মঈনুল ইসলাম মিল্টন
এ হত্যা বন্ধ করো, বন্ধ করো
মানবতা সেদিনও
নির্বিকার ছিলো
যখন ষাট লক্ষ ইহুদি শিশু, আবাল বৃদ্ধ বনিতা
জেনারেল আইকম্যানের গ্যাস সিলিন্ডারের দাবানলে জ্বলেছিলো
আপনারা কি সেই ইহুদি যারা ইতিহাস ভুলে গিয়ে
নব্য আইকম্যানের চেয়েও ঘৃন্য রূপ ধারন করেছেন?
আপনারা কি সেই ইহুদি আজো যাদের প্রেতাত্মা কাঁদে
অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি -গোটা ইউরোপ জুড়ে?
যাদের জন্যে একদিন কৃত্তিম এসিটোনের শ্রষ্টা
ড. কাইম বাইজম্যান এক খন্ড ভূমি ভিক্ষা করেছিলেন,
আপনারা কি সতিই সেই ইহুদি?
আমি আপনাদের ধিক্কার জানাই।
আপনারা কি সেই আরব মুসলমান,
যাদের একদিনের অপচয়ের ফেলে দেয়া খাবারে
জঠর জ্বালা নেভাতে পারে বিশ্বের লক্ষ-হাজার মানব সন্তান।
আমি আপনাদের মিথ্যা ঠুনকো আভিজাত্যের অহংকারকে -ধিক্কার জানাই।
আমি ধর্মের নামে অধর্ম আর রাজনীতি বুঝি না
আমি মানুষের কথা বলি, আমি মানবতার কথা বলি।
যদি ইফতারের টেবিলে গাজার শিশুদের শুকনো মুখ গুলো
তোমার মনে পড়ে যায়, তাহলে কখনোই তুমি রকমারি ইফতারে
তোমার টেবিল পূর্ণ করো না।
যদি সেহরির সময় প্যালেস্টাইনি মানুষের কথা মনে পড়ে যায়
তাহলে কখনোই তুমি অতিরিক্ত সেহরিতে তোমার উদর পূর্ণ করোনা।
চেয়ে দেখো, নিষ্পাপ ফেরেশতাদের রক্তে রঞ্জিত আজ গাজার রাজপথ,
তুমি কি করে দু'হাত মেহেদির রঙে রাঙাও?
য্খন সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক আর বিমানের গোলায় প্রতিনিয়ত
মানব সভ্যতার মুন্ডুপাত হচ্ছে
যখন মানবতা প্রতিনিয়ত হচ্চে বিধ্বস্ত
তখনো কি তুমি তোমার ঈদ ফ্যাশনের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে?
যখন তুমি তোমার নিষ্পাপ শিশুটিকে স্বস্নেহে চুম্বন করছো
হয়তো বা তখন ফিলিস্তিনে কোনো পিতা তার অতি আদরের শিশুটিকে
শেষবারের মত চুম্বন করে কবরে শুইয়ে দিচ্ছে।
যখন তুমি ঈদ আনন্দ উপভোগের জন্যে ছুটে যাচ্ছ তোমার প্রিয়জনদের নিকট
ঠিক তখনই হয়তো বা গাজার মা-বোনেরা সম্ভ্রম রক্ষা আর বাঁচার জন্যে
একটুকুন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ছুটে চলেছে -অজানার পথে।
যখন তুমি ঈদ আনন্দের নামে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হল রুমে
ব্যন্ডের রক গানের সুরের মূর্ছনায় উল্লাসে মাতোয়ারা
হয়তো বা তখনই গাজায় আহত রক্ত মাখা হাজারো শিশুর
তীব্র যন্ত্রনার চিৎকার আর আর্তনাদে শোকে ছেয়ে গেছে কোনো হাসপাতাল।
গাজার আকাশ-বাতাস যখন বারুদের ধোঁয়া আর কান্নার রোলে ভারী
তখন কী করে তুমি আনন্দ সাগরের গড্ডালিকায় নিজেকে ভাসাও?
তুমি তোমাকে ধিক্কার জানাও, তুমি লজ্জিত হও।
গাজা নগর আজ জ্বলছে, অথচ গোটা বিশ্ববিবেক নির্বিকার
বিবেক নামের বোধের চোখে আজ শক্ত কালো ঠুলি বাঁধা
গাজার হতভাগ্য মানুষের বুকের উপর বন্দুক উঁচিয়ে ধরেছে
আজ বর্বর ইসরাইলি সেনা
মানবতাবোধ আজ ভূ-লুন্ঠিত,
গাজা আজ এক মৃত্যু উপত্যকা।
বিশ্ব বিবেক যখন সব দেখে শুনে নিরব
তখন গাজার শিশুরা ইসরাইলি সেনাদের সামনে প্রতিবাদ করে,
তারা বুক চেতিয়ে মৃত্যু রূপি হায়নার সামনে দাঁড়ায়
শাবাশ গাজার শিশু সৈনিক শাবাশ।
কামানের গোলার উত্তরে গাজার শিশুরা ঢিল ছুঁড়ে মারছে,
প্রকারন্তরে তারা বিশ্ববিবেকের মূখে লাথি মারছে।
মাতৃগর্ভে থেকেই প্রতিটি প্যালেস্টাইনি শিশু এক একজন অপ্রতিরোধ্য
বীর সৈনিক
আমি সে সকল সৈনিকদের সেলুট জানাই যারা স্বাধীন প্যালেস্টাইনের
জন্যে
দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে লড়ে যায় অসীম সাহসিকতায়।
আমি পুনর্জন্মে আরেকবার প্যালেস্টাইনি হয়ে জন্মাতে চাই।
আর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে বারবার শতবার
প্যালেস্টাইনের স্বাধীনতা ঘোষণা করতে চাই।
আমি ইসরাইলি মিথ্যা "অপারেশন প্রটেকটিভ এজ" নামক মানব হত্যার
মিশনের মুখে
সজোরে লাথি মারি।
বন্ধ হোক মানব হত্যার নোংরা রাজনীতি
বন্ধ হোক রক্তের হোলি খেলা।
হে আগামীর মানবতাবাদী বিবেকবান উন্নয়নের সৈনিক
এসো পথে নেমে এসো, খোলা আকাশের নীচে দু'হাত উত্তোলিত করে
গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলো এ হত্যা বন্ধ করো, বন্ধ করো।
আর যদি তা না পারো, তাহলে তীব্র ঘৃনা ভরে কল্পনায় বর্তমান
বিশ্ববিবেকের মুখে
এক দলা থুথু ছিটিয়ে দাও, আর এটাই হবে তোমার সর্বনিম্ন প্রতিবাদ-
ধন্যবাদ।
|