[প্রথমপাতা]

 

 

 

ভুলের এমন দেবতা স্বভাব এবং কচি রেজা
 

মো মি ন মে হে দী
 


জীবনের পথ ধরে বহুদূর হেটে যাওয়ার বাসনা থাকলেও আমাদের পায়ের সামনে মাটি গরগর আওয়াজে ফাটতে শুরু করলে আমরা পেছন ফিরে বাড়ির দিকে ছুট লাগাই৷ কতক্ষণ বা কতোটা প্রহর এভাবে ছুটতে পারবো জানি না৷ বাঁধাভাঙা উচ্ছাসের শেষে দুষ্টু বালকের দল যেমন পরিশ্রান্ত ও নিথর হয়ে আসে, আমরা অনুভব করি প্রকৃতি এখন সেরকম পরিশ্রান্ত৷ খেলাটি শেষ হয়েছে এবং এখন সে ঘুমোবে৷ বাতাস নিথর, উপড়ানো গাছের ডালপালা ও ডোবার কাদাপানি পর্যন্ত নিথর৷ সেই নিথর কাদাপানির মধ্যে প্রবীণ ও মৃত সারসের সাথে টেকো মাথার ডেভোলাপাররা চমত্‍কার সিলুয়েট হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো দেখে আমরা নিশ্চল হয়ে পড়ি৷ ডোবার অদূরে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ ধরে দৃশ্যটির দর্শক হওয়ার ক্লান্তিতে আমাদের ঘুম পায়৷ অতঃপর আমরা মন্থর পায়ে ডোবায় নামি এবং ঘুমন্ত সারস ও ডেভোলাপারদের পাশে চুপচাপ শুয়ে পড়ি৷ এভাবেই কেটে যায় কবির কথনসময়৷ কেটে যায় অবসর প্রসন্ন বিকেলের কথা কথা আলো৷ সেই আলো পার হয়ে আসে অন্ধকারের পদাবলী৷ চাঁদ হয় পদাবলীর জনক, কবি তখন ছুটি কাটায় নারীর আঁচলে৷ মায়াবী জোত্‍স্নায় জাল বোনে ঠোঁট৷ এই জালে বন্দী হয় কবি, কবিতা আর কবিতার মগ্ন পাঠক৷ ভুলের এমন দেবতা স্বভাব৷ বুঝতে পারেন কবিদের কেউ কেউ৷ যারা বুঝতে পারেন তারা ছাড়িয়ে যান পৃথিবীর লোভ, বিলাস, ভোগ; সবকিছুকে৷ সবার উপরে কবি জায়গা করে নিতে পারে, যদি সে হয় লালন বা হাসনের মত অন্যরকম ভালোবাসার কাঙাল৷ কবিদের মধ্যে এই সাধনার সাধক হাতে গোনা কয়েকজন৷ বিশেষ করে আমাদের দেশে৷ সেই তালিকাটা মাঝে মাঝে বড় হয়, আবার মাঝে মাঝে ছোট হতে হতে শূণ্যে মিলিয়ে যায়৷ তারপর একটা হিসেবের হালখাতা খুলতেই হয়৷ সেই হালখাতায় উঠে আসে কবি রফিক আজাদ, কাজী রোজী, আসাদ চৌধুরী, মুহম্মদ নূরুল হুদা, রেজাউদ্দিন স্টালিন, হাসান হাফিজ, জরিনা আখতার, নাসির আহমেদ, দীপংকর গৌতম, জামিল আখতার বীনু, টোকন ঠাকুর, জগলুল হায়দার, সেলিনা শিরিন শিকদার, সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, বদরুল হায়দার, মনসুর হেলাল, কচি রেজা, সৈকত হাবিব, হাসান মাহমুদ, ফারুক আফিনদী প্রমুখের নাম৷ যাদের কাছে কবিতাই বিবেকের পাঠশালা, কবিতাই সংসার৷
