|
প্রবাসীদের মরদেহ সরকারী খরচে দেশে
পাঠানোর দাবি, জাপান প্রবাসীদের মুক্ত মত বিনিময়
কমিউনিটি রিপোর্ট ।। মে ৫, ২০১৭ ।।
সরকারী খরচে প্রবাসীদের মৃতদেহ দেশে পাঠানোর দাবিতে গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন
করেছেন ওয়ারাবী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, জাপান ৷ জাপানের সাইতামা জেলার ওয়ারাবী
এলাকার কুরুরু হলে ৩০ এপ্রিল, রোববার আয়োজিত একটি মুক্ত আলোচনা সভায় জাপান
প্রবাসীরা এই দাবি জানায় ৷
সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রহমানের সঞ্চালনে অতিথী হিসেবে দূতাবাসের প্রথম
সচিব (শ্রমিক ও কল্যান) মোহাম্মদ জাকির হোসেন, আমন্ত্রিত অতিথী বিশিষ্ঠ
সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক, সংগঠনের সিনিয়র উপদেষ্টা হক মোহাম্মদ ইমদাদুল ও
উপদেষ্টা আশরাফুল ইসলাম শেলী মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন ৷
মৃত্যু অবধারিত, মৃতদেহ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসে নানান প্রতিকুলতা
স্বত্বেও ঢাকা এয়ারপোর্টে লাশ গ্রহন ও সৎকারে নানান বাধা প্রবাসীদের
ক্ষেত্রে বেশীই হয় ৷
গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সিনিয়ার উপদেষ্টা হক মোঃ
ইমদাদুল ৷ তিনি বক্তব্যে বলেন, সরকারী হিসাবে প্রবাসীর সংখ্যা এক কোটির
বেশি ৷ বেসরকারী হিসাবে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি ৷ দেশের অর্থনীতির এক
বিরাট চালিকাশক্তি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ৷ যারা চুক্তিতে বিদেশ
যেতে পারছেন, তাঁদের মৃতদেহ দেশে পাঠানোর খরচ প্রতিষ্ঠানগুলো বহন করছে ৷
কিন্তু যারা চুক্তিতে বিদেশ যাচ্ছেন না, তাঁরা মারা গেলে তাদের মৃতদেহ দেশে
পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীদের সাহায্য ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না ৷
সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান
মন্ত্রণালয় দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য একটি ডেটাবেইস তৈরি করতে
পারে, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস লাশ দেশে পাঠাবে
৷ এতে সরকারের যে খরচ হবে তা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ২ শতাংশেরও
কম ৷
এই প্রবাসীরা কঠোর পরিশ্রম করে শুধু নিজের ভাগ্য বদলায়নি, জাতীয় অর্থনীতিসহ
রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান এবং দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে
আসছে ৷ এই অবদানের কথা মাথায় রেখে সরকার প্রবাসীদের দাবির প্রতি সহানুভূতি
দেখাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সংগঠনের সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, 'মারা যাওয়ার পর আমাদের প্রিয়জনের
কাছে আমরা ফিরে যেতে চাই ৷সরকার যেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিবেচনা
করেন' ৷
সিনিয়র সংবাদিক কাজী ইনসনুল হক বলেন, প্রবাসীদের মরদেহ দেশে আনার দায়িত্ব
সরকারের কেননা জীবিত ওই ব্যাক্তি তার উপার্জন স্বদেশে সরকারের কল্যানের
জন্য পাঠিয়েছিল ৷ ভিক্ষা নয়, সরকার টু সরকার বীমার আওতায় স্বল্প
প্রিমিয়ামের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান হয়তোবা সম্ভব ৷
সংগঠনের উপদেষ্টা আশরফুল ইসলাম বলেন, আমার জানা মতে এই উদ্যোগটি জাপানে
