প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

 

পান্থ পৌর্বাপর্য (উনবিংশ পর্ব)

এ,কে,এম,নূরুন্নবী

 

 

পরের দিন সকালে আমি ও মাধবী বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলাম আমার রেজাল্ট জানার জ্ন্য। ডিপার্টমেন্টে গিয়ে বিরেন স্যারের সাথে দেখা হলো না।তখনও তিনি অফিসে আসেননি। কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকলাম । এর মধ্যেই স্যার এলেন। তিনি বললেন,কেমন আছো মাহবুবু। মাধবী সথে থাকায় প্রতিকুলতার মধ্যে পরে গেলাম। স্যার আমার নাম বলায় হৃদয়ের অনুপম মাধুর্য আমার হারিয়ে যায়।অমঙ্গলের আশঙ্কায় কাতর হয়ে বললাম স্যার আপনার দোয়ায় আমি ভাল আছি।

কবে ফিরলে,

জি স্যার গতকাল সন্ধ্যায়।

উনি কে ?

আমার বোন।

নাম কি তোমার?

মাধবী।

সুন্দর নাম তো।

বসো তোমরা।

মাধবীকে স্যার জিজ্ঞেস করলেন,তুমি কোথায় পড়া শুনা কর। ভিখারুণ নেছা গার্লস কলেজে। এবার এইচ এস সি পরীক্ষা দিব। খুব ভাল। প্রস্তুতি কেমন? জি স্যার মোটামুটি। এস এস সিতে রেজাল্ট কেমন ছিল। প্রথম বিভাগ।খুব ভাল। কোন বিভাগে পড়া শুনা কর। মানবিক বিভাগে। সার বললেন,মানুষের প্রকৃত পরিচয় তার মানুষ্যত্বে।তাই মানুষের মর্যাদা, সামাজিক অবস্থান ও শিক্ষার ভূমিকা হয়ে পড়েছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে শিক্ষা গ্রহণ করাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আজ নিরক্ষরতাকে তুলনা করা হচ্ছে অভিশাপের সাথে। গণ্য করা হচ্ছে অন্ধ হিসেবে।এবং জীবনকে গণ্য করা হচ্ছে দুর্ভাগ্যময় জীবন বলে। ফলে তার ব্যক্তিগত জীবনে দুর্ভাগ্য নেমে আসে তেমনি জাতীয় জীবনেও দুর্ভাগ্য ঘোচানো যায় না। জ্ঞান বিজ্ঞানের সাধনায়ও মানুষকে নানা অজানা অধ্যায় অতিক্রম করার জন্য নিত্যনতুন পথ তৈরি করতে হবে। এভাবে কালে কালান্তরে দেশ দেশান্তরে মানুষ রচনা করছে সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির অজস্র পথ। যে পথ একদা ছিল অভিনব, নব আবিষ্কৃত শত সহস্র মানুষের পদচারণায় সে পথ হয়েছে অতি পরিচিত। বিশ্বপ্রকৃতি অফুরন্ত বিস্ময়ের আধার। তুচ্ছ তৃণলতা কিংবা ক্ষুদ্র প্রজাপতি থেকে শুরু করে মহাকাশ কিংবা তারকালোক সর্বত্র ছড়িয়ে আছে সীমাহীন অপার বিস্ময়। মন যখন আড়ষ্ট হয়ে ওঠে তখন বিশ্বপ্রকৃতির রহস্যের দিকে তাকালে মন হয়ে ওঠে সজীব। দু:খ যখন মনকে করে তোলে ভারাক্রান্ত তখন প্রকৃতি অফুরন্ত শোভা মনকে মাতিয়ে তোলে এক ঝলক আনন্দ। বিশ্ব জগতের নানা বিস্ময় আমাদের মনে জাগায় অনুসন্ধিত্সা, কর্মে জাগায় প্রেরণা,দু:খ যন্ত্রণা থেকে দেয় মুক্তি। আর মন হয়ে ওঠে সজীব,গতিময়। সামনে তোমার এইচ এস সি পরীক্ষা। ভাল ভাবে পরীক্ষা দিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে এটাই আমি আশা করি। যেখানে তোমার ভাই মাহবুবুর রহমান ভাল রেজাল্ট করেছে এটা আমাদের গর্ব। সে জীবনে অনেক ভাল করবে। জি স্যার মাহবুব ভাই ছোট বেলা থেকেই ভাল ছাত্র ছিলেন,ভাল রেজাল্ট করতেন।