@
@
@ |
(মতামত সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব)
@
@
রাহমান মনি
@
@
জাপানকে জানার
জ্ঞানকোষ হতে পারে ডঃ আশির আহমেদ এর eজাপান কাহিনিf
@
@
@
বাংলা একাডেমি বইমেলা বাঙালির প্রাণের
মেলা। মেলাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়।
অনেকে আবার ভালো লিখছেন ও সেগুলো পাঠকপ্রিয়তাও পাচ্ছে। তেমনি একটি বইয়ের
নাম eজাপান কাহিনিf। বইটি ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি বইমেলায় প্রথম বের হয়।
বইটির প্রকাশক ঐতিহ্য। বইটির লেখক ড. আশির আহমেদ। একজন শিক্ষক, গবেষক এবং
দীর্ঘদিন ধরে জাপান প্রবাসী। এবছর বের অর্থাৎ ২০২০ বই মেলায় বের হয়েছে
gজাপান কাহিনিfর ষষ্ঠ খণ্ডh।
বইটির প্রথমেই তিনি চমক দিয়েছেন বড় বোনের অবদান কে শ্রদ্ধার সাথে কৃতজ্ঞতা
স্বীকার করে। জাপান কাহিনির প্রতিটি খণ্ডেই তিনি বিভিন্ন জনের প্রতি
কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন যা একজন লেখক হিসেবে পাঠক হৃদয়ের অনেক উঁচুতে
স্থান করে নিয়েছেন। যা তাঁর বিনয়ীভাব প্রকাশ পেয়েছে। কারন , কৃতজ্ঞতা
স্বীকার সবাই করতে পারেন না , সবাইকে মানায়ও না এবং সবার দ্বারা সম্ভবও নয়।
আসলে প্রতিটি সংসারেই বড় বোনরা অনেক সময় মায়ের ভুমিকা পালন করে থাকেন।
বিশেষ করে বাবার কড়া শাসন থেকে ছোট ভাইবোনদের রক্ষা করার দায়িত্ব নিজ কাঁধে
তুলে নিয়ে বড় বোন সত্যিকার অর্থেই বড় মনের পরিচয় দিয়ে থাকেন। আমার নিজ বড়
বোনকেও একই ভুমিকায় দেখেছি।
বইটির ভুমিকায় ষষ্ঠ খন্ডের সাথে ষড়ভুজ এর মিল খুঁজতে গিয়ে জাপানী ঘুড়িfর কথা
শুনে নিজের অজান্তেই চোখ চলে যায় প্রচ্ছদের পাতায়। খাদিজা-তুল-সাঈদা সিমুল
এর অসম্ভব মেধার বিকাশ প্রকাশ পেয়েছে প্রচ্ছদটিতে। প্রচ্ছদ পছন্দে নুরেন
আবেদিন ( লেখকের সহধর্মিণী ) এর ভুমিকাও কম প্রশংসনীয় নয়।
গল্পের শুরুতেই gনাম্বার ওয়ান নাকি অনলি ওয়ানh –এ কোন ফুল সবচেয়ে সুন্দর
প্রশ্নটি যদি আমাকে করা হতো, নির্দ্বিধায় আমি বলে দিতাম eওয়ান্ডারফুলf। একই
ভাবে বাংলাদেশে ইয়াং ছেলেমেয়েরা আত্মহত্যার কারনের সাথে নতুন সংযোজন হিসেবে
নিগৃহীত হয়ে সঠিক বিচার না পাওয়া কে দায়ী করতাম। লেখক তা করেন নি। তিনি
যুক্তি সহকারে বিভিন্ন উদাহরন সহকারে সঠিকটি উত্থ্যাপন করেছেন।
শিশুদের বকা দেবার আগে ভাবুন গল্পটিতে তিনি শিক্ষণীয় এবং গঠনমুলক উপদেশ
দিয়েছেন। আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী শিশুদের
হ্যা বলুন ক্যাম্পেইন শুরু করেছিলেন। লেখকের গল্পে তার-ই ইংগিত ফুটে উঠেছে
।
সৃজনশীল কাজের পরিবেশ পর্বটি ছোট বড় সকলের জন্যই শিক্ষনীয়। জাপানী ম্যানার
কেন বিশ্বসেরা তা এখান থেকেই শিখা যায়। কাজের পরিবেশ যদি মনোরম এবং বন্ধু