সেই তাদের মধ্য থেকে কবি কচি রেজাকে 'ভুলের এমন দেবতা স্বভাব' উচ্চারণের জন্য নির্বাচিত করা যায় সৌন্দর্যশীল কাব্যজীবনের জন্য৷ যেখানে তিনি বলেছেন ভালোবাসা, ভালোলাগা আর সাহসমাখা কথাগুলো সৃজনমায়ায়৷ এই উচ্চারণ কালের চাকায় পিষ্ট হতে হতেও বলবে সময়ের সাহসকথা৷ তার প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা যায় কবির কবিতাচল৷ এই আঁচলে কবি বেঁধেছেন জীবনচাবি-
এই যে ভেঙে যাবার শব্দ তাতে আমি জীবনের কাছে
ক্ষতি পূরণ চাইতে পারি!
মুখ কি আমার নিরানন্দতার অভিব্যক্তি
আর ভেঙে যাবার শব্দ প্রতিবাদ?
তুমিও আর কতদিন এই নিষ্ফল প্রবাদ মেনে জীবনকাটাবে!
বৃক্ষের স্বাস্থ্য দেখেও তো বুঝতে পার ক্ষুনি্নবৃত্তি হয়েছে কী-না,
এখন যে অন্ধকার আমাকে বিদ্ধ করে প্রকৃতই সে এক
নির্মম তৈলপাত্র!
(এখন কোন আলো নেই)
মাটিকে কখনো পতিত ফেলে রাখতে নেই৷ যা-কিছু পতিত বা অ-ব্যবহারযোগ্য তার মধ্যে সভ্যতা চাষ করার নাম হলো প্রগতি৷ পতিতকে সচল-সক্রিয় না-করলে সে তার জড়ত্বের অভিশাপে প্রথমে মানুষকে খায়, তারপর নিজেকে খায়৷ আর মাটি গ্রাস হলে সভ্যতা থমকে যায়৷ মানুষের প্রগতি থেমে থাকে৷ প্রগতি থেমে গেলে নতুন মানুষরা তখন জন্ম নিতে পারে না৷ কথাগুলো যেমন সত্য, তেমন পালনিয়৷ মানুেষর জন্ম সুরক্ষণে নিয়োজিত মানুষদের তাই তাপমাত্রার অসহনীয় বাড়াবাড়ি উপেক্ষা করে জানালার শিক গলে বাড়ির পেছনদিকে নেমে পড়ে৷ আমরা তাদের অনুগমন করতে বাধ্য হই৷ কেননা আমাদের এরকম মনে হতে থাকে তাপভারে জর্জরিত দিনটি অসহ্য এবং সনাতন বিশ্বাস আঁকড়ে জড়প্রতিমার মতো স্থবির বাড়িটির সংস্কার ব্যতীত আজকের এই দুঃসহ উত্তাপের প্রশমন ঘটবে না৷ শাস্ত্রে বলে 'মানুষ ঘটনার দাস৷ ঘটনা তাকে এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানের দিকে নিয়ে যায় এবং এভাবে একদিন সে তার মোক্ষ বা পরিণামকে বুঝে ফেলে৷' এই শাস্ত্র-বচনের ওপর আস্থা রেখে আসুন আমরা কবিমানুষদেরকে অনুসরণ করি ... আমাদের ভয়কে তীব্র করার জন্যই বোধহয় জীবনের পুরনো বাড়িটিতে মাঝেমধ্যে বানরকুলের আবির্ভাব ঘটে৷ গাছপালার ডালে তীব্র আলোড়ন তুলে ওরা আসে৷ বাড়ির ছাদ ও কার্নিশে তুমুল হল্লা পাকায়৷ বেজি ও ভীমরুলের চাক এতে ক্ষণিকের জন্য চঞ্চল হয় বটে, কিন্তু বানরদল যেমন অকস্মাত্‍ আসে