[প্রথমপাতা] |
গঙ্গাফড়িং
মো মি ন মে হে দী
বৃষ্টি দেখলে ছাদ খোঁজে না, ছাতা খোঁজে না৷ কেবল মুক্তোর দানা খোঁজে৷ শাদা
শাদা দানা৷ এই দানার মায়াবী সম্পদে ধনাঢ্য হওয়ার চেতনাটা তার অনেকদিনের৷ তা
প্রায় ২৭ বছরতো হবেই৷ ক্লাস সেভেনে থাকতেই নিজের জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়েছিল
সে৷ সেই জোয়াল এখনো কাঁধেই আছে৷ সকালের কথা৷ হল থেকে বের হয়ে ঘড়ি দেখল
টিকটিক চলছিল ঘড়ির প্রান৷ সেখানে প্রায় সোয়া নটা বাজে, অফিস দশটায়! এই অফিস
আওয়ারে রাস্তায় যা জ্যাম, নির্ঘাত আজ অফিসে দেরি হবে৷ অফিসে পৌছতেই বস যে
কড়া চোখে তাকিয়েছিল, সে চোখের দিকে তাকাতেই ভয়ে গলা বুজে আসে৷ আর কিছু বলার
সাহস থাকেনা৷ সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে চেয়ারে গিয়ে বসে৷ সকাল থেকেই আজ একটার
পর একটা অঘটন ঘটে চলেছে, নাস্তা খেতে খেতে পানি ঢালার সময় অনেকখানি পানি পড়ে
গিয়েছিল৷ সেই পানি গড়িয়ে পড়েছিল মেঝেতে৷ রম্নমমেটদের একজন নাসত্মার পেস্নট
হাতে ডাইনিং থেকে ঘরে আসতে পা পিছলে পড়ে গেল৷ তারপর অনেক বলে কয়ে রৰা পেয়েছে৷
বেরম্নতে গিয়ে অবশেষে নিজেই ওই পানিতে পিছলে যেতে যেতে রৰা পেয়েছে৷ কোনরকম
রক্ষা বলা যায়৷ এই পানিতে ওই রম্নমমেট পড়ে গেলে কি যে হত, ওহ ! এখন তা আর
ভাবতে পারছে না টিপটিপ বৃষ্টিবালিকারা জড়িয়ে ধরছে তাকে৷ হঠাত্ স্যান্ডেলটা
ছিঁড়ে যাওয়াতে মেজাজটা চটে গেল৷ স্যান্ডেল ছিঁড়ে যাওয়ায় হাঁটতে পারছেনা ৷
মেজাজ খিটখিটে হচ্ছে৷ শৈশব থেকেই এই মেজাজ বেচারার এমন হাল৷ টিপটিপ
বৃষ্টিবালকাদের আগমন চলছেই৷ কখনো এসে মাথায়, কখনো হাতের পতায় আবার কখনো জামা
কাপড়ে পড়েই চলছে বৃষ্টিবালিকারা৷ অন্য সময় হলে এই বৃষ্টিবালিকাদেও ভালোবাসা
খুবই উপভোগ করতো৷ কিন্ত এখন বিরক্ত লাগছে৷ এমনিতেই একা একা, তার উপর এই
সোহাগমাখা বৃষ্টিবালিকা৷ সাধারনত হেঁটে বড় রাস্তায় যেয়ে রিক্সা নিতে হয়,
কিনতু এখনত সেটাও সম্ভব নয়, রাসত্মার মাঝখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি করবে৷
মেজাজ খারাপ করে হেঁটে হলের পথে পা চালায়৷ এখন হলে গিয়ে স্যান্ডেলটা পালটে
আবার গলি দিয়ে হেঁটে রাসত্মায় বেরম্নবে৷ ইচ্ছেমত ভিজবে৷ ভিজতে ভিজতে হারিয়ে
যাবে দূরনত্ম আদরের দিগনত্মে৷
কি রে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে এলি যে?
