[প্রথমপাতা]
|
স্বপ্ন
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ, যে স্বপ্ন দেখেছিল ৭১ এর মুক্তির সংগ্রামে । সেই
স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েও আবারো স্বপ্ন জেগেছে নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা, হৃদয় ও
মনণ জগতে, যার ভিত্তিমূল গড়ে তুলেছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প, নাটক, সাহিত্য আর
ইতিহাসের অধ্যয়ন । লোভ ও মোহে আচ্ছন্ন হয়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা আর্মি
অফিসার ৭৫ এর ১৫ আগষ্টে একটি বিয়োগান্তক ঘটনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের
ধারাবাহিক চেতনাকে বাঁধাগ্রস্ত করেন । তৎপরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধের
খলনায়কদের রাজনীতির দৃশ্যপটে টেনে এনে মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের সংমিশ্রণে
গোঁজামিলের স্বপ্ন তৈরী করেন । বলা যায়- মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারদের
সংমিশ্রনে মিশ্র দৃষ্টির গোঁজামিলের স্বপ্নের বিভ্রান্তিতে জাতি ৭৫ থেকে
আজও ঘুরপাক খাচ্ছে । সময় এসেছে, মুক্তিযুদ্ধের আকাংখাকে ধারন
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করে এবং যুদ্ধাপরাধে যুক্ত জামাতকে নিষিদ্ধ
করে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানে ভূমিকা রাখার
।
যে স্বপ্ন ৭১ এ রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা দেখেছিল, সেই স্বপ্নের ট্রেনটির
শিকল টেনে কেন থামানো হলো ? কাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চলন্ত ট্রেনের
ড্রাইভার বদল হলো ? শিকল টানার শক্তি সাহসের প্রেক্ষাপট বা ক্ষেত্র তৈরীর
কারিগর কারা ছিলেন ? কেন স্বপ্নের গতিপথ পরিবর্তন করা হলো ? কেন ভৌগলিক
স্বাধীনতাতে মুক্তির স্বপ্নের ইতিটানা হলো ? কেন রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা
কাগুজে সার্টিফিকেট সর্বস্ব হলো ? আর স্বাধীন দেশের পতাকা কেন রাজাকারের
গাড়ীতে ওঠলো ? কে কার কাছে জবাব চাইবে ? নাকী এতে করে জাতিকে বিভক্তির
অজুহাত তুলে দমিয়ে রাখতে চাইবে ?
দীর্ঘ বিয়াল্লিশ বছরে মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
চর্চাকারীদের নষ্টালজিয়ার দোষে দুষ্ট বলে গুরুত্বহীন করা হয়েছে ।
মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নকে সেঁকেলে ধারনা বলে জগাখিচুরী মার্কা গোঁজামিলের
স্বপ্নে বাংলাদেশকে শাসন করলো আর এই শাসনে রাজাকার রাজত্ব ও পতাকা পেয়েছে ।
পতাকা সমেত রাজাকারের গাড়ীর বহরের ধূঁলোয় মুক্তিযোদ্ধা নিজেকে আড়াল করতে
ধূঁলোর কুন্ডলীর মধ্যে আশ্রয় নিতে হয়েছে, কেউবা রাস্তার পাশের টং দোকানে
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুখ লুকিয়ে নিজেকে আড়াল করেছে কিন্তু বুকের মধ্যে
চেপে রাখা দীর্ঘশ্বাসকে মুক্ত করতেই বিয়াল্লিশ বছরের এই অপেক্ষা । অতঃপর
ইতিহাস আর গল্প পড়ে যে তরুণ আজ যুবকে পরিণত তাদের ভোটেই মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাস ও মুক্তিযোদ্ধারা সন্মানিত হলেন এবং পতাকাধারী রাজাকার গোষ্টী
ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে ঠাঁই নিলেন কারাগারে । ইতিমধ্যে কুখ্যাত
রাজাকার কাদের মোল্লার ফাঁসিও হয়েছে, অন্যসব রাজাকাররা তাদের স্বপ্ন সাধের
ইতিরেখা টানার অপেক্ষা করছেন কারান্তরালে বসে ।
এরপর বাংলাদেশ কার চোখের স্বপ্ন পূরনে আগাবে, নিশ্চয় কোন অঘটন না ঘটলে বা
দৈবদুর্বিপাকে না পড়লে বাংলাদেশ আর গোঁজামিলের স্বপ্ন নয়, রণাঙ্গনের
সেদিনকার টগবগে মুক্তিযোদ্ধা যিনি আজ পড়ন্ত বয়সে উপনীত, উনাদের স্মৃতিতে
আজও যে স্বপ্ন ধারন করেন, সেই সব বীরমুক্তিযোদ্ধার পায়ের পাশে মাদুরী পেতে
লিপিবদ্ধ করবে-আজকের প্রজন্মের তরুন, শুনবে মনোযোগ দিয়ে, এতে করে রাজাকারের
গাড়ীর উড়ানো ধূঁলোর কুন্ডলীর ক্ষোভ, চায়ের কাপে মুখ লুকানোর ভয়াবহ কষ্টের
স্মৃতি ও বুকে চাপা দীর্ঘশ্বাস কিছুটা হলেও লাঘব হবে।
লেখকঃ জাপান প্রবাসী
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|