|
এই বর্বরতার শেষ কোথায়?
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
রাজনীতির নামে যা চলছে দেশে, এ থেকে পরিত্রাণের উপায়ান্তর দেখছিনা । সাধারণ
জনগনের বাঁচা-মরা এখন প্রধান দুই দলের নেতা-নেত্রীদের হাতে । অতীত সময়ে
অপরাজনীতির খপ্পরে পড়ে সাধারণ জনগনের নাভিশ্বাস উঠতো, আর এখন নাভিশ্বাস নয়,
শেষ নিঃশ্বাসই ত্যাগ করতে হচ্ছে- ককটেল পেট্রোল বোমা আর বন্দুক যুদ্ধের
বেড়াজালে পড়ে । ক্ষমতা ধরে রাখা এবং যেনতেন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়ার বলির পাঠা
এদেশের আমজনতা । ক্ষমতা লিপ্সু রাজনীতির এই করদ রাজ্যে জনগন বড়ই অসহায় । ঘর
থেকে রেরুতে হয় দগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণের অজানা আশংকা নিয়ে, সুস্থ্য স্বাভাবিক
ভাবে ঘরে ফিরতে পারা ভাগ্যের ব্যাপার । ইতিমধ্যে এহেন রাজনৈতিক সহিংসতার বলি
হয়েছেন শতাধিক মানুষ । এসব দেখেও নির্ভীকার আছেন ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতির
কর্তাবাবুরা, আর দেখেও না দেখার ভাণ করছেন এক শ্রেনীর সুশীল নামক উচ্চ
শিক্ষিত ভদ্র-জনতা ।
এহেন রাজনৈতিক উন্মাদনায় হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে প্রতিদিনই বাড়ছে
ভূক্তভোগীর সংখ্যা, এর মধ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশী । পরিবারের
অন্ন সংস্থানের উদ্দেশ্যে নিরূপায় হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঘরের বাহিরে এসে
জীবন্ত দগ্ধ হচ্ছেন । হিন্দু সনাতনী ধর্মের সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ হয়েছে মেলা
আগে, কিন্তু আমাদের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে এ কোন দাহ ? রাজদাহ ! ক্ষমতা দাহ
! নাকী লুটেরাদের মসনদ দাহ !
পত্রিকা খুললেই চোখে পরে পুড়ে যাওয়া মানুষের ছবি, ভূক্তভোগী পরিবারের
আহাজারী, নিঃস্ব হয়ে যাওয়া পরিবারের করুণ আর্তনাদ । আদরের সন্তান বাবার
সামনে দাঁড়িয়েও খুঁজে বেরায় প্রতিদিন চকলেট নিয়ে আসা চিরচেনা আদুরে চুমু
খাওয়া বাবাকে, পুড়ে বিকৃত বিভৎস্য চেহারার বাবাকে চিনতে পারেনা সন্তান । মা
সন্তানকে বাবার সামনে নিয়ে গেলে সন্তান ভয়ে দূরে সরে যায় । অবুঝ সন্তানের
এই অবস্থা দেখে অশ্রু সংবরণ করা সত্যিই কষ্টকর । রংপুরের বাসযাত্রী মা তার
শিশু সন্তানকে বুকে আগলে রেখেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেননি, মায়ের আগলে
রাখা নিরাপদ বুকেই দগ্ধ হয়ে ছাই হয়েছেন মা ও অবুঝ শিশু । এ কেমন ক্ষমতার
লড়াই ! যাদের সেবাদানের জন্য রাজনীতি, তাদেরকেই পুড়িয়ে মারছেন । এবারকার
উন্মাদনা অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়েছে । তবে রাজনীতির নামে জনগনের জান-মাল
নিয়ে এহেন হোলিখেলা এবারই প্রথম নয়, প্রতিবারই রাষ্ট্র ক্ষমতার
পট-পরিবর্তনের পর নিয়মিত বিরতি দিয়েই ফিরে আসছে । এ যেন আমাদের নিয়তি হয়ে
দাঁড়িয়েছে । মাত্রা ও ইস্যুগত পার্থক্য থাকলেও একেকবার একেক অজুহাতে ফিরে
আসে এই আন্দোলন নামক অরাজকতা । কখনও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের নামে, কখনও
তত্ত্বাবধায়কের দাবীতে, কখনও ভোট ও ভাতের অধীকার নিশ্চিতকরনের দাবীতে, কখনও
ভোটচোরী ঠেকানোর নামে । লক্ষ্য একটাই ছলেবলে কৌশলে রাষ্ট্র ক্ষমতা আমার
চাইই-চাই । অদ্ভূত এক প্রবণতা দেখা যায় সর্বদা ক্ষমতাশীন দলের মাঝে, একবার
ক্ষমতা পেলে আর ছাড়তে চান না, নিত্য নতুন কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়ে ক্ষমতাকে
আঁকড়ে ধরে থাকতে চান । আর তাই প্রতিবারই মেয়াদান্তে বিরোধীদলকে নামতে হয়
মল্লযুদ্ধে, আর তাতে সম্পদ ও জীবন দিয়ে মূল্য দিতে হয়-দেশ জনতাকে ।
এই ধ্বংসলীলাকে রাজনীতিকরা রাজনীতির পরিভাষায় গনতান্ত্রিক আন্দোলন বললেও
প্রকৃতপক্ষে কর্মসূচী গ্রহন ও বাস্তবায়নে ন্যূনতম গনতান্ত্রিক আচরণ
পরিলক্ষিত হয়না । এমনকী এসব দলের অভ্যন্তরে গনতন্ত্র চর্চাও যথেষ্ট প্রশ্ন
সাপেক্ষ । অথচ জনগনের গনতান্ত্রিক অধীকার, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও ন্যায়
ভিত্তিক আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য গলা ফাটিয়ে বক্তব্য রাখেন । সবই
বুলি-সর্বস্ব, আখেরে জনগন নয়, উন্নয়ন ও সুবিধা ভোগ করেন ধোঁকাবাজ
রাজনীতিকরাই । জনগনকে জিম্মি করে জনগনের জানমালের ক্ষতি সাধনের পর
আন্দোলনরত দল বিবৃতি দিয়ে বলেন-জনগন যেন বড় অর্জনের জন্য ছোট ক্ষতিকে মেনে
নেন । আর সরকারী দলের নেতা-মন্ত্রীরা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দিলেও কার্যতঃ দেড় মাসেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে
পারেননি । বিরোধীদলের বড় অর্জনের বাণী এবং সরকারীদলের পরিস্থিতি
নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস জনগনের জীবনকে নিয়ে নিছক উপহাস বৈ কিছু নয় । আর কত জীবন
দিতে হবে এই তথাকথিত বড় অর্জনের জন্য ? আর কত জীবন ঝড়ে গেলে সরকার
পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবেন ? আর এই বর্বরতার শেষইবা কোথায় ?
লেখকঃ জাপান প্রবাসী।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|