প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

@

@

এরশাদই হোক বাংলাদেশের শেষ স্বৈরাচার


আবদুল মান্নান
@

@

স্বাধীন বাংলাদেশের সাড়ে তিন বছরের মাথায় দেশটিকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী প্রথম কাতারের সকল নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। যে মানুষটি আজীবন বাঙালি ও বাংলার মুক্তির কথা বলেছেন সে মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। সেখান হতেই বাংলাদেশের উল্টো পথে যাত্রা শুরু। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খোন্দকার মোশতাকের হাত ঘুরে সেনা প্রধান জিয়া ক্ষমতা দখল করেন। জিয়া যে একজন ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তি ছিলেন তা বিচারপতি সায়েমের স্মৃতিচারণ মূলকগ্রন্থ eMy last days at Bangabhabanf পড়লেই বুঝা যাবে। ১৯৭৫ সালের জেল হত্যার পর বিচারপতি সায়েম কিছু দিনের (৬ নভেম্বর ১৯৭৫-২১ এপ্রিল ১৯৭৭) জন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন। বিচারপতি সায়েমকে হটিয়ে জিয়া ক্ষমতা দখল করে সকল সামরিক শাসকের মতোই ঘোষণা করেছিলেন তিনি একজন পেশাদার সৈনিক, সময়মতো নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে ব্যারাকে ফিরে যাবেন। তিনি শুধু জাতির ক্রান্তিকালে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ূব খান একই কথা বলে পাকিস্তানের ক্ষমতা দখল করে পরবর্তী দশ বছর পাকিস্তানে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিলেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান আইয়ূব খানকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশে একাত্তরে গণহত্যা চালিয়ে নির্বিচারে ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছিলেন। জিয়াউল হক পাকিস্তানে ক্ষমতা দখল করে সে দেশে মৌলবাদী ধারার রাজনীতিকে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ইসলামের নামে মানুষ হত্যাকে জায়েজ করেছিলেন। পারভেজ মোর্শারফ ক্ষমতা দখল করে পাকিস্তানের একটি আধুনিক রাষ্ট্র হওয়ার সম্ভাবনাকে চিরতরে ধ্বংস করেছিলেন। বাংলাদেশে জিয়া ক্ষমতা দখল করে বহুদলীয় শাসন প্রবর্তনের নামে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠীকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়ে তাদের এই দেশের জাতীয় সংসদে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়ার মৃত্যুর পর উপরাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তার তার স্থলাভিষিক্ত হন। ১৯৮১ সালের ২০ নভেম্বর তিনি নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ড. কামাল হোসেনকে হারিয়ে নির্বাচনে বিজয় লাভ করেছিলেন। সেই বিচারপতি সাত্তারকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত করে নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ঘোষণা করেন এবং তার পূর্বসূরিদের মতো ঘোষণা করেন সময়মতো নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তিনিও ব্যারাকে ফিরে যাবেন। ২৭ মার্চ দেশের প্রধান বিচারপতি আহসান উদ্দিন সেনাশাসক এরশাদের অধীনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৮৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর এরশাদ বঙ্গভবনে নিজের খাস কামরায় দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেনাপতিরা ক্ষমতা দখলের আগে দেশে সুপরিকল্পিতভাবে কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। এরশাদও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। এই সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় বেশ কিছু রক্তাক্ত সংঘর্ষ হয়। নিহত হন ডজন খানেক ছাত্রনেতা ও কর্মী । বিএনপি নেতা যুব মন্ত্রী আবুল কাশেমের সরকারি বাসভবন হতে সাত হত্যাকান্ডের আসামি যুবদল সদস্য ইমদাদুল হক ইমদুকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পাকিস্তান হোক বা বাংলাদেশ ইয়াহিয়া খান ছাড়া সকল সামরিক শাসকই মুখে যত কথায় বলুক