প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

সংবাদ, গণমাধ্যম ও সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা

 


আবদুল মান্নান

 

আমার বাসায় প্রতিদিন দশ থেকে বারটা পত্রিকা আসে । চারটি বাদে অন্য সবই সৌজন্য সংখ্যা । সবগুলি পড়া হয় না । তবে চোখ বুলাই । অন লাইনে বিদেশের আরো অর্ধডজন পত্রিকার উপর চোখ রাখি । পত্রিকা পড়া আমার স্কুল জীবনের অভ্যাস । কিন্তু ইদানিং বাংলাদেশে যে হারে পত্রিকার সংখ্যা বেড়েছে দূর্ভাগ্যজনক হলেও সেই হারে সাংবাদিকতা পেশার মান বাড়ে নি । ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার অবস্থাও অনেকটা একই রকম । একেবারে সাম্প্রতিক কালের দু’একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা ভাল বুঝা যাবে । হিলারি ক্লিন্টনের নাম শুনেন নি তেমন মানুষ বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া মুশকিল । যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন । যুক্তরাষ্ট্রে যখনই কেউ কোন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার চেষ্টা করেন তখনই মিডিয়াতো বটেই তার প্রতিপক্ষরাও তার পুরনো দিনের হাঁড়ির খবর বের করে আনার চেষ্টা করেন । হিলারি যখন ওবামার পররাষ্ট্র সচিব তখন তিনি তার একটি ব্যক্তিগত ই-মেইল একাউন্ট ব্যবহার করতেন । দাবি উঠলো যাই ছিল সেই ব্যক্তিগত মেইলে তা জনসম্মূখে প্রকাশ করতে হবে । সম্প্রতি তার কয়েক হাজার মেইল কিছুটা সেন্সর করে জনগনের সম্মূখে প্রকাশিত হলো । তাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বেশ কিছু মেইল ছিল । বাংলাদেশের প্রায় কোন মেইন স্ট্রিম জাতীয় দৈনিকে খবরটা তেমন একটা গুরুত্ব পায় নি । কোন কোন পত্রিকাতো তা সম্পূর্ণ এড়িয়ে গেছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলে কথা । গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত সিরিয়া হতে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পরিবার নিয়ে বের হওয়া আবদুল্লাহ কুর্দির সম্পূর্ণ পরিবার ভূমধ্যসাগরে ডুবে প্রাণ হারালো । কোন রকমে বেঁচে গেল আবদুল্লাহ কুর্দি । তার তিন বছরের ফুটফুটে বাচ্চা আয়লান কুর্দির লাল জামা আর নীল হাফ প্যান্ট পরা নিথর দেহ ভেসে এসে ঠেকলো তুরস্কের এক রিসোর্টের কাছের উপকূলে । ছবিটা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছে । বিশ্বের যে সব দেশে নীতিগত মৃতদেহের ছবি ছাপে না তারাও তাদের নীতিমালার বাইরে এসে ছবিটি ছাপতে বাধ্য হলো । এই হৃদয় বিদারক ঘটনা নিয়ে আমি নিজে একটি ইংরেজি দৈনিকে মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তা সুদূর ফিনল্যান্ডের একটি অন লাইন পত্রিকা তা পুনঃপ্রকাশ করে । বাংলাদেশে প্রায় সব পত্রিকা ছবিসহ গুরুত্ব দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করেছে । ব্যতিক্রম একটি বহুল প্রচারিত পত্রিকা । এতবড় ভুল সকলের চোখে পড়েছে । শনিবার গেল হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব জন্মষ্টামি । একই পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে এই বলে এই উৎসব উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম জিয়া হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ! মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান কী পদ্ধতিতে এই শুভেচ্ছা জানালেন তা বুঝার চেষ্টা করছেন অনেকেই । বেগম জিয়াতো এখন বিরোধী দলীয় নেত্রী নন । তিনি বিএনপি’র চেয়ারপারসন । বিরোধী দলীয় নেত্রী হন সংসদে । যেমন সোনিয়া গান্ধি এখন কংগ্রেসের সভাপতি । এই সব ভুল ভ্রান্তির জন্য দায়ী কী সম্পাদক নাকি বার্তা সম্পাদক তা সংবাদপত্রের সাধারণ পাঠক বুঝতে পারেন না । সঠিক সংবাদ না পেলে তারা প্রতারিত হন । আর আমাদের গণমাধ্যমতো সব সময় সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে রীতিমত উপদেশ খয়রাত করে । পদ্মাসেতু নিয়ে যখন চারিদিকে হৈ চৈ একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের একজন রিপোর্টার বেশ বড়সর একটি টিম নিয়ে নেমে পড়ললেন জনমত জানানোর জন্য । রিক্সা থামিয়ে চালকের কাছে প্রশ্ন করলেন সরকারতো পদ্মা সেতুর সব টাকা মেওে দিয়ছে । এই সম্পর্কে আপনার কী মত? এরপর ছুঠলেন কারওয়ান বাজারের তরকারি বিক্রেতার কাছে । প্রশ্ন একই । জবাবে তারা সকলে শেখ হাসিনা আর সরকারের মু-ুপাত করলো । অথচ এই একটি টিভি চ্যানেল শেখ হাসিনা যখন প্রধানমন্ত্রী তখন তিনি নিজে উদ্বোধন করেছিলেন ।
