|
||||||||||||||||||
|
পদ্মাসেতু উপাখ্যান-ষড়যন্ত্র চলমান
WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
|
লেখকের আগের লেখাঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় নিজের জীবনকে নিয়তির উপর ছেড়ে দেবেন না ক্ষুব্ধ, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্ö
|
বাংলাদেশে পত্র-পত্রিকা পড়েন আর ডেভিড বার্গম্যানকে চেনন না তেমন মানুষ খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না । বার্গম্যান নাগরিকত্বে বৃটিশ আর বিবাহ সূত্রে বাংলাদেশের খ্যাতিমান আইনবিদ ডঃ কামাল হোসেনের জামাতা । পেশায় সাংবাদিক । নিজেকে মানবাধিকার কর্মী বলেও পরিচয় দেন । একসময় বৃটেনে বেশ কিছু প্রামাণ্য চিত্র বানিয়ে নাম করেছিলেন । ১৯৯৫ সালে প্রয়াত চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের সাথে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর ’দি ওয়ার ক্রাইমস ফাইল’ নির্মান করে সুনাম কুড়িয়েছিলেন । ছবিটি বৃটেনের চ্যানেল-৪ এ প্রচারিত হলে একাত্তরের ঘাতক দল জামায়াত বার্গম্যানের উপর বেশ ক্ষেপেছিল । কয়েকবছর আগে তিনি বাংলাদেশে এসে সাংবাদিকতা শুরু করেন । কিন্তু নব্বইয়ের দশকের বার্গম্যান আর এই সময়ের বার্গম্যানের মধ্যে অনেক তফাৎ । একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের জন্য সরকার বিশেষ ট্রাইবুন্যাল গঠন করলে বার্গম্যান তার সমালোচনা শুরু করেন । বলেন এই ট্রাইবুন্যাল দিয়ে সুষ্ঠু বিচার সম্ভব হবে না । মুক্তিযুদ্ধে যে ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন তা তার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় নি । তিনি আদালতের বিচারকদের স্বচ্ছতা আর দক্ষতা নিয়েও দেশে ও দেশের বাইরে মন্তব্য প্রতিবেদন লিখে আদালত কর্তৃক সমালোচিত হয়েছেন । গ্রামীণ ব্যাংক আর ডঃ ইউনুসকে নিয়ে দেশে নানা ধরণের বিতর্ক শুরু হলে বার্গম্যান ডঃ ইউনুসের পক্ষে কলম ধরেন । বার্গম্যানের সর্বশেষ কলম যুদ্ধ ছিল পদ্মা সেতু দূর্নীতি বিতর্কে দেশের অন্যান্য সুশীল আর কিছু মিডিয়ার সাথে একজোট হয়ে সরকার ও তৎকালিন সেতু মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা ।
পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন, তাকে ঘিরে বিশ্বব্যাংকের দূর্নীতির গন্ধ অতঃপর বিশ্বব্যাংকের সেতু নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ, তাদের দেখাদেখি এডিবি, জাইকা ও আইডিবি এই প্রকল্প হতে হাত গুটিয়ে নেওয়ার কাহিনী এখন দেশের সকল মানুষের জানা । মানুষ এও জেনেছে কী ভাবে একজন শেখ হাসিনা দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন বাংলাদেশ তার নিজস্ব অর্থায়নেই বানাবে তার বহু প্রত্যাশিত সেতু । বাংলাদেশের যে সব সুশীল আর মিডিয়া সব সময় শেখ হাসিনার বাঁকা চলন আবিষ্কারে ব্যস্ত তারা একই সুরে বললেন শেখ হাসিনা প্রমত্ত পদ্মা নদীর উপর সেতু আর বাঁশের সাঁকোর মধ্যে পার্থক্যটা বুঝলেন না । বাস্তবে শেখ হাসিনাই বুঝেছিলেন, বাকিরা বুঝেন নি । না বুঝার দলে বার্গম্যানও ছিলেন । যে কানাডীয় পরামর্শক কোম্পানি এসএনসি-লাভলিনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের যোগসাজসে দূর্নীতির অভিযোগ আনে সে কোম্পানির বিরুদ্ধে কানাডার মাউন্টেড পুলিশ (সরাকার) সেই দেশের আদালতে দূর্নীতির মামলা করে কারণ কানাডার একটি কোম্পানিকে যদি বিশ্বব্যাংকের মতো একটি প্রতিষ্ঠান দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করে এবং তা বিচারিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে সুরাহা না হয় তা হলে সেটি কানাডার জন্যও বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে । মামলাটি করা হয় ২০১৪ সালে আর দীর্ঘ শুনানির পর কয়েক সপ্তাহ আগে কানাডার আদালত রায় দেয় শ্রেফ গল্পগুজব আর অনুমান ভিত্তিতে এই মামলা সাজানো হয়েছিল যা বিশ্বব্যাংকের নথী হতে রয়েল মাউন্টেড পুলিশ আদালতে প্রমাণ করতে পারে নি । অর্থাৎ পদ্মাসেতু প্রকল্পে কোন দূর্নীতি হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা ছিল তা প্রমাণিত হয় নি । অনেকে হয়তো জানেন না বিশ্বব্যাংক কোন সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা বা অভিযোগ করলে তা প্রমাণের জন্য কোন নথি, দলিল বা তথ্য দিতে তারা বাধ্য নয় অর্থাৎ এই ক্ষেত্রে তাদের দায় মুক্তি দেওয়া হয়েছে । যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তার দায়িত্ব হচ্ছে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করা । এমন অদ্ভুত ব্যবস্থা বিশ্বেও কোন দেশে নেই।
পদ্মা সেতু দূর্নীতি বিষয়ক মামলা কানাডার আদালতে খারিজ হয়ে গেলে বাংলাদেশের ২০১২ সালের সেই সরব সুশীল ব্যক্তি আর মিডিয়া খামোশ হয়ে গেলেও একজন এখনো সরব আছেন। তিনি হচ্ছেন সাংবাদিক বার্গম্যান । গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভারত হতে প্রকাশিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল দি ওয়াইরে (ঞযব ডরৎব) বার্গম্যান উরফ ঈধহধফধ ঈড়ঁৎঃ জবধষষু ঈষবধৎ ইধহমষধফবংয ঙভভরপরধষং ড়ভ ঈড়ৎৎঁঢ়ঃরড়হ (কানাডার আদালত সত্যিই কী বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দূর্নীতি হতে মুক্তি দিয়েছে?) শীর্ষক এক বিশ্লেষণ ধর্মী প্রবন্ধ লিখে বলার চেষ্টা করেছেন কানাডার মাউন্টেড পুলিশের (কানাডা সরকারের ) দায়ের করা পদ্মা সেতু দূর্নীতি মামলা খারিজ করে দেওয়ার অর্থ এই নয় যে বাংলাদেশ অভিযোগ হতে মুক্ত হয়েছে । বার্গম্যান বলেন এই মামলার বিচার্য বিষয় ছিল কানাডার কোন নাগরিক দূর্নীতির সাথে জড়িত ছিল কী না । আদালত বাংলাদেশের কোন আমলা বা মন্ত্রীর দূর্নীতির সংশ্লিষ্টতা সম্পর্কে বিচার করে নি । বার্গম্যান মনে করেন বাংলাদেশের মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আর সরকারের সমর্থকরা মামলার রায় নিয়ে এত যে হৈচৈ করছে আর বিশ্বব্যাংকের তুমুল সমালোচনা করছে তা ঠিক নয় । পুরো ঘটনার সাথে নোবেল বিজয়ী গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক মহাপরিচালক ডঃ ইউনুসের সম্পৃক্ততা আবিষ্কার করা ঠিক হচ্ছে না বলেও তিনি মনে করেন। বার্গম্যান তার লেখায় এই মামলার রায় নিয়ে যারা সরকারের পক্ষাবলম্বন করছেন তাদের উদ্দেশ্যে দশটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন । প্রথমটি হচ্ছে কানাডার আদালত তাদের নিজ দেশের তিনজন