|
মেরেছে শিশু এই ধরণীর, জিতেছে কে ! বাংলাদেশ কী শিক্ষা নিবে?
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
শিশুদের
কোলাহল মূখরিত স্কুলে আচমকা ঢুকে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েমে আন্দোলনরত
তেহরিক ই তালেবান নামক ঘাতক চক্র নির্বিচারে গুলি চালিয়ে কেড়ে নিয়েছে ১৩২টি
নিষ্পাপ শিশুসহ ১৪১ জন মানুষের তাজা প্রাণ । বিশ্ব বিবেক স্তব্ধ, ঘৃণা আর
ধিক্কার জানাচ্ছে ঐ ঘাতকচক্রকে । কী দোষ ছিল ঐ কোমলমতি শিশুদের ! ঘাতক চক্র
নিমিষেই শিশুদের ক্লাসরুমের হৈই-হৈল্লুর আর শিশুসূলভ কোলাহলকে আল্লাহু
আকবার আর বুলেটের ধ্বনীতে স্তব্ধ দিল । এই দৃশ্য দেখে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে
সকল মানুষ চোখের পানি ফেলেছেন । অসহায় মা-বাবাগণ গভীর শোক ক্ষোভ আর হাহাকার
ভরা হৃদয়ে এই শিশু সন্তানদের কফিন বইতে হয়েছে । ঘাতক চক্রের হৃদয়ে মমতা ও
মানবতাবোধের লেশমাত্র অবশিষ্ট থাকলে এই নির্মম হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে
সদর্পে বিবৃতি দিতে পারত না । এ কেমন ধর্মযুদ্ধ ! এ কেমন ধরনের ইসলামী
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লড়াই ! এ কেমন প্রতিশোধ পরায়নতা ! যার বলি হতে হচ্ছে
অবুঝ শিশুদের । ইসলাম কী এহেন ন্যাক্কারজনক পৈচাশিক হত্যাকান্ডকে সঠিক মনে
করে ? ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানধারী কেউ সহমত পোষন করার কথা নয় । অথচ
ইসলামের নাম করে এক শ্রেনীর ধর্মান্ধ
জঙ্গিগোষ্ঠি বিভিন্ন দেশে এই ধরনের
হামলার মাধ্যমে নিরীহ নিরপরাধ জনতার জীবন কেড়ে নিচ্ছে ।
আমাদের দেশে এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা এ ধরনের ঘটনার মধ্যে সর্বদা
ইহুদী-নাসারাদের গন্ধ খুঁজে পান । এসবকে ইহুদী-নাসারাদের মদতপুষ্ট রাষ্ট্র
ও মিডিয়ার বাড়াবাড়ি এবং ইসলামকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে অভিহিত
করে জঙ্গিদের নৃশংসতাকে আড়াল করার চেষ্টা করেন । সময় এসেছে- এহেন
ন্যাক্কারজনক হত্যাযজ্ঞে কতটা ইহুদী-নাসারারা দায়ী, আর কতটা দায়ী ইসলামী
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংঘবদ্ধ জঙ্গিগোষ্টী । সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তান ও
আফগানিস্তানের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ইহুদী নাসারা নয়, বেশীর ভাগ
ক্ষেত্রেই মুসলমান-মুসলমানকে হত্যা করছে । আর এসব করছে তথাকথিত ইসলামী
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নাম করে । বিশেষতঃ বিজয়ের মাসে পাকিস্তানে সংগঠিত
বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে আমাদের দেশে এক শ্রেনীর মানুষ দুঃখ ও নিন্দা
প্রকাশের পাশাপাশি তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন । ভাগ্যিস, আমরা এই বর্বরজাতি থেকে
আলাদা হয়েছি, আমরা মুক্ত ও নিরাপদ আছি এবং পাকিস্তানকে পিছনে ফেলে এগিয়ে
যাচ্ছি । আরব বিশ্বের বাস্তবতা কী তাই বলে ! নিশ্চয় না । এই এক ভয়ংকর
ভাইরাস, যা এক মুসলিম রাষ্ট্র থেকে অন্য মুসলিম রাষ্ট্রে ছড়াবেই ।
পাকিস্তানের এহেন ঘটনায় আত্ম-তৃপ্তি নয়, বরং আতংকিত এবং সাবধান হওয়ার
সর্বোচ্চ ম্যাসেজ বটে ।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক চরিত্রে এই
ধরনের জঙ্গিবাদের ক্ষেত্র তৈরীর পক্ষে-বিপক্ষে দুটি ধারাই বিদ্যমান ।
নিশ্চয় সবার স্মরণে আছে- রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ও সমর্থনে রাজশাহীর বাঘমারায়
বাংলা ভাই কিভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে গাছে ঝুলিয়ে মানুষ হত্যা করে নিজস্ব
শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল এবং জেএমবি সারাদেশের ৬৩টি জেলায় এক সাথে বোমা
ফাটিয়ে তাদের শক্তি-সামর্থ্য ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার কথা জানান দিয়েছিল । আবার