তেমনি কিছু বুঝে ওঠার আগে প্রস্থান করে৷ এই আবির্ভাব এক অশনি ইঙ্গিত হয়ে আমাদের বুকে কাঁপন ধরায়৷ পত্তনীদার হওয়ার জবরদস্ত লোভটিকে দমন করে মনে-মনে ভাবি 'যে-মাটি বনবাদারের গ্রাসে লাগে তাকে আবাদ করার মতো বুকের পাটা আমাদের নেই৷ গরিব-গুর্বোর ঝুপড়িঘরে ঋণ শোধের তাগাদা দিতে আমরা সিদ্ধহস্ত হতে পারি কিন্তু এই বন্য মাটির বুকে দখলিস্বত্ব কায়েম আমাদের কাজ নয়৷ বুনো মাটির অনাবাদি পিণ্ডরা চাষা ও জমিদারের অপেক্ষা করে৷ নিদেনপক্ষে সে এমন কোনো পত্তনীদারের বশীভূত হয় যার কাছে মাটি হচ্ছে সন্তানের চেয়ে খাঁটি৷ সন্তান বিশ্বাসঘাতক হতে পারে, কিন্তু মাটি অবিশ্বাসী হয় না৷ সে তার মনিবের লাঙলের গোলাম৷ যেহেতু তা নই, শুকনো মরিচ দিয়ে বানানো মাতুয়ার ভর্তায় জিভ ও টাকরার সুরসুরি চুকিয়ে ফল-সঞ্চয়ী কাঠবেড়ালি ও সারস পাখির পাখা ঝাপটানোর দর্শক হওয়ার মাঝে নিজের বাসনাকে সীমাবদ্ধ রাখি আমরা৷ সেই আমাদের আবার অনেকরকম ভাবনাবিলাস৷ এই ভাবনাবিলাসীদেও বাইওে নন কবি কচি রেজাও৷ তিনি ভাবতে ভাবতে পথ হাটেন৷ ভাবতে ভাবতে মত কাটেন কবিতার হীরকখন্ডে৷ মত কাটতে কাটতে তিনি লিখেছেন-
জগতের সত্যি কথার আঙুল কি কেটে গেছে, ডাইনির হিংসা যে ভালো
গাছগুলোকে নিমগাছ কওে রেখে দেয় তুমি কি সেই ফুলমুখী গাছ
দেখেছো?
গারাদিন আমি মিথ্যে কথা বলি সে গাছগুলোর সঙ্গে,
বাঁশখড়কাঠের মৃত দেহের মিথ্যাই সূর্যমুখী ফুল, আমি জানি জগতে
উনুনগুলোও মিথ্যে কথা বলে, আর আগুনতো পোড়াকপাল নিয়েই
জন্মেছে
সেদিন থেকেতেলেপুড়ে থাকা নিমগাছকে আমি সমানভাবে রোদ দেই
( খোড়ো ঘরগুলোর শপথ)
ভুলের এমন দেবতা স্বভাব৷ কবি কচি রেজার অবাধ সাঁতার কাটা দুপুরের সবুজ পুকুর৷ এই পুকুরে তিনি সাঁতার কেটেছেন অনবদ্য বালিকা হয়ে৷ যে বালিকার কোন পিছু টান নেই৷ নেই পিছে ফিওে যায়ার সুপ্ত বাসনাও৷ নিদ্রা ও জাগরণের চক্রাকার বর্তুল ওয়ারিশানদের ভাগ্যে কোনো ফল বয়ে আনছে না দেখে জলা-জঙ্গলায় পতিত বাড়িটি দরদামের দুনিয়ায় সকলের চোখের সামনে আশ্চর্য সুঠামতা নিয়ে বহাল রয়ে যায়৷ ঋতু থেকে ঋতু এভাবে ঘুরে চলে আর জলা-জঙ্গলারা মিলে বাড়িটির দফারফা করে৷ না-ডোবা না-পুষ্কুরনিটি ততদিনে নিরেট ডোবায় পরিণত হয়েছে৷ আবাদের অভিধানে বলে, 'মানুষ যেখানে পা রাখে না সেখানে বন-বাদার হচ্ছে স্রমাট৷' বন-বাদারের দঙ্গলে একমাত্র মানুষটি, নদী