প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

জাপানে বিধ্বংসী ভূমিকম্প ও সৃষ্ট দানবীয় সুনামির ৫ম বর্ষ

 

 

কাজী ইনসানুল হক, টোকিও থেকে

 প্রকৃতির রুদ্ররোষে অসহায় মানুষ হারিয়েছে জীবন, সম্পদ ৷ নিশ্চিন্ন হয়ছে জনপদ ৷ বিশ্বের অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপান, সেই ধংশযজ্ঞের ভার বহন করে চলেছে গত পাঁচ বছর ৷ নানা প্রতিকুলতা কাটিয়ে মেটামুটি ভাবে সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠেছে জাপান ৷ জাপান বলেই এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে ৷ যদিও ঊনষাট হাজার মানুষ এখনো অস্থায়ী সরকারী আবাসনেই থাকছে, নিজের ঘরে ফিরতে পারেনি, সুনামির পাঁচ বছর পরেও প্রায় ৪০ ভাগ মানুষ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেনি, রক্তচাপ বেড়েছে, অনুভব ক্ষমতা কমে গেছে, নিদ্রা সমস্যা ভুগছে ৷

পুনর্বাসন ক্ষেত্রে এখনো বেশ সময় দরকার ৷ তবে সুনামির বিশাল ধ্বংশস্তুপ সরানো বা নিদৃষ্ট জায়গায় জড়ো করা গেছে, ফুকুশিমার ৮০ কিলোমিটারের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা প্রায় ৬৫% ভাগ নেমে এসেছে, মানুষের জীবন বাঁচাতে সুনামির আগাম সতর্কীকরণ পদ্ধতি আধুনিকরণ করা হয়েছে ৷

৯.০ ম্যাগনেচুড এর ভূমিকম্প, ১৯০০ সালের পর বিশ্বে এটা হল চতুর্থ ৷

২০১১ সালে জাপান সরকার ধারণা করেছিল সুনামিতে ক্ষতির পরিমান হবে প্রায় ১৬ ট্রিলিয়ন ইয়েন থেকে ২৫ ট্রিলিয়ন ইয়েন এর সম্পদ ৷

১০ই ফেব্রুয়ারী ২০১৬-র সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জাপানের সুনামিতে মৃত্যুর সংখ্যা ১৮,৪৫৬জন ৷
নিখোঁজ ২,৬৩৩ জন ৷

আশ্রিতার সংখ্যা ১৮২,০০০ জন ৷
বাড়ি-ঘর এবং অফিস-আদালত ধ্বংসের সংখ্যা সর্বমোট ৪০০,২৪৩টি ৷

সুনমি আক্রান্ত তিনটি জেলা থেকে সর্বমোট ২৩৬,০০০টি গাড়ি ভেসে গিয়ে বিনষ্ট হয় ৷


ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ী
 


 

 

বিধ্বস্ত গাড়ীর স্তুপ


বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল ৮,০০০,০০০টি বাড়িতে ৷
পানি সরবরাহ বন্ধ হয়েছিল ১,৮০০,০০০টি বাড়িতে ৷

উপকূলীয় সুরক্ষাঃ
বিধ্বস্ত সেনদাই এয়ারপোর্ট ঠিক করা হয়েছিল ২০১৩ সালের মার্চ মাসে ৷
পার্শবর্তী এলাকা সমূহ ২০১৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ৷
নদ-নদীর ব্যবস্থাঃ
২০১৫ সালের মধ্যে নদ-নদীর পানি পরিস্কার করা, আবর্জনা মুক্ত করা, পানির স্রোত স্বাভাবিক করা, ছোট ছোট মাছে পরিপূর্ণ করা এবং তীরগুলো ঠিক করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল ৷ কিন্তু তা সম্পন্ন হয়নি বলে এখনো কাজ অব্যাহত রয়েছে ৷

নর্দমার পানীঃ
নর্দমার পানী নির্গমনের জন্যে বিদ্ধস্ত ৬৪৮কিঃমিঃ ড্রেন এর মধ্যে ২০১২ সালে ৪৫২কিঃমিঃ ঠিক করা হয়েছে ৷ বাকী ১৯৬কিঃমিঃ ড্রেন ২০১৩ সালের মধ্যে ঠিক করা হয়েছে ৷


তিনটি জেলার ধ্বংসস্তুপের পরিমান ২০,৭৪৮,০০০ টন ৷
তন্মধ্যে মিয়াগী জেলাতে ১৩,৪৩৩,০০০ টন, ফুকুশিমা জেলাতে ৫,২৭০,০০০ টন এবং ইওয়াতে জেলাতে ২,০৪৫,০০০ টন ৷ ২০১৪ সালের জুন মাসের তিনটি জেলার ধ্বংসস্তুপ নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৭০% ৷ বাকী ধ্বংসস্তুপ ২০১৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারবে বলে সরকার আশা করছে ৷ 

 

 

 

ধ্বংসস্তুপ


ভূমিধ্বস দুর্যোগঃ
পাহাড়-পর্বত ধসে গিয়ে যেন বাড়ি-ঘর ধ্বংস না হয় এমন কিছু জায়গা ২০১৫ সালের মধ্যে সেগুলো ঠিক করা হয়েছে ৷

রাস্তা-ঘাটঃ
২০১২ সালে আবর্জনা দূর করা, সাময়িক ভাবে কিছু রাস্তা ঠিক করা এবং কিছু রাস্তা নতুন করে তৈরী ও করা হয়েছে ৷ ২০১৪ সালে ৩টি হাইওয়ের একটি বিরাট অংশ পূণনির্মান করা হয়েছে ৷