আর একটি সংবাদের কথা না বললেই নয় । সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউট (আইআরআই) নামের একটি সংস্থা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি ও সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতার উপর চালিত এক চকিত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছে । সংস্থাটি সেই জরিপ স্বদ্যোগে পরিচালনা করে । জরিপের ফলাফল সরকারের জন্য বেশ স্বস্তিদায়ক । তাতে বলা হয়েছে শেখ হাসিনার বর্তমান মেয়াদে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা বেড়েছে । সংস্থাটি চলতি বছরের মে ও জুন মাসে ৬৪টি জেলায় দু’হাজার ৫২৫ জনের উপর এই চকিত জরিপ পরিচালনা করে । তাদের সহায়তা করে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল স্ট্র্যোটেজিক পার্টনার । জরিপে দেখা গেছে অধিকাংশ উত্তরদাতা মনে করেন দেশের নেতৃত্ব সঠিকভাবেই চলছে । উত্তরদাতারা সব সব প্রশ্নের উত্তরেই বর্তমান সরকার, আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনাকে বিএনপি ও বেগম জিয়ার তুলনায় এগিয়ে রেখেছেন । গত বছরও সংস্থাটি এমন একটি জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেছিল । সে বারের তুলনায় দেখা গেছে একার শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা কয়েক ধাপ বেড়েছে । বিশ্লেষকদের মতে এই বাড়ার কারণ হতে পারে শেখ হাসিনার শক্তহাতে সন্ত্রাস দমন করা আর ঝুঁকি নিয়ে হলেও সময় মতো সাংবিধানিক ভাবে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা । এর ফলে কোন অসাংবিধানিক তৃতীয় শক্তির উত্থান তিনি রুখে দিতে পেরেছেন । তবে জরিপে যে বিষয়টি উল্লেখজনক ভাবে ফুটে উঠেছে তা হলো ২৪ শতাংশ উত্তরদাতারা মনে করেন দেশের প্রধান সমস্যা হলো দুর্নীতি । জরিপের ফলাফল কয়েকটি পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে প্রকাশিত হলেও অনেক পত্রিকা হয় তা এড়িয়ে গেছে আবার কিছু পত্রিকা তা দায়সারা ভাবে প্রকাশ করেছে । এটি এখন কোন রাখ ঢাকের বিষয় নয় যে, বাংলাদেশের একশ্রেনীর নষ্ট হওয়া সুশীল ব্যক্তি আর বেশ কিছু গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে বা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না । তারা পারলেই গণতন্ত্রের নাম করে কালই বেগম জিয়াকে যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় বসাতে চান । বেগম জিয়া বা তার দল ক্ষমতায় যাবেন বা থাকবেন তাতেতো কোন আপত্তি নেই । তাতো হতে হবে সাংবিধানিক উপায়ে । সেই সুযোগতো তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি হারিয়েছেন । তাদেরতো অপেক্ষা করতে হবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত । অন্যদিকে বিএনপি‘র প-িত নেতা ডঃ আসাদুজ্জামান রিপন, বাবু গয়েস্বর চন্দ্র রায়, হান্নান শাহ চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললেন সরকারের জনপ্রিয়তা যদি এতই বাড়ে তাহলে তারা আগাম নির্বাচন দিয়ে তা প্রমান করুক । এমন আহাম্মকি কথা সচরাচর শোনা যায় না । যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, ভারত বা জাপানে এমন জরিপ হর হামেশা হয়ে থাকে । কখনো সরকারের বা সরকার প্রধানের জনপ্রিয়তা উঠে বা নামে । তাতে কেউ আগাম নির্বাচনের দাবি করেন না । অন্যদিকে ব্যারিস্টার মউদুদ আবিষ্কার করেছেন সরকারের ভিতর অস্থিরতা শুরু হয়ে গেছে । তিনি দলীয় নেতা কর্মীদের আগাম নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন ।