নাগরিকের দূর্নীতির অভিযোগের বিচার করেছে এবং তাদের অভিযোগ হতে অব্যাহতি দিয়েছে । এর অর্থ এই নয় যে পদ্মা সেতুতে কোন দূর্নীতি হয় নি অথবা এই তিনজনের বিরুদ্ধে কোন তথ্য প্রমাণ ছিল না । বার্গম্যান বলেন অভিযোগের প্রমাণ হয়তো ছিল কিন্তু বাদি (কানাডার সরকার) তা যথাযথ ভাবে প্রমাণ করতে পারে নি । বার্গম্যানের দুই নম্বর মন্তব্য ছিল দূর্নীতির অভিযোগের ভিত্তি শুধু মাত্র গল্পগুজব বা অনুমানেরভিত্তিতে হয়েছে বলে আদালতে টিকে নি তাও সত্য নয় । বিচারক বলেছেন ছয় বছর আগে করা মামলাটি গল্পগুজব আর অনুমানের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছিল কিন্তু রায়ে এই তিন ব্যক্তিকে অব্যাহতি দেওয়ার সময় এই বিষয়গুলোকে ভিত্তি হিসেবে ধরা হয় নি । তিন, ঘুষ লেনদেনের প্রচেষ্টা প্রমাণ করা সব সময় দূরুহ । বার্গম্যানের মতে আদালতের কাছে বিচার্য বিষয় ছিল ঘুষ লেনদেনের প্রচেষ্টা বা অভিপ্রায় হয়েছিল কী না, বাস্তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার বিষয়টি নয় । বার্গম্যানের এতটুকু বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয় আছে বাংলাদেশ সরকার সব সময় বলে আসছে যেখানে কোন অর্থই লেনদেন হয় নি সেখানে দূর্নীতির অভিযোগ আনাটা সম্পূর্ণ অনৈতিক ও অগ্রনযোগ্য। এখন কেউ যদি বলেন বার্গম্যান বাংলাদেশে থেকে যে সবসময় বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং তা করার জন্য পাকিস্তানের আইএসআই-এর কাছে হতে মাসোহারা পাওয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে বলে মানুষের ধারণা তা তিনি নিশ্চয় গ্রহণ করবেন না । চতুর্থ, বার্গম্যানের মতে দূর্নীতি হওয়ার ষড়যন্ত্র বাংলাদেশ সরকারের অস্বীকার করার বিষয়টি মামলার রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি ভূমিকা রেখেছে । তার মতে কানাডার তদন্তকারি দল কখনো এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার হতে কোন সহায়তা পায় নি । বার্গম্যান আরো বলেন বাংলাদেশের দূর্নীতি দমন কমিশন, যা সরকারের একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান তারা প্রথম দিকে একটি তদন্ত করলেও পরে সেই তদন্ত বন্ধ করে দেয় । বাস্তবে কমিশন তদন্ত করে বলেছিল তারা অভিযোগের কোন সত্যতা পায় নি সুতরাং এই ব্যাপারে তাদের আর কিছু করণীয় নেই । বার্গম্যানের মনে রাখা উচিত বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ কারো বাপের তালুক নয় । বিশ্বব্যাংক যদি তাদের অভিযোগের সমর্থনে কোন দলিল পত্র উপস্থাপন না করে তা হলে বাংলাদেশ কেন আগ বাড়িয়ে এই কাজ করতে যাবে । পঞ্চম, বিশ্বব্যাংকের দূর্নীতির অভিযোগের বাস্তব ভিত্তি ছিল কানাডার এসএনসি লাভলিনের কর্মকর্তাদের ডাইরিতে এমন কিছু সংখ্যা লিখিত ছিল যা বিশ্বব্যাংক দাবি করেছিল তা ঘুষের পরিমাণের হিসাব । আদালত তা গ্রহণ করে নি । তার মতে বাংলাদেশের সেতু কর্তৃপক্ষ যে এসএনসিকে-লাভলিনকে পরামর্শকের কাজ দেওয়ার জন্য বাছাই করেছিল তা করার সময় তাদেও প্রয়োজনীয় দলিল পত্র ছিল না । তা হতেই পারে এবং এইসব ক্ষেত্রে আবেদনকারীর কাছে ঘাটতি পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র চাওয়ার