একটা জুতসই সময়ে হয় নিজেরা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে নিজেদের রাজত্বকাল দীর্ঘায়িত করেছে অথবা অন্য আরেকটি রাজনৈতিক দল ছিনতাই করেছে। পাকিস্তানে কয়েকবার মুসলীম লীগ ছিনতাই হয়েছে। বাংলাদেশে জিয়া সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় সকল আইন কানুন নিয়ম নীতি ও সংবিধান ভঙ্গ করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করেছেন এবং বিএনপি নামক একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম দিয়েছেন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জিয়ার অধীনে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে মিডিয়া ক্যু শব্দটি নির্বাচন পরিভাষায় এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে যোগ হয়। এই ক্যুfর ফলে আওয়ামী লীগকে ৩৯টি আসন নিয়ে সস্তুষ্ট থাকতে হয় । বিএনপি পায় ২০৭ টি আসন ।
জিয়ার সাথে এরশাদের তুলনা করলে বলা যায় জিয়া ক্ষমতালিপ্সু ছিলেন কিন্তু এরশাদ ক্ষমতালিপ্সু আর সাংঘাতিক ধূর্ত ছিলেন। তিনি সাত্তারকে হটিয়ে বিচারপতি আহসান উদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন এবং নিজে বনে যান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক। এটি ছিল এরশাদের ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য চরম চাতুর্য্য পূর্ণ পদক্ষেপ । পাকিস্তান বলি আর বাংলাদেশ, এfদুটি দেশের অনেক বিচারপতিরা সবসময় মেরুদন্ড সোজা রাখতে পারেন নি। দুfদেশেই সামরিক শাসনকে যারা বৈধতা দিয়েছিলেন তারা সেই দেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। gউড়পঃৎরহব ড়ভ ঘবপবংংরঃুh (প্রয়োজনের কারণে আইন বহির্ভূত রায় বা যুক্তি দিয়ে বেআইনি কাজকে বৈধতা দেওয়া) দিয়ে সেনাশাসকদের সকল অপকর্মকে জায়েজ করার এই অপসংস্কৃতিটা আবিষ্কার করেছিলেন পাকিস্তানের এক সময়ের প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ মুনির। ১৯৫৪ সালে পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিনকে বরখাস্ত করলে আদালতে গভর্নরের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করা হয়। বিচারপতি মুনির ও তার বেঞ্চ এই ডকট্রিনকে ব্যবহার করে নাজিমউদ্দিনের বরখাস্তের বৈধতা দেন। বেঞ্চে একমাত্র ভিন্নমত পোষণকারী বিচারপতি ছিলেন এ আর কর্ণিলিয়াস । তিনি একজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বি ছিলেন। পরে তিনি পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি হয়েছিলেন। অন্য সামরিক শাসকদের মতো এরশাদ ক্ষমতায় থেকে জাতীয় পার্টি গঠন করেছিলেন (১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি) এবং তাতে যোগ দিয়েছিলেন বিএনপি হতে আসা বেশ কিছু শীর্ষ পর্যায়ের নেতা যাদের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ, শাহ মোয়াজ্জেম অন্যতম।
এরশাদ তার পূর্বসুরি সামরিক শাসকদের মতো ক্ষমতা দখল করে রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। এই দেশের সকল আন্দোলনের সূত্রপাত করেছে ছাত্র সামাজ। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ১৯৮২ সালের শিক্ষা দিবসকে কেন্দ্র করে প্রথম এই আন্দোলন দানা বাঁধে। পরের বছর ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে। পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েকজন ছাত্র নিহত ও আহত হন। ছাত্রদের এই আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে গঠিত হয় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পনের দলীয় ও বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট। বামপন্থি সংগঠনগুলো গঠন করেছিল পাঁচ দলীয় জোট। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র সংগঠনগুলি ছাড়াও দেশের পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি অসামান্য অবদান রেখেছিল। পেশাজীবীদের নেতৃত্বে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এডভোকেট শামসুল হক। গঠিত হয়েছিল পেশাজীবী সংগ্রাম পরিষদ। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনা ও বেগম জিয়াকে অন্তরীণও করা হয়। যদিও আন্দোলনের মাঠে বেগম জিয়া নেতৃত্বাধীন সাত দলীয় ঐক্যজোট আগে এসেছিল কিন্তু এই আন্দোলন ততক্ষণ পর্যন্ত প্রাণ পায়নি যতক্ষণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পনের দল সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে না নামে। আওয়ামী লীগের আন্দোলন করার একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে যা বিএনপিfর কখনো ছিল না, এখনো নেই । এরশাদ সকল সময় তার বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলনকে পুলিশ বিডিআর দিয়ে দমন করার চেষ্টা করেছে। তারা নির্বিচারে আন্দোলনরত ছাত্রজনতার ওপর গুলি ছুঁড়েছে। হত্যা করেছে রউফুন বসুনিয়া, জেহাদ, দিপালী সাহা, মোজ্জামেল, ডাঃ মিলনসহ অসংখ্য ছাত্র জনতাকে। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর একজন সাধারণ শ্রমিক নূর হোসেন বুকে পিটে eগণতন্ত্র মুক্তি পাক, স্বৈরতন্ত্র নিপাত যাকf লিখে সচিবালয়ের পূর্ব পাশে পিকেটিং করার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয় । এই হত্যাকা- সারা দেশের মানুষকে নাড়া দেয় । ডাঃ মিলনের হত্যাকা- ছিল আর একটি মর্মান্তিক ঘটনা । সবচেয়ে ভয়াবহ ছিল ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শেখ হাসিনার জনসভায় কোন ধরণের উস্কানি ছাড়া নিরস্ত্র মিছিল ও শেখ হাসিনার ওপর পুলিশের গুলি ছোঁড়া। শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য সেদিন ২৩ জন দলীয় নেতা কর্মী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। এরশাদ তার শাসনকালে দূর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলেন । নারী ঘটিত কেলেঙ্কারির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে রাষ্ট্রপতির আসনটিকে কলঙ্কিত করেছিলেন । অর্থ ও নানা সুযোগ সুবিধার বিনিময়ে এক শ্রেণীর সামরিক-বেসামরিক আমরা ও বুদ্ধিজীবীকে নিজের বশংবদ করে ফেলেছিলেন যাদের কেউ কেউ কবিতা লিখে এরশাদের নামে দৈনিক পত্রিকার প্রথম পৃষ্টায় প্রকাশের ব্যবস্থা করেছিলেন । কবিতা পাঠের নামে নিয়মিত তার বশংবদ কবিদের নিয়ে বঙ্গভবনে গভীর রাত পর্যন্ত আসর গুলজার করার ব্যবস্থা করেছিলেন । এরশাদ মনে করেছিলেন তিনি সামরিক বাহিনী ও তার জাতীয় পার্টিকে দিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলনকে দমন করবেন । সেই সময় বাংলাদেশ সেনা বাহিনী তার এই ফাঁদে পা না দিয়ে এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিল । নেতা সর্বস্ব জাতীয় পার্টি এরশাদকে কোন ভাবে সহায়তা করতে পারে নি । দ্রুত পরিস্থিতি এরশাদের আয়ত্বের বাইরে চলে যেতে থাকে । আন্দোলন দমনের নামে জরুরী অবস্থা ঘোষণা ও বিভিন্ন সময় কারফিউ দিলেও তা কার্যকর করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না । শেষ চেষ্টা হিসেবে এরশাদ ১৯৮৬ সালের ৭ মে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করেন । এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ গ্রহণ করলেও বিএনপি পূর্ব সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও অংশ গ্রহণ করা হতে বিরত থাকে । এই নির্বচনে মিডিয়া ক্যূ নতুন আঙ্গিকে ফিরে আসে । এক পর্যায়ে ভোটের ফলাফল গণনা বন্ধ হয়ে যায় এবং চব্বিশ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর ঘোষণা করা হয় জাতীয় পার্টি ১৫৩ আর আওয়ামী লীগ ৭৬ আসনে জয়ী । প্রথমবারের মতো জামায়াত স্বাধীন বাংলাদেশে কোন নির্বাচনে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করে এবং তাদেরকে ১০টি আসন দেওয়া হয় । এই ভয়াবহ কারচুপির প্রতিবাদে জাতীয় পার্টি ছাড়া সকল সংসদ সদস্য পদত্যাগ করে । ১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ এরশাদ আর একটি নির্বাচনি তামাশা করে এবং প্রথম বারের মতো বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দ্বারা গঠিত ফ্রিডম পার্টিকে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেয় এবং অন্যতম খূনী কর্ণেল রশীদেও জন্য মহান জাতীয় সংসদের প্রবেশ দ্বার উন্মুক্ত করে দেয় ।