(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
রাহমান মনি :
জাপানে বাংলা ভাষায়
নির্দেশিকা শুরু, প্রবাসীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
বিনা স্বদেশী ভাষা, মিটে
কার আশা!
প্রবাস জীবনে মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা সর্বজন বিদিত হলেও
প্রবাসীরা ছাড়া কেহ তা উপলব্ধি করার নয়। প্রবাসে মাতৃভাষায় নির্দেশিকা
নিশ্চয়ই তাদের জন্য মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত।
অতি সম্প্রতি টোকিওর কিতা সিটি কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ভাষার পাশাপাশি বাংলা
ভাষায়ও সতর্কতামূলক নির্দেশিকা প্রচার শুরু করেছে। সিটি অফিসের ইনডোরে বাংলা
ভাষায় নির্দেশিকা নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও আউটডোরে নির্দেশিকা নিয়ে
প্রবাসীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেহ কেহ সাধুবাদ জানিয়ে
উচ্ছ্বসিত, কেহবা মর্মাহত।
নিজ ভাষায় নির্দেশিকা দেখে উচ্ছ্বসিতদের মত হচ্ছে, জাপানে অনেক ভাষায়
নির্দেশিকা থাকলেও বাংলা ভাষায় কোন নির্দেশিকা ছিলনা। কিতা সিটি প্রথম শুরু
করে। এতোদিন সিটি অফিসের ভিতরেও বিভিন্ন নির্দেশিকা ছিল। বিশেষ করে
করোনাকালীন সময়ে প্রবাসীরা যেন নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হন সেই জন্য
অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায়ও পরামর্শমুলক বিভিন্ন নির্দেশনা ছিল।
যা প্রবাসীদের বিভিন্ন কাজে লেগেছে। এই সিটিতেই “লাইফ কিন্ডারগার্টেন”নামক
একটি শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেখানে মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য
হালাল খাবার সবরাহ করা হয়। ঈদ উপলক্ষে ঈদ শুভেচ্ছা কার্ড, হালাল বারবিকিউ,
হালালখাবার-এর ফেস্টিভ্যাল এর আয়োজন করা হয়ে বাংলাদেশী অভিভাবকদের
সহযোগিতায় । প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাভাষী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের যোগাযোগ
সুবিধার জন্য বাংলাভাষী একজনকে নিয়োগও দেয়া হয়।
এইসমস্ত ভালো কাজের উদ্যোগ তাদের চোখে পড়েনা। রাস্তায় ‘ধূমপান নিষিদ্ধের’
নির্দেশিকা দেখে তাদের আঁতে লেগেছে। তাদের প্রশ্ন ‘শুধুই কি ধূমপান
নির্দেশিকা-ই তাদের চোখে পড়লো ? এছাড়াও ডাস্টবিন বক্স-এ ‘যেখানে সেখানে ময়লা
ফেলবেন না’, রাস্তার মোড়ে ‘এখানে গাড়ি পার্কিং নিষেধ’---জাতীয় নির্দেশিকা
তো দেয়া রয়েছে ।
তারা মনে করেন এটা সূচনা মাত্র। এরপর রেল ষ্টেশন, বাস স্টপেজ, বিভিন্ন হল
ব্যবহারের নির্দেশিকা দেয়া হবে।
তাদের ভাষায় যারা ম্যানার না মেনে জাপানি ভাষা পড়তে না পারার অযুহাত দেখিয়ে
পার পেতে চান, তারাই কেবল এর বিরোধিতা করছেন।
অনেকে আবার এই প্রচেষ্টাকে নেগেটিভ বা বাংলাদেশীদের জন্য লজ্জাস্কর হিসেবে
দেখছেন। তাদের যুক্তি হলো বাংলাদেশীরা নিয়ম মানে না বিধায় নিজ ভাষায় তাদের
সাবধান করা দেয়াটা বাংলাদেশিদের জন্য সন্মানজনক নয়।.
তারা সমর্থন কারীদের তীব্র আক্রমণাত্বক ভাষায় কটাক্ষ করছেন। কেহবা সিটি
অফিসে কৈফিয়ত তলব করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
এই ব্যাপারে কিতা সিটি কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ করে জানা যায়, সাম্প্রতিক বছর
গুলোতে কিতা সিটিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এই শহরে
সর্বশেষ (৮ মার্চ ২০২৪) হিসেব অনুযায়ী ১,৩২৫(জাপানে বসবাসরত মোট
বাংলাদেশিদের ৫.৩১% প্রায়) জন বাংলাদেশীর বসবাস। যা, করোনা পূর্ববর্তী
সময়ের প্রায় দ্বিগুন। কিতা সিটিতে বসবাসরত বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে ৬ষ্ঠ
অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশীরা। ১ম চীন ১৩,০৫৩ জ্ন, ২য় দক্ষিণ কোরিয়া ২,৩৭৯ জন,
৩য় ভিয়েতনাম ২,০৯৯ জন, ৪র্থ মিয়ান্মার জন, ৫ম নেপাল ১,৮৩৫ জন এবং এর পরই
বাংলাদেশের স্থান।
সিটি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এখানে মোট ৮২টি দেশের নাগরিকদের বসবাস থাকলেও
বাংলাদেশীরা সর্বোচ্চ সংখ্যক নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা করে থাকে বিভিন্ন হল
ভাড়া নিয়ে। অনেকেই ব্যবহারের সঠিক নিয়ম জানেননা কেবলমাত্র জাপানি ভাষা পড়তে
না পারার কারনে। তাই, মাতৃভাষায় দিক নির্দেশনা এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান
হবে বলে আশা করা যায় ।
উল্লেখ্য - জাপান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ( জুন ২০২৩) তথ্য অনুযায়ী
জাপানে বর্তমানে ২৪,৯৪০ জন বাংলাদেশীর বসবাস করে বসবাসকারী বিদেশীদের মধ্যে
১৫ তম স্থানে রয়েছে।
৩২,২৩,৮৫০ জন বিদেশীদের মধ্যে ৭,৮৮,৪৯৫ জন (চীন), ৫,২০,১৫৪ জন (ভিয়েতনাম)
এবং ৪,১১,৭৪৮ জন (কোরিয়া) বসবাস করে যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয়
স্থানে রয়েছেন।
rahmanmoni@gmail.com
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |