|
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)
রাহমান মনি
মিথ্যা জন্ম তারিখের
বিড়ম্বনা ও একটি আবেদন
দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে লক্ষ
জীবনের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ । মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০%
ইসলাম ধর্মালম্বী হলেও অন্যান্য সব ধর্মের ধর্মপ্রাণ মানুষের বসবাস এই
বাংলাদেশ । শুধু ইসলাম ধর্মেই নয় , সব ধর্মেই মিথ্যা বলা বা শিখানো কে
অনুৎসাহিত করা হয়েছে । মহাপাপ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
অথচ আমাদের অনেকের জীবনেই বয়ে বেড়াতে হচ্ছে কিছু সনদ, পাসপোর্ট বা নথিপত্রে
স্থান পাওয়া দিন-মাস-সন’র এক মিথ্যা নামক একটি জন্ম সনদ ।
এই পরিনত বয়সে এসে তা জানতে ইচ্ছে করছে, আমাদের শিশুকালের সুযোগ নিয়ে
আমাদের অজান্তে যারা আমাদের উপরোল্লিখিত মিথ্যা বলায় বাধ্য করেছেন বা করছেন
তার দায় বা গুনাহ’র ভাগীদার তারা হবেন কি ? যদি না হন , তাহলে কে হবেন তার
অংশীদার ?
আমাদের জন্মদাতা পিতা ? নাকি , শৈশবের সেই সব শিক্ষকগন , যাদের হাতে মন গড়া
জন্ম তারিখ দিয়ে আমাদের শিক্ষা জীবন শুরু হয়েছিল ?
আমি ঢালাওভাবে সবার কথা বলছিনা । বলছি যাদের বেলায় এমনটি ঘটেছে বা ঘটে চলেছে।
শহরের শিক্ষিত সমাজে অনেকটা কম হলেও প্রত্যন্তঞ্চলে এখনো ঘটে চলেছে বৈ কি !
প্রযুক্তির উন্নতির ছোঁয়ায় ২০০৪ সালে জন্ম নিবন্ধন নামক সনদ প্রথা চালু
হওয়ার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও সরকারী চাকুরী নামের সোনার হরিণ
পাওয়ার আশায় দিন তারিখ ঠিক রাখলেও সনটা কমিয়ে দেখানোর প্রথা এখনো রয়ে গেছে
আমাদের সমাজে। যা বয়ে বেড়াতে হয় সারাটা জীবন।
এই প্রথার শুরুটা বেশ পুরনো হলেও , মফস্বল শহর বা গ্রামাঞ্চলে অবস্থানরত
আমাদের শিক্ষিত , অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত অভিভাবকগণ তাদের সন্তানদের
প্রথমদিন স্কুলে নিয়ে এখনো যে উক্তিটি করে থাকেন তা হ’লো “মাস্টার মশাই
আপনার হাতে তুলে দিলাম, হাড্ডিগুলি আমার আর মাংসা আপনার”।
মৌখিক অনুমতি পাওয়া আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগন ক্লাশরুমে ঢুকেন বেত ,
ডাস্টার এবং লম্বা একটি খাতা নিয়ে। । আর, তা দেখে কোমলমতি শিশুরা ভয়ে
জুবুথুবু হয়ে থাকে। ভয় ঢুকে যায় শিক্ষকদের প্রতি। দূরত্ব থাকে শিক্ষক এবং
শিক্ষার্থীদের মাঝে। অথচ, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক
শিক্ষার পরিবেশ এবং শিক্ষার মান উভয়ই বৃদ্ধি পায় । জাপানে শিশুদের শিক্ষা
শুরুটা যেমন উৎসবমুখোর পরিবেশে শুরু হয়, তেমনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে
সম্পর্কটাও মধুর থাকে।
আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যখন একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হয়, হেড
মাষ্টার সাহেব তখন শিক্ষার্থীর এস,এস,সি, পরীক্ষা বিবেচনা করে জন্ম সাল ঠিক
করে দেন । এখানেও সেই সরকারী প্রাপ্তির হিসেব । তবে উন্নতি যেটুকু হয়েছে তা
হলো, আগে ১ জানুয়ারী দিনটি নিদিষ্ট ছিল । সালটা কেবল ভিন্ন ছিল । এই নিয়ে
বিদেশে প্রবাসীদের অনেক বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়েছে । এখন জন্ম তারিখ ঠিক
রাখা হলেও সালটা বদল হয়ে যায়।