অন্যদিকে আমাদের রাষ্ট্রের জন্মগত চেতনা ও ঐতিহ্য এই ধর্মীয় জঙ্গিপনার
বিরুদ্ধে । বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ আমাদের মহান
মুক্তিযুদ্ধে এই ভূখন্ডের মানুষ অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষেই রায় দিয়েছে ।
দুর্ভাগ্য আমাদের, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে বিতাড়িত ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি ৭৫
পরবর্তী সময়ে ফিরে এসেছে । ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনার কারনে
বাংলাদেশ কী এহেন ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির ভাইরাস জঙ্গিপনার হোলিখেলা থেকে
মুক্ত থাকতে পারবে ? তার সম্ভাবনা নাই বললে অত্যুক্তি হবে না ।
পাকিস্তানে শিশুদের স্কুলে জঙ্গিদের উন্মাদনায় বাংলাদেশের সুশীল
বুদ্ধিজীবী লেখক কবি সাহিত্যিক গণজাগরণ মঞ্চ ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো
কী সঠিক ভূমিকা রাখতে পেরেছেন ? আমার দৃষ্টিতে তা হতাশাব্যঞ্জক । এটা ঠিক
পাকিস্তানের অতীত কর্মকান্ডের জন্য পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের মধ্যে
ঘৃণা বিদ্যমান আছে, কিন্তু পাকিস্তানের শিশুদের প্রতি নয়, ওরা আমার-আপনার
সন্তানের ন্যয় অবুঝ, ওরা পুষ্প এই ধরণীর । ওদেরকে কেন্দ্র করে কেন পারিনি
আমাদের স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র/ছাত্রীদের মাঝে শোকের চিহ্ন কালো
ব্যাজ ধারন করাতে, কেন পারিনি আমাদের শিশুদের শোকের মিছিলে যুক্ত করতে ।
কেন পারিনি আমাদের শিশুদের ঘৃণা বার্তা জঙ্গিগোষ্টীর কাছে পৌঁছে দিতে । কেন
পারিনি ধর্মাশ্রয়ী জঙ্গিপনার রাজনীতিকে আমাদের রাষ্ট্র থেকে উচ্ছেদের
গণজোয়ার তুলতে । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী
খালেদা জিয়া পাকিস্তানের এই মর্মান্তিক বিয়োগান্তক শিশু হত্যাকান্ডের
প্রতিবাদে জঙ্গিবাদীদের বিরুদ্ধে নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছেন এবং ভূক্তভোগী
পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়েছেন । শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার একই
সুরের এই বিবৃতিকে কেন্দ্র করে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে গনজোয়ার তুলতে আমাদের
সুশীল বুদ্ধিজীবী ও মিডিয়া ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন । এই ধরনের সুযোগ আবার
কবে আসবে তা জানিনা, তবে এই সুযোগকে কাজে লাগাতে না পারার দায় সুশীল
বুদ্ধিজীবী এবং মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের নিতে হবে ।
এইটা সত্য, আমরা বসে থাকলেও জঙ্গিরা কিন্তু বসে নেই, ওরা বাংলাদেশ মায়ানমার
ইন্ডিয়ার কিয়দংশ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানকে ঘিরে ভবিষ্যত বলয় গড়ে তুলতে
সচেষ্ট, বর্ধমান বোমা বিস্ফোরণে ধৃত জঙ্গিদের কথায় ইতিমধ্যেই তা প্রকাশ
পেয়েছে । তাই কালবিলম্ব না করে এই অঞ্চলের রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে জঙ্গি দমনে
উচ্চ পর্যায়ের সামরিক চুক্তি অপরিহার্য্য, একক রাষ্ট্রের দ্বারা এহেন
জঙ্গিপনা দমন সম্ভব নয় । এর বাহিরেও আমাদের রাষ্ট্রকে অধীকতর নিরাপত্তা
বেষ্টনীর মধ্যে আনতে বিএনপি আওয়ামীলীগ সহ অপরাপর সকল প্রগতিশীল দলকে
ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবীতে একাট্টা হতে হবে । ক্ষমতায় থাকার জন্য বা
ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রধান দল দুটি যেভাবে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতিকে আস্কারা
দিচ্ছেন । তাতে আশংকা হচ্ছে সেদিন খুব বেশী দূরে নয়, যেদিন আমার-আপনার
সন্তান বলি হবে এহেন জঙ্গিবাদের উন্মাদনায় ।
লেখকঃ জাপান প্রবাসী।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|