিবর্তনের সৈনিক।
হৃদয়পূর্ণ ব্যথার হাহাকার, আঠারো সাল ক্রীতদাস, বড় দীর্ঘ সময়।
আমিও ক্রীতদাস, দাসত্বের গ্লানি বয়ে চলেছি অবিরত।
যদি হয়, ঋন শোধ কিছু অভাগী বাংলার।
কলম ছেড়ে তুমি হয়তো, দু'হাতে ধরেছিলে ট্যাক্সি ক্যাবের স্টিয়ারিং
হয়রে অভাগা স্বদেশ! হায়রে নিষ্ঠুর পরবাস!
নব্বই দশকে কতইবা বয়স আমার, কৈশোরে সবে পদার্পন,
দেখিনি তোমায়, দেখেছিলাম খবরের কাগজে
তোমার অক্ষর। শব্দের প্রতিবাদী উচ্চারনের শানিত বর্শার ফলা।
বহু লেখার সাথে, পতিতা পল্লীর
ঘুপচি ঘরের নিকোষ কালো অন্ধকারের কষ্ট বুকে ধারন করে-
লিখেছিলে কতকি, হয়তোবা, তথাকথিত মুখোশ আঁটা ভদ্র সমাজে
এর স্থান নেই, তথাপী আমিতো জানি তুমি কত বিশাল।
এভাবে কেন চলে গেলে, বড় অসময়ে?
এখনো যে, অন্ধকার ঘেরা পৃথিবী, এখনো যে বড় বৈরী সময়,
পিশাচের দাঁত ও নখে গেঁথে আছে, মুক্তিকামী মানুষের রক্ত।
তুমি আত্মহনন করোনি, সমাজের দুর্বৃত্তরা তোমাকে হত্যা করেছে,
দু'হাতে গলা টিপে নিষ্ঠুর, নির্মম ভাবে এ সমাজের
নোংরা কালো হাত তোমায় হত্যা করেছে।
তোমার শেষ চিঠিতে, যদিও লিখেছো কারো উপর তোমার কোন অভিযোগ নেই।
কিন্তু প্রকারন্তরে, তুমি চলে গিয়ে, ধিক্কার জানালে,
পুঁজিবাদী, নোংরা, স্বার্থপর এ সমাজ ব্যবস্থারই উপরে।
তোমার শেষ চিঠি পাঠ করে আমার বুকের সমস্ত পাঁজর
চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ভেঙ্গে গেছে
তোমার মৃত্যু আমাকে প্রতিমুহূর্তে লজ্জিত করে,
আমি বিবেকের কাঠগড়ায় প্রতিনিয়ত, আসামী হয়ে দাঁড়াই,
অন্তর চিড়ে বেরিয়ে আসে বিষন্ন দীর্ঘশ্বাস
ইচ্ছে ছিল কলম নামক হাতিয়ার নিয়ে
আমিও তোমার সাথে, সমাজ বদলের যুদ্ধে অবতীর্ণ হবো
কেন চলে গেলে এ অসময়ে?

আমি লজ্জা অপমানে, মাথা নিচু করে রই,
এখানে সেখানে খুঁজে ফিরি, আমার সহ সৈনিক
আনার কমান্ডার, কমরেড, জনে জনে জিজ্ঞাসী
আমার প্রিয় নিমার মাহমুদ কই?

তোমার প্রতিবাদে, এ দেশ, এ সমাজ, এমনকি কেবল
তোমার সহধর্মিনী প্রিয়া লাজুকই লজ্জা পায়নি,
আমরা লজ্জিত হয়ে মাটিতে মিশে গেছি,
কেবল লজ্জিত হয়নি, দূর্নিতীবাজ, নোংরা, নির্লজ্জ সমাজপতিরা।
কেন চলে গেলে এভাবে এ অসময়ে???
এখনো যে বাংলা মায়ের দেহ চিড়ে-দেঁড়ে খায়
নেকড়ে, হায়না আর পাগলা কুকুরে।
পৃথিবীর সুউচ্চ মিনারের নাম আমার জানা নেই,
আমার জানা আছে, শহীদ মিনারের সাথে আরেকটি নাম
মিনার মাহমুদ, তোমার নত না হওয়া সু-উচ্চ মাথা
ঠেকে আছে আকাশ মিনারে।।
হয়তো ইতিহাসের পাতায় তোমার নাম ঠাঁই পাবে কিনা জানিনা
কিন্তু যেনে রাখো, তোমার নাম লেখা রবে
মুক্তিকামী বিবেকবান সৃষ্টিশীল মানুষের অন্তরে।
তুমি সুখে থেকো, শান্তিতে থেকো, আমরা তোমার উত্তরসূরীরা
অতন্ত্র প্রহরীর মত আছি জেগে
তুমি ঘুমাও, নির্ভয়ে, নিশ্চিন্তে
একলা নিরজনে।
 

________________________________________
[কবিতাটি প্রয়াত সাংবাদিক মিনার মাহমুদের স্মৃতির প্রতি উৎসর্গকৃত]
 

চিবা, জাপান। 
 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

>>এখানে যৌবন পোড়ে কর্পূরের মত