রীতি একটি স্বীকৃত বিষয় । বার্গম্যান একবারও উল্লেখ করে নি বিশ্বব্যাংক চীনের একটি ভুয়া পরামর্শক কোম্পানির জন্য ওকালতি করেছিল । সপ্তম, ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংক এসএনসি-লাভলিনের সাথে একমত হয়েছিল যে এসএনসি-লাভলিনের আগামী দশ বছর জন্য বিশ্বব্যাংকের কোন প্রকল্পের সাথে যুক্ত হবে না । বার্গম্যান এর ব্যাখ্যা করেছেন এই ভাবে যে লাভলিন তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েই এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছে । কোন কিছু প্রমাণের আগেই বিশ্বব্যাংকের এমন একটি সিদ্ধান্ত লাভলিনের উপর চাপিয়ে দেওয়া শুধু অনৈতিকই নয় অগ্রহণযোগ্যও বটে । লাভলিনের তা মেনে নেওয়ার পিছনে নিশ্চয় তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ আছে । যদি বলা হয় তাদের এমন সিদ্ধান্তে রাজি করানো হয়েছে এই বলে আগামীতে তারা আরো বড় বড় প্রকল্পের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবে তা কী অমূলক হবে? লাভলিন শুধু কানাডারই নয় বিশ্বের একটি প্রথম কাতারের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান । অষ্টমে বার্গম্যান মন্তব্য করেছেন লাভলিনকে দশ বছরের জন্য কালো তালিকা ভূক্তি করার পিছনে হয়তো তিনটি কারণ কাজ করেছে । প্রথমত কানাডার আদালত লাভলিন কোম্পানির তিনজনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের বিচার করছিল । বিশ্বব্যাংক ব্যক্তিকে নয় কোম্পানিকে অপরাধী প্রমাণ করতে চেয়েছিল । কানাডার আদালত সার্বভৌম, তারা বিশ্বব্যাংকের নির্দেশে কেন চলবে? দ্বিতীয়ত আদালতের জুরি বোর্ড কোন অভিযোগ সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হলে তখনই অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে । যে কোন সভ্য দেশে তাই হওয়াটাই স্বাভাবিক । বার্গম্যানের মতে বিশ্বব্যাংকের প্রচলিত ব্যবস্থায় আছে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শুধু মাত্র অভিযোগের গুরুত্ব বা ওজন (preponderance of the evidence) বা সম্ভাব্যতার ভারসাম্যের (balance of probabilities) উপর ভিত্তি করেই সাজা দেওয়া হতে পারে । বিশ্বব্যাংকের এমন সব আবদারি ব্যবস্থা বিশ্বের অনেক দেশেই ইতোমধ্যে সমালোচিত ও নিন্দিত হয়েছে । তৃতীয়ত ফৌজদারি আদালত কোন কোন বিষয় গুলো সাক্ষ্য প্রমাণ হিসেবে আদালতে হাজির করা যাবে তা নির্ধারেণ করে দেশের আইনের আলোকে আর বিশ্বব্যাংক কোন অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয় পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং তাদের বিচারে যা যৌক্তিক তার আলোকে । এর অর্থ হচ্ছে বিশ্বব্যাংক যে কোন দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর তাদের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে অযৌক্তিক ভাবে চেষ্টা করে । বার্গম্যানের দশটি মন্তব্যের নবমটিতে বলা হয় বিশ্বব্যাংক দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে ১.২ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন বন্ধ করে নি । তারা চেষ্টা করেছে বিকল্প পদ্ধতিতে এই অর্থায়ন চালু রাখতে । তার জন্য বিশ্বব্যাংক চারটি শর্ত দিয়েছিল যার মধ্যে একটি হচ্ছে এই অভিযোগের বিষয়ে দূর্নীতি দমন কমিশন যে তদন্ত করবে তাতে বিশ্বব্যাংকের একজন প্রতিনিধি অন্তর্ভূক্ত করতে হবে । এটি একটি মামা বাড়ীর আবদার বৈ অন্য কিছু নয় । বাংলাদেশ অন্য কোন দেশ বা সংস্থার তাবেদার রাষ্ট্র নয় । দেশটি স্বাধীন করার জন্য ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন । সব বিষয়ে বাইরের রাষ্ট্র বা সংস্থা নাক গলাবে তা কোন সরকারই মেনে নিতে পারে না । তারপরও বাংলাদেশ দূর্নীতি তদন্তে সর্বাত্মক সহায়তার আশ্বাস দেয় । বিশ্বব্যাংক তদন্তের নামে শুধু সময় ক্ষেপন করেছে । সেতু নির্মাণকে বিলম্বিত করেছে এবং নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণ হয়েছে । দশম মন্তব্য ডঃ ইউনুস সম্পর্কিত । বাগর্ম্যান মনে করেন যেহেতু ডঃ ইউনুসের সাথে মার্কিন সরকারের সখ্যতা রয়েছে তাই সেতুর অর্থায়ন বন্ধে মার্কিন সরকারের ভূমিকা থাকতে পারে তবে তা প্রমাণ করে না যে তাতে ডঃ ইউনুসের কোন ভূমিকা ছিল । কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রাক্কালে যখন হিলারি ক্লিন্টনের ব্যক্তিগত ই-মেইল অবমুক্ত করা হয় তার একটিতে আছে ডঃ ইউনুস হিলারিকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশ সরকারের উপর তিনি যেন গ্রামীণ ব্যাংকে তাঁর পদ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বলেছেন হিলারি তাঁকে ফোন করে ডঃ ইউনুসকে তার পদে পূনর্বহাল করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেছেন এবং একই কারণে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তিনবার যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল । সেতুর অর্থায়ন বন্ধে হিলারির ভূমিকা থাকা অস্বাভাবিক নয় কারণ বিশ্বব্যাংক সব সময় যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নীতি ও অবস্থান দ্বারা প্রভাবিত ।
বার্গম্যানের বিশ্লেষণ পড়লে বুঝা যায় এই লোকটি সব সময় বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না । যেহেতু তার শ্বশুর ও স্ত্রী বাংলাদেশের উঁচু মাপের আইনজীবী সেহেতু তিনি নিজেকে সকল আইনের উর্দ্ধে মনে করেন । সরকারের উচিৎ বার্গম্যান ও তার এদেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া । এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে বাংলাদেশ ও সরকারের বিরুদ্ধে যারা নিত্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তাদের মধ্যে বার্গম্যান গং অন্যতম । এটি অনস্বীকার্য বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের একটি গুরুত্ব উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা । উচ্ছ শিক্ষা হতে অবকাঠামোগত সুবিধার উন্নয়নে তারা এই দেশে ওতপ্রত ভাবে জড়িত । কিন্তু পদ্মাসেতুর অর্থায়নের ব্যাপাওে তাদের যে ভ’মকা ছিল তা ছিল দেশের চরম স্বার্থ বিরাধী ও ষড়যন্ত্রমূলক । বিশ্বব্যাংকের ইতিহাসে এটি একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে । আর বার্গম্যাদের সব সময়ের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে খলনায়ক হিসেবে দেখা হবে।
লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