এটাই প্রথম এবং মহৎ উদ্যোগ ৷ উদ্যোগটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের
সংশ্লিষ্ট মহলের কছে বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ৷
দূতাবাসের প্রথম সচিব মোহাম্মদ জাকির হোসেন বিভিন্ন পরিসংখান দিয়ে জানান
বছরে প্রায় ৩০-৩৫ হাজার লাশ বাংলাদেশ বিমান বন্দরে আসে ৷ সরকার গৃহীত
কল্যান তহবিল থেকে লাশ দাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা এবং যারা সরকারী বীমার
মাধ্যমে বিদেশে যান তাদের পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকা দেয়া হয় ৷ জাপানে তাদের
ফান্ড খুব সীমিত, তবুও প্রবাসীদের এরকম কোন প্রয়োজনে তিনি সর্বদা পাশে
থাকবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন ৷
২০০৬ সালের এপ্রিলে সৌদি আরবে দুর্ঘটনায় আটজন বাংলাদেশী মারা গেলে শুধু
অর্থের অভাবে এই আটটি লাশ আবদুল আজিজ হাসপাতালে তিন মাস আটকে ছিল। বিষয়টি
অত্যন্ত অমানবিক।
অনুষ্ঠানে মতামত ব্যক্ত করেন - বাদল চাকলাদার, সালেহ মোহাম্মদ আরিফ, আব্দুর
রাজ্জাক, আলমগীর হোসেন মিঠু, মোফাজ্জল হোসেন, মুনির হোসেন, কুমার নন্দী,
ফখরুল ইসলাম, পি আর প্লাসিড, নজরুল ইসলাম, মোঃ আবদুল লতিফ, কাজী এনামুল হক,
মীর রেজাউল করিম রেজা, কাজী মাহফুজুল হক লাল, এম এ এম শাহীন ও মোহাম্মদ
নাজিম উদ্দিন প্রমূখ ৷
বক্তারা তাদের দাবি পূরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সহযোগিতা কামনা
করেছেন। বক্তারা আরো বলেন, আমরা আশা করি সরকারী খরচে প্রবাসীদের মরদেহ দেশে
আনার দাবিটি যথাযথভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হলে এই সমস্যা
আর থাকবে না ৷ এজন্য বক্তারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও
বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তথা এই দুই মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রীর
দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
বক্তারা বলেন, যারা দেশের অর্থনীতিতে রক্ত সঞ্চালনের কাজটি করছেন হাড়ভাঙ্গা
পরিশ্রমে সেই প্রবাসীরা বিদেশের মাটিতে মারা গেলে তাদের স্বজনদের কঠিন
পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় ৷ এখানে উল্লেখ্য যারা চুক্তিতে কোন দেশে যান
তাদের মরদেহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে দেশে পাঠালেও এর সংখ্যা অতি
নগন্য ৷ কারণ নিজ উদ্যোগে বিদেশে বাংলাদেশীর সংখ্যা বেশি ৷ এরাই মারা গেলে
তাদের মরদেহ নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ৷ প্রবাসীরা সরকারকে বিদেশে
থেকে যে পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠায় তাদের দাবি বাস্তবায়নে যতটুকু খরচ হবে তা
প্রাপ্ত রেমিটেন্সের ২ শতাশেরও কম হবে ৷ তাই বিষয়টিকে স্পর্শকাতর হিসেবে
চিহ্নিত করে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বের সাথে দাবিটি বিবেচনায় নেয়ার
জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান ৷
অনুষ্ঠান আয়োজনে নেপথ্যে ছিলেন ওয়ারাবী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন, জাপান এর মোঃ
নুরুল হক, আবু জাফর মোঃ মারুফ, শহীদুর রহমান শহীদ, আয়নাল হোসেন, নিশাত
সুলতানা শিখা, মইনুল ইসলাম মানিক, সুরাইয়া পারভিন মনি, ইকরামুল ইসলাম সুমন,
মোস্তাফিজুর রহমান, ফারজানা নিগার, বেগম আফরিন, আবু সাঈদ হিরু এবং আরো
অন্যান্যরা ৷
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
|