|
(মতামত সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব)
রাহমান মনি
জাপানে বাংলাদেশী
দক্ষ জনশক্তি রপ্তানীর দ্বার উন্মচিত
দীর্ঘ প্রত্যাশার পর অবশেষে বাংলাদেশ থেকে
জাপানে জনশক্তি নিতে দুই দেশের মধ্যে একটি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
আর এই চুক্তির ফলে জাপানে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানীতে আর কোন বাধা থাকলোনা
এবং জাপানে বাংলাদেশের শ্রম বাজার উন্মোচিত হলো ।
২৭ আগস্ট মঙ্গলবার রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার উপস্থিতিতে প্রবাসী কল্যাণ ও
বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহান এবং জাপানের বিচার বিষয়ক
মন্ত্রণালয়ে অধীনস্থ ইমিগ্রেশন সার্ভিস এজেন্সির কমিশনার সোকো সাসাকি নিজ
নিজ দেশের পক্ষে চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
জাপানে কর্মী পাঠানোর তালিকায় নবম দেশ হিসেবে যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম। এর
ফলে জাপানের ১৪টি খাতে বিশেষায়িত দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ তৈরি হলো। বিনা
খরচে জাপান যাওয়ার সুযোগ পাবেন দক্ষ কর্মীরা। অন্য দেশের তুলনায় জাপানে
আয়ের সুযোগও বেশি। আগামী পাঁচ বছরে সাড়ে তিন লাখ বিদেশি কর্মী নেবে
অর্থনৈতিকভাবে উন্নত এ দেশটি।
এর আগে ভিয়েতনাম, চীন, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন,
থাইল্যান্ড এবং পূর্ব-এশিয়ার একটি দেশসহ মোট ৮টি দেশ থেকে কর্মী নেয়ার
সিদ্ধান্ত ছিল টোকিও'র। বর্ধিত হিসেবে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে। জাপান
প্রাথমিকভাবে ৯টি দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত
নিয়েছে। আগামী ৫ বছরে এ নিয়োগ পর্যায়ক্রমে সম্পন্ন হওয়ার কথা।
গত ডিসেম্বর ২০১৮ জাপানের পার্লামেন্টে জনশক্তি নিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিল
পাস হয়। এই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিল থেকে বিদেশী
কর্মীদের জন্য দুই ধরনের ভিসা ব্যবস্থা চালু করে জাপান।
আগামী পাঁচ বছর ধরে দুই ক্যাটাগরিতে ১৪টি সেক্টরে কর্মী নেবে জাপান। এগুলোর
মধ্যে রয়েছে, সেবা প্রদান, পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনা, মেশিন পার্টস শিল্প,
ইলেক্ট্রনিক্স, নির্মাণ, জাহাজ প্রকৌশল ও নির্মাণ, অটোমোবাইল রক্ষণাবেক্ষণ,
উড়োজাহাজ শিল্প, কৃষি, মৎস্য উৎপাদন, খাদ্য ও পানীয় উৎপাদন। জাপানে কাজ
পাওয়ার জন্য নির্বাচিত হতে জাপানি ভাষার ওপর পরীক্ষা দিয়ে দক্ষতা প্রমাণ
করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্কিল হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
চুক্তি স্বাক্ষরিত হ'বার পর অনুভুতি জানিয়ে রৌনক জাহান বলেন, সহযোগিতা
চুক্তির আওতায় সুনির্দিষ্ট শর্তের আওতায় বাংলাদেশ থেকে জাপানে দক্ষ কর্মী
পাঠানোর সুযোগ তৈরি হবে। এতে দুই দেশই লাভবান হবে।
এই চুক্তির আওতায় যারা জাপান আসার সুযোগ পাবেন তাদের নূন্যতম কারিগরি শিক্ষা
থাকতে হবে, জাপানী ভাষায় দক্ষতা থাকতে হবে, তারা ৫ বছরের জন্য কাজ করার
সুযোগ পাবেন। এই সময়ের মধ্যে তারা পরিবারের সদস্যদের জাপানে নিতে পারবে না।
তবে দক্ষ জনশক্তি যেমন গবেষক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, তারা প্রয়োজন অনুযায়ী (যতদিন
কাজ ততদিন) জাপানে থাকতে পারবেন। সেই সঙ্গে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদেরও
নিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাবেন।
তবে মুখে যা-ই বলা হয়না কেন চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বাংলাদেশীদের ভিসা পেতে