রেলপথঃ
২০১২সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে 'রিয়াস লাইন', 'জে.আর ইশিমাকি লাইন', 'জে.আর জৌবান লাইন', 'জে.আর সেনদাই লাইন', 'জে.আর কেসেননুমা লাইন' এবং 'জে.আর ওফুনানামি লাইন' এর কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে ৷ আরো দুইটি লাইন তথা 'জে.আর সেনইশি লাইন' এবং 'জে.আর ইয়ামাদা লাইন' এর কাজ এখনো অব্যাহত রয়েছে ৷

সামূদ্রিক বন্দরগুলোর কাজ ধীর গতিতে এগিয়ে চলছে ৷

স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রিদের খেলার মাঠ নির্মাণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ এবং হাসপাতাল নির্মাণ ও দোকান-পাট নির্মাণের কাজ ও একই সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে ৷

আরো অনেক কিছু করা হয়েছে এবং হচ্ছে ৷ এতবড় ধ্বংশযজ্ঞ, সারাতে দরকার আরো সময় ৷


অলৌকিক একাকী পাইন : সুনামি উপদ্রুত উপকুলের নিসঙ্গ সারথি

 

 

 

নিঃসঙ্গ পাইন


১১ মার্চ, ২০১১, শুক্রবার বিকেল ২:৪৬ মিনিট, জাপানের উত্তর পশ্চিম অঞ্চলে শক্তিশালী ৮.৯ মিটার ভূমিকম্প ও ভূমিকম্প সৃস্ট সুনামি তোহোকু অঞ্চলের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকুলবর্তি এলাকা ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল, ভেসে গিয়েছিল রিকুজেন্তাকাতা শহরের ৭০ হাজার পাইন গাছের সবটাই, অলৌকিক ভাবে বেঁচে গেছে একটি পাইন গাছ, প্রকৃতির রুদ্ররোষকেও ফাঁকি দিয়ে কেমন করে যেন এই পাইন গাছটি টিকেছিল । এই গাছটি যেন হয়েছিল নিসংগ সারথী ৷ বহু যত্নে গাছটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছিল কিন্তু বয়স ও পরিবেশের কারনে গাছটি বেশ কিছুদিন হলো মরে গেছে ৷ তবে কৃত্তিম ভাবে গাছটির রেপ্লিকা স্থাপিত হয়েছে ৷ এটি এখন পুনর্গঠনের প্রতীক যেন জানান দিচ্ছে .. আমি আছি, আমি ছিলাম ৷

সুনামি স্মারক উপহার

 

 

কেনজি হাগা ও তার বান্ধবী সোকো কোসাকা

সুনামিতে সব হারিয়ে কোনরকম বেচে যাওয়া কেনজি হাগা ও তার বান্ধবী সোকো কোসাকা সুনামির এক বছর পর তোহোকুর একটি ফটো প্রদর্শনীতে নিজেদের হাসিখুশী মুখের ছবি দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন ৷ কারন এই ছবিটাই সুনামি পূর্ব তাদের যুগল ছবি ৷

সুনামির একমাস পরে ফটোগ্রাফার কিওকাজু কাওয়াতানি এই ছবি ও সোকো কোসাকার অকেজো মেবাইল ফোনটি পেয়েছিলেন ৷

সুনামিতে লন্ড ভন্ড মিনামী সানরিকুর জে.আর. সিজুমি ষ্টেশন সংলগ্ন বিদ্ধস্ত একটি বাড়ীর জন্জালের মধ্যে ৷ কাওয়াতানি সুনামির পরপরেই একটি ভলান্টিয়ার দলের সদস্য হিসেবে বিদ্ধস্ত জনপদে ছবি সংগ্রহের কাজ করেছিলেন, যাতে নিহত ও নিখোঁজদের সনাক্ত করা যায় ৷ প্রায় দেড়লক্ষ ছবি ও ব্যাবহৃত জিনিস শেষ পর্যন্ত সংগৃহীত ও ডাটাবেজে সংরক্ষন করা হয়েছিল ৷ প্রায় ৪০ হাজার ছবি প্রকৃত মালিকদের ফেরৎ দেওয়া হয়েছিল ৷

২০১২ সালে একটি ফটো প্রদর্শনীতে নিজেদের ছবি দেখে দুজনই ফটোগ্রাফার কিওকাজু-র সাথে পরিচিত হন এবং কৃতজ্ঞতা জানান, ২০১৩ সালের জুলাই মাসে তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান ৷ বিয়ের দিন বড় পর্দা জুড়ে এই ছবিটি দেখানো হয় ৷

এই ছবিটি তাদের নতুন জীবনে একমমাত্র অতীতের স্মারক স্মৃতি হয়েই থাকবে ৷


শেষ কথা

১১ মার্চ, ২০১১-র পর পাঁচ বছর ।
স্বজন হারানোরা এখনও প্রিয়জনকে খোঁজে ।
গত পাঁচ বছর শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে বেঁচে থাকা সবাই কখনও নিভৃতে সেই ভয়াবহ দিনটির কথা স্মরণ করে, শিউরে উঠে ৷ নিজে কিভাবে বেঁচে গিয়েছিল তা ভাবে । পরিবারের মাঝে যে বন্ধন কঠিন বাস্তবতা ও যান্ত্রিকতায় আলগা হয়ে গিয়েছিলো তা পুনরুদ্ধারে সচেষ্ট হয় ।

এই সুনামিতে হাজার হাজার মানুষ ভেসে গেছে, বাড়িঘর বিলীন হয়েছে কিন্তু এই সুনামির ফলে ‘ঐক্য’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, একজনের সাথে একজনের ঐক্য, এই বন্ধনই নতুন করে দাড়ানোর মূল শক্তি ৷


( তথ্যসূত্রঃ সরকারী প্রকাশনা, ছবিঃ সংগৃহীত )
 

kaziensan@gmail.com

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

লেখকের আগের লেখাঃ