বাৎসল্য হয় তাহলে অনেক কিছুই আদায় করে নেয়া যায়। জাপানে কাজের পরিবেশ
সৃজনশীল আছে বলেই eমেড ইন জাপানf জগতখ্যাত একটি ব্রান্ড বলে আমার বিশ্বাস।
জাপানি প্রতিবন্ধী মহিলার কান্ডfতে লেখক স্নেহময়ী মায়ের সত্ত্বা তুলে
ধরেছেন। নিজে পক্ষাতগ্রস্থ হয়ে যিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতির অজানা অচেনা
দেশের প্রতিবন্ধীদের জন্য নিজ অর্থায়নে কিছু একটা করার তাগিদে টোকিও থেকে
১,২০০ কিলোমিটার দূরে ছুটে গেছেন আরেক নাড়ির সম্পর্কহীন আরেক সন্তানের সাথে
পরামর্শ করার জন্য। তার এই অবদান প্রবাসী বাংলাদেশীদের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতার
সাথে স্নরন করি। গল্পটির নামকরণ হfতে পারতো এক মহীয়সী নারীর মহতী উদ্যোগ।
প্রবাসী নাতি নাতনি তে লেখক না জানা তথ্য সূত্রে গ্র্যান্ড প্যারেন্টস
সম্পর্কে শিশুদের উপর সমীক্ষার আলোকে ১০টি উত্তরের কথা উল্লেখ করেছেন। যার
৭ নাম্বারের সাথে আমার দ্বিমত আছে। আমার কাছে মনে হয় গ্র্যান্ড
প্যারেন্টসরাই বরং একই কথা বার বার বলে থাকেন যা শুনে অনেকেই বিরক্ত হয়ে
যান।
জাপানি দাঁতের ডাক্তার লিখাতে লেখক তার স্বমহিমায় অর্থাৎ নিজস্বতায় ফিরেছেন।
উইন উইন সিচুয়েশন থেকে লুজ-লুজ সিচুয়েশন, লেখকের প্রিয় এখলাসপুর গ্রামের
কথায় ফিরেছেন। আর আমি ফিরে গিয়েছিলাম আমার শৈশবে। প্রথম দাঁত মাজা শুরু
হয়েছিল চুলায় অবশিষ্ট কয়লা দিয়ে। এরপর নিমের ডালা হয়ে অবশেষে টুথ পেস্ট ও
ব্রাশ ।
জাপানের দন্ত চিকিৎসা বিশ্বসেরা হলেও অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং একইসাথে সময়
সাপেক্ষও বটে। দাঁতের ত্যাড়ামী ( বাঁকা ) ঠিক ( সোজা ) করার জন্য যেখানে ১০
লাখ টাকা গুনতে হয় । তাও আবার গুনা ( ষ্টীলের তার ) দিয়ে কম হলেও ৬ মাস
বেঁধে রাখার পর। বাংলাদেশে যা একমাত্র বিত্তবান অথবা অবৈধ পথে
উপার্জনকারীদের পক্ষেই সম্ভব।
জাপানি কিডন্যাপার গল্পটি পড়ে প্রথমে একটু খটকা লেগেছিল জাপানের মতো
অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দেশে ব্যাংক একাউন্ট-এ ট্রান্সফার এর মাধ্যমে
কিডন্যাপের লেনদেন রীতিমতো ভীমরি খাওয়ার মতো। প্রযুক্তি ব্যবহার করে
একাউন্ট হোল্ডারকে শনাক্ত করাটা তো ওয়ান টুfর ব্যাপার। শেষটাতে অবশ্য তাইই
হয়েছে। প্রযুক্তির জয় হয়েছে ।
ট্রাফিক ম্যানার কি এবং জাপান-বাংলাদেশের ট্রাফিক ম্যানার এর পার্থক্য এবং
গুরুত্ব উদাহরণ সহকারে বুঝিয়ে দিয়েছেন জাপান কাহিনির ষষ্ঠ খণ্ডে। অবশ্য
এদেশের জনগণও কম দায়িত্বশীল নন। মধ্য রাতে রাস্তায় গাড়ি না থাকা অবস্থাতেও
তারা সিগন্যাল চলার বিষয়টি এর আগের খণ্ড গুলোতে উল্লেখ করেছেন ।
জাপানি খালাfতে তিনি লিখেছেন মার বইন খালা মার মতো বালা, আমি যোগ করে বলতে