মাধবীর সাথে স্যারের এমন আলাপে আমি যেন কেমন সমাক্রান্ত হয়ে গেলাম।স্যারের কাছ থেকে পালিয়ে যেতে পারলে বেঁচে যাই। স্যার বললেন একটু বসো। চা আনতে দিয়েছি। ছোট বোনকে নিয়ে এসেছো ,একটু কিছু না খেলে হয়। দু এক দিনের মধ্যে আমার বাসায় এসো। মাধবীকে নিয়ে। আপাতত আমার স্ত্রী বাসায় নেই , তিনি গেছেন দেশের বাড়িতে।আশার আগে আমাকে টেলিফোন করবে কেমন। জি স্যার। আমরা চা নাস্তা করলাম। স্যার বললেন,অফিসে গিয়ে তোমার কাগজ পত্র তুলে নাও।আর Provisional certificate প্রাপ্তির জন্য ফরম পূরণ করবে। কারণ চাকুরীর জন্য এগুলো প্রয়োজন। স্যার Provisional certificate হাতে পেতে কত দিন সময় লাগবে। না না বেশি দিন না। এই ধর দু তিন দিন। এর মধ্যেই পেয়ে যাবে। স্যার আমি বি সি এস পরীক্ষার ফরম পূরণ করে পাঠিয়েছি। মার্চ মাসের তিন তারিখে পরীক্ষা। খুব ভাল কথা। সে তো আর বেশি দিন নেই। ধর আজ থেকে একুশ দিন আছে। ভাল ভাবে পড়া শুনা করে পরীক্ষা দাও। ভাল একটা চাকুরীও হতে পারে। তোমার পছন্দ কি দিয়েছো। প্রথম পছন্দ দিয়েছি শিক্ষকতা, দ্বিতীয় পছন্দ দিয়েছি প্রশাসন। ঠিক আছে। পরীক্ষা দাও তার পর দেখা যাবে। তবে আমার বিশ্বাস তুমি ভাল কিছু করবে। সাফল্যের জন্যে চাই দৃঢ়চিত্ত সংগ্রামী মনোভাব,চাই সাহস,চাই শক্তি, চাই শিক্ষা,চাই শ্রম।দক্ষ শ্রমশক্তিই তোমার জীবনে অগ্রগতি ও সাফল্য নিশ্চিত করতে পারে। তোমার প্রতি সে বিশ্বাস আমার আছে। তুমি তা পারবে।স্যার এখন তা হলে আমরা আসি। হাঁ যাও। পরীক্ষা দিবার পর কেমন হয় জানাবে। বাড়ি কবে যাবে। দু এক দিনের মধ্যেই স্যার। ঠিক আছে। দোয়া করবেন স্যার,ইনশাল্লাহ। আমিও মাধবী আমাদের Department office এর দিকে যাচ্ছি। আমি মাধবীর মনের অবস্থা বার বার জানার চেষ্টা করছি কিন্তু কোন পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি না। মনে মনে ভাবছি এবার সত্যি সত্যিই আমার কপাল পুড়ে গেল। মাধবীকে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে এলাম। নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হতে লাগলো। ইচ্ছা করলেই সব কিছু করা যায় না। এখন আমি কি করি। ভাবতে ভাবতেই office Room পেয়ে গেলাম। আমাদের জুনিয়াররা চলা ফেরা করছে। অনেকে সালাম দিচ্ছে। আমিও দিলাম। এর পর অফিসে একটা Application করলাম testimonial ও provisional certificate পাবার জন্য। administrative officer sir জিজ্ঞেস করলেন, কেমন আছেন। বললাম,ভাল আছি স্যার। উনি বললেন বসুন। দশ মিনিট পর আমার testimonial দিয়ে দিলেন,আর বললেন,দশ বারো দিন পর এসে provisional certificateনিয়ে যাবেন।