@ |
জাপানে দেশ বরেণ্য শিল্পী রনবী সম্বর্ধিত
বদরুল বোরহান ।। জুন ২১, ২০১৪ ।।
আর্ট ফর আর্ট সেক নাকি আর্ট ফর হিউম্যান সেক এই দু'এর বিষয় নয় বরং
বালাদেশের বরেন্য আঁকিয়ে শিল্পী "রনবী" (রফিকুন নবী)- কে নাগরিক সংবর্ধনা
এবং সম্মাননা ২০১৪ প্রদান করেছে টোকিয়স্থ কাহাল আর্ট গ্রুপ।
গত ১৫ জুন রোববার আকাবেন বিভিও হলে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীদের
উপস্থিতিতে শিল্পী রনবীকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মাসুদ
বিন মোমেন।
দীপজ্বলা সন্ধ্যায় বিপুল করতালির মাধ্যমে শিল্পী রফিকুন নবী মঞ্চে আসন
গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য ছিলো দর্শকদের অংশগ্রহণ সংকুচিত করে শিল্পী
রফিকুন নবীর কথা শোনা। কাংখিত স্বপ্নের কথা, তার শিল্পী হয়ে ওঠার কথা।
প্রথমেই তাঁর প্রাক্তন ছাত্র জাপান প্রবাসী শিল্পী সলিমুল্লাহ কাজল চারুকলা
অনুষদে তার অধ্যায়নকালীন সময়ের স্মৃতি রোমন্থন করেন। পাশাপাশি রফিকুন নবীর
সান্নিধ্যের কথা এবং আড্ডা প্রিয় এই মহান শিল্পীর চারিত্রিক মহাত্য নিয়ে
নাতিদীর্ঘ আলোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে সাংবাদিক মনজুরুল হক বক্তব্য রাখেন। তিনি রফিকুন নবীর মতন
কর্মনিষ্ঠ, সর্বপোরি ক্রমাগত উঁচু মানের শিল্পী হয়ে ওঠার বিষয়ে আলোচনা করেন।
এরপর রফিকুন নবী বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন ছাত্র হিসেবে আমি খুব আহামোরি
ছিলাম না। বাবা ছবি আঁকতেন। কিভাবে সেটা আমার মধ্যে সংক্রামিত হলো জানিনা।
চারুকলা সম্পর্কে কিছু না জেনে অনেকটা ঝোঁকের বশে আর্ট কলেজে ভর্তি হই।
ভবিষ্যতে অনেক বড় শিল্পী হবো এমন স্বপ্ন ছিলো না। স্বপ্নটা ছিলো অতি সাধারণ।
আর দশজনের মত সাদামাটা জীবন কাটালেই হলো। চারুকলায় ভর্তি হয়ে দেখি মহা
সমুদ্র। যে সব বিষয়ে আগে কখনো পড়িনি তার সুবিশালত্ব আমাকে অবাক করলো।
সমুদ্রে নেমে সাঁতার না কাটলে বাঁচা যায় না। আমাকে বাঁচার তাগিদে অথৈ
সমুদ্রে অবগাহন করতে হয়েছে।
উচ্চ শিক্ষার্থে তিনি গ্রীসে গিয়েছিলেন। সালটা ১৯৭২ বা ৭৩ হবে। এথেন্সে
সবুজ পাসপোর্টের সেকি সম্মান! সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশের পাসপোর্ট ও
মানুষ সেদিন কী রকম সম্মানিত হয়েছিলেন তার রোমাঞ্চকর বর্ণনা প্রদান করেন।
গ্রীসের অভিজ্ঞতার বয়ান দিতে গিয়ে তিনি চমৎকার হাস্যরস সৃষ্টি করেন। জনৈক
গ্রীক তাকে "লেবেন্ডিস" বলায় তিনি ক্ষেপে যান। পরে তিনি জানতে পারেন গ্রীক
ভাষায় লেবেন্ডিস মানে "সুদর্শন"। গ্রীসে তিনি তৎকালীন সময়ের তাবৎ
বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ লাভ করেন।
চারুকলায় সুদীর্ঘ ৪৬ বছরের শিক্ষাকতার সময়ে তিনি বিভিন্ন উচ্চপদে অধিষ্ঠিত
হয়েছিলেন। কিন্তু কখনই অন্যয়, অসততা কিম্বা লেজুড়বৃত্তিকে প্রশ্রয় দেননি।
অধিকুন্তু লন্ডলে স্কলারশীপের চুড়ান্ত পর্যায়ে বাতিল (পাকিস্তান সরকার
কর্তৃক) হওয়ার পর তিনি পুনরায় আর কখনো লন্ডনের জন্যে আবেদনও করেননি।