গড় হিসেবে বাংলাদেশে সাধারনত ১৬ বছর বয়সে এসএসসি পাশ ধরা হয়ে থাকে। তাই, ১৬
বছর এর কথা চিন্তা করেই জন্ম সাল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে । অনেক সময় যদি’র
আশায় দু’এক বছর হাতেও রাখা হয় । অনেকেই হয়তো বলে থাকবেন, একসময় সম্ভব ছিল
এখন আর হয় না , জন্ম নিবন্ধনের কারনে। তাদের শুধু বলবো ‘সব সম্ভবের দেশ
বাংলাদেশ’।
তাই, এই মিথ্যা জন্ম তারিখটি নিয়েই বাকী জীবন পাপের বোঝা বয়ে বেড়াতে হয়।
আমার ব্যাক্তি জীবনেও এমনটি ঘটেছে । অথচ এতে আমার কোন হাত ছিল না । যখনই
জন্ম তারিখটি লিখার প্রয়োজন তখনই আত্মগ্লানি এসে ভর করে ।
একবার জন, এফ, কেনেডি বিমান বন্দরে কাস্টমস অফিসার বিভিন্ন কথোপকথনের পর
আমাকে অবাক করে দিয়ে অপ্রত্যাশিত ভাবে জিজ্ঞাসা করলেন আচ্ছা , তোমাকে সবাই
‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’ আগে বলে ? নাকি , ‘হ্যাপি বার্থডে’ আগে বলে ? বলেই তিনি
হেসে ফেললেন । আমিও কৃত্তিম হাসি দিয়ে চুপ হয়ে চেপে যাওয়ার ভান করলাম।
ব্যাংক একাউন্ট, এল্যাইন রেজিস্ট্রেশন কার্ড, কাজের জন্য দরখাস্ত, ক্রেডিট
কার্ড বা যে কোন ফরম পূরণ করতে গেলে জন্ম তারিখটি লিখতে হয় । অনেক সময়
জাপানীরা বিশ্বাস করতে চায়না যে, ১ জানুয়ারি বাংলাদেশে এতো মানুষের জন্ম
হ’তে পারে । তাই , কৌতূহলী দৃষ্টি নিয়ে তাকায় । কারন, বছরের প্রথম দিনটি
বিশেষ দিবস হিসেবে ঘটা করে পালন করা হয় জাপানে ।
জাপানে কর্মস্থলে সাধারনত সবাই জন্মদিনটির কথা জানতে চান। এইদিনটিতে
সহকর্মীরা একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানিয়ে থাকেন। তাই , জাপানে কর্মক্ষেত্রে
জন্ম তারিখ গোপন রাখা যায় না ।
সবশেষে আমাদের অভিভাবকবৃন্দ , শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মহোদয়গন এবং সংশ্লিষ্ট সকলের
প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানিয়ে আবেদন জানাতে চাই, কোন শিশুই যেনো আমার মতো
জন্মদিনের মিথ্যা তারিখ নিয়ে বড় হতে না হয়। নিজের অজান্তেই সে যেন মিথ্যার
গ্লানি না টানে ।
সর্বদা , সবখানেই সঠিক জন্ম তারিখটি যেনো লিখতে পারে। কারন, সঠিক জন্ম
তারিখ একজন মানুষের জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । মহান আল্লাহ
প্রদত্ত বিভিন্ন বিষয়াদি এই জন্মক্ষণের সাথে জড়িত। তাই , জন্ম তারিখ পাল্টে
দিলেও তার বিভিন্ন বিষয়াদি জন্মক্ষনের উপরই নির্ভরশীল ।
ধর্মীয় আচারের বাহিরেও বর্তমান আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও সঠিক বয়স অর্থাৎ
জন্ম তারিখ গুরুত্ব পূর্ণ একটি বিষয়। বয়স অনুযায়ী চিকিৎসক ব্যবস্থা নিয়ে
থাকেন।
তাই , সার্বিক বিবেচনায় আসুন আমরা সবাই এই ব্যাপারে আরো একটু বেশী সচেতন হই।
rahmanmoni@gmail.com
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
-
জাপানীরা
কর্মঠ হওয়ার হাতে খড়িটা পায় শিশু বয়স থেকেই
-
আমি
যদি একদিনের জন্য ক্ষমতা পেতাম
-
জাপানে
সাংবাদিক নিষিদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে নব্য আওয়ামী লীগার এবং
পুরাতন মিলে একাকার
-
প্রবাসে রাজনীতিতে প্রয়োজন সহনশীলতা
-
মানুষ
গড়ায় কেন জাপানকে আমাদের অনুস্মরণ করা উচিত
-
করোনায় জাপান - নাইট ক্লাব বন্ধ, স্কুল
কলেজ সব খোলা, করোনায় বাংলাদেশ- নাইট ক্লাব খোলা আর স্কুল কলেজ সব!!
