|
||||||||||||||||||
@ @ @ @ @ |
@ ৭ মার্চ ১৯৭১-নূতন ইতিহাসের যাত্রা শুরু @
@ WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. @ |
@ @ @ লেখকের আগের লেখাঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় নিজের জীবনকে নিয়তির উপর ছেড়ে দেবেন না ক্ষুব্ধ, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্ö @ @ @ @ |
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বর্তমান সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে (তখন রমনা রেস কোর্স) জাতির পিতা ঊনিশ মিনিটের কম সময়ের একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন যা পরবর্তিকালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে । বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় সেই ভাষণ নিয়ে তেমন একটা চর্চার প্রয়োজন হয় নি কারণ যিনি এই ভাষণটি দিয়েছিলেন সেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তখন স্বয়ং জীবিত । ৭ মার্চের সেই পড়ন্ত বিকেলে যাদের সেই ভাষণটি শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল আর যারা পরদিন পত্রিকা পড়ে জেনেছেন অথবা রেডিও টেলিভিশন মারফত শুনেছেন তাদেরকে এই ভাষণের তাৎপর্য সম্পর্কে জানানোর তেমন একটি কিছু ছিল না । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতা দখল করে প্রথমে যে দুটি কাজ করেন তা হচ্ছে বাংলাদেশে জাতির পিতার নাম উচ্চারণ নিষিদ্ধ করা আর ১৯৭১ সালে বাঙালি যে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা এনেছিল সেই সত্যটাকে চাপা দেওয়ার জন্য পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর পরিবর্তে শুধু দখলদার বাহিনী শব্দ দুfটি আমদানি করা। তার শাসনামলে যে স্থানে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি দিয়েছিলেন এবং যেখানে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনা বাহিনী মিত্র বাহিনীর যৌথ কমা-ের কাছে আত্মসমর্পন করেছিল সেই স্থানটির গুরুত্ব খাটো করার জন্য সেখানে শিশু পার্ক নির্মাণ করেছিলেন । প্রয়াত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরী, যিনি বিএনপি ঘেঁসা একজন সাংবাদিক ছিলেন তিনি প্রেস ক্লাবের এক সেমিনারে এই সত্যটা উদ্বঘাটিত করেছিলেন । বলেছিলেন জিয়া চান নি কোন মুসলমান জেনারেল অমুসলমানের কাছে আত্মসমর্পন করেছিলেন তার কোন স্মারক বাংলাদেশে থাকুক । জেনারেল জিয়া পাকিস্তান সরকার ও সেনা বাহিনীর একজন প্রিয়পাত্র ছিলেন কারণ তিনি কর্মরত অবস্থায় পাকিস্তান সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইfর একজন সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন । তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন ঠিক কিন্তু সেটি তিনি স্বপ্রণোদিত হয়ে নয় বরং নিজের জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে করেছিলেন । মনে রাখতে হবে বাঙালি যখন একাত্তরের উত্তাল মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে তখন জিয়া চট্টগ্রামে ৮ম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকে- ইন কমান্ডে দায়িত্ব পালনরত এবং ২৫/২৬ মার্চের রাত পর্যন্ত পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ সোয়াত হতে বাঙালি হত্যার জন্য আনিত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অস্ত্র আর গোলাবারুদ খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে রওনা দিয়েছিলেন । জিয়ার ক্ষমতা দখল হতে শুরু করে পরবর্তি একুশ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে ৭ মার্চের এই ঐতিহাসিক দিনটি পালনতো হয়ই নি এই দিনটি সম্পর্কে কোন কর্মসূচী নেওয়ার উপর ছিল একটি অলিখিত নিষেধাজ্ঞা । এই একুশ বছর শুধু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলো এই ভাষণের উপর কিছু সভা সমাবেশ করেছে । ইতিহাসের অমোঘ নিয়মে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণটিকে বিশ্ব সংস্থা ইউনেস্কো ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর eইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারেf-বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে । এই ভাষণটি এখন বাংলাদেশে বা আওয়ামী লীগের একক কোন সম্পদ নয় এটি এখন বিশ্বের ইতিহাস মনস্ক, সমাজ ও সভ্যতার অতীত নিয়ে গবেষণা করেন তাদের সকলের সম্পদ । কেউ ইচ্ছা করলে আর এই ভাষণকে অস্বীকার করতে পারবেনা । ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ জেকব এফ ফিল্ড ৪৩১ খ্রিষ্টপূর্ব হতে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বিভিন্ন জাতীয় বীর ও সেনাপতিদের মধ্য হতে ৪১ জনকে নির্বাচিত করে eঝঢ়ববপযবং ঃযধঃ ওহংঢ়রৎবফ ঐরংঃড়ৎুf শিরোনামের একটি মূল্যবান গ্রন্থ সংকলন করেন এবং সেই গ্রন্থে বঙ্গবন্ধুর এই মূল্যবান ভাষণটি অন্তর্ভূক্ত হয়েছে । এটি এখন অনস্বীকার্য যে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণটি শুধু ঐতিহাসিকই ছিল না এটি ইতিহাস সৃষ্টির কারণ হয়েছে এবং যাঁরা ১৯৭১ সালে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন তাদের অনুপ্রাণিত করেছে । বর্তমান প্রজন্মের হয়তো জানা নেই একাত্তরের নয় মাসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র হতে প্রতিদিন নিয়মিত বিরতি দিয়ে বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণের অংশ বিশেষ eবজ্রকণ্ঠf শিরোনামে প্রচারিত হতো যাতে মাঠে ময়দানে যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধার আর দেশের ভিতরে অবরুদ্ধ বাঙালিরা অনুপ্রাণিত হতে পারে ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর একাত্তরের রক্তাত্ব মুক্তিযুদ্ধটা হয়ে যায় eগন্ডগোলের বছরf। জিয়া ক্ষমতা দখল করে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে লিখিত বাহাত্তরের সংবিধানের প্রস্তাবনা হতে eজাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামেরf অংশটির পরিবর্তে প্রতিস্থাপিত হয় eজাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধেরf। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল যখন মুজিবনগর সরকার গঠিত হয় সে সময় স্বাধীনতার যে ঘোষণা পত্রটি গৃহীত ও পঠিত হয়েছিল তার ভিত্তি ছিল এই প্রস্তাবনা প্রণিত হয়েছিল । ১০ এপ্রিল সেই ঘোষণাপত্র পাঠ করেই ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল । স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও প্রস্তাবনা একই সূত্রে ঘাঁতা । জিয়া স্বজ্ঞানে এই অপকর্মটি করেছিলেন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বাঙালির তেইশ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসকে মুছে ফেলার জন্য । বাহাত্তরের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিশেষ নিজের স্বার্থে মুছে ফেলা শুধু চরম হঠকারিতাই ছিল না এটি একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা মূলক কর্মও ছিল । ১৯৭৮ সালে জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদে কোন সংসদ বা আইন বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন না । তিনি নিজেই এই দপ্তরের দায়িত্বে ছিলেন এবং পরিবর্তন গুলো রাষ্ট্রপতির (জেনারেল জিয়া) আদেশ বলে করা হয়েছিল । সুতরাং এই অমার্জনীয় অপরাধের দায় দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে ।
সংবিধানের প্রস্তাবনার পরিবর্তনের ফলে বাঙালির দীর্ঘ তেইশ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসকে যেমন অস্বীকার করা হয়েছে ঠিক একই কায়দায় বাঙালির একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চ আর বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকেই অস্বীকার করা হয়েছে । অথচ একাত্তরের ৭ মার্চ বা ২৫/২৬ তারিখ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রবাহকে বাধ দিয়ে বাংলাদেশের কোন ইতিহাস রচিত হতে পারে না । ১৯৭০ সালে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে গণপরিষদের তিনশতটি আসনের মধ্যে বাংলাদেশ ১৬৭ টি আসনে জয় লাভ করে । এই নির্বাচনে পাকিস্তানের উভয় অংশের