|
জাপানে উইমেন্স ক্লাব অব জাপান প্রতিষ্ঠাও মনোরম সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা
জেসমিন সুলতানা কাকলী, টোকিও থেকে ।। ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৭ ।।
১২ই ফেব্রুয়ারী রবিবার টোকিও র আকাবানে কিতা সিটি হল এ যাত্রা শুরু হলো
জাপানে অবস্থানরত বাঙালি মেয়েদের উদ্যোগে উইমেন্স ক্লাব অব জাপান কেক কেটে
ক্লাবটির যাত্রা করা হয় , নিখুঁত আর চমৎকার আকর্ষণীয় এই কেক টি তৈরী
করেছেন জেসমিন সুলতানা কাকলি | অনেকদিনের পরিকল্পনা শেষে এবার প্রথম বাঙালি
মেয়েদের নিয়ে একটি ক্লাব বা এসোসিয়েশন ,রুমানা রউফ সোমা এবং সুবর্ণা
মিত্রার উদ্যোগে গঠন করা হয় | ক্লাবটি গঠনে বিভিন্ন ভাবে সার্বিক সহযোগিতা
করেছেন জেসমিন সুলতানা কাকলি ,বন্হী আহমেদ ও লাকি | দুপুর ১.৩০ থেকে মূল
অনুষ্ঠান শুরু করা হয় ,অনুষ্ঠানটিকে ৩ভাগ এ ভাগ করা হয়|১ম পর্ব ছিল
মধ্যাহ্ন ভোজন ,সুস্বাদু খাসির বিরিয়ানি ,তন্দুরি চিকেন , ডিম দিয়ে সবাই
ভোজন পর্ব শেষ করে | ৩টার দিকে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে মান্যবর রাষ্ট্রদূত
মহোদয় রাবাব ফাতেমা ও ইকোনমিক মিনিস্টার ড.সাহিদা আখতার অনুষ্ঠানে এসে
পৌঁছান ,ফুল দিয়ে বরণ করে নেন কমিটির সদস্যরা ,ইতিমধ্যে আমন্ত্রিত বিশেষ
অতিথীরাও অনুষ্ঠানে এসে পৌঁছান|ফেব্রুয়ারী মাস ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা
জানিয়ে একুশের গান দিয়ে ২য় পর্বের সূচনা করা হয়,সবাই সুরে সুর মিলিয়ে
গেয়ে উঠে ''আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো''গান টি | উইমেন্স ক্লাব বিশেষ
সম্মানীয় স্থানে কর্মরত নারীদের সম্মান প্রদর্শন এর সিদ্ধান্ত নেয় ,এইবার
তারা প্রথম ৩জন বাঙালি নারীদের সম্মাননা প্রদর্শন করে,প্রথমবারের এই আয়োজনে
মান্যবর রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা কে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন
দুই উদ্যোক্তা রুমানা রউফ সোমা ও সুবর্ণা মিত্রা | ক্রেস্ট হাত এ পেয়ে তিনি
এতটাই আনন্দিত যে -বলেই বসলেন ''মনে হচ্ছে অস্কার পেয়ে গেলাম '',তিনি এমন
সাহসী উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য
অনুপ্রাণিত করে বক্তব্য রাখেন | ২য় সম্মাননা প্রদান করা হয় দীর্ঘদিন
জাপানে বসবাস রত এবং সামাজিক কর্মকান্ডে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে
ব্যস্ততার সাথে সময় পার করছেন মুন্সী রোকেয়া সুলতানা কে,এতদিনের জাপান
জীবনে এই প্রথম সম্মাননা মূলক ক্রেস্টপেয়ে তিনি আনন্দ প্রকাশ করেন এবং
মজবুত একটি ক্লাব গঠন করে কার্যালাপ নিয়মিত করার উৎসাহ দেন | ওয়াসেদা
ইউনিভার্সিটির প্রফেসর তানিয়া হোসাইন কেও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা প্রদান
করে উইমেন্স ক্লাব অফ জাপান ড. তানিয়া বলেন এমন একটি সম্মাননা গ্রহণ করে
নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে ,তাও আবার শুধু মাত্র মেয়েদের দ্বারা সংগঠিত কোনো
ক্লাব এর মাধ্যমে | জাপানে দীর্ঘদিন বসবাসরত এবং উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত
রয়েছেন এমন কিছু নারীদের ও ফুল এর তোড়া দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে এই
ক্লাব টি,সবাই নিজ নিজ বক্তব্য রাখেন এবং এমন একটি আয়োজনের প্রশংসা ও
ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আয়োজকদের | অনুষ্ঠানে একটি অংশে জাপানি মেয়ে বাঙালি
বধূ কাজুমি চাকলাদার কেও ফুলদিয়ে সম্মাননা জানানো হয় | বাঙালিদের সামাজিক