যাকে অনেক কাল আগে নিঃস্ব করে দিয়েছে, সেই লোকটি ততোদিনে প্রায় বুনো হয়ে উঠেছে! যুগবদলের হাওয়ায় বানভাসী বনচরটিকে মানুষ গণ্য করা যায় কিনা সে-তর্ক তাই অনায়াসে চলতে পারে! বাড়ি থেকে কিছু দূর হাঁটলে শহরকে পড়া যায়৷ মোটরকার আসে-যায়, চওড়া দর-দালানে পালিশকরা সায়েব-মেম এলিভেটর বেয়ে ওঠে-নামে, সিনেমার নায়িকা তার বিরাট নিতম্বের আলোড়নে তরুন নায়কের বালেগদের কামনায় বধির করে, আর উড়োজাহাজের সাঁই-সাঁই শব্দে চকিত কাকেদের দল প্রতিটি বাড়ির ছাদ ও ময়লা-ফেলার ড্রামে তাদের কর্কশ ঠোঁট ঠোকরায়..., এইসব দৃশ্যচিত্রের মধ্যে বাড়িটি মেরুবিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো একলা পড়ে থাকে সারাদিন৷ দ্বীপের একমাত্র রবিনসন ক্রুসো হচ্ছে বানভাসি পাহারাদার৷ প্রতিদিনের খাই-খরচার বাইরে এইসব প্রলোভনের সঙ্গে তার কোনো সংযোগ যেন নেই৷ ওয়ারিশনরা বিদেশ থেকে যে খোরাকি পাঠায় তাতে তার দিন চলে না, পুরনো প্রতিবেশীরা মাঝেমধ্যে এটা-ওটা সাহায্য করে, কিন্তু তা দু'বেলা স্বচ্ছল হবার মতো নিয়মিত নয়৷ দিনযাপনের টানাটানি তাকে বিশেষ বিচলিত করে উঠতে পারে না৷ এই আকালের বাজারে ইচ্ছে করলে এখনো ডোবা থেকে সে মাছ উঠাতে পারে, সারসের মাংসে মুখগহ্বরকে সুপক্ক ঘ্রাণের মদিরা দিতে পারে,-কিন্তু মাছ সে ওঠায় না, সারসকুলের দঙ্গলে গুলতির ঢিল ছোঁড়ে না৷ জীবনের যে-দশায় পেয়ে বসলে মানুষ অক্রিয়তাকে জীবন গণ্য করে, পাহারাদার সেভাবে দিন গুনে চলে ও পাকানো দড়ির মতো শীর্ণ হয়৷ আমাদের জীবনবোধ বলে, ভালোবাসা না পেলেই মানুষ যাযাবর হয়৷ সেই যাযাবরদের কেউ কেউ মনে মনে, কেউ কেউ বাস্তবতার অমোঘস্রোতে৷ কবি কচি রেজা মনে মনে যাযাবর৷ তার কবিতা উঠে এসেছে সেই যাযাবরকথন-
নিজের মুখ আয়নায় দেখে অন্ধ হয়ে যায় নদী, যারা যাওয়ার আগেই
ফেরার কথা ভাবে তারা বুঝতে পারে মাছের ইশারা!
ঈাথরের প্রতিধ্বনি শুনে পৃখিবী বুঝে ফেলে আগামীর দুঃসংবাদ,
তাই বাঁশির কথা ভেবে তুমি যখন বেড়ালের নূপুর পরে নাচো-
ছায়ায় ছায়ায় তখন নিচের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে দিয়েছে ঘাস,
(মাছের চোখে ঈশ্বরের বাণী)