জনগণের সংখ্যা অনুপাতে পূর্ব বাংলার ভাগে পরে ১৬৯ টি আসন । যে দুটি আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হতে পারেনি তার একটি ছিল ময়মনসিংহে নূরুল আমিনের আর পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজা ত্রিদিব রায়ের আসন । দেশ স্বাধীন হলে নূরুল আমিন ভগ্ন পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভূট্টোর ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন । নূরুল আমিনের মৃত্যু হলে জিন্নাহ্র কবরের পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়েছে । রাজা ত্রিদিব রায়কে করা হয়েছিল পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রী এবং ভূট্টো তাকে জাতিসংঘে পাঠিয়েছিলেন বাংলাদেশের সদস্য পদ ঠেকানোর জন্য প্রচারণা চালাতে । প্রথম দফায় এতে তিনি সফলও হয়েছিলেন ।
একটি নির্বাচনে যে দল সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয় গণতান্ত্রিক রীতি রেওয়াজ অনুযায়ী সেই দলই সরকার গঠন করে । সত্তরের নির্বাচনের পর এটি স্বাভাবিক ছিল বঙ্গবন্ধুই সরকার গঠন করবেন । কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক বেসমারিক আমলারা কখনো চায় নি পাকিস্তানের শাসনভার বাঙালিদের হাতে যাক । পাকিস্তানের জন্ম হতেই এই আমলারাই ষড়যন্ত্রকে পুঁজি করে পাকিস্তানে কখনো গণতন্ত্রকে বিকশিত হতে দেয় নি । সত্তরের নির্বাচনের পরও তা অব্যাহত ছিল । ঘোষণা করা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি ঢাকায় গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন বসবে। এই গণপরিষদের দায়িত্ব হবে পাকিস্তানের জন্য একটি সংবিধান রচনা করা । বঙ্গবন্ধু নির্বাচনের আগে নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষণা করেছিলেন তাঁর দল ক্ষমতায় গেলে পাকিস্তানের সংবিধান হবে ঐতিহাসিক ছয় দফা ভিত্তিক । পাকিস্তানের আমলাতন্ত্রের (বিশেষ করে পাঞ্জাবি আমলাতন্ত্র) জন্য এটাও ছিল বিপদজনক কারণ ছয় দফার মূল বিষয়ই ছিল কেন্দ্রের হাতে শুধু দেশ রক্ষা আর পররাষ্ট্র বিষয় থাকবে বাকি সব কিছুর নিয়ন্ত্রক হবে প্রদেশগুলো । দেশটি অনেকটা ফেডারেল কাঠামোর ভিত্তিতে পরিচালিত হবে আর প্রদেশগুলো নিরঙ্কুশ স্বায়ত্ত্বশাসন ভোগ করবে । বলা বাহুল্য পাকিস্তানের সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্র এমন একটা সংবিধানযে মেনে নেবে না তা স্বাভাবিক। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া পাকিস্তানের দ্বিতীয় সংখ্যা গরিষ্ঠ দল পিপল্স পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলি ভুট্টো ১ মার্চ ঘোষণা করেন eহয় আসন্ন জাতীয় সংসদ অধিবেশন পিছিয়ে দেওয়া হোক, না হয় এলএফও (লিগাল ফ্রেমওয়ার্ক, সংবিধান প্রণয়নের জন্য ইয়াহিয়া খান কর্তৃক জারি করা সামরিক ফরমান । এই ফরমানের বাইরে গিয়ে সংবিধান প্রণয়ন করলে তা ইয়াহিয়া খান বাতিল করতে পারবেন । বঙ্গবন্ধু আগেই ঘোষণা করেছিলেন নির্বাচনে তাঁর দল জয়ী হলে তিনি এই ফরমান টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলবেন ।) ভূট্টোর এই ঘোষণা ইয়াহিয়া খানের নির্দেশেই হয়েছিল কারণ এর আগে ইয়াহিয়া খান ভুট্টোর সাথে বৈঠক করেছিলেন । এই প্রেক্ষাপটেই ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ষড়যন্ত্র এবং ১ মার্চ দুপুরের সংবাদে রেডিও পাকিস্তান ঘোষণা করলো ৩ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য গণপরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে । এই ঘোষণার সাথে সাথেই ঢাকা সহ দেশের সকল শহর হয়ে উঠলো মিছিলের নগরী । একটাই শ্লোগান eতোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনাf। অনেক স্থানে যোগ হলো eপি-ি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকাf, eবীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করোf । বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করলেন ২ মার্চ ঢাকায় আর ৩ মার্চ সারা বাংলাদেশে হরতাল পালিত হবে । ১ মার্চের আগে বঙ্গবন্ধু ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রধান আর পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের একজন নির্বাচিত সদস্য । ১ মার্চ হতে সেই বঙ্গবন্ধু হয়ে গেলেন পূর্ব বাংলার অঘোষিত সরকার বা রাষ্ট্র প্রধান কারণ সেদিন হতে ২৫ তারিখ পর্যন্ত পূর্ব বাংলার সম্পূর্ণ বেসামরিক প্রশাসন বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই চলেছে । ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসুর নেতৃত্বে প্রথম উড়ানো হলো স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা । ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে অনুষ্ঠিত হলো এক বিশাল জনসভা । সেই জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনের সময় প্রস্তাবিত জাতীয় সংগীত eআমার সোনার বাংলাf গাওয়া হয় এবং বঙ্গবন্ধুকে ছাত্রদের দ্বারা গার্ড অব অনার দেওয়া হয় । সেই দৃশ্য ছিল অভাবনীয় । সেই সভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন তিনি পরবর্তি করণিয় সম্পর্কে ৭ মার্চ রমনা রেস কোর্স ময়দানে ঘোষণা দেবেন । বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা ছিল অসাধারণ । তিনি আসন্ন সময়ে দূর্যোগের আভাস পেয়েছিলেন । ৩ তারিখের জনসভায় বঙ্গবন্ধু তিনটি নির্দেশ দিয়েছিলেন । (ক) পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত অফিস-আদালত বন্ধ থাকবে; (খ) টিভি ও বেতারে আন্দোলনের খবরের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করলে তা প্রত্যাখান করতে হবে; আর (গ) আন্দোলনে লুটতরাজ অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে হবে । পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠি যখনই বাঙালিরা কোন আন্দোলনের সূত্রপাত করেছে তখনই eইসলাম বিপন্নf এই ধুয়া তুলে পূর্ব বাংলায় হিন্দু-মুসলমান অথবা বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করেছে । মার্চ মাসের শুরু হতেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাঙালি-অবাঙালি দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছিল ।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পড়ন্ত বিকেলে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ যা এক মহাকাব্য বলে এখন বিশ্ব দরবারে স্বীকৃত । ঊনিশ মিনিটেরও কম সময়ে রাজনীতির কবি বাঙালির তেইশ বছরের শোষণ বঞ্চনার ইতিহাস বলে গেলেন আনুমানিক দশ লক্ষ মানুষের সামনে । দৃঢ় কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন নির্বাচিত গণপরিষদ সদস্যদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ছাড়া পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠির সাথে কোন আলোচনা হতে পারে না । দৃপ্ত কণ্ঠে বলেছিলেন eএবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রামf। ২৬ মার্চ রাতেই বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সেনা বাহিনী গ্রেফতার করেছিল । কিন্তু তাঁর অবর্তমানে ৭ মার্চ দেওয়া তাঁর নির্দেশেই বাঙালি দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করে । বন্দি মুজিব মুক্ত মুজিবের চাইতে একাত্তরে অনেক বেশী শক্তিশালী ছিলেন । ৭ মার্চের সেই ভাষণ শুধু ঐতিহাসিকই ছিল না সেই ভাষণ ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল । এটি একটি নূতন দেশের অভ্যুদয়ের চালিকা শক্তি ছিল । এই ভাষণ নিয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অনেক বক্তব্য দিয়েছে বা প্রচার করেছে । তবে কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর বক্তব্য ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূণ। তিনি বলেছিলেন e৭ মার্চেও শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধুমাত্র ভাষণ নয় একটি অনন্য রণকৌশলের দলিলf। সার্বিক বিচারেই ইউনেস্কো এই ভাষণকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে । এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ।
লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । মার্চ ৪, ২০১৮
@
@