পান্থ পৌর্বাপর্য (একাদশ পর্ব)
এ,কে,এম,নূরুন্নবী
আমরা ঠিক করলাম ঐতিহাসিক স্থান গুলো
দেখতে যাব। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-
"বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী-
মানুষের কত কীর্তি,কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে।"
অপরিচিত জগৎকে দেখার জন্যে আমাদের অন্তরে সব সময় আকুল আগ্রহ থাকে। আর
এই ভ্রমণ যাত্রাই আমাদের অন্তরে এনে দেয় অপরিসীম আনন্দ। বাংলাদেশ একটি
সুপ্রাচীন দেশ। প্রাচীনত্বের জন্যে বাংলাদেশের রয়েছে সারা বিশ্বে
পরিচিতি। বিভিন্ন সময় রাজ রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এ-দেশে কৃষ্টি ও
সংস্কৃতিতে দারুণ ভাবে উন্নতি লাভ করেছে। ফলে দেশের ঐতিহ্য ও ইতিহাস
বিদেশি পর্যটকদেরকে পুরাকীর্তি আকর্ষণ করেছে। বাংলাদেশের সর্ব
দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের বেলাভুমি প্রকৃতি নিজ হাতে গড়েছে। অপরদিকে
কক্সবাজারে রহস্যময সমুদ্র সৈকত লোভনীয় স্থান হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে।খুলনা
জেলার সুন্দরবন, রাঙামাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, সিলেটের চা
বাগান, তামাবিল, জাফলং,পটুয়াখালীর কুয়াকাটা,চট্রগ্রামে ফয়েচ লেক,যমুনা
সেতু ইত্যাদি পর্যটন স্থান হিসেবে সমাদৃত। হাজার হাজার বছর ধরে মানব
সভ্যতা ক্রমোন্নতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রস্তর যুগের সভ্যতা থেকে আজ অবধি
মানুষের রয়েছে হাজারো আবিস্কারের কাহিনী। উষালগ্নে মানুষ আগুন
আবিস্কারের মধ্য দিয়েই মানুষ আদিমতা থেকে সভ্যতার প্রথম পথ খুঁজে পায়।
এরপর থেকেই আবিস্কারের পথ যাত্রা। এমন এক সময় ছিল যখন মানুষ ও বন্য পশু
উভয়ই বনে বসবাস করত। মানুষ ছিল বুদ্ধিমান আর পশু ছিল দৈহিক শক্তিতে বড়।
মানুষ সভ্যতার বুনিয়াদটি গড়লো নিজ দৈহিক শক্তির উপর ভর করে। আপন
শক্তির বলে অন্নবস্ত্র উৎপাদন করলো। বাসগৃহ নির্মাণ করলো। সভ্যতার
আর এক ধাপ অগ্রসর হলো। কালক্রমে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার জন্যে
চাকা তৈরি করলো। চাকা আবিস্কারের মধ্যে দিয়েই মানুষ সভ্যতার পথ সহজ করে
তোলে।তারা বিভিন্ন যানবাহন তৈরি করলো। ইঞ্জিন আবিস্কার করে ফেললো।
আজ মানুষ পৌঁছেছে সভ্যতার চরম স্থানে। আদিম যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান
যুগ পর্যন্ত মানব সভ্যতার যে বিকাশ ঘটেছে তার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান।
জ্ঞান অন্বেষণের জন্য খুঁজতে হবে পুরাতন উপাত্ত। আমি বড় দাদাকে বললাম
দাদা আমাদের আদি ইতিহাস জানতে হলে ঐতিহাসিক স্থান গুলো দেখতে হবে। দাদা
বললেন চলো যাই। আমরা অতি আগ্রহে কিছুক্ষণের মধ্যে ভোলানন্দ গিরি আশ্রম
পৌঁছে গেলাম। একজন সাধু বললেনএখানে সারা বছর পূজা হয়। এখানে ফেব্রুয়ারী
মাসে শিবর্তুদশী নামে বড় মেলা হয়। দেশের বাহির থেকে অনেক সাধু সন্যাসী
মহিলা পুরুষ সহ অনেক লোকের সমাগম হয়ে থাকে। মেলা প্রায় মাসকাবারি চলে।
এর পর আমরা ভৈরব মন্দির হয়ে ভবানী মন্দির গেলাম। এখানে সবাই প্রার্থনা
করলেন। মাধবী কাকা বাবু ও কাকী মাকে বললেন বাবা মা শুন তোমরা এখানে
আমার মনের ইচ্ছাটা পূরণের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা কর। সবাই হাত
জোড় করে বললো হে ভগবান আমাদের মাধবীর মনের ইচ্ছা পূরণ করে দাও। আমরা
বাবা মা ভাই বোন সবাই তোমার কাছে প্রার্থনা করি তুমি তাকে নিরাশ করো
না। মন্দিরের সাধু বাবা বললেন এখানে এসে কেউ নিরাশ হয় না। যে যা চায়
ভগবান তার কথা শুনেন ও তার মনোস্কামনা পূরণ করে দেন। সাধু বাবা এখান
কার মন্দিরের প্রকর্ষ ইতিহাস বললেন।সীতা কুন্ডু উইকিপিডায়াতেও লিখা আছে।
শিবের স্ত্রী সতির বাবা যগ্যানুষ্ঠানের ব্যাবস্থা করেছিলেন। সে
অনুষ্ঠানে শিবকে আমন্ত্রণ না করে অন্যান্য দেবদেবীকে আমন্ত্রণ করেন। এতে
সিতা নিজেকে অপমানিত বোধ করলে ঐ যগ্যানুষ্ঠানে সিতা আত্মহুতি দেন।
ভগবান শিব তখন সিতার মৃত দেহ নিয়ে গোটা পৃথিবীতে আত্মচিত্কার করে ঘুরে
বেড়াতে থাকে। ভগবান বিষ্ণু এ দৃশ্য দেখ ভাবলেন শিবের আত্মচিত্কারে গোটা
পৃথিবী ধ্বংশ হতে পারে। তাই তিনি অগ্নি বাণে সিতার দেহকে একান্ন টুকরো
করে সেগুলো সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিলেন। জানা যায় তার একটা হাতের অংশ এ
মন্দিরে এসে পড়লে তখন থেকেই মন্দিরটির গুরুত্ব বেড়ে যায়। যে যার
মনস্কামনায় আসে তার ইচ্ছা ভগবান পূরণ করে থাকেন।এর পর আমরা স্বয়ম্ভূনাথ
মন্দির গেলাম। এখানে বারো মাস পূজা হয়। এখান কার সবচেয়ে বড় মন্দির বলে
এর পরিচিতি আছে। এর পর আমরা রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম গেলাম,সেখানে পরিচালক
সাহেব বলেন,আমরা এ আশ্রম থেকে প্রতি মাসের শেষ শুক্রবারে দরিদ্র জন
সাধারণকে চিকিত্সা সেবা ও বিনামূল্যে ঔষধ ও ত্রাণসামগ্রী বিতরন করে থাকি।এছাড়া
দেশ বিদেশ থেকে স্বনামধন্য সন্যাসীরা এখানে নিয়মিত আসেন,তারা অকাতরে
আমাদেরকে সাহায্য সহানুভূতি করে থাকেন। এছাড়া এখান কার অবস্থাশালী
লোকজন এ সেবা আশ্রমে সাহায্য করে থাকেন। একথা শুনে মাধবী বললো আমাদেরও
কিছু সহযোগীতা করা দরকার। সে বললো আমার কাছে দুশত টাকা আছে। আমি বললাম
আপাতত রাখ এই পাঁচ শত টাকা পরিচালকের হাতে জমা দাও। এর পর আমরা পাতাল
পুরি মন্দিরে যেতে চাইলাম, এখান কার স্থানীয় লোকেরা বললেন,সেখানে অনেক
দেবদেবী রয়েছে। তবে গহীন জঙ্গল হওয়ায় লোকেরা সেখানে যেতে নিষেধ করলেন।
সন্ধ্যার আগে সে স্থানে যাওয়াটা ঠিক না। জঙ্গলের আশপাশে দস্যুরা
মানুষের টাকা পয়সা কেড়ে নেয়। আমরা আর সেদিকে না গিয়ে ইকোপার্কের দিকে
ফিরলাম। পথিমধ্যে অনেক লোকের ভিড় দেখলাম। আমরা দাঁড়িয়ে গেলাম কি হয়েছে
ওখানে দেখা দরকার। সম্মুখে অগ্রসর হতেই দেখলাম তিনজন ছিনতাইকারীকে
জনসাধারণ হাতে নাতে ধরে ঠান্ডা জলাশয়ে দ্বিগম্বর করে নামিয়ে শাস্তি
দিচ্ছে।এ দৃশ্য দেখে আমরা সোজা চলে এলাম। প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আমরা
ইকোপার্কের গেটে এসে রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম। এরপর বাস ধরে চট্রগ্রাম
রওনা করলাম। আমরা খাবার শেষ করে হোটেলে ফিরলাম। হোটেল গেটে পৌঁছতেই
মাধবী বললো এ কি শিলা যে। তুমি কখন এলে, এই তো কিছু আগে এলাম। (অসমাপ্ত)