প্রবাদে বলে গতির ধাক্কা যেখানে লাগে স্থিরতা সেখানে ঠাঁই করে নিতে পারে না৷ নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে পত্তনীদারের সাধের পত্তনীর বেঁচে-বর্তে থাকা রহস্যজনক বৈকি৷ এতে মনুষ্যকুলের কোনো উপকার সাধিত না-হলেও বৃক্ষ বা পশু-পক্ষীর জন্য পত্তনীটি হয়ে উঠেছে এক স্বাধীন অভয়ারণ্য, যেখানে মানুষ ও মোটরকারের তোয়াক্কা না-করে আজোবধি স্বেচ্ছাচারিতা সম্ভব৷ নারকেল গাছের সারির মাঝখানে ভীমরুল অনায়াসে চাক বাঁধে এখনো৷ এই মৌচাকে ঘাই দেবার সাধ্যি ভাল্লুক ও মানুষ ছাড়া আর কারো নেই৷ বাড়িটি যেহেতু অনেক দিন ধরে মনুষ্য ও ভাল্লুক শূন্য, চাকগুলো তাই অবাধে মধুপুষ্পে ভরে উঠতে পেরেছে৷ আধুনিক পদ্ধতি ছাড়া মধুর নহর বইবার জন্য যে অবসর ও নির্জনতা লাগে, একমাত্র নিবিড়ঘন নিরালায় প্রকৃতি যা সম্ভব করে৷ বাড়িটি তার আদর্শ ঠিকানা বটে! তবে গতির হল্লা যখন আছড়ে পড়ে তখন চাক রচনাকারী ভীমরুলের আগ্রাসী আক্রমণকে তা অবলীলায় পর্যদুস্ত করে ফেলে৷ আমরা যে বাড়ি ও শহরকে বর্ণনা করি তার বেলা কথাটি খুব খাটে৷ পত্তনীদারের মৃত্যু পর্যন্ত সবকিছু যেন একটি আবতের্র মাঝে স্থির হয়ে ঘুরছিল৷ দুর্গম চরের খ্যাতি চুকিয়ে দেশ ভাগ অব্দি সেই আবর্তে বড়ো কোনো ছন্দপতন ঘটেনি৷ কেননা তখন পর্যন্ত চরটি আবাদি হয়ে উঠতে পারছিল না৷ পত্তনীদারের হাতে তার সে-দুর্নাম যখন ঘুচলো, আরেকটি আবর্তে গিয়ে পড়লো সে৷ অতঃপর আবাদকারীরর মৃত্যু পর্যন্ত ছিল অপেক্ষার পালা৷ গতির হল্লা তার অস্ত্রে শান দিচ্ছিলো এই ভেবে যে অপেক্ষার পালা একদিন ফুরাবেই; তখন চাক ভেঙে মধুপানের উল্লাসে পুরনো বাড়িটি মানুষের হট্টগোল ও কালো ধোঁয়ায় গমগম করে উঠবে৷ সেই কালোকে বিদায় জানাতে কবিদের বড় বেশি প্রয়োজন দেশের মাটিতে মায়াবী ফসলের আবাদ করা৷ মায়ার আঁচলেই থাকতে পারে শান্তির স্রোত৷ অন্য কোথাও না৷ সেই কথা ভেবে হলেও নেমে যেতে হবে কবিতার জলে৷ হোক না এবার গঙ্গাস্নানের পরিবর্তে নতুন করে কাব্যস্নান৷ সেই স্নান আর যাই হোক মনের কালিমা দূর করে দেবে, সাহসবতী রোদ-উল্লাস৷ এই উল্লাসের ধারাবাহিকতায় আমাদেও দেশেও আসতে পাওে চে গুয়েভারা, ফিদেল ক্যাস্ত্রো, কিম ইল সুং, ইমাম খোমেনী, মাও সেতুং অথবা নতুন কোন আলো৷ যেই আলোর সামনে দাঁড়ানোর সাহস পাবেনা বর্তমানের অন্ধকার৷এই অন্ধকার তাড়ানোর প্রত্যয়ে কচি রেজা লিখেছেন-
স্বাধীনতা মানে ভূখন্ডের দরোজার কাঠ ধাক্কা দিয়ে খুলে নেয় নাকি!
এখন এই এক হাট লোকের সামনে আমাকে স্নান করতে বলো তুমি!