-
আমাদের
ছেলেবেলা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম?
-
শিক্ষার্থী
ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
-
বাসায়
গৃহকর্মীর প্রতি মানবিক হওয়াটা জরুরী
-
বাংলাদেশীদের
জন্য মহিয়সী এক জাপানি মায়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা এবং আমার অযোগ্যত
-
দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী জাপানী এক বস-এর গল্প
-
জগতখ্যাত
জাপানী সততা
-
জাপানে
সাকুরা উৎসব, করোনায় ভাটা
-
জাপানে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন মিডিয়ার ভূমিক
-
সাংবাদিকতায়
নিরপেক্ষতা বলতে স্থায়ী কিছু নেই
-
সব
ঘটনা-ই ‘নিউজ’ হওয়া উচিত নয়
-
প্রবাসে
করোনা হলে জানান দিন, লুকোবার কিছুই নাই, আপনার করণীয়টা পালন করুন
-
জাপানের
ওকিনাওয়ার মাটিতে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা মুন্সিগঞ্জ এর জাকির খান
-
জাপানে
অব্যাহত জন্মহ্রাসের ভয়াবহ চিত্র
-
দৈনন্দিন
কর্ম কান্ডে একজন জাপানী মা
-
দেশী
স্টাইলে প্রবাসের রাজনীতি, সংশোধন হওয়া জরুরি
-
বাংলাদেশে
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে ড. তপন পালের প্রক্ষেপণ সঠিক হতে যাচ্ছে
-
রেকর্ড
গড়ে ইতিহাসে স্থান নিয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে
শিনযো
-
শ্রদ্ধাঞ্জলি– স্মৃতির মনি কোঠায়
মুন্সিগঞ্জ এর ধোপা স্যার
-
জাপান
প্রবাস জীবনে আমার কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হ’বার
গল
-
প্রবাসীদের
জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের নিবন্ধন জরুরি কেন
-
প্রসংগ
- হলুদ সাংবাদিকতা, দুর্মুখদের শেষ অস্ত্র
-
জাপানকে জানার জ্ঞানকোষ হতে পারে ডঃ আশির আহমেদ এর ‘জাপান কাহিনি’
-
প্রসঙ্গ
জাপানে লকডাউন, বাস্তবতা
-
স্মৃতির
মণিকোঠায় সাংবাদিক সফিউদ্দিন আহমেদ ভাই
-
একজন
প্রবাসী মায়ের সফলতার গল্প
-
জাপান
প্রবাসী বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন সমূহের প্রতি বিশেষ অনুরোধ
-
টোকিও
শহীদ মিনার পুনঃস্থাপন, সাংবাদিক হিসেবে আমার কৈফিয়ত
-
জাপানে
সবচেয়ে বড় মসজিদ “বায়তুল আমান মসজিদ কমপ্লেক্স” বাস্তবায়নে প্রয়োজন সবার
সহৃদয় সহযোগিতা
-
প্রসঙ্গ
বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তি রপ্তানি , টোকিও কত দূর?
-
জাপানে
বাংলাদেশী দক্ষ জনশক্তি রপ্তানীর দ্বার উন্মচিত
-
গণপিটুনি
অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত
-
জাপান
কাহিনী এবং একজন ডঃ আশির আহমেদ
-
জাপান
বিএনপি'র প্রতিবাদ প্রতিহতের অপচেষ্টা
-
নিয়ম
জেনেও না মানার প্রবনতা বন্ধ হওয়াটা জরুরী
-
জাপানে
বৈশাখী মেলা, আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
-
উৎসব
মুখর পরিবেশে জাপানে শিক্ষা জীবন শুরু হয়
-
কোরিয়া
স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে "ওয়ান কোরিয়া" শ্লোগানে গ্লোবাল পিস কনভেনশন
২০১৯ অনুষ্ঠিত
-
জাপানে
আমার সেকাল – একাল
-
একজন
প্রবাসীর সুখ দুঃখ
-
বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে ফুকুশিমা'তে বসতে যাচ্ছে টোকিও
অলিম্পিক – প্যারা অলিম্পিক ২০২০ এর আসর
-
একটি
কবরস্থান প্রতিষ্ঠায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগ
|