চাই, gমাfর বইন খালা, কিছু ক্ষেত্রে মাfর চেয়েও ভালাh। কিন্তু লেখক হয়তো
তাঁর জন্মদাত্রী মায়ের উপর কাউকে স্থান দিতে চাননি। মা-ই তার কাছে পৃথিবী
সমতুল্য। আল্লাহ্র পরে মা সত্য তাহাঁর উপর নাই।
জাপানি মুদির দোকান যাকে স্থানীয় ভাবে eকোনভিনিয়েন্স স্টোর বা কোনবিনিf বলা
হয়ে থাকে তার ইতিহাসের সারমর্ম পাঠক এখান থেকে জানতে পারবেন। যেমনভাবে
কোনবিনিকে eডিপার্টমেন্ট স্টোরf এর সার সংক্ষেপ হিসেবেই দেখা হয়। জীবন
ধারনে নিত্য প্রয়োজনীয় এমন কোন জিনিস নেই যা জাপানের কোনবিনিতে পাওয়া
যায়না। তার সাথে রয়েছে ব্যাংকিং, আইটি ও সেবাখাতের অন্যান্য সুবিধা গুলোর
কথা।
জাপান কাহিনি ষষ্ঠ খণ্ড থেকে ব্যাংককের সিরিরাজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
এবং বর্তমানে পরিচালনার পেছনের ইতিহাস সম্পর্কে জানা যায় যা কেবল ডঃ আশিরের
পক্ষেই সম্ভব।
eজাপানি মন্ত্রীর পদত্যাগf চ্যাপ্টারটি আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী বা
মন্ত্রীদের কানে পৌঁছাতে পারবে কি? দেশ এবং দেশের জনগণ উপকৃত হতো তাদের
বেফাঁস কথা থেকে ।
অভিধানের বাটপার কথাটির অস্তিত্ব যে জাপানেও আছে লেখক তার প্রমান রেখেছেন ।
প্লাস্টিক পরিবেশবান্ধব এর চেয়েও যে বেশী লেখক নিজ গ্রামবান্ধব তা
বিভিন্নভাবে তার লিখনিতে প্রমান রেখেছেন এবং তা ৩৩ গুন কেন, ৩৩ হাজার গুনের
চেয়েও বেশী, নিঃসন্দেহে বলা যায় ।
যা বলতে নেই, যা করতে নেই গল্পে লেখক অন্তত একটি ম্যাসেজ দিতে পেরেছেন যে ,
সব ব্যাপারেই সার্বিক বিবেচনা করেই পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট গল্পে লেখক জাপান পুলিশের মেধা , যোগ্যতা,
বিচক্ষনতা এবং সেবা প্রদান এর বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন । জাপানের
নিরাপত্তা এই পুলিশ বাহিনীই দিয়ে থাকেন। জাপানে বসবাসরত বিদেশী নাগরিকদের
নিরাপত্তাও জাপান পুলিশ দিয়ে থাকেন। জাপানে কোন রাষ্ট্রীয় ধর্ম না থাকলেও
সবাই তার নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারে এবং জাপান পুলিশ তা পালনে সহযোগিতা
করে থাকেন।
পুরুষের জেদ কল্যাণ বয়ে আনে আর মেয়েদের জেদ অকল্যাণ, সমাজে প্রচলিত এই
ধারাকে লেখক চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, মেয়েরাও পারেন।
জাপানি গাড়ি পার্কিং নামকরণটি কেমন যেনো যুতসই মনে হয়নি । কারন জাপানে তৈরি
গাড়ি ( নিসসান , টয়োটা , মাজদা ---- ) গুলিকে আমরা জাপানি গাড়ি হিসেবেই বলে
অভ্যস্ত। কিন্তু পার্কিং স্থান গুলিতে অন্যদেশের গাড়িও রাখা যায় একইভাবে।
তাই নাম করনে আ-কার কে এ-কার অর্থাৎ জাপানি কে eজাপানে গাড়ি পার্কিংf মন্দ
হfতো না বলে মনে হয়েছে। লেখক হয়তোবা জাপান এবং গাড়ি পার্কিং দুইটি ভিন্ন
শব্দকে একত্রে বুঝাতে চেয়েছেন।