যে কোনো অনুষ্ঠানে সবার সাথে তার সৌহার্দ সুলভ আচরণ সত্যি অতুলনীয় ,উনি
হাত এ হাত লাগিয়ে খাবার বিতরণ থেকে শুরুকরে পরিছন্নতার কাজ এ পর্যন্ত
সহযোগিতা করে থাকেন ,বাঙালি কোনো সংগঠন থেকে এমন পুরস্কার এর আয়োজন দেখে
বিস্মিত হন ,তিনি যে খুব খুশি হয়েছেন সেটিও জানান |তার এই সম্মাননা
পুরস্কার অন্যান্য জাপানি ভাবীদের উৎসাহিত করবে বলে তিনি বলেন | অনুষ্ঠানের
৩য় পর্বে ছিল পিঠা প্রতিযোগিতা ,দূর দূরান্ত থেকে আপুরা ,ভাবিরা বাহারি
পিঠা বানিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেই,ভোট এর মাধ্যমে বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়
| মান্যবর রাষ্ট্রদূত পিঠার এই সমাহার দেখে অবাক হয়ে যান এবং নিজ হাত এ
তুলে তুলে পিঠার স্বাদ নেন এবং ভোট এ অংশ নেন | সবার ভোট গণনায় ১ম স্থান
অধিকার করেন জেসমিন সুলতানা কাকলি দুধ খেজুর পিঠা বানিয়ে,২য় স্থান অধিকার
করেন ভাপা পুলি পিঠার রাঁধুনি রিনা নিশিকাওয়া,৩য়স্থান অধিকারিনী পার্সিয়া
বানিয়েছিলন লবঙ্গ লতিকা পিঠা,তারা ৩জন ই রাষ্ট্রদূত এর হাত থেকে পুরস্কার
গ্রহণ করেন এবং এতবছর জীবনে বিভিন্ন জায়গায় রান্না করে নিয়ে যান ঠিকই
কিন্তু রান্নার উপর পুরস্কার তাদের প্রক্যেকের জীবনেই প্রথম,এমন আয়োজন
করার জন্য তারা আয়োজকদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন এবং প্রতি বছর এমন ১টি
প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করার জন্য উইমেন্স ক্লাব এর প্রতি অনুরোধ রাখেন |
অনুষ্ঠানে রাফেল ড্র এর আয়োজন ছিল,লটারির মাধ্যমে মান্যবর রাষ্ট্রদূত আখির
নাম ও নম্বর টি ঘোষণা করেন,বিজয়ী আঁখি আকর্ষণীয় পুরস্কার রাষ্ট্রদূত এর
হাত থেকে পেয়ে খুশিতে যেন কথাই বলতে পারছিলনেন না ,এমন একটি আয়োজন এ না
আসতে পারলে তার আফসোস থেকে যেত এমনটি ও বলেন | অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি
পরিবেশনায় নৃত্য পরিবেশন করে স্বরলিপি কালচারাল গ্রুপ এর সদস্য কলি ,এবং
মূল আকর্ষণ ছিল সর্বশেষ পরিবেশনা ফ্যাশন শো ,বাংলাদেশ ও জাপানের পোশাকের
উপর ফ্যাশন শো টি করা হয়.এতে অংশ নেয় তানিয়া,সুপর্ণা ,নওরিন অদিতি ,সুমি
চৌধুরী ,হৃদিতা ,উষা হাবিব ,রুহি জামান ও মিম | বাজনার তালে তালে ফ্যাশন
শোর পরিবেশনায় অনুষ্ঠানে এক ব্যতিক্রম আমেজের পরিবেশ তৈরী হয়,সবাই খুব ই
আনন্দের সাথে উপভোগ করে | পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা ও পরিচালনায় ছিলেন
এনএইচকে'র এর সংবাদ পাঠক তনুশ্রী গোলদার ,এবং সহযোগী হিসাবে কাজ করেছেন সোমা
| অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত আনন্দের সাথে উপভোগ করেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত সহ
আমন্ত্রিত সকল অতিথীবৃন্দ ,রাষ্ট্রদূত এমন একটি উদ্যোগ দেখে সন্তুষ্টি
প্রকাশ করেন এবং সকল রকমের সহযোগিতার আশ্বাস দেন | জাপানে বাঙালি নারীদের
এমন একটি সংগঠন আরো আগে থেকেই থাকা উচিত ছিল এমনটি বলেন | অনুষ্ঠানে শতাধিক
মানুষ এর আগমন ছিল এবং আনন্দ ও উচ্ছাস এর মধ্যে মনে রাখার মত একটি দিন সবাই
অতিবাহিত করেছে এমনটিই সবার ভাষ্য ,এই মহতী আয়োজনের জন্য উইমেন্স ক্লাবকে
আগত সবাই ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন ঞাপন করেন | �দূরদুরন্ত থেকে অনুষ্ঠানে আসার
জন্য উইমেন্স ক্লাব এর পক্ষ থেকে সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয় |
জেসমিন সুলতানা কাকলী
সিনাগাওয়া,টোকিও
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly
prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
|