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে তিন জোট এরশাদের ক্ষমতা হস্তান্তর ও পরবর্তি করণীয় সম্পর্কে একটি রোড ম্যাপ তৈরী করে যা তিন জোটের রূপ রেখা হিসেবে পরিচিত । সেই রূপ রেখায় বলা হয়েছিল এরশাদ কাল বিলম্ভ না করে সূপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন । তিনি একটি অন্তর্বর্তিকালিন সরকার গঠন করবেন এবং একটি সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন । নির্বাচিত সরকার রাষ্ট্রপতির শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যেতে সংবিধান সংশোধন করবেন । যতই দিন যাচ্ছিল ততই আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ছিল । ১৯৯০ এর নভেম্বর মাসের শেষ ও ডিসেম্বরের এক তারিখ সারা দেশে পুলিশ ও বিডিআর আন্দোলনরত জনতার উপর গুলি চালালে অসংখ্য মানুষ হতাহত হয় । গণমাধ্যমে সেন্সরশীপ আরোপের প্রতিবাদে দেশের প্রধান দৈনিকগুলি ৩০ নভেম্বর হতে তাদের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয় । সচিবালয় হতে কর্মকর্তা কর্মচারিরা রাস্তায় নেমে আন্দোলনরত জনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন । এরশাদ বুঝতে পারে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে । শেষ চাল হিসেবে এরশাদ ৪ ডিসেম্বর ঘোষণা করেন তিনি বা তার দল পরবর্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না । আন্দোলনরত রাজনৈতিক জোট ও দলগুলো এরশাদের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে । ৬ ডিসেম্বর এরশাদের উপরাষ্ট্রপতি ব্যারিষ্টার মওদুদের হাত ঘুরে তিন জোটের রূপ রেখা অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সাহাবউদ্দিন অন্তর্বর্তিকালিন সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন । এরশাদ শুরু হতে শেষ পর্যন্ত আপদমস্তক একজন স্বৈরাচার ছিলেন । তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এই দেশের মানুষকে দীর্ঘদিন সংগ্রাম করতে হয়েছে, অসংখ্য মানুষ নিজের জীবন দিয়েছে । ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার এরশাদের পতনের প্রেক্ষাপটে এই দেশের সব চেয়ে বড় অর্জন সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা চালু হওয়া । তবে যেই প্রত্যাশিত গণতন্ত্রের জন্য মানুষ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছে, জীবন দিয়েছে সেই প্রত্যাশিত গণতন্ত্র বা রাজনীতি এখনো অনেকটা অধরা রয়ে গেছে । তবে এটাও ঠিক গণতন্ত্র রাতারাতি অর্জিত হয় না । যে সব দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে পেরেছে সেই দেশ নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে সেই অবস্থায় পৌঁছেছে । এরশাদের পতনের পর বাংলাদেশ ছাব্বিশ বছর পার করেছে । এখনো দূর্নীতি সমাজে একটি ভয়াবহ ক্যান্সার হিসেবে বিরাজ করছে । দূর্নীতিগ্রস্থরাই সমাজে বেশ সমাদৃত । রাজনীতির দূর্বৃত্তায়ন এখনো বেশ লাগামহীন । রাজনীতিতে ত্যাগী নেতারা ক্রমেই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে । স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদদের রক্তের ঋণ শোধ করতে হলে প্রথমে সমাজ থেকে সকল প্রকারের দূর্নীতি দূর করতে হবে, রাজনীতির দূর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে আর সর্বোপরি সুশাসনের প্রতি অঙ্গিকার ব্যক্ত করে একটি আসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য সকলকে অঙ্গিকারাবদ্ধ হতে হবে । এরশাদই হোক বাংলাদেশের শেষ স্বৈরাচার ও শামরিক শাসক । স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সকল শহীদদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । ডিসেম্বর ৫, ২০১৬

@

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

@

[প্রথমপাতা]

@

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

@

@

 [......লেখক আর্কাইভ]


@

@