আগেও দিতে পারতাম কিন্তু V C Sir London গেছেন। conference থেকে ফিরতে ছয় সাত দিন সময় লাগবে। কাগজ পত্র নিয়ে নিচে নেমে এলাম। মাধবীকে বললাম, মাধবী এখন কোথায় যাব। মাধবী বললো চলো শিলা আপুর বাসায় যাই।আমরা ওখান থেকে শিলা আপুর বাসায় চলে এলাম। শিলা আপু তো ভিষণ খুশি। শিলা আপু বললেন,কি খাবে তোমরা। আমি বললাম না আপু তেমন কিছু খাবনা। তবে এক কাপ চা খেলে খুব ভাল লাগবে। ঠিক আছে তোমরা ঘরে বসো। আমিও মাধবী Drawing room এ বসে আলাপ করছি, এমন সময় শিলা আপু চা নিয়ে এলেন। বললেন,কাকা বাবু, কাকি মা বড় দা বৌদি সবাই কেমন আছেন। মাধবী বললো সবাই ভাল। তোমরা কি বাসা থেকে এলে,না অন্য কোথাও গিয়েছিলে। আমি বললাম,আপু আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে কাগজ পত্র তুলেছি। বিরেন স্যারের সাথে দেখা করেছি। এর পর আপনার বাসায় এলাম। সব কাজ শেষ করে এসেছি। ভাল করেছো। এখন বসে বসে নিরিবিলি আলাপ করা যাবে কেমন। তবে তোমরা একটু বসো আমি বুয়াকে রান্নার কথা বলে আসি। এর পর আমি একে বারে ফ্রি হয়ে যাব।এ কথা বলে তিনি চলে গেলেন। আমি মনে মনে ভিষণ চিন্তায় আছি মাধবীকে নিয়ে। কিন্তু মাধবীর মনের কোন প্রতিক্রিয়া আমি পাচ্ছি না। আমার বিষয়ে এত কিছু জানার পরও তার মনে কোন পরিবর্তন দেখছি না। ভাবতে অবাক লাগছে। মনকে কোন ভাবেই বুঝাতে পারছি না। এর মধ্যেই শিলা আপু এসে গেলেন। বললেন, হাঁ শ্যামল বলো তুমি কেমন আছো। জি আপু ভাল আছি। মাধবী চুপ করে আছিস কেন বল তোর কথা। কি বলবো আপু আমি যে ভদ্র লোককে ভালবাসি তার সব কিছুই ভাল কিন্তু একটা কথা বারবার মিথ্যা বলে।এটা আমি সহ্য করতে পারি না। যদিও বা আমি বুঝি কেন সে এই একটি কথাটা মিথ্যা বলে।শিলা আপু বললেন কি সেই মিথ্যা কথা। আপু ওকে জিজ্ঞাস করুণ। শ্যামল কি বলে মাধবী। আপু আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমি আবার কখন মিথ্যা কথা বললাম। মাধবী শ্যামলের ফাইলটা টেনে নিয়ে শিলা আপুর হাতে দিলেন। বললেন,শ্যামলের provisional certificate আছে। শিলা আপু ফাইল খুলে পড়লেন। শ্যামলের নাম লিখা আছে মাহবুবুর রহমান। পিতা জয়নাল আবেদিন। শিলা আপু বললেন,হিন্দু কোন ছেলের নাম মাহবুবুর রহমান কি হয়। শ্যামল বললো আমার ভুল আমি স্বিকার করছি আপু।