(কাঁটা)
আমাদের নিরিবিলি শহরে সময়ের একটি মাত্রাহীন ছন্দ বা প্রসারণ থাকে৷ বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় সবকিছু স্থবির হয়ে আছে, কিছু যেন এগুচ্ছে না! কিন্তু দৃশ্যমান সে স্থবিরতার মাঝে শহর তার নিজস্ব ছন্দ-তালে জাগে বা ঘুমায়৷ এই কাহিনীর শহর সেদিক থেকে ব্যতিক্রম ছিল না৷ ময়লাটানার ছ্যাকরাগাড়ির শব্দে ঘুম ভাঙতো তার৷ অতঃপর সারা সকাল শহরটির বুক জুড়ে চলতো অফিসমুখী কেরানি, ভুঁষিমালের আড়তদার আর গৃহিনীদের ব্যস্ত কলরব৷ সেই কলরব ছাপিয়ে কাকের কর্কশ চিত্‍কার কানে এলে বোঝা যেতো দুপুর পার হতে চলেছে৷ দিনের সাংসারিক কাজকর্মে সাময়িক ছেদ টেনে মহিলারা বালিশে মাথা এলিয়ে দিতেন৷ আধো তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বিমল মিত্রের নভেল খুলে বসতেন অনেকে৷ কেউ-বা রেডিওয় শ্রুতিনাটক শুনতে-শুনতে উদাস হয়ে যেতেন, ভাতঘুমের আলস্যে তাদের চোখ বুজে আসতো৷ অলস-মন্থর প্রবাহে ছেদ ঘটতো ফেরিওয়ালার আবির্ভাবে৷ ' পেপার বেঁচবেন পেপার, পুরান বই পেপার...'
কচি রেজার ষাটটি প্রানবন্ত কবিতার যৌথ আন্দোলনে প্রকাশিত হয়েছে ভুলের এমন দেবতা স্বভাব৷ রাজিব রায়ের প্রচ্ছদে ৭১ পৃষ্টার এই বইটিপ্রকাশ করেছে ধ্রুবপদ(৬৮-৬৯ প্যারিদাস রোড, ঢাকা)৷ বইটির মূল্য মাত্র ১২০ টাকা৷ কবিতার সাথে সাথে সকালের রোদও হাসেপ্রতিদিন৷ প্রত্যাশারা জোট বাঁধে- কবিতার আয়নায় মুখ রাখুক কবি৷ কবির মায়াবী মুখে মায়ার রসদ৷ সেই রসদের সূত্র ধরে আমাদের বর্তমান হয়ে যাক আলোকিত ভোর৷ এই ভোরে মায়াবী আবেশ ছড়িয়ে কবিতার উত্তরণ আমাদের উত্তরণ হিসেবে ঘুরে দাড়াবে৷ প্রত্যয়ী প্রার্থণা ফিরে ফিরে আসবে বিমুগ্ধ মায়াতে।
 
 

mominmahadi@gmail.com 
www.mominmahadi.blogspot.com

০১৭১২৭৪০০১৫ 
 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের অন্যান্য লেখাঃ

 

>>ইচ্ছে হলেই রোদ হয়ে যাই

>>রবীর আলো ছড়িয়ে ভালো এগিয়ে চলে সবখান

>>রোদবার্তা

>>একুশ শতক ছড়ার শতক, গড়ার শতক বিশ্ব

>>ঝুলে থাকে আড়ালে তার মায়াবীনি চাঁদ

>>রবীন্দ্রনাথ এবং পদ্মার ঢেউ ভাঙা কথা

>>রঙকাহন

>>অনুকাব্যের স্রোতধারায় গা ভাসানো মন

>>মো মি ন মে হে দী র ক বি তা

>>ভালোবাসার যতরঙ

>>জানালায় গলে পরে পাতাদের শোক

>>ব্যানার

>>কাগজের ভুত

>>ভুত তাড়াতে মায়ের আদর