২০১৫ সালে যখন তার প্রথম খণ্ড বের হয় তখন বইটির মুল্যায়ন করতে গিয়ে
লিখেছিলাম gড. আশির আহমেদ-এর eজাপান কাহিনিf নিছক কোনো গল্প কাহিনি কিংবা
কল্প কাহিনি নয়। জাপান সম্পর্কে, জাপানের সংস্কৃতি, সামাজিক শিক্ষা বোধ,
জীবনযাপন, নৈতিক শিক্ষা ব্যবস্থা, দেশপ্রেম, নিজ ভাষার প্রতি ভালোবাসা,
স্থাপনা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, কুসংস্কার বা অন্যান্য বিষয়ে জানতে আগ্রহীদের
সম্যক ধারণা দিতে সক্ষম বলে আমার মনে হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা জাপান
সম্পর্কে অজানাদের জন্য উইকি পিডিয়ার কাজ দিবে।h
আরো লিখেছিলাম gঅত্যন্ত সহজ ভাষায় সাবলীলভাবে নিজ অভিজ্ঞতার কথা এমনভাবে
উল্লেখ করেছেন যে, পাঠ করার পর মনে হতে পারে পাঠক নিজেও যেন লেখকের সাথে
জাপান দেখছেন বা কল্পনা করে নিচ্ছেন। জাপান কাহিনির প্রতিটি গল্প বা
কাহিনিতে রয়েছে শিক্ষামূলক তথ্য, যা জাপান না এসেও জাপান সম্পর্কে জানার
দ্বার খুলে দিবে।h
জাপানের বাইরে যে সমস্ত বাংলাভাষী পাঠক রয়েছেন তারা ড. আশির আহমেদ-এর জাপান
কাহিনি পাঠ করলে যে জাপানের সার্বিক বিষয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করবেন শুধু তা-ই
নয়, সেই সাথে রপ্ত করতে পারবেন কিছু জাপানি ভাষা। উইন উইন সিচুয়েশন।
অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই তিনি জাপানি ভাষা ব্যবহার করেছেন পাঠকের কৌতূহল
সৃষ্টিতে। জানতে পারবেন জাপানে, জাপানি তাইফুন, পাচিনকো - জাপানি জুয়াখেলা,
মিস্টার নেগেটিভ, বল যেদিকে সবাই সেদিকে, জাপানি ক্যালেন্ডার, জাপানে
স্টার্টআপ ওয়ার্ল্ডকাপ গল্প গুলো পড়ে। সব গুলো গল্পই অত্যন্ত প্রানবন্ত ও
সাবলীল।
এক কথায় বইটির নামকরণ eজাপান কাহিনিf নামকরণের সার্থকতা খুঁজে পাবেন পাঠক।
এখানে আশির আহমেদ মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। যেমনটি পরিচয় দিয়েছেন বইটি
উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে।
প্রথম খন্ডে তিনি জন্মদাত্রী মাকে উৎসর্গ করার পাশাপাশি অত্যন্ত সুচারুভাবে
বাবাকেও বঞ্চিত না করে বাবা-মায়ের ভালোবাসার কথাও পাঠকদের জানান দিয়েছিলেন।
আমি নিশ্চিত, জাপান কাহিনি একবার পাঠ শুরু করলে শেষ অবধি না পড়া পর্যন্ত
কেউ হাতছাড়া করতে চাইবেন না। অনেকেই হয়তো বা সব গুলো খণ্ডই পড়ার আগ্রহ
প্রকাশ করবেন। তাদের সুবিধার্থে
https://www.facebook.com/notes/ashir-ahmed/japankahini-shomogro/1601849109884546/
লিঙ্কটি দেওয়া গেল ।
একটি বই-ই হতে পারে ভালো বন্ধু। বিনোদনের সাথী, জ্ঞান ভাণ্ডার এবং সময়
কাটানোর ভালো মাধ্যম eজাপান কাহিনিf তার প্রকৃত উদাহরণ।
rahmanmoni@gmail.com
@
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
@
@
@
@
@
@
@
@
|