আপনাকে আমি মিথ্যা বলব না আপু। মাধবীকে আমি ভীষণ ভালবেসে ফেলেছি। ওকে যে দিন প্রথম দেখেছি সে থেকেই আমি তাকে ভালবাসি।ওকে ছাড়া আমি আমার নিজেকে চিন্তাই করতে পারি না। যে কারণে আমি এ মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছি। শিলা আপু তো মাধবীর কাছ থেকে আগেই শুনেছিল শ্যামলের আসল পরিচয়। তাই শ্যামলের মনের অনুভূতি ভাল করে জানার জন্য বললেন, শ্যামল তোমার ভালবাসা আজ বৃথা। কারণ মাধবী যেনে ফেলেছে তুমি মুসলিম।এখন তো কিছুতেই সে এবং তার পরিবার এটাকে মেনে নিবে না। তুমি এখন কি করতে চাও। আমার সিদ্ধান্ত একটাই আপু। তা হলো নিজেকে নি:শেষ করে দেয়া। আমার সামনে একটাই পথ খোলা।দুর্বল ভীরু মানুষ হিসেবে জীবন সংগ্রামে দাঁড়াতে ভয় পাই। তাই প্রতিকুলতার মোকাবেলা না করে জীবন থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাই। তাই ঠিক করেছি মাধবীকে যদি আমি নাই পাই তা হলে অকালে নীরবে চলে যাব। শ্যামল এটা কি কথা তুমি বললে। তুমি একজন পুরুষ মানুষ হয়ে দুর্বল মেয়ে মানুষের মত কথা বলছো। ছেলে মানুষের মুখে এমন কথা মানায় না। মাধবীর বাবা মা ভাই বোন আছেন তারা যদি রাজি না হয় তা হলে তো আর তুমি এভাবে কথা বলতে পার না। পরিবারের একটা সমর্থনের প্রয়োজন আছে তাই না। হাঁ আপু আমি সব কিছুই বুঝি।কিন্তু আমার পক্ষে মেনে নেয়া কোন দিনও সম্ভব হবে না।মাধবীকে নিয়ে আমার স্বপ্ন। আমি ভালবেসেছি মাধবীকে। মাধবীকে ভালবাসতে পেরে আমি আমার জীবনের চরম সার্থকতা লাভ করেছি । মাধবী যদি আমার কপালে রাজটিকার পরিবর্তে রাজদন্ড প্রয়োগ করেত চায় তা নিতে আমি সদা প্রস্তুত। কারণ আমি তাকে অন্ধের মতো ভালবাসি। এ কথা বলেই শ্যামল হাউ-মাউ করে কেঁদে ফেলে। শিলা আপুর এই নিষ্ঠুর বাক্যে শুনে শ্যামলের বুক ফাটা কান্না করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।শিলা আপু আমিএই অস্বাভাবিকতাকে মনে নিতে পারবো না । এই সর্বগ্রাসী মর্মবেদনা আমার জীবনে স্মৃতিময় হাহাকারে চিরন্তন হয় থাকবে এ বেদনা আমি কোন দিন ভুলতে পারব না। শিলা আপু আমাকে এত বড় শাস্তি দিবেন না।আমি ওর মহ‌ৎ উদারতাকে প্রণাম করি।আমি কামনা করেছি আমার সাধনার মুক্তির, যে মুক্তি সকল পুরুষের কাছে আত্মনিবেদনের, আমি বিশ্বাস করি মানুষের মধ্যে সত্য আছে। সত্য আছে মহামানবের মধ্যে।যা মাধবীর মধ্যে আমি খুঁজে পেয়েছি। এই সত্য সদা মানুষের হৃদয়ে সন্নিবিষ্ট। আমি আবাল্য অভ্যস্ত ঐকান্তিক সাধনার গন্ডীকে অতিক্রম করে তারই উদ্দেশে আমার সমস্ত জীবনের কর্মের অর্ঘ তার হাতেই অর্পিত করেছি , তাকে নিয়েই আমি তৈরী করেছি অন্তরে প্রাসাদ।