মার স্মৃতি
পশ্চিমাকাশে সন্ধ্যায় যখন সূর্য্যাস্ত চলে যায়
গোধূলির রক্তাক্ত আভা মেঘের কোলে লুকায়।
বিষজ্বালায় জ্বলে ওঠে তখন বক্ষের তন্ত্রীগুলো
ব্যাধিগ্রস্ত বিদীর্ণ অন্তর কথা বলে এলো মেলো।
জ্বলজ্বল ভীরু চোখে বজ্রপাত দেখি তাকিয়ে
মায়ের স্মৃতি বিভীষিকা যন্ত্রণার জ্বালা নিয়ে।
দরজায় মা বলে ডাকি,গোধূলির রক্তিম ক্ষণে
ছুটে আসে মা যেন স্বস্থি পেল আপন মনে।
যেন সর্বাঙ্গের ভীতি ক্লান্তি দূর হল অবসান
ব্যাকুলহৃদয়ে মা কহেন খেটেছিস দিনমান।
সুধাস্নিগ্ধ হাসি দিয়ে মা তখন ব্যস্ত হয়ে যান
মহাশান্তিতে তড়া করে তিনি রান্নার কাজে যান।
বিহবলতার আবেশে কিছুক্ষণ প্রসন্ন তন্দ্রায় কাটে
মৌন হাসিতে মা বলেন খোকা খেয়েনে চারটে।
হঠাৎ কপাটে ঠকঠক শুনি কার যেন পদধ্বনি
কপাট খুলে উঁকি দিয়ে দেখি,দাঁড়িয়ে আনূঢ়া চন্দ্রাননী।
নবোদিত ভারে তার দীর্ঘনিশ্বাস পড়ছে শুক্লপক্ষে
আবেগ ওকে তাড়িয়ে এনেছে আনন্দ বইছে বক্ষে।
অধরে ফুলঝুরি ঝরছে রুমার অত্যুজ্জ্বল চোখ দুটোতে
যেন জোস্নার ছটা পড়েছে অন্তরাত্মার আলো হতে।
নিঃশব্দে মন্থর ভঙ্গিতে হৃদয় যেন কি বলতে চায়
মায়াবিনীর অনাবিল প্রশান্তি আবার ক্রমেই ম্লান হয়।
প্রফুল্ল শুভক্ষণে করুণায় রুমা মেলে খোকার সনে
খোকার হাত জড়িয়ে ধরে তাকিয়ে ছলছল দু নয়নে।
বিস্ময়ে বলে নিজেকে লুকায়ে পেয়েছি শুধু যাতনা
বাঁধিতে চাই তোমাকে মনের ডোরে নেই কোন ছলনা।
সঙ্গীহীন শূন্যঘরে তৃষিত বক্ষে করেছি একাকী বাস
থাকব তুমি আমি মা, ঘটবে না কোন অবিশ্বাস।
দূর থেকে সস্নেহে মা রুমার কথার আওয়াজ পান
অনাথিনির সহায়ে মার হৃদয় জাগে গভীর স্পন্দন,
শুষ্ক বুকে অবসানে ভাসে অনেক থরহরি প্রতিধ্বনি
উদিবে উজ্জ্বল ভিটেখানি প্রসন্ন চিত্তে বলেন জননী।
মা তোমার সন্দিষ্ট সাড়া পেয়ে রুমাকে করেছি বিবাহ
মার অভাবে আমার মনে আজ বিস্মিত অশান্তির দাহ।
সন্ধ্যারবাতি নিভে প্রভাতে আজানের সুর দূরে ভাসে
কত কথা মনের মন্দিরে আসে যায় এমনি আভাসে।
আজ মা নেই উৎকণ্ঠার পুরানো স্মৃতি গুলো মনে অম্লান
আমি রুমা কন্যা নুনা আছি,মা নেই দুয়ার হয়েছে লীন।
ক্লান্তসন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে মনে পড়ে ছেলে বেলার স্মৃতি
মার কাছে বসে করেছি কত খেলা গোধূলি বেলার স্থিতি।
ডাক শুনে ধেয়ে আসে কন্যা নুনা বক্ষে জাগে ক্রন্দন
মাও আসতেন ওদিন এমনি করে দুয়ারে সদা সর্বক্ষণ।
দেরী হলে মা লণ্ঠন নিয়ে জেগে থাকেন বসে দূয়ারে
রাত করলি কেন সোনা,দেখেন দুয়ারটি বারে বারে।
হৃদয়স্পন্দন স্তিমিত হয় মার ডাক প্রাণে শুনতে পাই
ক্ষুধায় তৃষ্ণায় সঙ্কটে আমার প্রিয় বড় বন্ধু এখন নাই।
অসহ্য যন্ত্রণা দিয়েছি মা তোমায়,সহ্য করেছে নিরবে
নিমগ্নমনে বজ্রাধ্বনি উচ্ছসিয়ে উঠে শান্তিহীন অবয়বে।