এর আগেও রফিকুন নবী দু'বার জাপানে এসেছিলেন। তার ছাত্র শিল্পী আফজাল ও আরো
কয়েকজন ছাত্রের আমন্ত্রনে প্রথম জাপানে এসেছিলেন ১৯৮০'র দশকে। জাপানে সেবার
তার ছবি প্রদর্শনীর এক পর্যায়ে জনৈক প্রিয়দর্শিনী জাপানি মহিলা তার একটি ছবি
ক্রয় করেন। এতে তিনি আনন্দে গদগদ হয়ে সেই মহিলাকে জাপানি ভাষায় "ঐশি" (সুস্বাদু)
বলে নিজেরে জাপানি ভাষার জ্ঞানের প্রকাশ ঘটাতে গিয়ে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়েন।
চারপাশে হাসির রোল পড়ে যায়। পরে ঐশি শব্দের অর্থ বুঝতে পেরে নিজেও মনে মনে
না হেসে পারেননি।
স্বৈরশাসক এরশাদের শাসনামলে তৎকালীন সাপ্তাহিক বিচিত্রায় তিনি টোকাই
কার্টুন সৃষ্টি করেন। অবক্ষয়ের সমাজে নানা রকম দুর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি,
অন্যায়, নিগ্রহ এবং সমাজের নিম্নস্তরের মানুষের দারিদ্র ও হতাশার পথ
শিশুদের বেওয়ারিশ জীবনযাত্রাকে টোকাই চরিত্রে উপস্থাপন করেন। কোনো সুদুর
প্রসারী চিন্তা এর মধ্যে কাজ না করলেও অতি অল্প সময়ে টোকাই পাঠক প্রিয়তা
পেয়ে যায়। এক কথায় সময় ও সমাজ টোকাইকে ধারণ করলো। তারপর টোকাইয়ের
অবিশ্রান্ত পথ চলা। বাকীটা শুধু ইতিহাস। টোকাই হয়ে উঠলো সমস্ত অন্যায়
অবিচারের বিরুদ্ধে এক জলন্ত প্রতিবাদ।
১৯৪৩ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে জন্ম গ্রহণ করেন রফিকুন নবী। ৪৭ এর দেশ ভাগ ৫২'র
ভাষা আন্দোলনের সময় তিনি ছিলেন নেহাৎই শিশু। ৫২ থেকে ৭১ এর মধ্যবর্তী সময়
তিনি বাঙালি জাতির লক্ষ্য পৌঁছানর জন্যে একটি উল্লেখযোগ্য সময় হিসেবে তিনি
উল্লেখ করেন। তিনি বলেন "যখন আমাদের সামনে সময়ের দুর্বিপাকে কোনো
সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকতোনা তখন কখনো রবীন্দ্রনাথ কখনো নজরুল আমাদের সামনে
এসে দাঁড়াতেন, আমরা আগামীদিনের আলোক বর্তিকা খুঁজে পেতাম"।
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে রফিকুন নবীর সাথে বাংলাদেশ থেকে আসা ও জাপানে
অধ্যায়নরত বেশ ক'জন চিত্রশিল্পীর সাথে দর্শকদের
পরিচয় করে দেয়া হয়।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন এমন একজন মহান শিল্পীর সান্নিধ্যে এসে তিনি
খুবই আনন্দিত। দেশের আরো গুনী ব্যক্তিদের এভাবে সম্মানিত করা প্রক্রিয়াকে
তিনি উৎসহিত করেন।
কাহাল গ্রুপের প্রধান কামরুল হাসান লিপু, রাস্ট্রদূত মাসুন বিন মোমেন এবং
সাংবাদিক মঞ্জুরুল হক শিল্পীর হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন।
সব শেষে ফটো সেশনের মধ্যে দিয়ে মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানটির পরিসমাপ্তি ঘটে।
অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন পরবাস সম্পাদক কাজী ইনসান ও সার্বিক
সহযোগিতায় সাংবাদিক রাহমান মনি। সমগ্র অনুষ্ঠানটির তত্বাবধানে ছিলেন কামরুল
হাসান লিপু।
bodrulborhan@gmail.com
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
|