আমি জানি আমি কেবল মাত্র এসেছি ধরণীর মহাতীর্থে। এখানে আছেন সর্বকালের নরদেব ও দেবী, আমি তাঁরই বেদীমূলে নিভৃতে বসে তারই অর্চনা করে নিজেকে সমর্পিত করেছি আজ তা আর সফল হলো না আপু। শিলা আপু বললেন, শ্যামল শান্ত হও আমার কথা গুলো মনোযোগসহ শুন। ওদিকে শ্যামলের এ কথা গুলো শুনে মাধবীও ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।কি আর শুনবো আপু। আমার ধর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে।এ কথা গুলো বলে শ্যামল উঠে চলে যেতে চাইলে মাধবী বলে শ্যামল থাম, এতটা কেন ভেঙ্গে গেলে। বসো, তোমার সাথে কিছু কথা আছে। যা বলতে পারি নেই। তুমি নিজেকে বেশি বুদ্ধিমান ভাব এটা তোমার দোষ। যে দিন আমরা প্রথম ট্রেনে চট্রগ্রাম যাচ্ছিলাম, সেদিন তোমার সাথে ট্রেনে প্রথম পরিচয় হয়। বাবা তোমার পরিচয় জানতে চাইলে তুমি তোমার নাম বললে শ্যামল কুন্ডু। বাবার নাম বললে হরিপদ চট্রপাধ্যায়, মাতার নাম বললে জোস্না চট্রপাধ্যায়। আমরা সবাই সে দিন হাসা হাসি করেছিলাম। বাবা বললেন, শ্যামল এটা কি করে হয়। তুমি কুন্ডু আর তোমার বাবা চট্রপাধ্যায় বেমানান হলো কি না। তুমি বললে ও বুঝেছি, আমার নাম কেন কুন্ডু হলো তাই না। হা তাই। বাবা ও ভাইদের মধ্যে জমি জমা ভাগ বাটোয়ারা করার সময় বাবা একটা জমি কুন্ডুদের কাছে কিনে ছিলেন। আর ঐ ভিটাটিতে বাবা বাড়ি করেন। বর্তমানে আমরা ওখানেই থাকি। তাছাড়া ঐ ভিটার নতুন বাড়িতে আমার জন্ম তাই সবাই আমাকে কুন্ডু বলেই ডাকে। বাবাও আমাকে কুন্ডু বলে ডাকেন। যাই হোক,প্রথম দেখাতেই তোমাকে আমারও ভাল লেগেছিল। তাই তোমার সাথেই মিশেছি। অনেক আলাপ হয়েছে। যে দিন আমরা সিতাকুন্ডু পাহাড়ে উঠেছিলাম বাবা মা ভাই বোনেরা সবাই সিতার মন্দিরে অর্চণায় ছিলেন। তুমি আর আমি পাহাড়ের কোল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছিলাম।তুমি অনেক আলাপ করলে।অনেক ইতিহাস বললে, যা আমি মুগ্ধ হয়ে শুধু তোমার আলাপই শুনছিলাম। মনে মনে আমি কিছুটা হলেও তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ি। যাই হোক,তোমরা রাতে আলাপে বসলে,পরের দিন কোথায় যাবে। আমি সে দিন তোমাদের মিটিংয়ে অনুপস্থিত ছিলাম। তুমি তা জান।তোমরা ঐ দিকে ব্যস্ত থাকায় আমি সেদিন তোমার ব্যাগ তালাশ করি। যেহেতু তুমি মাঝে মাঝে রাতে এসে ব্যাগে কি জেন রেখে আবার চলে যেতে।তাই তোমার ব্যাগ তালাশ করি,আর সে সময় সেখানে তোমার একটা ডাইরী পেলাম। সেখানে তোমার বাবার নাম মার নাম ভাই এর নাম লিখা ছিল। তুমি তোমার ভাইদের মধ্যে বড়, তোমার কোন বোন নেই। এছাড়াও তুমি বি সি এস পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছো্,মার্চ মাসের তিন তারিখে তোমার পরীক্ষা,যার Admit card ও ছিল।