জরিপের ফলাফলে আওয়ামী লীগ ঘরানার সকলেই স্বাভাবিক কারণেই খুশি । তবে এটা স্বীকার করতে হবে দুর্নীতির বিষয়টাকে যতটা গুরুত্ব দেয়া উচিৎ সরকারের কাছে হয়ত ততটাতো গুরুত্ব পাচ্ছে না । উপমহাদেশের পুলিশ দূর্নীতিপরায়ণ সেই অভিযোগ বহু পুরানো । বাংলাদেশ পুলিশ তার ব্যতিক্রম নয় । তবে বাংলাদেশে এখনো পুলিশ বাহিনীতে বহু সদস্য আছেন যারা নিজের জীবন বিপন্ন করে তাদের কর্তব্য পালন করেন । একটি ডুবন্ত বাচ্চাকে বাঁচাতে ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় একজন পুলিশ সদস্য পানিতে ঝাঁপ দেন । জামায়াত শিবিরের সন্ত্রাসীর আঘাতে কেউ কেউ প্রাণ হারান । আবার অন্য দিকে আছে কোন একটি ঘটনা ঘটলে হাজার খানিক অজ্ঞাত মানুষের নামে মামলা ঠুকে দিয়ে কোন কোন থানা ঘুষের কাউন্টার খুলে বসে । এটিতো শুধু একটি সেক্টরের দুর্নীতির চিত্র । সব সেক্টরেই কম বেশী দুর্র্নীতি আছে । এই দুনীর্তির কারণেই সরকারের অনেক অর্জন ম্লান হয়ে যায় । তার উপর এখন আবার যোগ হয়েছে আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কিছু অঙ্গসংগঠনের দূর্বৃত্তপনা । এদের মধ্য ছাত্রলীগ/ যুবলীগ নামধারি কিছু দূর্বৃত্তদের নাম সকলের উপরে উঠে আসে । এদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই কঠোর হওয়ার চেষ্টা করেছেন । সম্প্রতি তিনি ছাত্রলীগের এক সভায় বলেছেন, দল থেকে সকল আগাছা পরিষ্কার করতে হবে । কিন্তু দলতো আগাছায় ভরে গেছে, তাকে পরিষ্কার করবে কে? ছাত্রলীগ/যুবলীগ চেইন অব কমান্ড বলতে কিছু আছে বলে মনে হয় না । বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়া ছাত্রলীগ নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সময় হয়েছে । আওয়ামী লীগের সামনে এই মুহূর্তে তেমন কোন চ্যালেঞ্জ নেই । চ্যালেঞ্জ যা আছে তা নিজেদেরই সৃষ্ট । তা দূর করতে হলে দেশে প্রকৃত অর্থে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই । অনেক সময় মনে হয়, দেশের আমলাতন্ত্র সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই । তারা বিনা কারণে দেশের বিভিন্ন পেশাদার গোষ্ঠীকে সরকারের প্রতিপক্ষ বানিয়ে তুলেন । অথচ, যাদের প্রতিপক্ষ বানানো হচ্ছে তারা কিন্তু সকলেই এই সরকারের শুভাকাঙ্খী । অনেকের প্রশ্ন কেন এই নতুন ফ্রন্ট খোলা? যোগ্য, দক্ষ, নিষ্ঠাবান ও পেশাদার আমলাতন্ত্র ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় । হতে পারে কোন কোন আমলা বর্তমান সরকারকে বিভিন্ন উপায়ে বিব্রত করতে চান । এটিতো বলার অপেক্ষা রাখে না সরকারের প্রশাসনে যারা আছেন তারা সকলেই বর্তমান সরকারের হয়ে কাজ করেন না । কোন কোন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর সাথে আমলার দ্বন্দ্ব ওপেন সিক্রেট । এতে ক্ষতি হয় সরকারের । ফায়দা লুটে সরকারের প্রতিপক্ষরা । সাধারণ মানুষের সাথে কথা বললে মনে হয় দেশের সকল সমস্যা একজন শেখ হাসিনাই দূর করতে পারেন । মানুষের ধারণা যে একেবারে উপেক্ষা করার মতো তা কিন্তু নয় । এর সাথে আছে কোন কোন এলাকায় সংসদ সদস্য ও স্থানীয় নেতার একেবারেই অপরিণামদর্শী কর্মকান্ড বা দূবৃর্ত্তপনা যা সরকারকে বিব্রত করে । জরিপে যদিও বলেছে সরকার ও শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে তাতে বগল বাজানো হবে আত্মঘাতি । মনে রাখা ভাল সাংবিধানিক ভাবে ২০১৯ সালে আবার নির্বাচনে যেতে হবে । এই সময়ের মধ্যে সতর্কতার সাথে পথ না চললে ২০১৯ সালে বিপদও ঘটতে পারে । আর তা যদি হয়, তাতে সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ।
শুরু করেছিলাম গণমাধ্যম নিয়ে । সব গণমাধ্যম সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে নি । কোন কোনটা করেছে । তাতে তেমন কিছু আসে যায় না । বর্তমানে সাধারণ মানুষকে বোকা ভাবা ঠিক নয় । তারা ঠিকই ভাল মন্দ বুঝেন । সরকার যদি ঠিক পথে চলে মানুষের সমর্থন সব সময় সাথে থাকবে । একজন শেখ হাসিনার উপর সব কিছু ছেড়ে দিলে তা তাঁর উপর চরম অবিচার হবে ।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । সেপ্টম্বর ৭, ২০১৫

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

[......লেখক আর্কাইভ]