কোন কথা বলে না সে, ভেতরে যায়, শার্টটা খুলে আবার বেরিয়ে পড়ে৷ ভিজতে ভিজতে
ক্লানত্ম হতে চায় সে৷ কিন্তু ব্যার্থ হয়৷ বৃষ্টিবালিকারা চলে যায়৷ ইচ্ছেটা
পুরোপুরি পূর্ণ হয়না৷ কবিগুরম্নর 'ইচ্ছেপুরন' গল্পটার কথা খুব মনে পড়ে৷
ইচ্ছে করছে সেই গল্পে ফিওে যেতে৷ তারও সব পথ বন্ধ৷ বিছানায় বসে গান ছেড়ে
নেটে বসে গেল সে৷ মাঝখানে বৃষ্টিবালিকারা মিছিলে মিছিলে আসলেও এখন আবার
টিপটিপে চলে এসেছে৷ ইমেইল চেক করতে গিয়ে দেখে একটা অচেনা আইডি থেকে মেইল
এসেছে৷ ভাইরাস ভেবে ডিলিট করতে গিয়েও করে না৷ আইডিটাও বাংলা নাম দিয়ে করা,
কি ভেবে মেইলটা ওপেন করতেই দেখল সূনবীর ছবি৷ এ কেমন ছবি সূনবীর! একি
বিশ্বাস করা যায়! সে একটা বিদেশী ছেলের সাথে বেশ অন্তরঙ্গ ভাবে ছবি তুলেছে৷
না না এ নিশ্চই কারো চক্রান্ত, তার ভালোবাসা এমন ঠুনকো কিছতেই হতে পারেনা!
সূনবীর সাথে তার সেই ছোট্ট কৈশোরবেলার বন্ধুত্ব৷ টানা ৭ বছর ব্ন্ধুত্বকে
একটা সময় এসে তারা প্রেম নাম দিল৷ সেই সূনবীর স্কলারশীপ নিয়ে বিদেশ চলে গেল৷
নেটে প্রায়ই কথা হয় ওদের, কিন্ত এরকম কোন ছেলের সাথে বন্ধুত্ব আছে সেটাতো
কোন দিন মুখ ফসকেও বলেনি সে৷ ছবির পোজ দেখে মনে হচ্ছে ছেলেটি সূনবীর অনেক
কাছের কেউ৷ তার ভাবনা হতে লাগল কতটা কাছের বন্ধু ছেলেটি? সেকি তার চেয়েও
কাছের! গূনবীর চোখ মুখের ভাজগুলিও কি সে তার চেয়ে বেশী ভাল করে পড়তে পারে৷
মেয়েটিকে তেমন সুশ্রী বলেও মনে হল না, টিপটিপ কতটা সুন্দর সেটা সবাই জানে,
পাশ থেকে হেঁটে গেলে একটু হলেও সবার চোখ আটকাবে তার দিকে৷ আর এই ছবিগুলি বা
তুলেছেই কে? সে কি ভাবে জানল তার মেইল আইডি, ছবি গুলির সাথে একটা ছোট্ট
চিরকূট "ভালবাসার অন্য নাম বিশ্বাসঘাতকতা"৷ নাহ ! আর কিছু ভাবতে চায় না সে
মাথাটা কেমন যেন ঘুরছে৷ ফ্যানটা ফুল স্পিডে বাড়িয়ে দিয়ে বিছানায় চলে এল
টিপটিপ, রাতে তার বেশ ঠান্ডা লাগছিল তাই ফ্যান কমিয়ে দিয়েছিল৷ এখন মনে হচ্ছে
আরো জোরে ফ্যানটা ঘুরলে ভাল লাগত তার ৷ বালিশে মুখ গুঁজে চোখ বন্ধ করে ভাবতে
ভাবতে কখন ঘুমিয়ে গেল সে৷ যখন ঘুম ভাঙলো তখন দেখলো, সূনবী আর সে- ক্লাশে
দুষ্টুমী করছে, বেথুল বনে কাঁটার আচড় খেয়ে কাঁদছে সে, সূনবী কাঁটা ছাড়িয়ে
দিচ্ছে৷ খোলা মাঠে দৌড়াচ্ছে- সেই তেপান্তরের মাঠ, পাখির বাচ্চা পেড়ে দিচ্ছে
রিফাত৷ আবার দেখল একটা বিদেশি ছেলে সূনবীকে জড়িয়ে ধরে আছে, তার হাতে হাত
রেখে হাতির বাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সে৷ যন্ত্রণায়, অপমানে একটা ভৌ দৌড়
দেয় সে৷ ঘুম ভেঙ্গে গেল৷ একটা আতঙ্কে হারিয়ে যেতে যেতে ঠিকানা আঁকড়ে ধরার
চেষ্টা করে সে৷ খেয়াল করে তার বৃষ্টিস্নাত মন৷ তখনো বৃষ্টিবালিকারা ঝরে
যাচ্ছে৷ আর গঙ্গাফড়িং ঠিকানা খুঁজছে সবুজ পাতার আড়ালে।
mominmahadi@gmail.com
www.mominmahadi.blogspot.com
০১৭১২৭৪০০১৫
[প্রথমপাতা] |
|