আমি সে দিন প্রথম জানলাম তুমি মুসলিম পরিবারের সন্তান। মনে মনে ভাবলাম শ্যামল এ কি কাজ তুমি করলে। কেবল একটি মেয়েকে পাবার জন্য তুমি এত বড় মিথ্যার আশ্রয় নিলে। আবার ভাবলাম যাক যা হবার হয়ে গেছে ও যখন আমাকে পাবার জন্য এত বড় ডাহা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে তখন আর কি। তাকে যখন মনে মনে ভালবেসেই ফেলেছি তখন আর তাকে ঠকাবো না।সে দিনই আমি আমার ভাগ্যলিপি ঠিক করে নিয়েছি। তা ছাড়া আমরা যখন হস্তবিশারদ জোতিষী দাদার কাছে কালী মন্দিরে গেলাম তখন তাকে হাত দেখিয়ে ঠিক করলাম আমার সিদ্ধান্ত ঠিক আছে কি না। তিনিও আমার সিদ্ধান্ত সঠিক বলে রায় দিলেন। ফিরে আসার সময় তুমি আমাকে বার বার বলছিলে তোমার নাকি অন্য গোত্রের মেয়ের সাথে বিয়ে হবে। কথাটি তো জেতিষী বাবু ঠিকই বলেছেন। তুমি তো মুসলিম।আর আমি তো হিন্দু।দুজন দুই গোত্রের। তুমি কেনো বার বার মিথ্যা কথার আশ্রয় নিচ্ছিলে।আমি তো আগেই জানি তুমি মুসলিম পরিবারের সন্তান।তাই তোমাকে আমি বার বার বলেছি তুমি হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,খৃষ্টান যা কিছু হও না কেন আমি তোমাকে মানুষ হিসেবে ভালবেসেছি। ভালবেসে যাব। এতে আমার ভাগ্যে যা হয় হবে।ধন দৌলত থাকলে কি মানুষ বড় হয়।ধনের বড় মানুষ কখনই বড় মানুষ হয় না। মনের মানুষই মানুষ। আমি এমন একটি মেয়ে ধন দেখে তোমাকে সমাদর করব না। জন দেখে তোমাকে আদর করব না।সিংহাসন দেখে তোমায় সম্মান করব না। বাহুবলের জ্ন্য তোমায় সম্ভ্রম করব না।কেবল মন দেখে তোমায় পূজা করবো শ্যামল। এতক্ষণ শিলা আপু তোমাকে যা কিছু বললেন সবই ছিল তোমার মন বোঝার জন্য। শ্যামল আমি ও শিলা আপু ভাল করেই জানি তুমি সত্যিই আমাকে অন্তস্থল থেকেই ভালবাস। তাই নীরব ভাষায় বৃক্ষ আমায় সার্থকতার গান গেয়ে শোনায়।সিদ্ধান্ত তো আগেই নিয়েছি, এখন আর নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবার প্রয়োজন মনে করি না। তোমার মনকে যাচাই করার জন্য শিলা আপু এত কিছু বললেন। আর তুমি কিনা মেয়েদের মত ফ্যাল ফ্যাল করে কেঁদে ফেললে। তুমি একটা ভীরু কাপুরুষ ছেলে। তোমার এতটুকু সাহস হলো না জোর করে আমাকে কিছু বলার। সংসার করতে গিয়ে তোমাকে নিয়ে আমি খুব বিপদে পড়ব দেখছি। এখন আমার কথা গুলো শুন। এখন কিছু কাজ আছে ,যা এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য তোমার সাথে কিছু কথা বলার প্রয়োজন। তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম শিলা আপুর বাসায় বসে তোমার সাথে এ আলাপ গুলো করে নিব।