বেশ কাঠখড় পোড়াতে হবে। প্রথমেই ভাষার উপর ধক্ষতার প্রমান দিতে হবে।এই
ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবে না। ভাষার উপর গুরুত্ব দেয়া হলেও শুধু জাপানী
ভাষায় দক্ষতার স্বাক্ষর রাখলেই হবে না। সম্যক ধারনা রাখতে হবে জাপানী
ম্যানার এবং জাপানী সংস্কৃতির উপরও।অবশ্য যোগ্যতা অর্জন করার পর এই
বিষয়গুলোর উপর প্রশিক্ষণ নেয়ার পর ই জাপান আসার চূড়ান্ত যোগ্যতা সম্পন্ন
হওয়া যাবে। সবচেয়ে বড় কথা প্রতিটি ক্ষেত্রেই স্কিল হওয়ার কোন বিকল্প নেই।
রয়েছে ভিয়েতনাম, চীন, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন,
থাইল্যান্ড এর মতো দেশগুলোর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। বিশেষ করে চীন ভিয়েতনাম
ও ফিলিপিন্স। ভাষায় দক্ষতা এবং কূটনৈতিক দক্ষতা এদের প্রভাব পূর্ব থেকেই
বর্তমান। ধর্মীয় বিশ্বাস , গায়ের রঙ খুব একটা ব্যাবধান ও নেই। যা , তাদের
জন্য প্লাস পয়েন্ট।
এতদকিছুর পরও বাংলাদেশী শ্রমিকদের কদর জাপানে সবচেয়ে বেশী। স্বল্প সময়ে কাজ
বুঝা , কর্মঠ , বিশ্বস্ততা এবং সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে ইতোমধ্যে প্রবাসী
বাংলাদেশীরা জাপানীদের মন জয় করে নিয়েছে । বিশেষ ছোট ছোট এবং মধ্যম সারির
কোম্পানি গুলোর মালিকদের সচেয়ে কাছের এবং বিশ্বস্ত বিদেশী কর্মীটি হচ্ছেন
বাংলাদেশী । মুলত তাদের চাহিদা জাপানে বাংলাদেশী জনশক্তি রপ্তানীতে সহায়ক
ভুমিকা রেখেছে।
জাপানে শ্রম বাজার উন্মোচিত হওয়ার পূর্ব থেকেই এক শ্রেণীর দালাল ব্যাঙের
ছাতার মতো জাপানী ভাষার স্কুল ব্যাবসার বিষয়টি জাপান ইমিগ্রেশন অবগত। সেই
সাথে অবগত কিছু সংখ্যক প্রবাসী এই সুযোগে বিভিন্ন জন থেকে টাকা হাতিয়ে
নেয়ার ব্যাপারে। অথচ লোক আনার ব্যাপারে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। জাপানে
বসবাস করলেই যে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আনা যাবে বিষয়টি এমন নয় । বাংলাদেশের
যে সব প্রতিষ্ঠান জনশক্তি রপ্তানীর সাথে সরাসরি যুক্ত এবং লাইসেন্সেধারী সে
সমস্ত প্রতিষ্ঠান গুলি থেকে মোট ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পুরো
তালিকা দেখার জন্য "https://www.otit.go.jp/files/user/190618-1.pdf " তার
মধ্য থেকে ৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১০জন বাংলাদেশী জাপান থেকে যোগাযোগ রক্ষা
বা জাপান প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে আবার প্রথম
অনুমোদন পাওয়া ২টি প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে দুতাবাস
কাউন্সেলর ( শ্রম ) মোঃ জাকির হোসেন স্বয়ং লিয়াজো রক্ষা করবেন এবং একটি
প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ জনকে যোগাযোগ রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বাকী ৪টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে স্থানীয় যোগাযোগ রক্ষাকারী হিসেবে ৪ জন
জাপানী নাগরীক কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে ।
তালিকায় সর্বশেষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এস,এ ট্রেডিং এর জাপান প্রতিনিধি হিসেবে
চৌধুরী শাহীন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। চৌধুরী শাহীন জাপানে একজন প্রতিষ্ঠিত
ব্যবসায়ী , চৌধুরী ট্রেডিং এর কর্ণধার এবং বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড
ইন্ডাস্ট্রি ইন জাপান বা বি,সি,সি,আই,জে'র একজন নির্বাহী সচিব।
সনদ প্রাপ্ত ৪ নাম্বার তালিকায় আল খামিস ইন্টারন্যাশনাল এর জাপান প্রতিনিধি
মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান যিনি মুকুল মুস্তাফিজ নামে সমধিক পরিচিত প্রথম থেকেই