এ কারণে এখানে আসা। শ্যামল আমার নামে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা সোনালী ব্যাংকে Fixed Deposit আছে। ছয় বছর প্রায় হয়ে গেছে। এটা এখন এক কোটিতে পৌঁছবে। এই টাকা আমি তোমার নামে Transfer করতে চাই। তোমার এখন কোন চাকুরী নেই। হবে কি না তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। আমরা যদি এখন বিয়ে করে ফেলি তা হলে এ টাকা থেকে আপাতত পঞ্চাশ লক্ষ টাকা নিয়ে একটা ব্যবসা বাণিজ্য কিছু করতে পারবে। আর বাঁকী পঞ্চাশ লক্ষ টাকা আমরা Fixed Deposit করে রাখবো। ব্যবসা করে যা লাভ হবে তা দিয়ে আমরা চলতে পারবো। আমি মনে করছি শিলা আপুর বাড়ি থেকেই আমরা ব্যাংকে চলে যাই।তাই কাগজ পত্র সব কিছুই নিয়ে এসেছি। তুমি কি বলো। মাধবী আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাস, আমার জন্য প্রাণও দিতে পার। আমি বলছিলাম,আপাতত ব্যাংকে না গিয়ে আরও বিশ একুশ দিন অপেক্ষা করি, এর মধ্যেই আমার বি সি এস পরীক্ষা হয়ে যাবে। পরীক্ষা দিলে বুঝতে পারব চাকুরি হবে কি না। তখন না হয় সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে। ঠিক আছে তুমি যা ভাল বুঝ তাই কর। আমার কোন আপত্তি নেই। কারণ আজ থেকে তুমিই আমার সব। শিলা আপু বললেন,শ্যামল যে কথা গুলো বললো আমার কাছে মনে হচ্ছে ঠিকই বলেছে। চাকুরীর কথা তো মাথায় রাখতে হবে । অনুপায় হলো ব্যবসা বাণিজ্যের চিন্তা। আমার মনে হয় তোমরা এটাই কর।তা ছাড়াও আরো একটা কথা মনে পড়ছে, তা হলো আপাতত তোমরা Post office সে তোমরা চল্লিশ লক্ষ টাকা Fixed করলে মাসে প্রতি লাখে নয় শত বারো টাকা করে পাবে। চল্লিশ লক্ষ টাকায় মাসে পাবে ৩৬৪৮০ টাকা। এর পর আর কি লাগে।তোমাদের সুন্দর ভাবে সংসার চলে যাবে। মাধবী বললো শিলা আপু সুন্দর কথা বলেছেন। শ্যামল তুমি চিন্তা করে দেখ। কি করবে। আমার মনে হয় এটা আমাদের জন্য ভাল হবে। শিলা আপু বললেন বিয়ে সাদীর ব্যাপারে তোমরা আমার বাসায়ও করতে পার,আবার কাজী অফিসে গিয়েও করতে পার । যেটা ভাল মনে কর করবে। মাধবী তোমাদের ব্যাপারে আমি তোমার দুলাভাইয়ের সাথে আলাপ করেছি সে বলেছে ওরা যেটা ভাল মনে করে করবে। তবে কিছুটা হলেও সাবধানে থাকতে হবে বড় দাদা যেন কিছুতেই বুঝতে না পারেন বিয়েটা আমাদের বাসায় হয়েছে। কারণ তিনি আমাদেরকে বিশ্বাস করেন। সম্পর্কটা একে বারে নষ্ট হয়ে যাবে।তার পরও সে বলেছে আমার মনে হয় শ্যামলকে বড় দাদা যে ভাবে ভালবাসেন তাতে তিনি সব কিছু শুনে এটা মেনেও নিতে পারেন। এখন দেখ তোমরা কি করবে। (অসমাপ্ত)

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

লেখকের আগের লেখাঃ