জাপানে বাংলাদেশের জনশক্তি আনার ব্যাপার ভুমিকা রেখে আসছেন । ঢাকায় জাবাচি
ল্যাংগুয়েজ ইনস্টিটিউট নামে তার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। মুকুল
মুস্তাফিজ তার ম্যানেজিং ডাইরেক্টর ।
তালিকা দেখে প্রতিষ্ঠান এবং তাদের অনুমোদিত ব্যাক্তি ছাড়া কোন ব্যাক্তি বা
প্রতিষ্ঠানের সাথে আর্থিক লেনদেন থেকে বিরত থাকাই শ্রেয় । দালালদের মিথ্যা
আশ্বাসে পা না দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে ।
একটি সুত্র মতে গত ডিসেম্বর ২০১৮ জাপানের পার্লামেন্টে জনশক্তি নিয়োগ
সংক্রান্ত একটি বিল পাস হ'বার পর এই পর্যন্ত মাত্র ২০ জন জাপানে আসতে
পেরেছেন এবং তাদের সবাই ফিলিপিনস থেকে।
উল্লেখ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ( ২৮ মে- ৩০ মে ২০১৯ )
জাপান সফরের সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়। এর
ধারাবাহিকতায় ২৭ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের বিষয়ে দুই দেশের
মধ্যে সহযোগিতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই ব্যাপারে দূতাবাসও প্রশংসনীয়
ভুমিকা রাখে ।
২৯ আগস্ট '১৯ বৃহস্পতিবার দুতাবাসের বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে 'জাপানে
বাংলাদেশের মানবসম্পদের সম্ভাবনা নিয়ে' দেশটির দক্ষ কর্মী প্রেরণকারী ও
গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক আলোচনা সভা
অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে দূতাবাস আয়োজিত আলোচনা সভায় জাপানী নিয়োগ দাতা ছাড়া লাইসেন্স
পাওয়া প্রতিষ্ঠান গুলির জাপান সমন্বয়কারীরা উপস্থিত ছিলেন ।
রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত
ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের
সচিব রওনক জাহান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে রওনক জাহান তাঁর বক্তব্যে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান গভীর
সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, জাপানে বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীদের জন্য
উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এর মাধ্যমে দুই দেশই উপকৃত হতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, জাপানসহ বিশ্বের অন্য দেশে নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতকরণে ও
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি
বাংলাদেশি কর্মীদের কর্মঠ ও মেধাবী উল্লেখ করে জাপানি জনবল নিয়োগকারী
প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশের দক্ষ কর্মীদের জাপানে নিয়োগের বিষয়ে সহযোগিতা
কামনা করেন। তিনি জানান বিদেশে কর্মী নিয়োগে প্রতারণা বন্ধ করতে সরকার সজাগ
ও সচেষ্ট আছে।
আলোচনা পর্বে দক্ষতার সনদ প্রদান, জাপানি ভাষা শিক্ষার উপযোগী ও গ্রহণযোগ্য
পাঠ্যক্রম, নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজীকরণ, প্রেরণকারী ও গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের
মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি,কঠোর নজরদারি এবং নিয়মিত সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজনের
ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পক্ষ
থেকে বাংলাদেশের মানবসম্পদের সম্ভাবনা বিষয়ক একটি পাওয়ার পয়েন্ট
প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়
তথ্য সুত্র - https://www.otit.go.jp/files/user/190618-1.pdf , সভায় অংশ
নেয়া প্রতিনিধি , দূতাবাস বিজ্ঞপ্তি ।
ছবি - ইন্টারনেট
rahmanmoni@gmail.com
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|